Showing posts with label Class IX (CBSE). Show all posts
Showing posts with label Class IX (CBSE). Show all posts

Friday, 8 March 2024

আম আঁটির ভেঁপু ( সপ্তম ও অষ্টম অধ্যায় )

 সপ্তম অধ্যায় 

আতুরী ডাইনি 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : 

(১) " অপু শুনিয়াও সুনীল না " 

        - অপু শুনেও কী শুনল না ? 

উত্তরঃ অপু তার মা সর্বজয়ার কথা শুনল না।  অপু বিকেলবেলা বেড়াতে যাবে ভাবছিল।  তার মা তার জন্য চাল   ভাজা  ও ছোলা ভাজা ভাজছিল এবং তাকে খেয়ে যেতে বলছিল কিন্তু সে তার মার কথা না শুনে খেলতে চলে যায়। 

(২) অপু বিকেলে কাদের বাড়ি খেলতে গিয়েছিল ?

উত্তরঃ অপু নীলুদের বাড়িতে খেলতে গিয়েছিল। 

(৩) নীলু অপুকে কোথায় যাওয়ার কথা বলে ?

উত্তরঃ নীলু অপুকে দক্ষিণের মাঠে পাখির ছানা দেখতে যাওয়ার কথা বলে।  

(৪)  ফিরতে গিয়ে  অপু আর নীলুর কী অবস্থা হয় ? 

উত্তরঃ ফিরতে গিয়ে  অপু আর নীলু পথ হারিয়ে ফেলে। 

(৫) অপু আর নীলু কোথায় আতুরী ডাইনির বাড়ি দেখতে পায় ? 

উত্তরঃ নীলু আর অপু দক্ষিণের মাঠে পাখির ছানা দেখতে গিয়ে ফেরার সময় পথ হারিয়ে ফেলে।  আমবাগানের ধার দিয়ে যে সুঁড়ি  পথটা ধরে তারা ফিরছিল সেই পথটা যে উঠানে গিয়ে শেষ হয় সেখানে একটি ছোট চালাঘর ও একপাশে একটা বিলাতী আমড়ার গাছ ছিল ---- সেটিই ছিল আতুরী ডাইনির বাড়ি। 

(৬ )  আতুরী ডাইনি সম্পর্কে কীরূপ জনশ্রুতি আছে ? 

উত্তরঃ আতুরী ডাইনি তার উঠোনের আমড়া পাড়বার অপরাধে জেলেপাড়ার কোন এক ছেলের প্রাণ কেড়ে নিয়ে কচুপাতায় বেঁধে জলে ডুবিয়ে রেখেছিল , পরে মাছে তা খেয়ে ফেলবার সঙ্গে  সঙ্গে বেচারীর প্রাণ বেড়িয়ে যায়।  আতুরী ডাইনি ইচ্ছা করলেই চোখের চাহনিতে ছোট ছেলেদের রক্ত চুষে খেয়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে পারে।  যার রক্ত খেল সে কিছুই জানতে পারবে না।  সে বাড়ি গিয়ে খেয়ে দেয়ে বিছানায় শোবে কিন্তু আর পরদিন উঠবে না। 

অষ্টম অধ্যায়  

রেলের পথ 

(১) হরিহর কেন অপুকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল তার শিষ্যের বাড়িতে ?

উত্তরঃ বাড়িতে থেকে অপু ভালো মন্দ কিছু খেতে পায় না।  তাই বাড়ির বাইরে  গেলে শিষ্যের বাড়িতে দুধটা ,ঘিটা পাবে ,ওর শরীরটা সারবে।  তাই হরিহর  অপুকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল তার শিষ্যের বাড়িতে। 

(২) বৈশাখ -জ্যৈষ্ঠ মাসে খুব গরম পড়লে অপু ও দুর্গা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত ? 

উত্তর : বৈশাখ -জ্যৈষ্ঠ মাসে খুব গরম পড়লে অপু ও দুর্গা বিকেল বেলা নদীর ঘাটে গিয়ে দাঁড়াত। 

(৩) গ্রামের বাইরে কোন কোন স্থানে অপুর যাতায়াত ছিল ? 

উত্তরঃ অপু তার গাঁয়ের বকুলতলা , গোঁসাইবাগান , চালতেতলা ,নদীর ধার , বড় জোর নবাবগঞ্জ যাবার  পাকা সড়ক পর্যন্তই তার যাতায়াত ছিল।  

(৪) দুর্গাপুরের রাস্তায় উঠে তার বাবাকে কী  জিজ্ঞাসা করল ?

উত্তরঃ দুর্গাপুরের রাস্তায় উঠে রেলের রাস্তা কোন দিকে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করল। 

(৫) দক্ষিণ মাঠে অপু ও দুর্গা কাকে খুঁজতে গিয়েছিল ?

উত্তরঃ  দক্ষিণ মাঠে অপু ও দুর্গা তাদের রাঙি - গাইকে খুঁজতে গিয়েছিল। 

(৬) অপু ও দুর্গা কী দেখতে গিয়ে বাড়ি ফেরার পথ হারিয়ে ফেলেছিল ? 

উত্তরঃ অপু ও দুর্গা রেলের রাস্তা দেখতে গিয়ে বাড়ি ফেরার পথ হারিয়ে ফেলেছিল। 

(৭) কোন স্থানে যাবার পথে অপু রেলের রাস্তা দেখতে পায় ? 

উত্তরঃ বাবার সঙ্গে লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি যাওয়ার পথে অপু রেলের রাস্তা দেখতে পায়। 

(৮) রেলের রাস্তা দেখার পর অপুর কীরূপ প্রতিক্রিয়া হয় ? 

উত্তরঃ অপু একদৌড়ে ফটক পার হয়ে রেলের রাস্তায় এসে ওঠে।  তারপর অসীম বিস্ময়ে দুপাশে তাকিয়ে থাকে।  তার মনে অজস্র প্রশ্ন ভিড় করে আসে।  

(৯) অপু তার বাবার কাছে কীসের বায়না করে ? 

উত্তরঃ অপু তার বাবার কাছে রেলগাড়ি দেখে যাওয়ার বায়না করে।  

(১০) অপুর কেন তার বাবার প্রতি  অভিমান হয় ? 

উত্তরঃ রেলগাড়ি দেখার জন্য অপুর বাবা অপেক্ষা করতে রাজি হয় না , ফলে অপুর ও রেলগাড়ি দেখা হয় না।  তাই তার বাবার প্রতি অভিমান হয়। 

 






Wednesday, 8 February 2023

আম আঁটির ভেঁপু ( নবম ও দশম অধ্যায় )

নবম অধ্যায় 

শকুনির ডিম

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) অপু কোথায় কড়ি খেলতে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ অপু জেলেপাড়ায় কড়ি খেলতে গিয়েছিল।  বাবুরাম পাড়ুইয়ের বাড়ির কাছে তেঁতুলতলায়  খেলা জমে ওঠে। 

(২) জেলেপাড়ার ছেলেদের মধ্যে ব্যতিক্রম কে ছিল ? 

উত্তরঃ জেলেপাড়ার ছেলেদের মধ্যে ব্যতিক্রম  ছিল পটু।  সে ব্রাহ্মণ পাড়ার ছেলে। 

(৩) অপুর সঙ্গে পটুর তেমন আলাপ ছিল না কেন ? 

উত্তরঃ পটুর যে পাড়ায় বাড়ি অপুদের বাড়ি থেকে তা  অনেক দূর।  তাই অপুর সঙ্গে পটুর তেমন আলাপ ছিল না। 

(৪) অপু পটুকে প্রথম কোথায় দেখেছিল ? 

উত্তরঃ অপুর প্রথম যেদিন প্রসন্ন গুরুমহাশয়ের পাঠশালায় ভর্তি হতে গিয়েছিল সেদিন সে পটুকে শান্তভাবে তালপাতা চিবুতে দেখেছিল। 

(৫) পটুর অত্যন্ত শখের জিনিস কী ছিল ?

উত্তরঃ রাঙা সুতার বুনানি কড়ি  রাখার ছোট্ট গেঁজেটি পটুর অত্যন্ত শখের জিনিস। 

(৬) পটুর গেঁজেতে কটি কড়ি ছিল ? 

উত্তরঃ পটুর গেঁজেতে সতেরোটা কড়ি ছিল।  

(৭) পটুর গেঁজেতে কটি সোনা-গেঁটে  কড়ি ছিল ?

উত্তরঃ পটুর গেঁজেতে সাত টি  সোনা-গেঁটে কড়ি ছিল। 

(৮) পটুর গেঁজেতে কত কড়ি ধরে ? 

উত্তরঃ পটুর গেঁজেতে এক পণ কড়ি ধরে।  

(৯) পটু কয়েকদিন  আগে কী আবিষ্কার করেছিল ? 

উত্তরঃ কড়ি-খেলায় পটুর  হাতের লক্ষ্য অব্যর্থ হয়ে উঠেছে , এই সত্যটি সে কয়েকদিন  আগে আবিষ্কার করেছিল।  

(১০) জেলেপাড়ার ছেলেরা পটুকে খেলার কী শর্ত দিয়েছিল ও কেন ?

উত্তরঃ জেলেপাড়ার ছেলেরা পটুকে বলে যে তাকে আরোও একহাত দূর থেকে কড়ি মারতে 

হবে।  কারণ পটুর হাতের টিপ বেশি।  

(১১) কড়ি খেলতে গিয়ে পটুর কী দুর্দশা হয়েছিল

উত্তরঃ পটু জেলেপাড়ায় কড়ি খেলতে গিয়ে অনেক কড়ি জিতেছিল।  কিন্তু জেলেপাড়ার ছেলেরা তাকে মারধর করে কড়ি কেড়ে নেয়। 

(১২) পটুর দুর্দশায় অপু প্রথমে খুশি হয়েছিল কেন ?

