Showing posts with label রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর. Show all posts
Showing posts with label রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর. Show all posts

Friday, 26 April 2024

পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর 


 (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ? 

উত্তরঃ ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত্রিকায় দ্বিতীয় সংখ্যায় ১৮৯২ সালে প্রকাশিত হয়।  

(২) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোথায় বসে লেখা ? 

উত্তরঃ ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি শিলাইদহে বসে লেখা। 

(৩)  পোস্টমাস্টার যে গ্রামে চাকরি করতে আসেন সেই গ্রামের নাম কী ? 

উত্তরঃ পোস্টমাস্টার যে গ্রামে চাকরি করতে আসেন সেই গ্রামের নাম উলাপুর। 

(৪) গ্রামে এসে কলিকাতার ছেলে পোস্টমাস্টারের কেমন অবস্থা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ গ্রামে এসে কলিকাতার ছেলে পোস্টমাস্টারের  অবস্থা 

হয় জলের মাছকে ডাঙায় তুললে যে অবস্থা হয় তার মতো। 

(৫) ' পোস্টমাস্টার' গল্পে  পোস্টমাস্টারের কাছে যে মেয়েটি কাজ করত তার নাম কী ছিল ? তার বয়স কত ছিল ? 

উত্তরঃ ' পোস্টমাস্টার' গল্পে  পোস্টমাস্টারের কাছে যে মেয়েটি কাজ করত তার নাম ছিল রতন। 

                        তার বয়স ছিল বারো -তেরো। 

(৬) কাজের বিনিময়ে পোস্টমাস্টারের কাছ থেকে রতন কী পেত ?

উত্তর : কাজের বিনিময়ে রতন পোস্টমাস্টারের কাছ থেকে কোন বেতন পেত না, শুধু খেতে পেত। 

(৭) রতন পোস্টমাস্টারের কোন কোন কাজ করে দিত ?

উত্তরঃ রতন পোস্টমাস্টারের ঘর পরিষ্কার করা , উনুন ধরানো, তামাক সাজা , জল তোলা , রুটি সেঁকে দেওয়া এই সব কাজ করত।  

(৮) পোস্টমাস্টার নিজে রেঁধে খেতেন কেন ? 

উত্তরঃ পোস্টমাস্টারের বেতন খুব অল্প ছিল , তাই রাঁধুনি রাখার সাধ্য ছিল না।  তাই নিজেই রেঁধে খেতেন। 

(৯) পোস্টমাস্টারের বাড়িতে কে কে আছেন ? 

উত্তরঃ পোস্টমাস্টারের বাড়িতে তাঁর ছোটভাই , দিদি আর মা আছেন।  

(১০) রতনের বাড়িতে কে কে আছেন ? 

উত্তরঃ রতনের আপন বলতে কেউ নেই। 

(১১) পোস্টমাস্টারের স্নানের জল রতন কোথা  থেকে তুলে আনত ?

উত্তরঃ পোস্টমাস্টারের স্নানের জল রতন নদী থেকে তুলে আনত। 

(১১) পোস্টমাস্টার কীভাবে তাঁর অবসর কাটাতেন ? 

উত্তরঃ পোস্টমাস্টার মাঝে মাঝে কবিতা লেখার চেষ্টা করতেন , বাড়ির আত্মীয় স্বজনদের কথা ভাবতেন , রতনের সঙ্গে গল্প করতেন ,একসময় তিনি রতনকে পড়াতে শুরু করেন। 

(১২) কে রতনকে মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসত ?

উত্তরঃ রতনের বাবা রতনকে তার মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসত। 

(১৩) সন্ধ্যার সময় গ্রামের ঝোপে ঝোপে কী ডাকত ?

উত্তরঃ সন্ধ্যার সময় গ্রামের ঝোপে ঝোপে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকত। 

(১৪) " জলের মাছকে ডাঙায় তুলিলে যেরকম হয়  , এই গন্ডগ্রামের মধ্যে আসিয়া পোস্টমাস্টারেরও সেই দশা উপস্থিত হইয়াছে। "

(ক) মাছকে ডাঙায় তুললে কী হয় ? 

(খ) পোস্টমাস্টারের কী দশা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) জলের মাছকে ডাঙায় তুললে তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার হয়।  বেশীক্ষণ ডাঙায় রাখলে শ্বাসরোধ হয়ে জলের মাছ মরে যায়। 

(খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ' পোস্টমাস্টার ' গল্পে শহুরে , শিক্ষিত , রুচিবান পোস্টমাস্টার গন্ডগ্রাম উলপুরে এসে নিজেকে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারেন না।  উলাপুর গ্রাম তাঁর একদম পছন্দ হয় না।  গ্রামের মানুষগুলির সাথে তাঁর একদম রুচির মিল হয় না।  শুধুমাত্র কাজের তাগিদেই তাঁর এই গন্ডগ্রামে পরে থাকা।  আপিসে কাজও কম, বেতনও কম , তাঁর আটচালা আপিস ঘরটি , আপিস ঘরের অদূরে পানা পুকুর এবং পুকুরের চারিধারের জঙ্গল , রাত্রির অন্ধকার , গ্রামের পথ-ঘাট এসব কোন কিছুই পছন্দ হয় না। কুঠির গোমস্তা প্রভৃতি যে সকল কর্মচারী আছে তাদের কথা বলার অবসরও নেই।  এই রকম অস্বস্তিকর পরিবেশে পোস্টমাস্টার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে।  পোস্টমাস্টারের এই রকম দশার সাথে রবীন্দ্রনাথ জল থেকে ডাঙায় তোলা মাছের তুলনা করেছেন। জল থেকে মাছকে ডাঙায় তুলতে যেমন তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে শহুরে পোস্টমাস্টারের অচেনা , অজানা, অপছন্দের বদ্ধ পরিবেশে এসে তেমনই শ্বাসরোধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। 
















Thursday, 9 June 2022

খেয়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) " খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে " 

- পংক্তিটির উৎস লিখে নৌকার কাজের বর্ননা দাও। 

উত্তরঃ 

প্রশ্নে উল্লিখিত পংক্তিটির উৎস হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের    'চৈতালী 'কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'খেয়া ' কবিতা।  

                       নদী পারাপারের মাধ্যম হল খেয়া  তরি ।  কর্মসূত্রে বা অন্য প্রয়োজনে এক গ্রামের মানুষকে নদী পার হয়ে অন্য গ্রামে যেতেই হয় , তখনই তাদের প্রয়োজন হয় খেয়া তরির।  নদী পারাপারের সূত্রকে কেন্দ্র করেই এই খেয়া নৌকা দুই গ্রামের মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে চলেছে আবহমানকাল ধরে।  নদীকূলবর্তী দুই গ্রামের মানুষের প্রাত্যহিক জীবন 'খেয়া নৌকা'র মাধ্যমে এভাবেই আবর্তিত হয়।  

(২)  " খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে "  

-- নদীস্রোতের প্রসঙ্গের মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ 

খেয়া নৌকার মাধ্যমে নদীর দুই পারের মানুষ আপন আপন প্রয়োজনে এক পার থেকে পরপারে যাওয়া-আসা করে।  কেউ কর্মের তাগিদে বাড়ি থেকে বাইরে যায় আবার কেউ-বা বাইরে থেকে ঘরে ফেরে।  আবহমানকাল ধরে যেমন নদী প্রবহমান , তেমনই মানুষের কর্মস্রোতও অনন্তকাল ধরেই চলে আসছে।  নদীবক্ষে বয়ে চলা খেয়া নৌকা মানবজীবনের শাশ্বত বহমানতাকেই প্রকাশ করছে।  কবি নদী স্রোতের মাধ্যমে জীবনের এই সত্যকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন।  

(৩) " কেহ যায় ঘরে , কেহ আসে ঘর হতে " 

--- 'কেহ ' বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তারা কীভাবে যাওয়া -আসা করে ? 

উত্তরঃ 

প্রশ্নের এই অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'খেয়া ' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।  এখানে নদীর দুই পারে অবস্থিত গ্রামের মানুষদের 'কেহ ' বলা হয়েছে , যারা খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হয়। 

              খেয়া নৌকার মাধ্যমে নদীর দুই তীরের মানুষ নিত্য যাওয়া -আসা করে।  কেউ কর্মের তাগিদে বাড়ি থেকে বাইরে যায় , আবার কেউ বা কাজ শেষে বাড়ি ফেরে ওই খেয়া নৌকায় সওয়ার হয়ে।  নদীর মতোই মানুষের এই যাওয়া -আসা প্রবহমান , যার মাধ্যম হল খেয়া তরি। 

(৪) " নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস " 

--- কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? কীভাবে নতুন ইতিহাস গড়ে ওঠে ? 

উত্তরঃ 

কবি মানব -ইতিহাসের সংঘাত , ধ্বংস ও সৃষ্টির চিরসত্যতা প্রসঙ্গেই 'খেয়া ' কবিতায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।  

            কবি উপলব্ধি করেছেন অহংবোধ , ক্ষমতার লোভ , হিংসার বশবর্তী হয়ে শক্তিরাষ্ট্রগুলি পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয় বারংবার।  ফলে একটি সাম্রাজ্য ধ্বংস হয় আবার সেই ধবংসস্তূপের ওপরেই স্থাপিত হয় নতুন সাম্রাজ্য।  আবহমানকাল ধরেই এভাবে সাম্রাজ্যের ভাঙাগড়া চলে আসছে।  এই গড়ার মাধ্যমেই রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস। 

(৫) " পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব , কত সর্বনাশ " 

---- এই দ্বন্দ্ব -সংঘাতের কারণ কী ? এর পরিনাম  কী ? 

