দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
ধনধান্যপুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা ,
তাহার মাঝে আছে দেশ এক -সকল দেশের সেরা ;
ও সে , স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ , স্মৃতি দিয়ে ঘেরা ;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।
চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা , কোথায় উজল ধারা ,
কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে ?
তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি , পাখির ডাকে জেগে।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।
এত স্নিগ্ধ নদী কাহার , কোথায় এমন ধুম্র পাহাড় !
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশতলে মেশে !
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে !
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী ; কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখী ;
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে -
তারা , ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে ;
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।
ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ !
-- ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি ,
আমার এই দেশেতে জন্ম -- যেন এই দেশেতে মরি ---
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি,
সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।
কবিতার উৎস : কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় একাধারে তিনি ছিলেন নাট্যকার ও সঙ্গীতজ্ঞ। তাঁর রচিত " সকল দেশের সেরা " কবিতাটি প্রকৃতপক্ষে একটি গান। তাঁর " গান " কাব্যগ্রন্থ থেকে " সকল দেশের সেরা " সংকলিত হয়েছে।
কবিতার মূলভাব :
ধনধান্য এবং পুষ্পে ভরা এই বসুন্ধরার মাঝে এক দেশ আছে। এই দেশ কবির জন্মভূমি এবং সকল দেশের সেরা। কবির এই স্বদেশ স্বপ্ন দিয়ে তৈরি এবং স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। কবির কাছে এই দেশ সকল দেশের রানি। এর চাঁদ , সূর্য , গ্রহ , তারা অতিশয় উজ্জ্বল। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও তুলনাহীন। কবি এই দেশের ভৌগলিক অবস্থানকেও কবিতায় তুলে ধরেছেন। এর নদী , পাহাড় , খেত -খামার , বৃক্ষলতা সবই মনোহর। কবি এই দেশ মাতার চরণ দুখানি বক্ষে জড়িয়ে ধরে কৃতার্থ হন। সমগ্র কবিতায় কবি তাঁর স্বদেশভূমির গৌরব কথাকে বাণীমূর্তি দান করেছেন।
প্রশ্ন :
(১) "তাহার মাঝে দেশ এক ----- সকল দেশের সেরা "
(ক) উল্লিখিত অংশটি কার লেখা ও কোন কবিতার অংশ ?
(খ) কে , কাকে সকল দেশের সেরা বলেছেন ?
(গ) কেন তাকে কবি সকল দেশের সেরা বলেছেন ?
উত্তরঃ
(ক) উল্লিখিত অংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় " সকল দেশের সেরা " কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
(খ) কবি তাঁর মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে " সকল দেশের সেরা " বলেছেন।
(গ) কবির চোখে তাঁর মাতৃভূমি ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদ , সৌন্দর্যে , আন্তরিকতায় , মা- ভাইয়ের স্নেহে অনেক বেশি সম্পদশালী। তাই কবি ভারতবর্ষকে " সকল দেশের সেরা " বলেছেন।
(২) " এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে "
(ক) এখানে কোন দেশের কথা বলা হয়েছে ?
(খ) এই দেশের নদী , পাহাড় , ধানের ক্ষেত্রটি কেমন ?
(গ ) কবি নিজের দেশকে কী নামে ডেকেছেন ?
উত্তরঃ (ক) " সকল দেশের সেরা " কবিতায় এখানে ভারতবর্ষের কথা বলা হয়েছে।
(খ) এই দেশের পাহাড় ধুম্র অর্থাৎ ধোঁয়ার মতো রঙের ও নদীর রূপ স্নিগ্ধ। সবুজ ক্ষেত এত বিশাল যে মনে হয় আকাশে মিশে গেছে।
(গ ) কবি নিজের দেশকে " সকল দেশের রানি বলে ডেকেছেন।
(৩) " তারা ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে "
(ক) এখানে " তারা " বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ?