উত্তরঃ পটুর কাছে অপুও অনেক কড়ি হেরেছিল।  তাই জেলেপাড়ার ছেলেদের কাছে পটুর দুর্দশায় অপু প্রথমে খুশি হয়েছিল। 

(১৩) " অপু কাউকে একথা এখনো বলে নাই"

উত্তরঃ জেলেপাড়ায় কড়ি  খেলতে গিয়ে  জেলেপাড়ার ছেলেদের হাত থেকে পটুকে বাঁচাতে গিয়ে অপুও মার খায়।  একথা অপু কাউকে একথা এখনো বলে নি। 

(১৪) " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইটি অপু কোথায় পায় ? 

উত্তরঃ " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইটি অপু তার বাবার বইয়ের বাক্সে পায়। 

(১৫) " একদিন সে পড়িল বড়  অদ্ভত  কথাটা !" ---- কথাটা কী ?

উত্তরঃ  " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইয়ে অপু পড়েছিল শকুনির ডিমের মধ্যে পারদ পুরে  কয়েকদিন রোদে রাখতে হয় , পরে সেই ডিম মুখের ভিতর পুরে মানুষ ইচ্ছা করলে শূন্যমার্গে যেদিকে ইচ্ছা বিচরণ করতে পারে। 

(১৬) " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইটি অপু কোথায় লুকিয়ে রাখে ? 

উত্তরঃ " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইটি অপু তার ডালাভাঙা বাক্সে লুকিয়ে রাখে।  

(১৭) শকুনিরা  কোথায় বাসা বাঁধে অপু কাকে কাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ? 

উত্তরঃ শকুনিরা  কোথায় বাসা বাঁধে অপু তার দিদি দুর্গা , পাড়ার ছেলেদের - সতু , নীপু , কিনু , পটল ,নেড়া সকলকে জিজ্ঞাসা করেছিল।  

(১৮) পারদ মানে কী ? পারদ অপু কথা থেকে সংগ্ৰহ করবে ভেবেছিল

উত্তরঃ পারদ মানে পারা।  অপুদের বাড়িতে একটা ভাঙা আয়না আছে।  আয়নার পিছনে পারা মাখানো থাকে।  অপু সেখান থেকে পারদ সংগ্রহ করবে ভেবেছিল।  

(১৯) " সন্ধান অবশেষে মিলিল " --- অবশেষে কী মিলল ? কার কাছে মিলল ? 

উত্তরঃ অপু যে শকুনির ডিমের সন্ধান করছিল তার সন্ধান মিলল।  হীরু নাপিতের কাঁঠালতলায় জটলা করা রাখালদের কাছ থেকে  শকুনির ডিমের সন্ধান করছিল সন্ধান মিলল।  

(২০) রাখালের কাছ থেকে অপু ক'পয়সায় শকুনির ডিম কেনে ? 

উত্তরঃ  রাখালের কাছ থেকে অপু চার পয়সায় শকুনির ডিম কেনে। 

(২১) কিসের বিনিময়ে অপু  রাখালের কাছ থেকে শকুনির ডিম সংগ্রহ করেছিল ? 

উত্তরঃ চার পয়সা ও কিছু কড়ির বিনিময়ে  অপু  রাখালের কাছ থেকে শকুনির ডিম সংগ্রহ করেছিল। 

(২২) শকুনির ডিম হাতে পেয়ে অপু কী ভাবে ? 

উত্তরঃ শকুনির ডিম মুখে পুরে সে কোথায় যাবে , মামার বাড়ির দেশে নাকি বাবা যেখানে আছে , নাকি নদীর ওপারে অপু এই কথাই ভাবছিল। 

(২৩) শেষ পর্যন্ত শকুনির ডিমের কী অবস্থা হয় ? 

উত্তরঃ সলতে পাকাবার জন্য দুর্গা ছেঁড়া ন্যাকড়া খুঁজতে গিয়ে তাকের উপর হাঁড়ি-কলসির পাশে গোঁজা ছেঁড়া -খোঁড়া কাপড়ের টুকরোর তাল হাতড়াতে হাতড়াতে তার হাত লেগে শকুনির ডিম মেঝের উপরে গড়িয়ে পড়ে ভেঙে যায়।  

(২৪) " অপু সমস্ত দিন খাইল না " -- কেন ? 

উত্তরঃ এত কষ্ট করে জোগাড় করা শকুনির ডিম ভেঙে যেতে প্রচন্ড রাগ ও অভিমানে অপু সারাদিন কিছু খেল না।  

দশম অধ্যায় 

মুচুকুন্দ -চাঁপা  



সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

 ( ১) গ্রামের কোন বৃদ্ধের সঙ্গে অপুর খুব ভাব ছিল ? 

উত্তরঃ গ্রামের বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির সঙ্গে অপুর বড় ভাব ছিল।  

(২) নরোত্তম দাস বাবাজি দেখতে কেমন ছিলেন ? তিনি কোথায় বাস করতেন ? তিনি কোন ধর্মের মানুষ ছিলেন ? 

উত্তরঃ নরোত্তম দাস বাবাজি ছিলেন গৌরবর্ণ , সদানন্দ বৃদ্ধ।  

                        তিনি সামান্য একখানি খড়ের ঘরে বাস করতেন।  তিনি বিশেষ গোলমাল ভালোবাসেন না , তাই নির্জনে থাকতে ভালবাসতেন। 

                        তিনি বৈষ্ণব ধর্মের মানুষ ছিলেন। 

(৩) অপুর সঙ্গে নরোত্তম দাসের সঙ্গে ভাব হয়েছিল কিকরে ? 

উত্তরঃ অপুর ছোটবেলা থেকেই হরিহর তাকে সঙ্গে করে মাঝে মাঝে নরোত্তম দাসের কাছে নিয়ে যেতেন , সেই থেকেই অপুর সঙ্গে নরোত্তম দাসের সঙ্গে ভাব হয়েছিল।  

(৪) অপু  ও নরোত্তম দাস পরস্পরকে  কী বলে সম্বোধন করত ?

উত্তরঃ অপু নরোত্তম দাসকে 'দাদু'  বলে সম্বোধন করত এবং নরোত্তম দাস অপুকে 'দাদাভাই' বলে সম্বোধন করত।  

(৫) নরোত্তম দাসের কাছে এলে অপুর  কেন সঙ্কোচ লজ্জা  দূর হয়ে যায় ? 

উত্তরঃ নরোত্তম দাসের সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনযাত্রার জন্য  নরোত্তম দাসের কাছে এলে অপুর   সঙ্কোচ লজ্জা  দূর হয়ে যায়।  

(৬) নরোত্তম দাস বাবাজি অপুকে কী বলেন ? 

উত্তরঃ নরোত্তম দাস বাবাজি অপুকে 'বালক গোরা ' বলেন। 

(৭) অপু নরোত্তম দাসের কাছে কী বই দেখতে চেয়েছিল ?  বইটিতে কটি ছবি ছিল ? 

উত্তরঃ অপু নরোত্তম দাসের কাছে " প্রেমভক্তি - চন্ডিকা " বইটি দেখতে চেয়েছিল।  

                                         বইটিতে ছবি ছিল মাত্র দুটি। 

(৮) নরোত্তম দাস বাবাজির কাছে আসার জন্য অপুর আকর্ষণের কারণ কী ? 

উত্তরঃ সহজ সামান্য অনাড়ম্বর জীবনের গতিপথ বেয়ে এখানে কেমন একা অন্তঃসলিলা মুক্তির ধারা সে খুঁজে পায় , বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির সাহচর্য , মাটি, বিচিত্র পাখি ও গাছপালার সাহচর্যের মতো মনে হয়।  

(৯) বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির বাড়ি থেকে ফেরার সময় অপু কী নিয়ে আসে ? 

উত্তরঃ বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির বাড়ি থেকে ফেরার সময় অপু তাঁর উঠানের গাছতলাটা থেকে একরাশি মুচুকুন্দ চাঁপা ফুল নিয়ে আসে।  

(১০) অপু রাতে বিছানায়  শুয়ে কী ভাবে ? 

উত্তরঃ অপু রাতে বিছানায় শুয়ে সেদিনের সব খেলাধুলা , সারাদিনের সকল আনন্দের স্মৃতির কথা ভাবতে  থাকে।  বিছানায় শুয়ে মুচুকুন্দ চাঁপা ফুলের রাশির মধ্যে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেয়।  







Thursday, 8 December 2022

চিঠি - স্বামী বিবেকানন্দ

 প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) "একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন

--- (ক) কে কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন ?

(খ)  বক্তা তাকে 'প্রকৃত সিংহী' বলেছেন কেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) ' চিঠি ' রচনার উল্লিখিত অংশে স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে 'প্রকৃত সিংহী' বলেছেন। 

(খ) স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবে দেখেছেন।  তাঁর মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা।  নোবেলের শিক্ষা , ঐকান্তিকতা , পবিত্রতা , অসীম ভালোবাসা , দৃঢ়তা এবং তাঁর ধমনিতে প্রবাহিত রক্তের জন্য তাঁকেই সেই নারী হিসেবে স্বামীজি ভেবেছেন যাঁকে এদেশের প্রয়োজন।  এইসব গুণের কারণেই তিনি সিংহীর সমকক্ষ হয়ে উঠেছেন।  

(২) " তুমি ঠিক সেইরূপ নারী , যাকে আজ প্রয়োজন। "

(ক) নারীটি কে ? 

(খ) তাঁকে কাদের প্রয়োজন ও কেন ? 