উত্তরঃ 

আবহমানকাল ধরে পৃথিবীতে মানব -ইতিহাস কলঙ্কিত হচ্ছে দ্বন্দ্ব সংঘাত ও পারস্পরিক যুদ্ধের কারণে। শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রকে দখল করার চেষ্টায় রত।  ক্ষমতার লোভ , অহংবোধ , হিংসাই হল দ্বন্দ্ব সংঘাতের মূল কারণ। পাশবিক স্বার্থপরতার কারণেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে তথা মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব -সংঘাত সংগঠিত হয়।  

                    দ্বন্দ্ব -সংঘাতের ফলেই রক্তাক্ত হয় মানব -ইতিহাস।  দুর্বল শোষিত ও পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়।  এই দ্বন্দ্বের ফলেই সৃষ্টি হয় যুদ্ধ তাতে ধ্বংস হয় এক সাম্রাজ্য , আবার গড়ে ওঠে নতুন এক সাম্রাজ্য।  

(৬) " সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে" 

----- কোথায় ,কীভাবে এমন ঘটনা ঘটে ? 

উত্তরঃ 

----- পৃথিবীতে যেখানে মানবসভ্যতার বিজয়রথ এগিয়ে চলেছে সেখানেই 'সোনার মুকুট ' ফুটে আর টুটে।  

    সুখ- দুঃখ আনন্দ বেদনাময় পৃথিবীতে  দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই আছে।  এখানেই রচিত হয় সভ্যতার ইতিহাস।  ক্ষমতার দম্ভে শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রকে পেশি শক্তি প্রয়োগ করে নিজের ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে।  জয় -পরাজয় , সিংহাসন , স্বর্ণ মুকুট এই সবই রাজাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু সাধারণ মানুষ এই সবের থেকে দূরে থাকে।  তারা তাদের দৈনন্দিন সাধারণ জীবন শান্তিপূর্ণ ভাবে কাটিয়ে দেয়।  এক রাজা সিংহাসনে বসে ,চলে যায় , অন্য রাজা আবার সিংহাসনে বসে।  কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই ভাবেই পৃথিবী আবহমানকাল ধরেই চলে। 

(৭) " রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে " 

---- 'রক্তপ্রবাহ ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? এখানে  'ফেনাইয়া ' শব্দ ব্যবহারের গুরুত্ব কী ? 

উত্তরঃ 

'রক্তপ্রবাহ ' বলতে রক্তস্রোতের কথাই বলা হয়েছে।  সভ্যতার ইতিহাস হল রক্তাক্ত ইতিহাস।  অধিক শক্তিধর রাষ্ট্র নিজেদের পেশিশক্তির মাধ্যমে দুর্বল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা হরণ করে।  এর জন্য যুদ্ধ হয় , রক্তস্রোত বয়।  এই রক্তস্রোতকেই কবি 'রক্তপ্রবাহ ' বলেছেন। 

                     ' ফেনা' অস্থায়ী।  সৃষ্টির ক্ষণকালের মধ্যেই বুদ্বুদের মতো তার বিনাশ ঘটে।  অশুভ শক্তির গর্বোদ্ধত আচরণও সভ্যতার ইতিহাসে ক্ষণকালের জন্যই।  বুদ্বুদের মতো অল্প সময়েই তার বিনাশ ঘটে।  এই সত্যটিকেই কবি 'ফেনাইয়া ' শব্দের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। 

(৮)  "উঠে কত হলাহল , উঠে কত সুধা !" 

--কোন প্রসঙ্গে কবি এই মন্তব্যটি করেছেন ?  উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'খেয়া' কবিতায় কবি মানব সভ্যতার অগ্রগতি প্রসঙ্গে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।  

          মানুষ তার জীবনযাত্রার মানকে ক্রমাগত উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।  তার এই ক্রমাগত উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।  তার এই ক্রমাগত উন্নতির ইতিকথাই হল মানব সভ্যতার ইতিহাস।  

               মানুষ যত সুখস্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছে , ততই তার মধ্যে আরও বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা লোভ জেগেছে।  সভ্যতার অগ্রগতি মানুষের  হাতে ভয়ংকর অস্ত্রের যোগান দিয়েছে।  ক্ষমতা দখলের লোভে মানুষ মেতে উঠেছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে।  এক সাম্রাজ্যের অবসানে সূচনা হয়েছে নতুন সাম্রাজ্যের। রক্তস্রোতের মধ্যে লেখা হয়েছে মানব সভ্যতার ইতিহাস।  

              পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী সমুদ্র মন্থনে হলাহল এবং সুধা অর্থাৎ বিষ ও অমৃত দুইই উঠেছিল।  কবির মতে সভ্যতার অগ্রগতিতেও তেমনি বিষ আর অমৃত দুইই উঠে এসেছে। কবি সভ্যতার ক্ষতিকারক রূপকে বিষ আর কল্যাণময় রূপকে সুধা বলেছেন।  দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকক্ষেত্রেই সভ্যতার ক্ষতিকারক রূপ তার কল্যাণময় রূপকে ছাপিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে।  নাগরিক জীবনের এই পরিণতি কবিকে কষ্ট দিয়েছে।  তাই তিনি পল্লীজীবনের শান্ত - মাটির গন্ধমাখা রূপটির উল্লেখ করেছেন।  সেখানে সভ্যতার অগ্রগতি তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেই বোধহয় আবহমান কাল ধরে মানুষের সঙ্গে মানুষের মানবিক সম্পর্ক বেঁচে আছে। 


           










Monday, 31 May 2021

তোতাকাহিনী

 (১) তোতাপাখিটি  কেমন ছিল ? 

উত্তরঃ  

তোতাপাখিটি ছিল মূর্খ।  সে গান গাইত।  শাস্ত্র পড়ত না।  সে মনের আনন্দে লাফাত , উড়ত।  কায়দা-কানুন একেবারেই জানত না।  

(২) তোতাপাখিটিকে দেখে রাজা কী বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ

 রাজা বলেছিলেন তোতাপাখিটি কোন কাজে লাগে না।  শুধু বনের ফল খেয়ে রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।  

(৩) ' পাখিটাকে শিক্ষা দাও ' .......... কে বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

মন্ত্রীমশাই বলেছিলেন। 

(৪) কাদের উপর ভার পড়ল পাখিটাকে শিক্ষা দেবার ? 

উত্তরঃ 

রাজার ভাগিনাদের উপর ভার পড়ল পাখিটাকে শিক্ষা দেবার।  

(৫) পাখিটাকে শিক্ষা দেবার প্রয়োজন হয়েছিল কেন ? 

উত্তরঃ

 তোতা পাখিটি ছিল মূর্খ।  সে কেবল মনের আনন্দে গান গাইত , লাফাত , উড়ত।  কিছুই কায়দা - কানুন জানত না।  রাজা মনে করেছিলেন পাখিটা কোন কাজে লাগে না।  কেবল বনের ফল খেয়ে রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।  তাই পাখিটাকে শিক্ষা দেবার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।  

(৬) পাখিটার অবিদ্যার কারণ কারা  বিচার করে বার করেছিলেন ?  

উত্তরঃ 

পন্ডিতেরা বিচার করে পাখিটার অবিদ্যার কারণ বার করেছিলেন।  

(৭) পন্ডিতেরা বিচার করে পাখিটির অবিদ্যার কারণ কী বলেছিলেন ? তার প্রতিকার কী বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

পন্ডিতেরা বিচার করে বলেছিলেন তোতাপাখিটি সামান্য খড়কুটো দিয়ে যে নিজের বাসা বানায় সেই বাসায় বেশি বিদ্যা ধরে না।  তাই পাখিটি মূর্খ। 

                     পাখিটার জন্য ভালো একটি খাঁচা বানানোর দরকার।  পন্ডিতেরা এই প্রতিকারই দিয়েছিলেন।  

(৮) পন্ডিতেরা কী পেয়ে খুশি হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

পন্ডিতেরা দক্ষিণা পেয়ে খুশি হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন।  

(৯) পাখিটির জন্য কীরকম  খাঁচা কে বানিয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

পাখিটির জন্য সোনার খাঁচা স্যাকরা বানিয়েছিল। 

(১০) সোনার খাঁচা বানানোর জন্য স্যাকরা কী পেয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

সোনার খাঁচা বানানোর জন্য স্যাকরা থলি বোঝাই করে বকশিশ   পেয়েছিল।  

(১১) ' খুশি হইয়া সে তখনি পাড়ি দিল বাড়ির দিকে '

(ক) কে খুশি হয়েছিল ? 

(খ) কেন খুশি হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক)  স্যাকরা খুশি হয়েছিল। 

(খ) তোতা পাখির জন্য স্যাকরা সোনার খাঁচা বানিয়ে দিয়েছিল।  তাই সে থলি বোঝাই করে বকশিশ  পেয়ে খুশি হয়েছিল।  

(১২) কারা পাখিটিকে বিদ্যা শেখাতে বসেছিলেন ? তারা কী বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

পন্ডিতেরা পাখিটিকে বিদ্যা শেখাতে বসেছিলেন।  

                   তারা বলেছিলেন অল্প পুঁথির মাধ্যমে পাখিটিকে বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া যাবে না।  

(১৩) পুঁথি লেখকদের কে তলব করেছিল ? ' তলব' কথার অর্থ কী ? 

উত্তরঃ 

পুঁথি লেখকদের রাজার ভাগিনা তলব করেছিল।  

                       ' তলব' কথাটির অর্থ 'ডেকে পাঠানো'।

(১৪) পুঁথি লেখকরা কী করেছিল ? 