(খ) কবিতার এই অংশে কবি তাঁর জন্মভূমির যে দৃশ্যের কথা বর্ণনা করেছেন তা লেখ।
উত্তরঃ (ক) "সকল দেশের সেরা " কবিতায় এখানে "তারা " বলতে অলি অর্থাৎ ভ্রমরদের কথা বলা হয়েছে।
(খ) কবি কবিতায় বলেছেন তাঁর জন্মভূমি ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি বৃক্ষ ফুলে ফুলে ভরে থাকে আর সেই ফুলের বাগানে পাখী গান গেয়ে বেড়ায়। ভ্রমররা গুনগুন করে দলে দলে ধেয়ে আসে সেই ফুলের মধু খাওয়ার জন্য আর ফুলের মধু খেয়ে তারা সেই ফুলের উপরই ঘুমিয়ে পড়ে।
(৪)" ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি "
(ক) কবিতাটিতে কাকে 'মা' বলা হয়েছে ?
(খ) সেই মায়ের কাছে কবি কী প্রার্থনা করেছেন ?
(গ) কেন তিনি এমন প্রার্থনা করেছেন ?
উত্তরঃ
(ক) " সকল দেশের সেরা " কবিতায় কবি তাঁর " মাতৃভূমি " ভারতবর্ষকে " মা " বলেছেন।
(খ) কবি তাঁর মাতৃভূমিরূপ "মা" এর পা দুটি বুকে ধরে প্রার্থনা করেছেন যে তাঁর এই দেশেতেই যেমন জন্ম হয়েছে তেমন তাঁর যেন এই দেশেতেই মৃত্যু হয়।
(গ) কবির মতে তাঁর মাতৃভূমি ভারতবর্ষের মত মা-ভাইয়ের স্নেহ অন্য কোন দেশে পাওয়া যায় না। এই দেশে জন্মগ্রহণ করে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন। এই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অন্য সব দেশের থেকে বেশি। তাই তিনি এই দেশেতেই যেমন জন্মগ্রহণ করেছেন তেমন তিনি এই দেশেই মৃত্যুবরণ করতে চান।
(৫) " স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ , স্মৃতি দিয়ে ঘেরা "
(ক) আলোচ্য অংশটি কার লেখা ? কোন কবিতার অংশ ?
(খ) কে কোন দেশকে " স্বপ্ন দিয়ে তৈরি " দেশ বলেছেন ?
(গ) কেন কবি একথা বলেছেন ?
উত্তর :
(ক) আলোচ্য অংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা 'সকল দেশের সেরা ' কবিতার অংশ।
(খ) কবি তাঁর মাতৃভূমি / জন্মভূমি ভারতবর্ষকে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি দেশ বলেছেন।
(গ) এই পূণ্যভূমি ভারতবর্ষে কত শত মহাপুরুষের জন্ম হয়েছে। এই দেশকে সুন্দর করে গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁরা দেখেছেন। তাঁদের সেই স্বপ্ন ও জীবনস্মৃতিতে ঘেরা আছে কবির জন্মভূমি ভারতবর্ষ।
(৬) " কোথায় এমন হরিৎ ক্ষেত্র আকাশতলে মেশে "
(ক) কবি এই কবিতায় কোন দেশের কথা বলতে চেয়েছেন ?
(খ) কবি এই দেশকে কী কী নাম ডেকেছেন ?
(গ) 'হরিৎক্ষেত্র ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
উত্তরঃ
(ক) কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় 'সকল দেশের সেরা ' কবিতায় তাঁর জন্মভূমি ভারতবর্ষের কথা বলতে চেয়েছেন।
(খ) কবি এই দেশকে তাঁর জন্মভূমি ও 'সকল দেশের রানি ' বলে ডেকেছেন।
(গ) 'হরিৎক্ষেত্র ' বলতে সবুজ রঙের ক্ষেত বুঝিয়েছেন।
(৭) " সকল দেশের রানি সে যে "
(ক) কবি কাকে সকল দেশের রানি বলেছেন ?
(খ) কেন বলেছেন ?
উত্তরঃ
(ক) 'সকল দেশের সেরা ' কবিতায় কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর জন্মভূমি ভারতবর্ষকে 'সকল দেশের রানি ' বলেছেন।
(খ) রূপে গুণে সেরা রমণীকেই রানি বলে অভিহিত করা হয়। কবির চোখে তাঁর জন্মভূমি ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদ , সৌন্দর্যে , আন্তরিকতায় , মা-ভাইয়ের স্নেহে অনেক বেশি সম্পদশালী। তাই কবি ভারতবর্ষকে 'সকল দেশের রানি ' বলে অভিহিত করেছেন।