(গ) কি কি গুণের জন্য তাঁকে সেইরূপ নারী বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ (ক) প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটি স্বামী বিবেকানন্দ রচিত 'চিঠি' নামক রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।  এখানে 'সেই নারী ' বলতে স্বামীজি তার শিষ্যদের মধ্যে অগ্রগণ্যা মিস মার্গারেট নোব্ল্ অর্থাৎ ভগিনী নিবেদিতার কথা বলেছেন। 

(খ) স্বামীজি অনুভব করেছিলেন যে পরাধীন ভারতের নারীরা ছিল চরম অবজ্ঞার। তাদের না ছিল শিক্ষা বা না ছিল কোনো স্বাধীনতা।  তারা চির-লাঞ্ছিত ও অবহেলিত।  জাতপাত , ছোঁয়াছুঁয়ি ও নানা কুসংস্কারে আবদ্ধ।  স্বামীজি বুঝেছিলেন দেশ বা সমাজের উন্নতির জন্য নারীজাতিকে শক্তিময়ী, শিক্ষিতা করা তুলতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন এক বা একাধিক মহীয়সী নারী।  যিনি বা যাঁরা আপন শিক্ষা , শ্রম , মেধা ও নিষ্ঠা দিয়ে এদেশের নারীদের জাগ্রত করতে সক্ষম হবেন।  স্বামীজি বুঝেছিলেন মিস  নোবেলের মত ' প্রকৃত সিংহী 'র ন্যায় নারীর প্রয়োজন এদেশের মেয়েদের।  

(গ) মিস নোবেলের শিক্ষা , ভারতপ্রেম , কর্মের প্রতি নিষ্ঠা , মানসিক দৃঢ়তার কথা স্বামীজি জেনেছেন।  মিস নোবেলের ধমনিতে প্রবাহিত হচ্ছে 'কেল্টিক রক্ত ' যা পরাধীনতাকে মেনে নিতে চায় না।  এই ব্যাপারগুলিই মিস নোব্ল্ সম্পর্কে স্বামীজিকে উৎসাহিত করে তুলেছিল।  মিস নোব্ল্-এর এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই স্বামীজি বুঝেছিলেন ভারতের নারীজাতির উন্নয়নের স্বার্থে মিস নোব্ল্ই উপযুক্ত নারী।  

(৩) " কিন্তু বিঘ্ন আছে বহু " 

(ক) কি কি বিঘ্ন এবং কোথায় ? 

(খ) এই উক্তির পিছনে কী কারণ ? 

(গ) এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার কোন মনোভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটি স্বামী বিবেকানন্দ রচিত 'চিঠি ' রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।  ভারতবর্ষের কাজের ক্ষেত্রে মিস নোব্ল্কে নানা প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হবে বলে স্বামীজি মনে করেন। যেমন -

    ভারতের মানুষের দুঃখ , কুসংস্কার ও দাসত্বের মনোভাব নোবেলের ধারণার অতীত।  অস্পৃশ্যতা , জাতি-বর্ণভেদ আর কুসংস্কারজনিত অজ্ঞতা ভারতবাসীকে বিভাজিত করে রেখেছে। 

              ভয়েই হোক বা ঘৃণাতেই হোক ভারতীয়রা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে এবং শ্বেতাঙ্গরাও এদেশের লোককে ঘৃণা করে।  

          মিস নোব্ল্ একজন ইউরোপীয় হয়ে ভারতীয়দের জন্য কাজ করছে দেখলে শ্বেতাঙ্গরা তাঁকে খামখেয়ালি বলে মনে করবে এবং তাঁর প্রত্যেকটি গতিবিধিকে সন্দেহের চোখে দেখবে। 

         তাছাড়া ভারতের জলবায়ু গ্রীষ্মপ্রধান।  এদেশের শীত মিস নোবেলের দেশের গ্রীষ্মের মত।  শহরের বাইরে ইউরোপীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও পাওয়া অসম্ভব। 

            এই সব বিঘ্নের কথা মিস নোব্ল্কে সতর্ক করেছেন স্বামীজি। 

(খ) কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে , সেই কাজের  সুবিধা -অসুবিধা , প্রেক্ষাপট জেনে নেওয়া উচিত বলে স্বামীজির মনে হয়েছে।  ভারতের সমস্ত কিছুই মিস নোব্ল্-এর অচেনা ও অজানা।  সেক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে তাঁকে নানাপ্রকার সংকটে পড়তে হতে পারে।  সেই পরিস্থিতিতে মিস নোব্ল্ যেন মানিয়ে চলতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই স্বামীজি মিস নোব্ল্কে প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন। 

(গ) স্বামীজি তাঁর  চিঠিতে মিস নোব্ল্কে জানিয়েছিলেন যে তার মতো প্রকৃত সিংহীর ন্যায় নারীর আজ প্রয়োজন ভারতীয় নারীদের। মিস নোবেলের উপর তিনি অত্যন্ত ভরসা করেন।  ভারতবর্ষের কাজ করার বহু বিঘ্নের কথা শুনেও মিস নোব্ল্ পিছিয়ে যাবেন না এটা তিনি জানতেন।  মিস নোবেলের প্রতি স্নেহ ও সম্মানের মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে।  

(৪) " তাঁর সঙ্গে বানিয়ে চলা অসম্ভব। " 

---- কার সম্পর্কে কেন এ মন্তব্য করা হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

স্বামী বিবেকানন্দ মিস  নোব্ল্কে উদ্দেশ্য করে মিস মুলার সম্পর্কে মন্তব্যটি করেছেন।  স্বামী বিবেকানন্দের মতে মিস মুলার তাঁর নিজের ভাবে চমৎকার মহিলা।  কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই নিজেকে নেত্রী ভাবা এবং নিজের ক্ষমতায় অতিরিক্ত বিশ্বাস তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে।  স্বামী বিবেকানন্দের মনে হয়েছে যে মিস নোব্ল্ও অল্পদিনেই বুঝে নিতে পারবেন যে মিস মুলারের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। 

(৫) " মরদ কি বাত হাতি কা  দাঁত " 

(ক) বক্তা কে ? 

(খ) কাকে কোন প্রসঙ্গে এই কথা বলেছেন ? 

(গ) উক্তিটি ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটির বক্তা হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর লেখা 'চিঠি'তে  তিনি মিস নোব্ল্কে কথাটি বলেছেন।  

(খ) স্বামী বিবেকানন্দ উক্তিটি করেছেন তাঁর প্রিয় শিষ্যা মিস মার্গারেট নোব্ল্কে উদ্দেশ্য করে।  পরাধীনতার নাগপাশে জড়িত ভারতবাসীর দুর্দশার শেষ ছিল না, তার উপরে আমাদের নারীজাতি যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত , অবহেলিত।  শিক্ষার আলো থেকে তারা বহুদূরে অবস্থিত ছিল।  কুসংস্কার আর অশিক্ষার গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তাদের হৃদয়।  তাদের সেই অন্ধকারে আলোর আগমন ঘটাতে পারেন মিস নোব্ল্ অর্থাৎ ভগিনী নিবেদিতা।  এই দৃঢ় বিশ্বাস ছিল স্বামী বিবেকানন্দের মনে।  তাই ভারতের নারীজাতির জন্য কাজ করতে হলে তাঁর কেমন অসুবিধা হতে পারে , তা যেমন স্বামীজি জানিয়েছেন তাঁর চিঠির মাধ্যমে তেমনি তাঁকে অনুপ্রেরণাও দিয়েছেন। স্বামীজি যে সর্বতোভাবেই নিবেদিতার কাজে সহায়তা করবেন সেই প্রতিশ্রুতি   প্রসঙ্গেই  আলোচ্য কথাটি বলেছেন নিবেদিতাকে। 

(গ)   প্রবাদটির বক্তব্য হল প্রকৃত পুরুষ মানুষের কথা বা প্রতিশ্রুতি আর  দাঁত একবার যদি বাইরে বেরিয়ে আসে তবে তা আর ভিতরে ঢোকে না।  অর্থাৎ হাতির দাঁত মুখের বাইরে একবার বের হলে কোনোভাবেই তাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না।  আর প্রকৃত পুরুষ যে প্রতিজ্ঞা একবার করেন , কোনো পরিস্থিতিতেই তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুত হন না।  এ কথার মাধ্যমে স্বামীজি নিবেদিতাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি নিবেদিতার সকল কাজেই পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতি একবার দিয়েছেন তা থেকে তিনি কখনোই সরে আসবেন না  তা নিবেদিতা কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থ হোন বা বেদান্ত ধর্ম ত্যাগ করুন বা ভারতবর্ষের জন্য কাজ করুন বা না করুন।  

    





Friday, 26 August 2022

চিঠি -স্বামী বিবেকানন্দ

 অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) 'কল্যাণীয়া মিস নোব্ল্   ' বলে সম্বোধন করে স্বামী বিবেকানন্দ যাঁকে চিঠি লিখেছেন তাঁর সম্পূর্ণ নাম কী ? 

উত্তরঃ 

'কল্যাণীয়া মিস নোব্ল্   ' বলে সম্বোধন করে স্বামী বিবেকানন্দ যাঁকে চিঠি লিখেছেন তাঁর সম্পূর্ণ নাম মার্গারেট এলিজাবেথ নোব্ল্  । 

(২) " স্টার্ডি -র একখানি চিঠি কাল পেয়েছি। " -- স্টার্ডি কে ? 

উত্তরঃ 

মি. ই. টি. স্টার্ডি ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের একজন ইংরেজ ভক্ত , যিনি স্বামীজিকে ইংল্যান্ডে বেদান্ত প্রচারে সহায়তা করেন।  

(৩) "...... তা তুমি ধারণা করতে পারো না। " --- কী ধারণা করতে না পারার কথা বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

স্বামীজি মিস নোব্ল্কে ভারতবর্ষের মানুষের দুঃখ , কুসংস্কার , দাসত্ব প্রভৃতির ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা করতে না পারার  কথা বলেছেন।  

(৪) "...... এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে। ....." ---- 

বিশ্বাস টি কী ?  