উত্তরঃ 

পুঁথি লেখকরা পুঁথির নকল করে এবং নকলের নকল করে পর্বতপ্রমাণ পুঁথির স্তূপ তৈরি করেছিল।  

(১৫) কাদের সংসারে আর টানাটানি রইল না ও কেন ? 

উত্তরঃ 

লিপিকরের দল পুঁথির নকল করার জন্য রাজার কাছ থেকে প্রচুর পারিতোষিক পেয়েছিল।  তাই তাদের সংসারে আর টানাটানি রইল না।  

(১৬) 'উন্নতি হইতেছে ' 

কিসের উন্নতি হচ্ছিল ও কীভাবে ? 

উত্তরঃ 

তোতাপাখিটির শিক্ষার উন্নতি হচ্ছিল। 

              তোতা পাখিটার জন্য বানানো অনেক দামের খাঁচাটির প্রতি ভাগিনাদের খবরদারির সীমা রইল না।  খাঁচাটিকে ঝাড়া , মোছা , পালিশ করে মেরামত করে যত্ন করার জন্য অনেক লোক রাখা হল।  আবার সেই লোকগুলির উপর নজর দেওয়ার জন্য আরো লোক রাখা হল।  আবার সেই লোকগুলি উপর নজর দেওয়ার জন্য আরো লোক রাখা হল।  পাখিটার খাঁচাটির  এত যত্ন দেখে সকলে বলেছিল পাখিটার উন্নতি হচ্ছে।  

( ১৭) " কথাটা রাজার কানে গেল "

-- কোন কথা রাজার কানে গেল ? 

উত্তরঃ 

নিন্দুকেরা বলেছিল যে তোতাপাখিটির জন্য যে খাঁচাটি বানানো হয়েছে তারই অনেক উন্নতি হয়েছে , দেখাশোনা হচ্ছে। কিন্তু তোতাপাখিটির খবর কেউ রাখে না।  এই কথা রাজার কানে গিয়েছিল।  

(১৮) ভাগিনাদের গলায় সোনার হার চড়ল কেন ? 

উত্তরঃ

 নিন্দুকদের সমালোচনা শুনে রাজার মনে তোতাপাখিটির শিক্ষা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল।  তখন তিনি ভাগিনাদের ডেকে আসল ঘটনা জানতে চান।  ভাগিনা এসে রাজাকে বলে যে সত্য ঘটনা রাজামশাই স্যাকরা ,পন্ডিত ,লিপিকর,খাঁচাটির যারা তদারক করে তাদের থেকে জানতে পারবেন।  রাজামশাই তখন খুশি হয়ে ভাগিনাকে সোনার হার উপহার দেন।  

(১৯) রাজা কাদের নিয়ে পাখিটির শিক্ষাব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ 

রাজা পাত্র , মিত্র ও অমাত্য নিয়ে পাখিটির শিক্ষাব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন।  

(২০) রাজামশাই দেউড়ির কাছে আসতেই কী  হয়েছিল ? 

উত্তরঃ

 রাজামশাই দেউড়ির কাছে আসতেই শাঁখ -ঘন্টা , ঢাক-ঢোল , কাড়া -নাকাড়া, তূরী-ভেরি -দামামা , কাঁসি -বাঁশি -কাঁসর , খোল-করতাল , মৃদঙ্গ - জগঝম্প  বিভিন্ন প্রকারের বাজনা বেজে উঠল।  পন্ডিতেরা জোরে জোরে টিকি নেড়ে মন্ত্রপাঠ করতে লাগলেন। মিস্ত্রি ,মজুর ,স্যাকরা ,লিপিকর , তদারক-নবিশ আর মামাতো ,পিসতুতো ,খুড়তুতো এবং মাসতুতো ভাইরা জয়ধ্বনি দিতে লেগেছিল।  

(২১) ' পাখিকে তোমরা কেমন শেখাও তার কায়দাটা দেখা চাই। '

(ক) কে কাকে বলেছেন ? 

(খ) শেখানোর কায়দাটা কেমন ছিল ? 

উত্তরঃ

(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত কথাটি রাজা পন্ডিতমশাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন। 

(খ) তোতাপাখিটির দানাপানি বন্ধকরে দেওয়া হয়েছিল।  পন্ডিতের দল রাশি রাশি 

পুঁথির পাতা ছিঁড়ে 'কলমের ডগা' দিয়ে সেগুলি খাঁচায় বন্দি পাখিটির মুখের মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন।  পাখির গান বন্ধ, এমনকি চিৎকার করার ফাঁকটুকুও ছিল না।  এটাই ছিল পাখিকে শেখানোর কায়দা।  

(২২) নিন্দুকের কান মিলে দিতে রাজা কাকে আদেশ দিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ 

নিন্দুকের কান মিলে দিতে রাজা কানমলা সর্দারকে আদেশ দিয়েছিলেন।  

(২৩) 'এ কী বেয়াদবি ' 

(ক) কে বলেছে কথাগুলি ? 

(খ) এখানে কার কোন বেয়াদবির কথা বলা হয়েছে ? 

(গ) বেয়াদবির শাস্তি কী হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত "তোতাকাহিনী " গল্পে কোতোয়াল বলেছে কথাগুলি।  

(খ) এখানে তোতাপাখিটার বেয়াদবির কথা বলা হয়েছে।  

                     শিক্ষাদানের বিপুল আড়ম্বরের চাপে  অর্ধমৃত  তোতাপাখিটা প্রতিবাদস্বরূপ  মাঝে মাঝে সকালের আলোর দিকে তাকিয়ে ডানা ঝাপটাতে শুরু করেছিল।  তারপর বন্ধনমুক্তির মরিয়া চেষ্টায় একদিন সে তার শীর্ণ ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শলা কাটতে উদ্যত হয়।  এই কাজকেই কোতোয়াল বেয়াদবি বলে মনে করেছে।  

(গ) তোতাপাখির এই বেয়াদবির শাস্তি স্বরূপ কামারকে ডেকে তার পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল আর পাখা দুটিও দেওয়া হয়েছিল ছেঁটে।  

(২৪) কী দেখে সবাই বুঝতে পারল তোতাপাখিটার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

প্রচন্ড শিক্ষার পীড়নে যখন তোতাপাখিটার সমস্ত চঞ্চলতা , আনন্দের প্রকাশ একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেল তখনই রাজার ভাগিনারা সিদ্ধান্ত করেছে যে পাখির শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে।  পাখিটা আর আগের মত লাফায় না , ওড়ে না , গান গায় না , খিদে পেলে চেঁচায় না।  অর্থাৎ স্বাভাবিক প্রাণ চাঞ্চল্যের কোন প্রকার বহিঃপ্রকাশ আর তার মধ্যে দেখা যায় না।  এই অচঞ্চল প্রাণহীন অবস্থাই রাজা , ভাগিনা ও পন্ডিতবর্গের কাছে প্রকৃত শিক্ষার লক্ষণ।  তাই মৃত তোতাপাখীটিকে দেখে সবাই বলল পাখিটির শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে।  

(২৫) পাখিটি মরে যাওয়ায় কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

তোতাপাখিটি মরে যাওয়ায় বাইরে দখিনা হাওয়ায় কচিপাতাগুলি পুষ্পিত অরণ্যের আকাশকে বেদনায় আকুল করে তুলেছিল।  



####

'কাহিনী' বা 'কাহিনি ' এই দুটি বানান ই আমার মতে সঠিক।  কারণ মূল গ্রন্থে আছে  

"তোতাকাহিনী" (বিশ্বভারতী থেকে যেটি প্রকাশিত )  আবার বর্তমানে " কাহিনী" বানান লেখা হয় "কাহিনি ' .... সুতরাং দুটি বানান ই আমি আমার লেখায় ব্যবহার করেছি।  


























Sunday, 9 May 2021

বিষম বিপত্তি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 পাঁচদিন ভাত নেই ,

দুধ এক রত্তি -

জ্বর গেল , যায় না যে 

তবু তার পথ্যি।  

সেই চলে জল সাবু ,

সেই ডাকতার বাবু 

কাঁচা কুলে আমড়ায় 

তেমনি আপত্তি।  

ইস্কুলে যাওয়া নেই 

সেইটে যা মঙ্গল- 

পথ খুঁজে ঘুড়ি নেকো 

গণিতের জঙ্গল।

কিন্তু যে বুক ফাটে 

দূর থেকে দেখি মাঠে 

ফুটবল ম্যাচে জমে

 ছেলেদের দঙ্গল। 

কিনুরাম পন্ডিত 

মনে পড়ে তাকে তার ,

সমান ভীষণ জানি 

চুনিলাল ডাকতার। 

খুলে ওষুধের ছিপি 

হেসে আসে টিপিটিপি ,

দাঁতের পাটিতে দেখি 

দুটো দাঁত ফাঁক তার।  

জ্বর বাঁধে ডাকতারে , 

পালাবার পথ নেই;

প্রাণ করে হাঁসফাঁস 

যত  থাকি যত্নেই।  

জ্বর গেলে মাস্টারে 

গিঁঠ দেয় ফাঁসটারে ,

আমারে ফেলেছে সেরে 

এই দুটি রত্নেই।  

প্রশ্ন ও উত্তর : 

(১) "বিষম বিপত্তি " কবিতাটি কে লিখেছেন

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "বিষম বিপত্তি " কবিতাটি  লিখেছেন। 

(২) পথ্যি কাকে বলে ? 