উত্তরঃ 

স্বামীজির দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে , ভারতের কাজে মিস  

নোবেলের এক বিরাট ভবিষ্যৎ রয়েছে।  

(৫) ভারতের নারী সমাজের উন্নতির জন্য কেমন ব্যক্তির প্রয়োজন ? 

উত্তরঃ 

ভারতের নারী সমাজের উন্নতির জন্য একজন প্রকৃত সিংহীর মতো তেজস্বিনী নারীর প্রয়োজন।  

(৬) '.....  তুমি ঠিক সেইরূপ নারী , জেক আজ প্রয়োজন। " 

---- মিস নোব্ল্ -এর মধ্যে কোন গুণাবলীর লক্ষ্য  করে স্বামীজি এ কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ 

মিস নোব্ল্  -এর শিক্ষা , ঐকান্তিকতা , পবিত্রতা , অসীম ভালোবাসা , দৃঢ়তা ইত্যাদি গুণ লক্ষ্য করে স্বামীজি এই কথা বলেছেন।  

(৭) " কিন্তু বিঘ্নও আছে বহু " ----- কোন কাজে বিঘ্ন আছে ? বিঘ্নগুলি কী কী ? 

উত্তরঃ 

ভারতবর্ষের বিশেষত ভারতের নারীসমাজের সার্বিক উন্নয়নের কাজে প্রচুর বিঘ্ন আছে।  

                       ভারতবর্ষের দুঃখ , কুসংস্কার , দাসত্ব , জাতিভেদ , অস্পৃশ্যতা ইত্যাদি দেশের উন্নতির কাজে বিঘ্ন হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

(৮)  মিস নোব্ল্ এদেশে এলে কীভাবে নিজেকে দেখতে 

পাবেন ? 

উত্তরঃ 

মিস নোব্ল্ এদেশে এলে নিজেকে অসংখ্য অর্ধ-উলঙ্গ নরনারীতে পরিবেষ্টিত দেখতে পাবেন। 

(৯) ভয়ে বা ঘৃণায় ভারতীয়রা শ্বেতাঙ্গদের কী করে ? 

উত্তরঃ 

ভয়ে বা ঘৃণায় ভারতীয়রা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে। 

(১০) শ্বেতাঙ্গরা  ভারতীয়দের প্রতি কীরূপ মনোভাব পোষণ করে ? 

উত্তরঃ 

শ্বেতাঙ্গরা  ভারতীয়দের প্রতি অত্যন্ত ঘৃণার মনোভাব পোষণ করে। 

(১১) 'চিঠি ' গদ্যাংশে স্বামীজি ভারতবর্ষের জলবায়ু কেমন বলে বর্ণনা করেছেন ? 

উত্তরঃ 

ভারতবর্ষের জলবায়ু অত্যন্ত গ্রীষ্মপ্রধান।  এদেশের শীত ইউরোপের গ্রীষ্মের মতো আর দক্ষিণাঞ্চলে সর্বদাই আগুনের হলকা প্রবাহিত হয়।  

(১২) " এসব সত্ত্বেও যদি তুমি কর্মে প্রবৃত্ত হতে সাহস কর "

---- এখানে 'এসব' বলতে কোন সবের কথা বলা হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

ভারতবর্ষের মানুষের দুঃখ , কুসংস্কার , দাসত্ব, অস্পৃশ্যতা , এখানকার গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ু এবং ইউরোপীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্যের  অভাবের কথা বলা হয়েছে।  

(১৩) কর্মে ঝাঁপ দেওয়ার পরে সাফল্যের পাশাপাশি আর কী কী ঘটার সম্ভাবনা থাকতে পারে ? 

উত্তরঃ 

মানবসেবার কর্মে ঝাঁপ দেওয়ার পর সে কাজে বিফল হওয়ার এবং কর্মে বিরক্তি আসার সম্ভাবনা থাকতে পারে।  

(১৪) " মরদ কি বাত হাতি কা দাঁত " --- প্রবাদটির অর্থ লেখ। 

উত্তরঃ 

প্রবাদটির অর্থ হল , প্রকৃত মানুষ কথা দিলে সবরকমভাবে সেই কথা রাখার চেষ্টা করে , তার নড়চড় হয় না।  

(১৫) " আবার তোমাকে একটু সাবধান করা দরকার.........."

--- কী বিষয়ে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে সাবধান করা দরকার ? 

উত্তরঃ 

ভারতে জনসেবামূলক কাজ করার ক্ষেত্রে মিস মুলার কিংবা অন্যের আশ্রয়ে না থেকে মিস নোব্ল্কে আত্মনির্ভর হতে হবে।  

(১৬) মিসেস সেভিয়ার কেমন মহিলা ? 

উত্তরঃ 

মিসেস সেভিয়ার অত্যন্ত ভালো ও স্নেহময়ী মহিলা।  স্বামীজি তাঁকে " নারীকুলের রত্নবিশেষ " বলে উল্লেখ করেছেন।  

(১৭) সেভিয়ার দম্পতি কেমন মানুষ ? 

উত্তরঃ 

সেভিয়ার দম্পতি ভারতবর্ষের মানুষকে ঘৃণা করেন না এবং ভারতীয়দের ওপর কর্তৃত্ব ফ্ল্যাটে তাঁরা এদেশে আসেননি।  

(১৮) স্বামীজি মিস নোব্ল্কে ম্যাকলাউড আর বুলের সঙ্গে এদেশে আসার পরামর্শ দিয়েছেন কেন ? 

উত্তরঃ 

মিস ম্যাকলাউড  ও মিসেস বুলের সঙ্গে এদেশে এলে মিস নোব্ল্-এর দীর্ঘপথের যাত্রার একঘেয়েমি দূর হতে পারে বলে স্বামীজি এই পরামর্শ দিয়েছেন। 

(১৯) মি. স্টার্ডির লেখা চিঠিটি কেমন ছিল ? 

উত্তরঃ 

মি. স্টার্ডির লেখা চিঠিটি ছিল বড়ো শুষ্ক , প্রাণহীন এবং হতাশাপূর্ণ। 

(২০) মি. স্টার্ডি হতাশ হয়েছিলেন কেন ? 

উত্তরঃ 

লন্ডনের কাজ পন্ড হওয়ায় মি. স্টার্ডি হতাশ হয়েছেন বলে তাঁর চিঠিতে সেই হতাশা ফুটে উঠেছিল। 









    











Tuesday, 2 August 2022

ছুটি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 প্রশ্ন ও উত্তর 

১) বালকদের সর্দারের নাম কী ? 

উত্তরঃ ফটিক চক্রবর্তী 

(২) ফটিকের ভাইয়ের নাম কী ? 

উত্তরঃ মাখন চক্রবর্তী 

(৩) ফটিকের মামার নাম কী ? 

উত্তরঃ বিশ্বম্ভর বাবু 

(৪) মামা কোথায় কাজে গিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ পশ্চিমে 

(৫) প্রকান্ড শালকাঠটা কোথায় কেন পড়েছিল ? 

উত্তরঃ প্রকান্ড শালকাঠটা নদীর পাড়ে , মাস্তুলে পরিণত হওয়ার জন্য পড়েছিল।  

(৬) নৌকার গলুইয়ে বসে ফটিক কী চিবোচ্ছিল ?

উত্তরঃ ঘাস 

(৭) ফটিকের বয়স কত ছিল ? 

উত্তরঃ তেরো - চোদ্দ বছর 

(৮) ফটিকের মামা ফটিকের মাকে কী প্রস্তাব দিয়েছিল ? 

উত্তরঃ ফটিকের মামা বিশ্বম্ভর বাবু  ফটিককে তাঁর কাছে কোলকাতায় নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা শেখাবেন বলেছিলেন।  

(৯) ফটিকের মামার কটি ছেলে মেয়ে ছিল ? 

উত্তরঃ তিনটি ছেলে। 


(১০) " তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এই প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল "  

(ক) কার লেখা , কোন গল্পের অংশ ? 

(খ) প্রসঙ্গ কী ? 

(গ) বক্তব্য কী ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা "ছুটি" গল্পের অংশ।  

(খ) নদীর ধারে  একটি প্রকান্ড শালকাঠ মাস্তুল তৈরির জন্য কেউ ফেলে রেখেছিল।  ফটিক ও তার বন্ধুরা মিলে ঠিক করে সেটা সকলে মাইল নদীর জলে গড়িয়ে ফেলে দেবে।  এটা ভেবে তাদের আনন্দ হল যে সে লোকটা কার্যকালে কাঠটা না পেয়ে কীরূপ অসুবিধায় পড়বে - এই প্রসঙ্গেই প্রশ্নে উল্লিখিত এই  উক্তি।

(গ) বালকদের সর্দার ফটিক তার বন্ধুদের কাছে প্রস্তাব রাখে যে নদীর জলে শাল কাঠের গুঁড়িটা গড়িয়ে দেবে।  বালকেরা এই প্রস্তাব অনুমোদন করলে সকলে মাইল গুঁড়িটা গড়াতে আরম্ভ করে।  কিন্তু ফটিকের ছোটভাই মাখন  যখন সেই গুঁড়িটায় এসে বসে , খেলার আনন্দ মাটি হয়ে যায়।  

(১১) " তখন আর ফটিকের সহ্য হইল না "

-(ক) ফটিক কে ? 

(খ) তার কী সহ্য হল না ও কেন ? 

(গ) এরপর সে কী করে ? 

উত্তরঃ 

(ক) আলোচ্য অংশটিতে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " ছুটি" ছোটগল্পে বালকদের সর্দার ও গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক।  

(খ) নদীর ধারে পরে থাকা একটি প্রকান্ড শালকাঠের গুঁড়িকে নীচে গড়িয়ে দিয়ে মজা করে খেলার পরিকল্পনা করছিল ফটিক ও তার বন্ধুরা।  কিন্তু ফটিকের ভাই মাখন শালকাঠের গুঁড়ির ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে এসে বসে এবং বার বার  উঠে যেতে বললেও সে ওঠে না।  তখন গুঁড়িশুদ্ধ গড়াতেই তার বিপত্তি ঘটে। সে মাটিতে পড়ে যায়।  কিন্তু বাড়িতে ফিরে সে মায়ের কাছে মিথ্যে কথা বলে যে ফটিক তাকে মেরেছে। মায়ের কাছে এই মিথ্যে কথাটা ফটিকের সহ্য হল না।  

(গ) ফটিক তার মেক জানায় যে সে মাখনের গায়ে হাত তোলেনি।  মাখনকে পুনর্বার জিজ্ঞাসা করায় মাখন জানায় যে ফটিক তাকে মেরেছে।  মাখনের এই মিথ্যে কথা ফটিকের সহ্য হয় না।  সে মাখনের গালে সশব্দে এক চড় বসিয়ে দেয়।  মা এতে আরও রেগে গিয়ে ফটিককে মারে।  রগে ফটিক মাকে  ঠেলে দেয়। 

(১২) " বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন।  " 

(ক) বাক্যটি কোন রচনার অন্তর্গত ? লেখকের নাম কী ? 

(খ) বিধবা মহিলার পরিচয় দাও। 

(গ) বিধবা কোন প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হলেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) বাক্যটি "ছুটি " রচনার অন্তর্গত।  

                 লেখকের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।  

(খ) বিধবা মহিলা হলেন ফটিক ও মাখনলালের মা।  

(গ) ফটিকের মা তাঁর ভাই বিশ্বম্ভর বাবুকে জানায় যে ফটিক অবাধ্য এবং লেখাপড়ায় অমনোযোগী।  একথা শোনার পর বিশ্বম্ভর বাবু ফটিককে  কোলকাতায় নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেন।  মামার ইচ্ছা কোলকাতায় তিনি নিজ দায়িত্বে ফটিককে শিক্ষা দেবেন।  একথা শুনে ফটিকের মা সহজেই সম্মত হলেন।  

           ফটিকের মা ফটিককে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন।  তাই তিনি ভেবেছিলেন ফটিক মামার বাড়িতে ঠিকমতো বড়ো হয়ে উঠুক , তাই তিনি বিশ্বম্ভর বাবুর প্রস্তাবে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।  

(১৩) " তেরো- চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নেই। "

---- সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'ছুটি' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।  

        'ছুটি' গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক একটি তের-চৌদ্দ বছরের বালক।  এই প্রসঙ্গে গল্পকথক উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন। 

         তের-চৌদ্দ বছর বয়স এমনই যে অনেকের কাছেই তা বালাই বা ঝামেলা বলে মনে হয়।  এই বয়সে ছেলেমানুষী ভাব যেমন ন্যাকামি বলে লোকে মনে করে তেমনই একটু পরিণত বয়সের মতো কথাবার্তাকেও পাকামি বা জ্যাঠামিসুলভ আচরণ বলে বিরক্তিকর মনে করে। ছোট বয়সের মিষ্টতাও তাদের মধ্যে থাকে না , আবার দায়িত্বপালনে সক্ষম না হওয়ায় সংসারের কোন কাজেও লাগে না।  তাই লোকের মনে স্নেহ উদ্রেক করতেও তারা ব্যর্থ হয়।  আকারে বড় হয়ে উঠলেও আচরণে বা বুদ্ধিতে তারা পরিণত হয় না।  অহেতুক কৌতূহল অন্যের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে।  কৈশোর বয়সের এই অসহায়তার কথা বোঝাতেই গল্পকথক প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।  

(১৪) " এইটে ফটিকের সবচেয়ে বাজিত " 

(ক) ফটিক কে ? 

(খ) সে কোলকাতায় কার বাড়িতে এসেছিল এবং সেখানে তার অবস্থা কী হয়েছিল ? 

(গ) কোনটি তার সবচেয়ে বাজত এবং কেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " ছুটি" ছোটগল্পে বালকদের সর্দার ও গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক।

(খ) ফটিক কোলকাতায় তার মামা  বিশ্বম্ভরবাবুর সঙ্গে  তার বাড়িতে এসেছিল।  ফটিককে নিজের কাছে রেখে লেখাপড়া শেখাবেন বলে তার মামা নিয়ে এসেছিল।  কিন্তু তার মামি ফটিকের এই মামাবাড়িতে আসাটা একদম পছন্দ করেন নি।  ফলে কোলকাতায় মামারবাড়িতে ফটিকের দিনগুলো অত্যন্ত অনাদরে ,অবহেলা ও স্নেহহীন ব্যবহারের মধ্যে অত্যন্ত মনোকষ্টের মধ্যে দিন কাটছিল। 

(গ) ফটিক তার মামাবাড়িতে এসে মামির ও বাড়ির সকলের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করত।  তাই মামি কোন কাজ তাকে করতে বললে সে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে করত।  কিন্তু মামির কাছ থেকে একটুও ভালোবাসা বা ভালো ব্যবহার সে পায় না।  মামির  চোখে  সে একটি দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হত তাই মামির স্নেহহীন ব্যবহার ও অনাদর ফটিকের মনে সবচেয়ে বাজত। 

(১৫) " মা , এখন আমার ছুটি হয়েছে মা , এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি। " 

(ক) উল্লিখিত অংশটি কার কোন রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

(খ) বক্তা কে ? এখানে বক্তা কোন ছুটির কথা বলেছে ? 

(গ) কেন তার অকালে ছুটি হল এবং এর জন্য কারা দায়ী ? 

উত্তরঃ 

(ক) উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ' ছুটি' ছোটগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।  

(খ) বক্তা ফটিক জ্বরের ঘোরে প্রলাপের মধ্যে সে একথা বলে। ফটিকের জ্বর অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় সে প্রলাপের ঘোরে তার অবচেতন মনে যা জমে ছিল সেইগুলিই বলে চলে। ছুটিতে তার গ্রামে মার কাছে যাবার কথা তার বার বার মনে হয়েছে।  তাই মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে চিরছুটির দেশে যাত্রা করছে সে।  তাই সে মেক বলে তার ছুটি হয়ে গেছে ও সে চিরদিনের জন্য তার বাড়িতে চলে যাচ্ছে।  

(গ)  ফটিক গ্রামের সহজ সরল পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছে।  মামার সঙ্গে সে নিজের ইচ্ছেতে কোলকাতায় এলেও মামার বাড়িতে মামীর স্নেহহীন ব্যবহার , সবার অবহেলা তাকে নিঃসঙ্গ করে তুলেছিল।  তাই কোলকাতায় চার দেওয়ালের মধ্যে কেবলই তার মা ও গ্রামের কথা মনে পড়ত। ছুটি হলে সে বাড়ি যেতে পারবে এই কথা অবচেতন মনে সারাক্ষণ ঘুরত।  একদিন তার জ্বর হয় কিন্তু তার অসুস্থতার জন্য সবার কাছে বিশেষত মামির কাছে তাকে কী পরিমাণ গঞ্জনা সহ্য করতে হবে সেটা বুঝতে পেরে সে একাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়ে।  রাস্তা না চেনা থাকায় স্বভাবতই ব্যর্থ হয়।  পুলিশ যখন তাকে খুঁজে মামার বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে যায় তখন আর কিছু করার ছিল না।  সবাইকে ছেড়ে সে চিরছুটির দেশে পাড়ি দেয়।  তার এই অকাল ছুটির জন্য তার মা, মামা, মামি , মামাতো ভাইয়েরা , স্কুলের শিক্ষক সবার স্নেহহীন ব্যবহার ও অনাদরই দায়ী। 


               







Monday, 25 July 2022

ছুটি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 গল্পের সারসংক্ষেপ


"ছুটি" গল্পটি ১২৯৯ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যার " সাধনা" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটিতে এক পল্লীশিশুর  সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং শহরের কৃত্রিম আবহে পল্লীশিশুটির অকালমৃত্যু গল্পটিকে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে।  