উত্তরঃ রোগীর পক্ষে উপযুক্ত খাদ্য়কে পথ্যি বলে।  

(৩) ছেলেটি ক-দিন ধরে ভাত খেতে পারছে না ? 

উত্তরঃ ছেলেটি  পাঁচ দিন ধরে ভাত খেতে পারছে না। 

(৪) ভাতের বদলে তাকে কী খেতে হচ্ছে ? 

উত্তরঃ ভাতের বদলে তাকে জল সাবু  খেতে হচ্ছে।  

(৫) ডাক্তারবাবুর কীসে খুব আপত্তি ? 

উত্তরঃ কাঁচা কুল ও আমড়ায় ডাক্তারবাবুর খুব আপত্তি।  

(৬) 'মঙ্গল ' কীসে ? 

উত্তরঃ স্কুলে যেতে হচ্ছে না ,তাতেই যা মঙ্গল।  

(৭) কার টাকের কথা বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ কিনুরাম পন্ডিতের টাকের কথা বলা হয়েছে।  

(৮) ডাক্তারবাবুর নাম কী ? 

উত্তরঃ ডাক্তারবাবুর নাম চুনিলাল।  

(৯) জ্বর হওয়ার জন্য ছেলেটি কী কী অসুবিধা ও কষ্টের মধ্যে পড়েছিল ? 

উত্তরঃ জ্বর হওয়ার জন্য ছেলেটিকে পথ্যি হিসেবে  শুধু জল-সাবু খেতে হচ্ছিল। কাঁচা কুল ও আমড়া যা তার খুব প্রিয় তা খেতে পারছিল না।  বিকেলে খেলার মাঠে ফুটবল ম্যাচও সে খেলতে যেতে পারছিল না।  

বোধমূলক প্রশ্নোত্তর : 

(১০) " ইস্কুলে যাওয়া নেই 

                 সেইটে যা মঙ্গল --"

(ক) উল্লিখিত অংশটি কোন কবিতার অংশ ? কার লেখা ? 

(খ) কাকে ইস্কুলে যেতে হচ্ছে না ও কেন ? 

(গ) ইস্কুল যেতে হচ্ছে না বলে 'মঙ্গল' কেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) উল্লিখিত অংশটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " বিষম বিপত্তি " কবিতার অংশ। 

(খ) ছোট ছেলেটির জ্বর হয়েছে , তাই তাকে  ইস্কুল যেতে হচ্ছে না।  

(গ) ইস্কুল যেতে হচ্ছে না বলে তাকে অঙ্ক করতে হচ্ছে না , তাই তার কাছে এটা 'মঙ্গল' বলে মনে হচ্ছে।  













Tuesday, 27 April 2021

দেবতার বিদায়

 দেবতার বিদায় 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

দেবতা মন্দির মাঝে ভকত প্রবীণ 

জপিতেছে জপমালা বসি নিশিদিন 

হেনকালে সন্ধ্যাবেলা ধূলিমাখা দেহে 

বস্ত্রহীন জীর্ণ দীন পশিল সে গেহে 

কহিল কাতর কন্ঠে , " গৃহ মোর নাই,

একপাশে দয়া করে দেহ মোরে ঠাঁই। " 

সসংকোচে ভক্তবর কহিলেন তারে ,

" আরে আরে অপবিত্র , দূর হয়ে যা রে।  " 

সে কহিল," চলিলাম "- চক্ষের নিমেষে 

ভিখারি ধরিল মূর্তি দেবতার বেশে। 

ভক্ত কহে, " প্রভু মোরে কী ছল ছলিলে। "

দেবতা কহিল , " মোরে দূর করি দিলে। 

জগতে দরিদ্ররূপে ফিরি দয়াতরে 

গৃহহীনে গৃহ  দিলে আমি থাকি ঘরে। " 

উৎস : " দেবতার বিদায় " কবিতাটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত " চৈতালি " কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

কবিতা সংক্ষেপ : দেবমন্দিরে এক প্রবীণ ভক্ত দেবতার নাম জপ করেন রাতদিন।  একদিন সন্ধ্যায় সেখানে আসে এক দীন দরিদ্র মানুষ।  সে ভক্তকে জানালো যে , সে আশ্রয়হীন এবং অনুরোধ করল - তাকে মন্দিরের এক কোণে আশ্রয় দেওয়ার জন্য।  খালি গায়ে ধুলোমাখা অত্যন্ত রোগা মানুষটিকে দেখে সসংকোচে প্রবীণ ভক্ত তাকে অপবিত্র বলে মন্দির থেকে চলে যেতে বলেন।  মুহূর্তের মধ্যে সেই " অপবিত্র " ভিখারি দেবতার বেশ ধারণ করলেন। ভক্ত তখন কেঁদে জানালেন , --- প্রভু কেন তাকে এমনভাবে ছলনা করলেন ! দেবতা বলেন -- তিনি পৃথিবীতে দীনবেশেই ঘুরে বেড়ান।  যেখানে দীন , দরিদ্র আশ্রয় পায় , সেখানে তিনি অবস্থান করেন।  

   কবিতার মূলভাব : 

মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজমান।  অসহায় মানুষকে সেবার মধ্য দিয়েই দেবতাকে লাভ করা যায়।  

" জীবে প্রেম করে যেই জন 

সেইজন সেবিছে ঈশ্বর " 

মানুষকে অস্পৃশ্য ও অশুচি বলে ঘৃণা করলে দেবতাকে পাওয়া যায় না।  প্রবীণ ভক্ত এ ব্যাপারে অন্ধ ছিলেন।  তাই ধূলো কাদা মাখা আশ্রয়হীনের কাতর প্রার্থনাকে উপেক্ষা করে তিনি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।  প্রকৃতপক্ষে তিনি দেবতাকেই বিদায় দিয়েছিলেন।  

প্রশ্ন : 

১।  " দেবতার বিদায় " কবিতাটি কোন  কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

উত্তরঃ  " দেবতার বিদায় " কবিতাটি ' চৈতালি ' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

২।  ভক্ত সারাদিন কোথায় কী করছেন ? 

উত্তরঃ ভক্ত সারাদিন মন্দিরে বসে জপমালা নিয়ে ঠাকুরের নাম জপ করছে।  

৩।  সন্ধ্যাবেলা মন্দিরে কে প্রবেশ করেছিল ? 

উত্তরঃ সন্ধ্যাবেলা মন্দিরে দেবতা  দীন -হীন নিরাশ্রয় ভিখারির রূপ ধরে  প্রবেশ করেছিল। 

৪।  ভক্ত তার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করলেন ? 

উত্তরঃ ভক্ত তাকে ' অপবিত্র ' বলে তিরস্কার করে মন্দির থেকে দূর করে দিলেন।  

(৫) ভিখারি কার রূপ ধারণ করেছিল ? 

উত্তরঃ ভিখারি চোখের পলকে দেবতার রূপ ধারণ করেছিল। 

(৬) জপমালা কাকে বলে ? 

উত্তরঃ যে মালার গুটিকা বা পুঁতি গুনে গুনে ঠাকুরের নাম জপ করা হয় তাকে জপমালা বলে।  

(৭) দেবতার গৃহ বলতে কী বোঝায় ? 

উত্তরঃ সাধারণভাবে দেবতার গৃহ বলতে মন্দির বোঝায়।  দেবতার প্রকৃত গৃহ বলতে বোঝায় যেখানে  মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে।

(৮) দেবতার সেবা হয় কীসে ? 

উত্তরঃ দরিদ্র মানুষের সেবাতেই হয় প্রকৃত দেব-সেবা। মানুষের মধ্যেই দেবতার অধিষ্ঠান। তাই মানুষের সেবা করলে , বিপন্ন মানুষকে রক্ষা করলে দেবতা প্রীত হন।  সেইজন্য দেবসেবার শ্রেষ্ঠ উপায় মানবসেবা।  

(৯) দেবতা ছলনা করে ভক্তকে কী শিক্ষা দিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ দেবতা ছলনা করে ভক্তকে শিক্ষা  দিতে চেয়েছিলেন যে , " জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। " মানুষকে ঘৃণা করলে দেবতাকেই ঘৃণা করা হয়।  মানুষকে কাছে টেনে না নিলে দেবতাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়।  

(১০) ভক্ত কহে -" প্রভু মোরে কী ছল ছলিলে !" 

(ক) ভক্ত কে ? 

(খ) সে কি প্রকৃতই ভক্ত ? 