                            বালকদের সর্দার ফটিক নিত্য-নৈমিত্তিক খেলার নতুন নতুন পরিকল্পনা করে।  নতুন খেলার উদ্ভাবন করে সে আনন্দ পায়।  তাই নদীর ধরে পড়ে থাকা শালকাঠের গুঁড়িকে গড়িয়ে জলে ফেলে দিতে বন্ধুদের সঙ্গে মনস্থ করে।  ফটিকের সঙ্গে তার ভাই মাখনের একদমই বনিবনা হয় না।  ফটিকের বিধবা মা এক সংসার চালাতে ও দুটি ছেলেকে মানুষ করতে হিমসিম খায়।  ফটিক ও মাখনের ঝগড়ার সময় অধিকাংশ সময় বয়সে ছোট বলে মাখনের পক্ষ নেয় এবং ফটিককে বকে।  মাখন তাই সুযোগ পেলেই ফটিককে বিরক্ত করে।  তাই ফটিক ও তার বন্ধুরা যখন শালগাছের গুঁড়িটাকে নিয়ে একটু মজা করতে চায় তখন মাখন সেই শালগাছের গুঁড়িটার ওপর গিয়ে বসে পড়ে।  ফটিকের প্রস্তাবমতো মাখনকে সহ ঐ কাঠ গড়াতে গেলে মাখন পড়ে  যায়।  এতে রেগে গিয়ে মাখন  ফটিককে অন্ধভাবে মারতে থাকে।  মাখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যায়।  এমন সময় একটি নৌকা ঘাটে এসে লাগে।  অর্ধবয়সী এক ভদ্রলোক চক্রবর্ত্তীদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে ফটিক অনির্দিষ্টভাবে উত্তর দে 'ওই হোথা। ' পুনরায় প্রশ্ন করলে বলে 'জানিনে।' অচিরেই ফটিকের মা ফটিককে ডেকে পাঠান।  মাখনকে কেন্দ্র করে অশান্তি হয়।  মা ফটিককে প্রহার করেন।  ফটিক মাকে ঠেলে দেয়।  এমনসময় সেই অর্ধবয়সী ভদ্রলোক ঘরে ঢোকেন -- জানা যায় ইনি ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু।  ফটিকের অবাধ্যতা ওপড়াশোনায় অমনোযোগের কথা বোনের কাছে শুনে বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে নিয়ে কলিকাতায়  রওনা হন।  কলিকাতায় মামীর সঙ্গে ফটিকের সম্পর্ক তেমন সুখের হয় না।  মামীর স্নেহহীন চোখে সে যে দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হয় এতেই ছিল তার দুঃখ।  শুধু তাই নয় গ্রামের খোলামেলা প্রকৃতির কাছে জীবনযাপনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কলিকাতায় শহরের পরিবেশ তার কাছে  সদৃশ হয়ে ওঠে।  ফটিক এই অসহায় পরিস্থিতিতে মামাকে মার্ কাছে পৌঁছে দেবার জন্য বারংবার আবেদন করে।  মামা বলেন স্কুলের ছুটি হোক।  কিন্তু তার তখনো অনেক দেরি।  ফটিক এর মধ্যে বই হারিয়ে মামীর কাছে তিরস্কৃত হয়।  স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী এবং মামাতো ভাইদের কাছেও সে ক্রমাগত হেনস্থ হতে থাকে। সবার এই স্নেহহীন ব্যবহারে ফটিক খুব অসহায় বোধ করতে থাকে।  নিজের গ্রামের খোলা মাঠ আর মায়ের কথা তার সবসময় মনে পড়তে থাকে।  ক্রমেই অভিমান ফটিকের মনের মধ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকে।  ফটিক প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়।  সে জানে তার এই অসুখ মামী ক্ষমা করবে না।  সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।  সেদিন প্রবল বর্ষণ।  অসুস্থ ফটিককে পুলিশের  লোক বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়।  ফটিকের অসুস্থতা বৃদ্ধি পায়।  সে মায়ের প্রতীক্ষায় থাকে এবং বিড়বিড় করে বকতে থাকে , ' একবাঁও মেলে না।  দো বাঁও মেলে-এ -এ না। 'কলিকাতায় আসার পথে স্টিমারের খালাসিরা জল মাপছিল 'ফটিক প্রলাপে  তাহাদেরই অনুকরণে করুণস্বরে জল মাপিতেছে এবং যে অকূল সমুদ্রে যাত্রা করিতেছে , বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না। ' এমন সময়ে তার মা কাঁদতে কাঁদতে এসে পৌঁছায় , কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।  মায়ের ডাক শুনে ফটিক জানায় ' মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি। ' সবাইকে ছেড়ে সে চিরছুটির দেশে পাড়ি দেয়।  

                  
























Tuesday, 19 July 2022

দাম - নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

 প্রশ্ন ও উত্তর (দ্বিতীয় অংশ ) 

(১০) "...... সেই বিভীষিকা মন থেকে গেল না "

---------বক্তা এখানে কোন বিভীষিকার কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ  

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পে অঙ্কে অসাধারণ দক্ষ মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ককে ভালোবাসা এবং অঙ্ক জানা প্রতিটি ছাত্রের অবশ্য কর্তব্য।  ছাত্ররা অঙ্ক না পারলেই মাস্টারমশাইয়ের প্রকান্ড হাতের প্রচন্ড মার্ খেতে হত তাদের।  সুকুমার ও তাঁর সহপাঠীদের কাছে তখন অংকের ভয়কে ছাপিয়ে যেত মাস্টারমশাই য়ের মারের ভয়।  অঙ্ক এবং অঙ্কের মাস্টারমশাই ---- এই দুই আতঙ্ক বা বিভীষিকার কথাই এখানে বলা হয়েছে। 

(১১) " লিখলাম তাঁকে নিয়েই " ---- বক্তা কাকে নিয়ে কী লিখেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের কথক সুকুমার যখন লেখক হিসেবে অল্পসল্প নাম করেছেন তখন এক অনামি পত্রিকা থেকে তাঁর  বাল্যস্মৃতি লেখার প্রস্তাব আসে।  সুকুমার তাঁর স্কুলের বিভীষিকাস্বরূপ অঙ্কের মাস্টারমশাইকে নিয়ে স্মৃতিকথাটি লেখেন।  

             লেখাটিতে তিনি ভয় দেখিয়ে এবং মারধর করে মাস্টারমশাইয়ের অঙ্ক শেখানোর পদ্ধতিকে রীতিমতো সমালোচনা করেন।  তাঁর মতে , ভয় কোনো বিষয়কে ভালোবাসতে সাহায্য করে না বরং সেই বিষয়টি থেকে ছাত্রকে আরও দূরে ঠেলে দেয়।  

(১২) " ছবিটা যা ফুটল , তা খুব উজ্জ্বল নয় " 

------ এখানে কোন ছবির কথা বলা হয়েছে ? ছবিটা উজ্জ্বল নয় কেন ? 

উত্তরঃ 

আলোচ্য অংশে "ছবি" বলতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের কথক সুকুমারের লেখায় মাস্টারমশাইয়ের যে রূপ ধরা পড়েছিল তার কথা বলা হয়েছে।  

                 বাস্তব ও কল্পনার খাদ মিলিয়ে মাস্টারমশাইয়ের যে ছবি সুকুমার এঁকেছিল তাতে তাঁর সমালোচনাই ছিল সর্বত্র।  কথক লিখেছিলেন যে অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না।  মাস্টারমশাই এত প্রহার করেও তাঁকে অঙ্ক শেখাতে পারেন নি , বরং যা শিখেছিলেন তাও ভুলে গিয়েছিলেন।  এইভাবে যে নেতিবাচক ছবি মাস্টারমশাইয়ের আঁকা  হয়েছিল তা তাঁর চরিত্রকে পাঠকদের কাছে  উজ্জ্বল করেনি।  


(১৩) " এখানকার চড়ুইপাখিও সেখানে রাজহংসের সম্মান পায় " 

-উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের কথক সুকুমার ছিলেন মাঝারি মাপের লেখক।   বাংলাদেশের এক প্রান্তিক কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়ার ও বক্তৃতা  দেওয়ার ডাক পাওয়ার প্রসঙ্গেই তিনি প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।  শহর কোলকাতার মানুষ সম্পর্কে মফস্সলের লোকজন অযথা উচ্চ ধারণা পোষণ করেন।  কোলকাতা থেকে সাধারণ মানের লেখক সেখানে গেলেও খ্যাতনামা সাহিত্যিকের সংবর্ধনা পান।  তাই সুকুমার বলেছেন কোলকাতার চড়ুই পাখিও সেখানে রাজহংসের সম্মান পায়।  

(১৪) " কত শ্রদ্ধা নিয়ে লিখেছে " --- উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।  

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পে  ছাত্ররা অনেক না পারলে অঙ্ক -অন্তপ্রাণ

মাস্টারমশাই তাদের ভয়ানক প্রহার করতেন।  তাঁর এক ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে একটি পত্রিকায় মাস্টারমশাইয়ের সেই বিভীষিকাময় শাসনের কথা লিখে যথেষ্ট সমালোচনাও করেন।  মাস্টারমশাই কিন্ত সেই সমালোচনাকে ছাত্র তথা সন্তানের অধিকার  বলেই গ্রহণ করেন।  তাঁর মনে হয়, ছাত্র তাঁর কথা মনে রেখে অনেক শ্রদ্ধা নিয়ে গল্প লিখেছে।  মাস্টারমশাইয়ের উদারতায় সুকুমারের সব সমালোচনা তাঁর কাছে ছাত্রের শ্রদ্ধার প্রকাশ বলেই মনে হয়।  

(১৫) " স্নেহ -মমতা -ক্ষমার এক মহা সমুদ্রের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে " 

---- কোন পরিপ্রেক্ষিতে বক্তার এ কথা মনে হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার তাঁর স্কুলের  বিভীষিকাস্বরূপ অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের সমালোচনা করে পত্রিকায় বাল্যস্মৃতি লিখেছিলেন।  এর অনেক বছর পরে হঠাৎ মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে দেখা হতে তিনি জানতে পারেন যে এই সরল মনের মানুষটি এত বছর ধরে সেই লেখাটিকে পড়ে সযত্নে সঙ্গে রেখেছেন।  ছাত্রের সমালোচনাকে তিনি উদারমনে গ্রহণ করে তাকে ছাত্র তথা সন্তানের অধিকার বলে স্বীকৃতিও দিয়েছেন।  তখনই লজ্জাবশত সুকুমারের এই কথা মনে হয়েছে। 









Friday, 17 June 2022

দাম - নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়


প্রশ্ন ও উত্তর  ( প্রথম অংশ ) 

(১) " স্কুলে কী বিভীষিকাই যে ছিলেন ভদ্রলোক !" 

এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? তিনি কেন বিভীষিকা ছিলেন ? 