(গ) 'প্রভু ' বলতে এখানে কাকে বোঝানো হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

(ক) এক দেবমন্দিরে নিশিদিন জপমালা নিয়ে নাম জপকারী একজন প্রবীণ পূজারি  এখানে ভক্ত। 

(খ) প্রবীণ ভক্তের অন্তরে দেবতার জন্য অনেক ভক্তি আছে কিন্তু তিনি তাঁর দেবতাকে চেনেন না।  প্রকৃত ভক্ত তাই করতে চেষ্টা করে যা তাঁর দেবতা চান।  কারণ ভক্তের কাজই প্রভুকে সন্তুষ্ট করা।  ওই প্রবীণ ভক্ত তা করতে পারেন নি বা করতে চাননি।  তাই তিনি প্রকৃত ভক্ত নন।  তিনি দেবতাকে চিনতে পারেন নি।  

(গ) 'প্রভু ' বলতে এখানে দেবতাকে অর্থাৎ ঈশ্বরকে বোঝানো হয়েছে।  






  







 




Thursday, 22 April 2021

বিদূষক

 বিদূষক 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বিদূষক ' গল্পটি লেখকের 'লিপিকা' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

        গল্পে  কাঞ্চীর রাজা একজন নির্মম ও নৃশংস রাজা।  তিনি কর্ণাট জয় করে চন্দন , হাতির দাঁত , সোনা মানিক লুঠ করে হাতি বোঝাই করে দেশে ফিরে চলেছেন। তিনি এতটাই নির্মম যে যুদ্ধের হত্যাতেই থেমে থাকেন নি যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে পুজো দিলেন।  তাঁর রক্তবস্ত্র , রক্তচন্দনের তিলক আর জবার মালা উগ্র সেই নির্মমতারই বর্ণ - সংকেত।  পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় রত কর্ণাটের ছেলের দল যখন 'বুক ফুলিয়ে ' কাঞ্চী রাজকে বলল যে , তাদের এই খেলায় কর্ণাটের জিত আর কাঞ্চীর হার তখন কাঞ্চীরাজের ' চক্ষু রক্তবর্ণ ' হয়ে উঠল।  ছেলেদের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেত্রাঘাতের আদেশ দেওয়া হল।  অবোধ ছেলেদের জন্য গ্রাম থেকে ছুটে আসা মা-বাপের মার্জনাভিক্ষায় রাজার ক্রোধ যেন আরো জ্বলে উঠল।  'কাঞ্চীর রাজাকে কোনোদিন যেন ভুলতে না পারে ' - গ্রামকে এমন শিক্ষাদানের জন্য সেনাপতিকে হুকুম করে রাজা শিবিরে চলে গেলেন।  সেনাপতি সন্ধেবেলায় এসে জানাল ,'শৃগাল  কুকুর ছাড়া  এ গ্রামে কারো মুখে শব্দ শুনতে ' পাওয়া যাবে না।  হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিতটি এখানে অস্পষ্ট রয়ে গেছে।  গ্রামের এই উচিত শিক্ষায় স্বস্তি লাভ করে মন্ত্রী বললেন " মহারাজের মান রক্ষা হল " , আর পুরোহিত রাজার প্রশস্তি করে বললেন , 'বিশ্বেশ্বরীর মহারাজের সহায়। "  

                    গল্পে বিদূষক একবার মাত্র হেসেছে।  সেই হাসিই যেন তার প্রতিবাদ।  গল্পের শেষে বিদূষক নির্মম কাঞ্চীর রাজার সভা থেকে বিদায় নিলেন।  

"বিদূষক"গল্পের মূল কথা :

'বিদূষক' অর্থাৎ রাজার রসিক সহচর যার কাজ রাজাকে হাসানো।  কাঞ্চীর রাজা সর্বদা বিদূষক নিয়ে চলেন।  কিন্তু সম্পূর্ণ গল্পে রাজাকে একটি বারের জন্যও হাসতে দেখা যায় না।  বরং কর্ণাটজয়ী  কাঞ্চীর রাজা অত্যন্ত নির্মম। বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে পুজো দেওয়া , তাঁর রক্তবস্ত্র , রক্তচন্দনের তিলক , জবার মালা সবকিছুই তাঁর নির্মমতারই প্রতীক।  এমনকি ছোটশিশুদের খেলাকেও তিনি সহজভাবে  না নিয়ে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠে সম্পূর্ণ গ্রামকে কঠিন শাস্তি দেন।  শক্তির অহংকারে উন্মত্ত কাঞ্চীররাজার বিরুদ্ধে কেউই মাথা তুলে দাঁড়ায় না। একমাত্র ব্যতিক্রম বিদূষক।  বজ্রপাত শুধুমাত্র একটি জায়গাকে ধ্বংস করতে পারে কিন্তু রাজরোষ সমগ্র রাজ্যকেই ধ্বংস করে দিতে পারে।  বিদূষক বুঝতে পেরেছিল শক্তির গর্বে উন্মত্ত এই কাঞ্চীর রাজ্যে কোন আনন্দ , শান্তি কিছুই থাকবে না।  তাই সে কাঞ্চীর রাজার সভা ত্যাগ করে চলে যায়।  বিদূষক এই গল্পে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নিঃশব্দ প্রতীক। 

প্রশ্ন ও উত্তর 

(১)  ' পুজো দিয়ে চলে আসছেন ' 

(ক)  কে কখন কোথায় পুজো দিয়ে ফিরছিলেন ? 

(খ) ফেরার পথে তিনি কী দেখলেন ? 

উত্তর : 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " বিদূষক " গল্পে কাঞ্চীর রাজা কর্ণাট জয় করার পরে বলেশ্বরী মন্দির থেকে পুজো দিয়ে ফিরছিলেন।  

(খ) ফেরার পথে রাজা দেখলেন যে রাস্তার  ধারে আমবাগানে একদল ছেলে পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছে।  

(২) " এ গ্রামে  কারো মুখে শব্দ শুনতে পাবেন না " 

(ক) কে কাকে কথাটি বলেছেন ? 

(খ) কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে ? 

(গ) কথাটি শুনে মন্ত্রী , পুরোহিত ও বিদূষক কী বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) কাঞ্চীর সেনাপতি কাঞ্চীর রাজাকে কথাটি বলেছেন।  

(খ) কাঞ্চীর রাজা সেনাপতিকে বলেছিলেন যে গ্রামের ছেলেদের গাছে বেঁধে বেত মারতে এবং সেই গ্রামকে এমন শাস্তি দিতে যে এই গ্রাম কখন যেন কাঞ্চীর রাজাকে ভুলতে না পারে।  এই প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে।  

(গ) মন্ত্রী বলেছিলেন 'মহারাজের মান  রক্ষা হল ' , পুরোহিত বলেছিলেন ' বিশ্বেশ্বরীর মহারাজের সহায়' এবং বিদূষক বলেছিলেন তাঁকে বিদায় দিতে।  

(৩) " ওরা অবোধ , ওরা  খেলা করছিল " 

(ক) " ওরা " বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) ওরা কী করছিল ? 

(গ) রাজা ওদের জন্য কী হুকুম দিয়েছিলেন ? কেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) " বিদূষক " গল্পে কাঞ্চীর রাজা যখন মন্দির থেকে পুজো দিয়ে ফিরে আসছিলেন তখন তিনি একদল ছেলেকে পথের ধারে আমবাগানে খেলতে  দেখেছিলেন।  এখানে 'ওরা' বলতে ওই ছেলের দলের কথা বলা হয়েছে।  

(খ) ওরা দুই সারি পুতুল নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছিল। 

(গ) রাজা ওদের জন্য সেনাপতিকে হুকুম দিয়েছিলেন যে সব কটা ছেলেকে গাছের 

সাথে বেঁধে বেত মারতে।  

                   কর্ণাটের সঙ্গে কাঞ্চীর যুদ্ধে কাঞ্চীর রাজার জয় হয়েছিল, কিন্তু ছেলেরা গর্বের সঙ্গে বলেছিল কর্ণাটের জিত আর কাঞ্চীর হার।  তাই ক্রোধে উন্মত্ত কাঞ্চীর রাজা ওদের  শাস্তি  দিতে চেয়েছিলেন।  


(৪) " মহারাজের সভায় থাকলে আমি হাসতে ভুলে যাব " 

(ক)  বক্তা কে ? 

(খ) তিনি কোন মহারাজের সভায় ছিলেন ?

(গ) কেন তিনি হাসি ভুলে যাবার কথা বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত  " বিদূষক "  গল্পে  এখানে বক্তা হল বিদূষক। 

(খ) তিনি কাঞ্চীর রাজার সভায় ছিলেন।  তাঁর কাজ ছিল লোককে হাসানো  এবং আনন্দিত রাখা আর নিজেকেও আনন্দিত রাখা। 

(গ) কাঞ্চীর রাজা সেনাপতিকে হুকুম দিয়েছিলেন যে ছেলেদের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেত মারতে এবং গ্রামটিকে এমন শিক্ষা দিতে যে তারা যেন কাঞ্চীর রাজাকে কোনদিন ভুলতে না পারে।  বিদূষকের কাজ হল লোকেদের হাসানো আর আনন্দে রাখা।  যদি তিনি এমন নির্মম রাজায় সভায় থাকেন যে খুব অহংকারী এবং অত্যাচারী তাহলে তিনি নিজে হাসতে ভুলে যাবেন আর রাজার মতন অত্যাচারী হয়ে যাবেন।  

(৫) " বিদূষক হা-হা করে হেসে উঠল " 

(ক) অংশটি কার লেখা , কোন রচনা থেকে গৃহীত ? 

(খ) বিদূষক হেসে উঠেছিল কেন ? 

(গ) তখন রাজা কী হুকুম দিলেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " বিদূষক " রচনা থেকে গৃহীত।  

(খ) কাঞ্চীর রাজা অস্ত্রবলে ও সৈন্যবলে  কর্ণাটের রাজার থেকে শক্তিশালী হতে পারেন , কাঞ্চীর রাজা যুদ্ধে কর্ণাটের রাজাকে পরাজিত করে কর্ণাট জয় করতে পারেন , কিন্তু তাতে মানুষের মন জয় করতে পারেন না।  অবোধ শিশুরাও   নিজেদের  রাজার জয় চায়।  তাই তারা কর্ণাটের সঙ্গে কাঞ্চীর 'যুদ্ধ যুদ্ধ ' খেলার ফল হিসেবে 'কর্ণাটের জয় , কাঞ্চীর হার ' বলে।  অবোধ শিশুদের মনে ভয় থাকে না , তাই তারা মনের কথা সত্যি করে বলতে পেরেছে।  মদমত্ত রাজা ,শিশুদের সহজ জবাবে হেসে খেলাটি উপভোগ করতে পারতেন।  কিন্তু তিনি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠলেন।   সহজ-সুন্দর হাসির উপাসক বিদূষক  ছেলেদের এই খেলা ও কথা শুনে হেসে উঠল।  

(গ) কাঞ্চীর রাজা সেনাপতিকে হুকুম দিয়েছিলেন যে ছেলেদের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেত মারতে এবং গ্রামটিকে এমন শিক্ষা দিতে যে তারা যেন কাঞ্চীর রাজাকে কোনদিন ভুলতে না পারে।

(৬) " দেখে আসি ওরা কি খেলছে। " 

(ক) উক্তিটি কার ? 

(খ) 'ওরা " বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? 

(গ) তারা কোথায় কী খেলছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বিদূষক ' গল্পে উক্তিটি কাঞ্চীর রাজার।  

(খ) 'ওরা ' বলতে আমবাগানে  যে ছেলেগুলি খেলছিল তাদের কথা বলা হয়েছে।  

(গ) ছেলেরা আমবাগানে দুই সারি পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছিল।  












Tuesday, 13 April 2021

"তোতাকাহিনি " (প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা )


তোতাকাহিনি 

 সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখ :  

(১) " অল্প পুঁথির কর্ম নয় " 

উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে।  

        এক মূর্খ তোতা পাখি ছিল।  সে গান গাইত , লাফাত , উড়ত  কিন্তু শাস্ত্র পড়ত  না। কায়দাকানুন কাকে বলে জানত না।  পাখিকে অত্যন্ত অকেজো মনে হল রাজার।  তাই তাকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।  রাজার ভাগ্নের পাখিটার শিক্ষার আয়োজন শুরু করলেন।  বড়ো বড়ো পন্ডিতেরা এসে পাখিটাকে দেখলেন তখন পাখিটাকে শিক্ষা দেওয়ার প্রসঙ্গে উল্লিখিত উক্তিটি করেন।  

              পন্ডিতদের পরামর্শক্রমে স্যাকরা এসে পাখির শিক্ষার জন্য শিক্ষায়তন হিসেবে সোনার খাঁচা বানাতে বসল।  সেই আশ্চর্য মূল্যবান খাঁচাটি দেখতে দেশবিদেশের লোক সপ্রশংস দৃষ্টিতে তার ওপর ঝুঁকে পড়ল।  এরপর পন্ডিতেরা পাখিকে শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পুঁথি রচনায় মনোযোগী হলেন।  যথার্থ শিক্ষাদান যেহেতু 'অল্প পুঁথির কর্ম নয় ' , সেহেতু তাঁরা লিপিকরদের নিয়ে রাশিরাশি পুঁথির নকল করাতে শুরু করলেন। 

(২) " শুধু শব্দ নয় , পিছনে অর্থও কম নয় "

উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে। 
         রাজভাগনে রাজাকে এ কথা জানিয়েছিলেন।  তোতার শিক্ষা কীভাবে চলছে , তা দেখার জন্য রাজা তাঁর পাত্র , মিত্র, অমাত্যদের নিয়ে শিক্ষালয়ে পা রাখা মাত্র   শঙ্খ , ঘন্টা , ঢাক , ঢোল , কাড়া নাকাড়া , রণশিঙা , পটহ , রণভেরি , কাঁশি , বাঁশি , কাঁসর , খোল , করতাল , পাখোয়াজ , জয়ঢাক প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র বেজে ওঠে।  পন্ডিতদের মন্ত্রপাঠ  এবং সমবেত জনতার জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক।  গর্বিত , আনন্দিত ভাগনে রাজাকে সেই 'কান্ডটা ' লক্ষ করতে বললে রাজা বলেন 'আশ্চর্য ' ! শব্দ কম নয়। ' এরই উত্তরে ভাগনে প্রশ্নে উল্লিখিত  উক্তিটি করেন। 
             ভাগনের বক্তব্য হল রাজার আগমন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র , মন্ত্রপাঠ ও সমবেত জনতার জয়ধ্বনির যে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে , তার জন্য বিপুল অর্থও  ব্যয়িত হয়েছে।  পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিদ্যালয় পরিদর্শন।  বিদ্যালয়ে শিক্ষার অগ্রগতি দেখার জন্য স্কুল-পরিদর্শকেরা মাঝে মাঝেই পরিদর্শনে আসেন।  কিন্তু স্কুল - পরিদর্শনে এসে , স্কুল - কতৃপক্ষের কাছে তাঁরা এতখানিই সমাদর লাভ করেন যে , তাঁরা সেখানে আসার উদ্দেশ্যই কখনো কখনো ভুলে যান।  সেই আড়ম্বরপূর্ণ অর্থ -ব্যয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীর মঙ্গলের পরিবর্তে পরিদর্শকের তুষ্ট করার অনৈতিক উদ্দেশ্যই লুকিয়ে থাকে। 

(৩) স্যাকরা থলি বোঝাই করিয়া  বকশিশ পাইল।    

উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে।  
      " তোতাকাহিনি " পাঠ্যাংশে এক মূর্খ তোতা পাখি ছিল।  সে গান গাইত , লাফাত , উড়ত  কিন্তু শাস্ত্র পড়ত  না। কায়দাকানুন কাকে বলে জানত না।  পাখিকে অত্যন্ত অকেজো মনে হল রাজার।  তাই তাকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।  রাজার ভাগ্নের পাখিটার শিক্ষার আয়োজন শুরু করলেন।  বড়ো বড়ো পন্ডিতেরা এসে পাখিটাকে দেখলেন  এবং বললেন যে পাখিটির জন্য একটি   পাখির সোনার  খাঁচা বানাতে হবে। খাঁচা  বানানোর জন্য স্যাকরা  থলি বোঝাই করে বকশিশ পেয়ে  বাড়ির দিকে  পাড়ি  দিয়েছিল।  
                পন্ডিতেরা বলেছিলেন ছোট্ট তোতা পাখিটির অবিদ্যার কারণ তার ক্ষুদ্র বাসা।  তাই পন্ডিতরা নির্দেশ দেন যে পাখির শিক্ষা উপযুক্তভাবে পরিচালনার জন্য 
সর্বাগ্রে একটি ভালো খাঁচা তৈরী করা প্রয়োজন।  পাখির শিক্ষায়তন হিসেবে স্যাকরা সোনার খাঁচা বানায় এবং সেই মহার্ঘ খাঁচাটি এত অসামান্য সুন্দর দেখতে হয় , দেশ বিদেশের লোক সপ্রশংস দৃষ্টিতে তা দেখতে আসে।  শিক্ষা নয় , শিক্ষার আয়োজনে মুগ্ধ  হয়ে রাজা তাই স্যাকরাকে থলি বোঝাই করে বকশিশ দেন।  



      









Monday, 12 April 2021

" তোতা কাহিনি " ...(প্রশ্ন ও উত্তর )

" তোতা কাহিনি " 

প্রশ্ন ও উত্তর 

প্রশ্ন : (১) " পাখিটাকে শিক্ষা দাও ---" 

(ক) পাখিটার শিক্ষার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল ? 

(খ) পাখিটার শেষ পরিণতি কী হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) তোতাকে শিক্ষিত করার প্রয়োজনে প্রথমেই রাজপন্ডিতদের পরামর্শে স্যাকরাকে  দিয়ে একটি ভালো সোনার খাঁচা তৈরি করা হয়।  সেই খাঁচায় নিয়মতন্ত্রের বেড়াজালে তোতাকে বন্দি করা হয়।  

                        এরপর পন্ডিতেরা লিপিকরদের ডেকে রাশি রাশি পুঁথি নকল করে পর্বত প্রমাণ স্তূপ নির্মান করেন।  খাঁচাটাকে কেন্দ্র করে তদারকি , মেরামতি , ঝাড়া-মোছা , পালিশ ইত্যাদি আয়োজনের সীমা রইল না।  প্রচুর লোক তোতার শিক্ষার বিভিন্ন দায়িত্ব নিযুক্ত হল এবং তাদের ওপর নজর রাখার জন্য বহু লোক নিযুক্ত হল।  শিক্ষার জন্য রাজকোষ থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় হতে লাগল।  

(খ) মুক্ত তোতাটিকে সোনার খাঁচায় বন্দি করে রাশি রাশি পুঁথির পাতা জোরপূর্বক কলমের ডগা দিয়ে মুখের মধ্যে ঠেসে দিয়ে শিক্ষার নাম নির্মম পীড়নের জন্য পাখিটি মারা গিয়েছিল।  

(২) " নিন্দুকের যেন আচ্ছা ক্রিয়া কান মলিয়া দেওয়া হয়। ......." 

(ক) কার লেখা ? কোন গল্পের অংশ ? 

(খ) কাকে বলেছেন ? কখন বলেছেন ? 

(গ) নিন্দুকের কেন কান মুলে দিতে হবে ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ' তোতাকাহিনি ' গল্পের অংশ। 

(খ) রাজামশাই যখন তোতা পাখিটি ও তার শিক্ষার আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন দেখে ফায়ার যাচ্ছিলেন তখন কানমলা সর্দারকে বলেন যে নিন্দুকের যেন কান মুলে দেওয়া হয়।  

(গ) সোনার খাঁচার ভিতরে বাইরে আড়ম্বরের বাহুল্যে তোতাপাখিটিকে প্রায় দেখাই যায় না।  তবু নিন্দুকদের নিন্দাবাদ ও মন্দ রটনা বন্ধ করার জন্যই রাজা পাখিটিকে দেখলেন।  তিনি দেখলেন যে  , খাঁচাটার মধ্যে তুচ্ছ দানা -পানি রাখা হয়নি , তবে রাশি রাশি পুঁথির পাতা ছিঁড়ে কলমের ডগা দিয়ে পাখির মুখের ঠাসা হচ্ছে।  পাখির গান তো সে কারণে বন্ধই তার চিৎকার করারও কোনো আর উপায় রাখা হয়নি।                                  তোতার  শিক্ষার  এই পরিণতি দেখে রাজা বুঝতে পারলেন যে নিন্দুকেরা মিথ্যে কথা বলছে।  তাই তিনি কানমলা সর্দারকে নির্দেশ দিলেন নিন্দুকের কান মিলে দিয়ে যেন তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।  

(৩) " তাদের সংসারে আর টানাটানি রহিল না। " 

(ক) কার লেখা , কোন গল্পের অংশ ? 