উত্তরঃ 

আলোচ্য অংশটিতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' গল্পের কথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কথা বলা হয়েছে।  

          অঙ্কে অসাধারণ দক্ষ সেই মাস্টারমশাই যে কোনো অঙ্কই মুহূর্তে সমাধান করে ফেলতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে অঙ্ক না জানলে জীবন বৃথা।  তাই মাস্টারমশাই অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে ছাত্রদের অঙ্ক শেখানোর চেষ্টা করতেন।  ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে ক্রূদ্ধ মাস্টারমশাই এর প্রকান্ড হাতের প্রচন্ড চড় তাদের পিঠে নেমে আসত  কিন্তু কাঁদবার জো ছিল না, এ কারণেই তিনি ছাত্রদের কাছে বিভীষিকা ছিলেন।  

(২) " সব যেন ওঁর মুখস্থ " 

-- যাঁর কথা বলা হয়েছে তাঁর সব মুখস্থ ছিল বলে ছাত্রদের কেন মনে হত ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে।  ছাত্রদের মনে হত , পৃথিবীর সব অনেক মাস্টারমশাইয়ের মুখস্থ ছিল।  কারণ , যেসব জটিল অঙ্ক তারা কিছুতেই মেলাতে পারত না , মাস্টারমশাই মাত্র একবার সেটি দেখেই বোর্ডে তার সমাধান করে দিতেন।  শুধু  তাই নয় , এমন অনায়াস ভঙ্গিতে তিনি অঙ্কের সমাধান করে দিতেন।  শুধু তাই নয় , এমন অনায়াস ভঙ্গিতে তিনি অঙ্কের সমাধান করতেন যে মনে হত , সেটি যেন অদৃশ্য হরফে বোর্ডে লেখা আছে আর তিনি শুধু তার উপর খড়ি বোলাচ্ছেন।  

(৩) " ওঁর ভয়ে তারাই তটস্থ হয়ে থাকত " - কার ভয়ে করা কেন তটস্থ হয়ে থাকত ? 

উত্তরঃ

 নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পে অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের ভয়ে যারা পরীক্ষায় একশোতে একশো পেত তারাও তটস্থ হয়ে থাকত। 

              স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই ছিলেন অসাধারণ দক্ষ।  যে কোন জটিল অঙ্কই তিনি অনায়াসে সমাধান করে ফেলতেন।   মাস্টারমশাই মনে করতেন , অঙ্ক না জানলে জীবন বৃথা।  তাই তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে ছাত্রদের অঙ্ক শেখাতেন।  কিন্তু ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে তিনি ভয়ানক রেগে গিয়ে তাদের মারতেন বলেই লেখাপড়ায় ভালো ছাত্ররাও তাঁকে ভয় পেত।  

(৪) " কিন্তু কাঁদবার জো  ছিল না " 

- (ক) কাদের কাঁদবার জো ছিল না ? 

(খ) কেন তাদের কাঁদবার জো ছিল না ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার ও তাঁর স্কুলের সহপাঠীদের কাঁদবার জো ছিল না।  

   সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই মনে করতেন প্রতিটি ছাত্রের উচিত অঙ্ক জানা এবং অঙ্ককে ভালোবাসা।  তিনি ছাত্রদের প্রাণপণে অঙ্ক শেখানোর চেষ্টা করতেন।  আর এই জন্য প্রয়োজনে তাদের প্রহার করতেও দ্বিধা করতেন না।  মাস্টারমশাইয়ের মতে , অঙ্ক না পেরে কাঁদার বিষয়টি একেবারেই পুরুষোচিত নয়।  মার্ খেয়ে ছাত্রদের কান্না পেলেও তারা কাঁদতে পারত না।  কারণ কাঁদলে মাস্টারমশাই আরো রেগে যেতেন। 

(৫)  " পুরুষ মানুষ হয়ে অঙ্ক পারিসনে " 

--- উক্তিটির আলোকে বক্তার মনোভাব ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্প থেকে উল্লিখিত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই। 

      মাস্টারমশাই নিজে ছিলেন অঙ্ক -অন্তঃপ্রাণ।  তিনি বিশ্বাস করতেন , অঙ্ক জানা এবং অঙ্ককে ভালোবাসা প্রতিটি ছাত্রের অবশ্য কর্তব্য।  মাস্টারমশাই ছেলেদের স্কুলে পড়াতেন , তাই তাঁর কাছে পৌরুষ এবং ছেলেদের অঙ্কে দক্ষতা প্রায় সমার্থক ছিল।  অঙ্ক না পেরে তাঁর হাতে মার্ খেয়ে ছেলেরা কাঁদলে তিনি এভাবেই তাদের ধিক্কার জানাতেন। 

(৬) " এখনি পা ধরে স্কুলের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেবো " 

-----   বক্তা কেন পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্প থেকে নেওয়া উক্তিটি সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের।  

            অঙ্ক -অন্তঃপ্রাণ মাস্টারমশাইয়ের ক্লাসের কোনো ছাত্র অঙ্ক না পারলেই তার পিঠে নেমে আসত তাঁর প্রকান্ড হাতের  প্রচন্ড চড়।  সে চড় খেয়ে কোনো ছাত্র কাঁদলেই তাকে তিনি পা ধরে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিতেন।  তাঁর মতে অঙ্ক না পৰ এবং কাঁদা , দুটোই পুরুষমানুষের পক্ষে চরম লজ্জার বিষয়। 

(৭) " এমন ঘটনা কল্পনাও করতে পারতেন না। " 

- যাঁর কথা বলা হয়েছে , তিনি কোন অঘটন কল্পনা করতে পারতেন না ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের  কথা বলা হয়েছে।  

               গল্পকথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের অঙ্কে অসাধারণ দক্ষতা ছিল।  যে-কোনো ধরণের জটিল অঙ্কের দিকে একবার মাত্র তাকিয়েই তিনি অনায়াসে সেটি সমাধান করে ফেলতে পারতেন।  তিনি বিশ্বাস করতেন অঙ্ক জানা এবং অঙ্ককে ভালোবাসা প্রতিটি ছাত্রের অবশ্য কর্তব্য।  মাস্টামশাই ছেলেদের স্কুলে পড়াতেন , তাই তাঁর কাছে পৌরুষ এবং ছেলেদের অঙ্কে দক্ষতা প্রায় সমার্থক ছিল।  একজন পুরুষমানুষ অঙ্ক পারে না , এটাই ছিল মাস্টারমশাইয়ের কাছে অঘটন।  এমন অঘটন তিনি কল্পনাও করতে পারতেন না।  

(৮) " প্লেটোর দোরগোড়ায় কী লেখা ছিল , জানিস ? " 

(ক) প্লেটো কে ? 

(খ) বক্তা প্লেটোর দোরগোড়ায় কোন লেখার কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পে উল্লিখিত প্লেটো ছিলেন প্রাচীন  গ্রিসের বিখ্যাত দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ।  তিনি সক্রেটিসের শিষ্য ছিলেন।  তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ 'দ্য রিপাবলিক'। 

(খ) অঙ্ক -অন্তঃপ্রাণ মাস্টারমশাই বলতেন যে , প্লেটোর বাড়ির দোরগোড়ায় লেখা ছিল যারা অঙ্ক জানে না তাঁর বাড়িতে তাদের প্রবেশ নিষেধ।  মাস্টারমশাইয়ের মতে স্বর্গের দরজাতেও নাকি ওই একই কথা লেখা আছে।  

(৯) " সে স্বর্গের চাইতে লক্ষ যোজন দূরে থাকাই আমরা নিরাপদ বোধ করতুম " 

-- বক্তার এই রকম মনে করার কারণ কী ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের  অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কাছে অঙ্ক না পারাটা ছিল অপরাধ।  তিনি ছাত্রদের বলতেন যে গ্রিক গণিতজ্ঞ প্লেটোর বাড়ির দোরগোড়ায় লেখা ছিল যারা অঙ্ক জানে না তাঁর বাড়িতে তাদের প্রবেশ নিষেধ।  মাস্টারমশাই বলতেন স্বর্গের দরজাতেও নাকি ওই একই কথা লেখা আছে।  তাই গল্পকথক সুকুমার ও তাঁর সহপাঠীদের মনে হত , যে স্বর্গে ঢুকেই জ্যামিতির এক্সট্রা বা স্কোয়ার মেজারের অঙ্ক করতে হয় তার থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। 











                       























 







Thursday, 9 June 2022

খেয়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) " খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে " 

- পংক্তিটির উৎস লিখে নৌকার কাজের বর্ননা দাও। 

উত্তরঃ 

প্রশ্নে উল্লিখিত পংক্তিটির উৎস হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের    'চৈতালী 'কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'খেয়া ' কবিতা।  

                       নদী পারাপারের মাধ্যম হল খেয়া  তরি ।  কর্মসূত্রে বা অন্য প্রয়োজনে এক গ্রামের মানুষকে নদী পার হয়ে অন্য গ্রামে যেতেই হয় , তখনই তাদের প্রয়োজন হয় খেয়া তরির।  নদী পারাপারের সূত্রকে কেন্দ্র করেই এই খেয়া নৌকা দুই গ্রামের মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে চলেছে আবহমানকাল ধরে।  নদীকূলবর্তী দুই গ্রামের মানুষের প্রাত্যহিক জীবন 'খেয়া নৌকা'র মাধ্যমে এভাবেই আবর্তিত হয়।  

(২)  " খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে "  

-- নদীস্রোতের প্রসঙ্গের মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ 

খেয়া নৌকার মাধ্যমে নদীর দুই পারের মানুষ আপন আপন প্রয়োজনে এক পার থেকে পরপারে যাওয়া-আসা করে।  কেউ কর্মের তাগিদে বাড়ি থেকে বাইরে যায় আবার কেউ-বা বাইরে থেকে ঘরে ফেরে।  আবহমানকাল ধরে যেমন নদী প্রবহমান , তেমনই মানুষের কর্মস্রোতও অনন্তকাল ধরেই চলে আসছে।  নদীবক্ষে বয়ে চলা খেয়া নৌকা মানবজীবনের শাশ্বত বহমানতাকেই প্রকাশ করছে।  কবি নদী স্রোতের মাধ্যমে জীবনের এই সত্যকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন।  

(৩) " কেহ যায় ঘরে , কেহ আসে ঘর হতে " 

--- 'কেহ ' বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তারা কীভাবে যাওয়া -আসা করে ? 