(খ) এখানে কাদের সংসারের কথা বলা হয়েছে ? 

(গ) কেন টানাটানি রইল না ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " তোতাকাহিনি " গল্পের অংশ।  

(খ) পুঁথির লিপিকরদের সংসারের কথা বলা হয়েছে।  

(গ) মূর্খ বন্য পাখিটিকে শিক্ষিত করে তুলতে এসে পন্ডিতেরা জানান যে এই শিক্ষাদান " অল্প পুঁথির কর্ম নয়। " তাই বহু সংখ্যক পুঁথির প্রয়োজন পড়ে।  পুঁথি লেখকরা রাশি রাশি পুঁথির নকল করে এবং নকলের নকল করে স্তূপীকৃত করে তোলে।  শিক্ষার এই আড়ম্বরপূর্ন আয়োজন দেখে মুগ্দ্ধ রাজা বলদ বোঝাই করে বিপুল পরিমাণ পারিতোষিক দেন লিপিকরদের।  তাই লিপিকরদের সংসারে আর টানাটানি রইল না।  

(৪) " উন্নতি হইতেছে। " 

(ক) কিসের উন্নতির কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) করা এই উন্নতির হবার কথা বলেছে ? 

(গ) পাখিটির কী উন্নতি হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " তোতাকাহিনি " পাঠ্যাংশে মুক্ত তোতাকে রাজার  আদেশে , রাজপন্ডিতদের পরামর্শে ও রাজার ভাগিনেয়দের  তৎপরতায়  খাঁচায় বন্দি করে শিক্ষিত করে তোলার জন্য যে বিপুল আয়োজন করা হয়েছে , সেই আয়োজনকে লক্ষ করেই তোতার শিক্ষার বা শিক্ষা - ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলা হয়েছে।  

(খ) যে সমস্ত মানুষ বাইরের আড়ম্বর দেখে মুগ্দ্ধ হয় , তারাই তোতার শিক্ষার আয়োজন দেখে মুগ্দ্ধ বিস্ময়ে এই কথা বলেছে।  

(গ) ছোট্ট তোতাটি বনে বনে উড়ে বেড়াতো , মুক্তির আনন্দে লাফাতো , গান করতো , বনের ফল খেয়ে ক্ষুধানিবৃত্তি করতো।  কিন্তু রাজার আদেশে তাকে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।  রাজার ভাগিনীদের ওপর পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব অর্পিত হয়। রাজপন্ডিতেরা বহু বিচার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে পাখিটির সাধারণ ক্ষুদ্র বাসাটি  জ্ঞানসমৃদ্ধ শিক্ষার পক্ষে উপযুক্ত নয়।  তাই পাখির শিক্ষার আয়োজন করতে হলে প্রথমেই একটা ভালো খাঁচা বানানো দরকার।  পন্ডিতদের পরামর্শক্রমে  স্যাকরা এসে পাখির শিক্ষার জন্য সোনার খাঁচা বানাতে বসল।  

      এরপর  পন্ডিতেরা পাখিকে শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পুঁথি রচনায় মনোযোগী হলেন।  যথার্থ শিক্ষাদান যেহেতু ' অল্প  পুঁথির কর্ম নয় ' , সেহেতু তাঁরা লিপিকরদের নিয়ে রাশি রাশি  পুঁথির নকল করতে শুরু করলেন।  সকলে এই আয়োজন দেখে বাহবা দিল।  

            রাজার  ভাগিনেয়রা অত্যন্ত ব্যস্ততা ও তৎপরতার সঙ্গে খাঁচার দেখাশুনা , ঝাড়ামোছা , পালিশ করা , মেরামতির ঘটা লেগেই রইল।  প্রচুর লোকের ওপর এই বৃহৎ কর্মকান্ডের দায়িত্ব অর্পিত হল।  আবার তাদের ওপর নজরদারির জন্যও আরো লোক নিযুক্ত হল।  প্রতিমাসে এত কর্মীর বেতন বাবদও অপরিমিত ব্যয় হতে লাগল।  

পাখির শিক্ষার জন্য এত বিপুল আয়োজন , এত কর্মী , নজরদারি ,ও অপরিমিত অর্থব্যয়ের ঘটা দেখেই সাধারণ মানুষের মনে হয়েছে যে পাখির শিক্ষার যথেষ্ঠ উন্নতি হচ্ছে।  

(৫) পাখির খাঁচা তৈরির উপদেশ কারা দিয়েছিল ? 

উত্তরঃ  পন্ডিতেরা পাখির খাঁচা তৈরির উপদেশ দিয়েছিল।  

(৬) তনখা  কাকে বলে ? 

উত্তরঃ  তনখা হল কোন কাজের পরিবর্তে পাওয়া পারিশ্রমিক। 

(৭) কারা খেতে পায়  না বলে মন্দ কথা বলে ? 

উত্তরঃ নিন্দুকেরা খেতে পায়  না বলে মন্দ কথা বলে।  

(৮) পারিতোষিক পেয়ে বলদ বোঝাই কারা করেছিল ? 

উত্তরঃ লিপিকরের দল পারিতোষিক পেয়ে বলদ বোঝাই করেছিল।  

(৯) মৃদঙ্গ কী ? 

উত্তরঃ মৃদঙ্গ একটি বাদ্যযন্ত্র বিশেষ। 

(১০) " লোকসান ঘটায় " ........কে কীভাবে লোকসান ঘটায় ? 

উত্তরঃ 'তোতা কাহিনি' গল্পের তোতা পাখিটি বনের ফল খেয়ে রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।  


















































Friday, 6 November 2020

রথযাত্রা

 


রথযাত্রা :  

মনে রাখার বিষয় :  

    • রথযাত্রা " গল্পটি নেওয়া হয়েছে " লিপিকা " গ্রন্থ থেকে 
    • " রথযাত্রা " প্রসঙ্গে গীতাঞ্জলির কবিতা বিশেষ ভাবে স্মরণীয় :    
    •     (১) এসো হে পতিত করো অপনীত /সব অপমানভার 
    •     (২) যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন / সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে / সবার পিছে , সবার নীচে,/ সব-হারাদের মাঝে 
    •   (৩)  'হে মোর দুর্ভাগা দেশ , যাদের করেছ অপমান / অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।

গল্প শুরু হয় রথযাত্রার দিন।  রাজা ও রানি রথ দেখতে যাবেন।  তাই তার প্রস্তুতি শুরু হল।চারিদিকে 'সাজো' ' সাজো 'রব উঠল।    ঘোড়াশালা থেকে ঘোড়া , হাতিশালা থেকে হাতি এল।  ময়ূরপঙ্খী সাজান হল।  বল্লম হাতে সারি সারি সিপাই সান্ত্রী , দাস-দাসী সবাই রাজা -রানির সঙ্গে চলল।  কেবল একজন গেল না---দুঃখী গেল না রাজার সাথে।  দুঃখীর কাজ হল রাজবাড়িতে ঝাঁটার কাঠি কুড়িয়ে আনা। সর্দারের দয়া হল।  সে দুঃখীকে তাদের সঙ্গে যেতে বলল।  কিন্তু দুঃখী বলল তার যাওয়া হবে না।  রাজামশাই জানতে পারলেন।  সবাই যাচ্ছে , শুধু সেই দুঃখী যাচ্ছে না।  রাজামশায়েরও দয়া হল।  তিনি মন্ত্রীকে বললেন দুঃখীকে ডেকে নিতে। দুঃখীর বাড়ি রাস্তার ধারে। রাজার হাতি যখন সেখানে পৌঁছল তখন মন্ত্রী তাকে ডেকে তাদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতে বললেন।  দুঃখী বলল ঠাকুরের দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছায় তার সাধ্য নেই।  মন্ত্রী তাকে অভয় দিয়ে বলল সে রাজার সঙ্গে যাবে কাজেই তার কোন চিন্তা নেই।  দুঃখী উত্তরে জানাল রাজার পথ আর তার পথ এক হতে পারে না।  মন্ত্রী বললেন তাহলে দুঃখীর ভাগ্যে কী করে "রথযাত্রা " দর্শন হবে।  দুঃখী মন্ত্রীকে জানাল ঠাকুর রথে করে তার দুয়ারেই আসেন।  দুঃখীর এই কথায় মন্ত্রী হেসে উঠে জিজ্ঞাসা করলেন তার দুয়ারে ঠাকুরের রথের চিহ্ন কোথায়।  দুঃখী তাঁকে জানায় তার দুয়ারে ঠাকুর আসেন পুষ্পক রথে করে তাই  ঠাকুরের রথের চিহ্ন পড়ে না।  সে তার দুয়ারের দুই পাশে দুটি সূর্যমুখী ফুল দেখিয়ে বলে ঐটাই ঠাকুরের রথ।  
         "রথযাত্রা " রবীন্দ্রনাথের একটি প্রতীকি  গল্প। ছোট এই গল্পটির মাধ্যমে কবি একটি বড়ো সত্যকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।  
            পুষ্পক রথ পুষ্পেরই রথ।  সূর্যমুখী ফুল অর্থাৎ সূর্যের রথ।  দুই পাশে দুটি সূর্যমুখী সেই পুষ্পরথের হলুদে আর কালোয় বলয়িত দুটি চাকা। সূর্যের আলোয় ফুটে ওঠা পৃথিবীর ফুল যেমন অত্যন্ত স্বাভাবিক , নির্মল তেমন দুঃখীর মত যারা মাটির কাছের মানুষ তারাও ঈশ্বরের করুণা থেকে কখনও বঞ্চিত হয় না।  ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য তাদের রাজা , মন্ত্রী বা সর্দারের দয়ার কোন প্রয়োজন নেই।  ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান।  তাই তাঁকে দেখার জন্য কোন অয়োজনের প্রয়োজন পরে না।  মনের চোখ থেকে দেখলে আমাদের আশেপাশেই তাঁকে দেখা যায়।   



খেয়া

 


উৎস : 


১৯১১ খ্রিস্টাব্দে  প্রকাশিত  " চৈতালী " কাব্যগ্রন্থের ১৩ সংখ্যক কবিতা " খেয়া" ।   
         কবি ১৩০২ বঙ্গাব্দে পূর্ববঙ্গের পতিসরে নদীবক্ষে জমিদারীর কাজ উপলক্ষ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  সেই সময় অধিকাংশ সময়ই তিনি নদীবক্ষে বোটেই থাকতেন। নদীমাতৃক বাংলার নদনদীর তীর , 
তীরবর্তী গ্রাম , সেখানকার মানুষের সহজসরল অনাড়ম্বর জীবনকে নিবিড় কৌতূহলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করেছিলেন।  সেই আটপৌরে প্রকৃতির পটে যে-জীবনকে তিনি দেখেছেন তারই পরিপ্রেক্ষিতে আবহমান জীবনের ছবি কবি তাঁর এই "খেয়া " কবিতাটি লিখেছেন।


কবিতার সারসংক্ষেপ :

স্বয়ং কবি " খেয়া " কবিতাটি প্রসঙ্গে বলেছেন যে , এটি একটি স্থানিক রঙে রঞ্জিত কবিতা।  এই স্থানিক রংটি  হল একটি নদী , তার দুই তীরে দুটি গ্রাম , প্রতিদিনের আনাগোনায় তারা পরস্পরের পরিচিত।  নদীবক্ষে ভেসে  চলেছে নৌকা, সে নৌকায় কেউ ঘর ছেড়ে বিশ্বজীবনের পথে পা রাখে , আবার কেউ ঘরে ফেরে। একান্তই নিরাভরণ একটি সাদামাটা জীবন।  এ জীবন দেখতে দেখতেই কবির মনে একটি ভাবনার উদয় হয়েছে।  এই পৃথিবীতে কত 
দ্বন্দ্ব-রেষারেষি , রক্তক্ষয় , সাম্রাজ্যের উত্থানপতন প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে।  কিন্তু তার কোনো ছায়া এই একান্তই নিরাভরণ , সরল, অনাড়ম্বর নদী তীরবর্তী গ্রাম্য জীবনে পড়ে না।  তাদের কেউ জানেও না ,চেনেও না। নদীর উভয় তীরের গ্রাম দুটি শুধু নিজেরাই নিজেদেরকে জানে  , চেনে, পরস্পর পরস্পরকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকে।  অনন্তকাল ধরে এই নদীপথেই খেয়া চলে চিরদিন। 
এ খেয়া হল জীবনের খেয়া -অনন্ত মানবপ্রবাহ।  নাগরিক সভ্যতার উত্থানপতন , তার 'নব নব তৃষ্ণা ' ,' ক্ষুধা ' ,হলাহল  বা  অমৃত কোন কিছুই স্পর্শ করতে পারে না।  
               পৃথিবীর ইতিহাস হল রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বসংঘাতের ইতিহাস।  লোভের আগুনে পুড়ে যায় মানবতা।  ধ্বংসলীলায় মত্ত ক্ষমতাদর্পীদের হানাহানিতে সাম্রাজ্যের উত্থানপতন ঘটে অনবরত।  সোনার মুকুট যেমন 'ফুটে' আবার 'টুটে'ও।  কিন্তু প্রবহমান মানবসভ্যতার প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যলোভীদের বিজয়গৌরব তুচ্ছ ঘটনামাত্র।  ক্ষমতার দম্ভ জলের  বুদ্বুদের মতই ক্ষণস্থায়ী।  ক্ষমতার দর্পে উন্মত্ত মানুষের প্রমত্তলীলা সভ্যতাকে শুধু কলঙ্কিতই করেছে।  
তবু এই ধ্বংসের মধ্য দিয়েই জীবন বয়ে চলেছে নদীর স্রোতে ভাসা      'খেয়া ' র মতই।  




দীনদান

 দীনদান 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


কবিতার উৎস: 
" দীনদান " কবিতাটি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত " কথা ও কাহিনী " কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।  

বিষয় সংক্ষেপ : 
রাজভৃত্য এসে রাজাকে খবর দেয় যে সাধুশ্রেষ্ঠ নরোত্তম রাজার তৈরি সোনার দেবালয়ে আশ্রয় না নিয়ে পথের পাশে গাছতলায় বসে নাম সংকীর্তন করছে। তাঁকে অনুরোধ করা হলেও তিনি দেবালয়ে আশ্রয় নিতে রাজি হন নি।  ভ্রমর বা মৌমাছি যেমন কমলগন্ধে মত্ত হয়ে সোনার তৈরি মধুর ভান্ড ফেলে ছুটে যায় পদ্মবনে তেমনই ভক্তবৃন্দও সোনার তৈরি দেবালয় ছেড়ে সাধুর সঙ্গলাভের আশায় গাছের তলায় ছুটে গেছে।  তাদের আনন্দাশ্রুতে পৃথিবীর ধূলি ভিজে পবিত্র হয়ে গেছে।  দেবাঙ্গন শূন্য পরে রয়েছে।  রত্নবেদীর উপর দেবতার মূর্তি একা  পড়ে   রয়েছে।  
           রাজা এই খবর পেয়ে অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে ছুটে যান যেখানে সাধুশ্রেষ্ঠ নরোত্তম গাছের তলায় বসে নাম সংকীর্তন করছেন।  রাজা প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করেন যে আকাশ ছোঁয়া সোনার তৈরি দেবালয় ছেড়ে এই পথের প্রান্তে বসে সাধুশ্রেষ্ঠ কেন দেবতার স্তবগান করছেন।  সাধু উত্তর দেন রাজার তৈরি সেই স্বর্ণ দেবালয়ে দেবতা নেই।  রাজা এই উত্তর শুনে খুবই রেগে গিয়ে সাধুশ্রেষ্ঠকে বললেন তিনি নাস্তিকের মতো কথা বলছেন।  দেবালয়ের রত্নসিংহাসনের উপরে যে বিগ্রহ বিরাজমান তা সবাই দেখতে পাচ্ছে। সে তো শূন্য নয়।  সন্ন্যাসী বলেন তা শূন্য নয় , রাজ  অহংকারে পূর্ণ।  তিনি মন্দিরের বেদীতে দেবতাকে নয় , নিজেকেই স্থাপন করেছেন। অহংকারী রাজা বলেন যে বিশ  লক্ষ  স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে যে গগনভেদী মন্দির তিনি তৈরি করেছেন ,পূজামন্ত্র দিয়ে তা দেবতাকে দানও করেছেন , সেই মন্দিরে দেবতার স্থান হয়নি একথা অবিশ্বাস্য।  সন্ন্যাসী শান্তমুখে  জানায় , যখন অগ্নিকান্ডে গৃহহীন , অন্নবস্ত্রহীন , দীন দুঃখী প্রজারা রাজার কাছে সাহায্যের প্রার্থনায় এসেছিল তখন নিষ্ঠূর রাজা তাদের কোনরকম সাহায্য না করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল।  অথচ সেই বছরই লক্ষ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা ব্যয় করে তিনি দেবতার জন্য স্বর্ণমন্দির তৈরি করেছিলেন। তখনই ভগবান তার মন্দির ছেড়ে চলে গেছেন।  " তাঁর " গৃহের চারটি স্তম্ভ হল সত্য , শান্তি , দয়া ও প্রেম।  যে রাজা নিজের অসহায় , গৃহহীন প্রজাদের আশ্রয় দিতে পারেন না , তিনি ঈশ্বরকে কখনোই গৃহ দিতে পারেন না।  সমুদ্রের মাঝখানে ঢেউয়ের ফেনা  কিছুক্ষনের জন্য দেখা দিয়ে মিলিয়ে যায় কারণ তা শূন্য।  সেই রকমই রাজার তৈরি স্বর্ণ মন্দির শুধুমাত্র রাজার স্বর্ণ ও অহংকারের প্রতীক এবং তাও শূন্য।  তাই ঈশ্বর তার মন্দির থেকে বেরিয়ে পথপ্রান্তে অসহায় আর্তজনের পাশে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।  
                   মূর্খ রাজা এই কথা শুনে রেগে গেলেন ও সাধু শ্রেষ্ঠ নরোত্তমকে তার রাজ্য থেকে চলে যেতে বললেন।  তাতে সন্ন্যাসী একটুও বিচলিত না হয়ে বললেন ভগবানকেই তিনি যখন তার রাজ্য থেকে নির্বাসন দিয়েছেন তখন ভক্তকেও সেখানে পাঠালে সেটা ভক্তের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়।  

পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...