উত্তরঃ 

প্রশ্নের এই অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'খেয়া ' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।  এখানে নদীর দুই পারে অবস্থিত গ্রামের মানুষদের 'কেহ ' বলা হয়েছে , যারা খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হয়। 

              খেয়া নৌকার মাধ্যমে নদীর দুই তীরের মানুষ নিত্য যাওয়া -আসা করে।  কেউ কর্মের তাগিদে বাড়ি থেকে বাইরে যায় , আবার কেউ বা কাজ শেষে বাড়ি ফেরে ওই খেয়া নৌকায় সওয়ার হয়ে।  নদীর মতোই মানুষের এই যাওয়া -আসা প্রবহমান , যার মাধ্যম হল খেয়া তরি। 

(৪) " নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস " 

--- কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? কীভাবে নতুন ইতিহাস গড়ে ওঠে ? 

উত্তরঃ 

কবি মানব -ইতিহাসের সংঘাত , ধ্বংস ও সৃষ্টির চিরসত্যতা প্রসঙ্গেই 'খেয়া ' কবিতায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।  

            কবি উপলব্ধি করেছেন অহংবোধ , ক্ষমতার লোভ , হিংসার বশবর্তী হয়ে শক্তিরাষ্ট্রগুলি পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয় বারংবার।  ফলে একটি সাম্রাজ্য ধ্বংস হয় আবার সেই ধবংসস্তূপের ওপরেই স্থাপিত হয় নতুন সাম্রাজ্য।  আবহমানকাল ধরেই এভাবে সাম্রাজ্যের ভাঙাগড়া চলে আসছে।  এই গড়ার মাধ্যমেই রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস। 

(৫) " পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব , কত সর্বনাশ " 

---- এই দ্বন্দ্ব -সংঘাতের কারণ কী ? এর পরিনাম  কী ? 

উত্তরঃ 

আবহমানকাল ধরে পৃথিবীতে মানব -ইতিহাস কলঙ্কিত হচ্ছে দ্বন্দ্ব সংঘাত ও পারস্পরিক যুদ্ধের কারণে। শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রকে দখল করার চেষ্টায় রত।  ক্ষমতার লোভ , অহংবোধ , হিংসাই হল দ্বন্দ্ব সংঘাতের মূল কারণ। পাশবিক স্বার্থপরতার কারণেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে তথা মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব -সংঘাত সংগঠিত হয়।  

                    দ্বন্দ্ব -সংঘাতের ফলেই রক্তাক্ত হয় মানব -ইতিহাস।  দুর্বল শোষিত ও পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়।  এই দ্বন্দ্বের ফলেই সৃষ্টি হয় যুদ্ধ তাতে ধ্বংস হয় এক সাম্রাজ্য , আবার গড়ে ওঠে নতুন এক সাম্রাজ্য।  

(৬) " সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে" 

----- কোথায় ,কীভাবে এমন ঘটনা ঘটে ? 

উত্তরঃ 

----- পৃথিবীতে যেখানে মানবসভ্যতার বিজয়রথ এগিয়ে চলেছে সেখানেই 'সোনার মুকুট ' ফুটে আর টুটে।  

    সুখ- দুঃখ আনন্দ বেদনাময় পৃথিবীতে  দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই আছে।  এখানেই রচিত হয় সভ্যতার ইতিহাস।  ক্ষমতার দম্ভে শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রকে পেশি শক্তি প্রয়োগ করে নিজের ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে।  জয় -পরাজয় , সিংহাসন , স্বর্ণ মুকুট এই সবই রাজাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু সাধারণ মানুষ এই সবের থেকে দূরে থাকে।  তারা তাদের দৈনন্দিন সাধারণ জীবন শান্তিপূর্ণ ভাবে কাটিয়ে দেয়।  এক রাজা সিংহাসনে বসে ,চলে যায় , অন্য রাজা আবার সিংহাসনে বসে।  কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই ভাবেই পৃথিবী আবহমানকাল ধরেই চলে। 

(৭) " রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে " 

---- 'রক্তপ্রবাহ ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? এখানে  'ফেনাইয়া ' শব্দ ব্যবহারের গুরুত্ব কী ? 

উত্তরঃ 

'রক্তপ্রবাহ ' বলতে রক্তস্রোতের কথাই বলা হয়েছে।  সভ্যতার ইতিহাস হল রক্তাক্ত ইতিহাস।  অধিক শক্তিধর রাষ্ট্র নিজেদের পেশিশক্তির মাধ্যমে দুর্বল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা হরণ করে।  এর জন্য যুদ্ধ হয় , রক্তস্রোত বয়।  এই রক্তস্রোতকেই কবি 'রক্তপ্রবাহ ' বলেছেন। 

                     ' ফেনা' অস্থায়ী।  সৃষ্টির ক্ষণকালের মধ্যেই বুদ্বুদের মতো তার বিনাশ ঘটে।  অশুভ শক্তির গর্বোদ্ধত আচরণও সভ্যতার ইতিহাসে ক্ষণকালের জন্যই।  বুদ্বুদের মতো অল্প সময়েই তার বিনাশ ঘটে।  এই সত্যটিকেই কবি 'ফেনাইয়া ' শব্দের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। 

(৮)  "উঠে কত হলাহল , উঠে কত সুধা !" 

--কোন প্রসঙ্গে কবি এই মন্তব্যটি করেছেন ?  উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'খেয়া' কবিতায় কবি মানব সভ্যতার অগ্রগতি প্রসঙ্গে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।  

          মানুষ তার জীবনযাত্রার মানকে ক্রমাগত উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।  তার এই ক্রমাগত উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।  তার এই ক্রমাগত উন্নতির ইতিকথাই হল মানব সভ্যতার ইতিহাস।  

               মানুষ যত সুখস্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছে , ততই তার মধ্যে আরও বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা লোভ জেগেছে।  সভ্যতার অগ্রগতি মানুষের  হাতে ভয়ংকর অস্ত্রের যোগান দিয়েছে।  ক্ষমতা দখলের লোভে মানুষ মেতে উঠেছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে।  এক সাম্রাজ্যের অবসানে সূচনা হয়েছে নতুন সাম্রাজ্যের। রক্তস্রোতের মধ্যে লেখা হয়েছে মানব সভ্যতার ইতিহাস।  

              পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী সমুদ্র মন্থনে হলাহল এবং সুধা অর্থাৎ বিষ ও অমৃত দুইই উঠেছিল।  কবির মতে সভ্যতার অগ্রগতিতেও তেমনি বিষ আর অমৃত দুইই উঠে এসেছে। কবি সভ্যতার ক্ষতিকারক রূপকে বিষ আর কল্যাণময় রূপকে সুধা বলেছেন।  দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকক্ষেত্রেই সভ্যতার ক্ষতিকারক রূপ তার কল্যাণময় রূপকে ছাপিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে।  নাগরিক জীবনের এই পরিণতি কবিকে কষ্ট দিয়েছে।  তাই তিনি পল্লীজীবনের শান্ত - মাটির গন্ধমাখা রূপটির উল্লেখ করেছেন।  সেখানে সভ্যতার অগ্রগতি তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেই বোধহয় আবহমান কাল ধরে মানুষের সঙ্গে মানুষের মানবিক সম্পর্ক বেঁচে আছে। 


           










Monday, 24 January 2022

এই জীবন - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

 উৎস : 

'দেখা হলো ভালোবাসা বেদনায় ' কাব্যগ্রন্থ 

বিষয় : 

'এই জীবন ' কবিতাটিতে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়  মানুষকে মানুষের মতো বাঁচার কথা বলেছেন।  কবি আমাদের জীবনকে 'জীবন্ত ' করে তুলতে চেয়েছেন।  কবিতাটিতে বহুবারই মানুষের মতো বাঁচার কথা বলা হয়েছে।  এর থেকে সন্দেহ জাগে আমরা কি সত্যিই বেঁচে আছি।  কবির মতে বহু মানুষই বেঁচে আছেন শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে।  কখনও অভাবের তাড়নায় শুধুমাত্র দুবেলা - দুমুঠো অন্ন জোগানোকেই অনেকে মনে করেন বেঁচে থাকা।  আবার যাদের অন্নচিন্তা নেই সেই মানুষগুলোও শুধুমাত্র অভ্যাসের বশে খেয়ে-ঘুমিয়ে শারীরিকভাবে বেঁচে আছে।  কবি এই দুই ধরণের মানুষকেই বলেছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে।  কবি মনে করেন, পৃথিবীর রূপ - রস -গন্ধ - স্পর্শ সবকিছুকে আস্বাদন করে বাছাই মানুষের মতো বাঁচাই মানুষের মতো বাঁচা। তিনি তাঁর জীবন থেকে কিছুই বাদ দিতে চান না।  রোদ - বৃষ্টি -প্রকৃতি যা কিছু পৃথিবীর মানুষের জন্য ঢেলে দিচ্ছে সেই সবকিছুই কবি চাইছেন আস্বাদন করতে।  কবি বলছেন , তাঁর ক্ষুধার অন্নও চাই, কিন্তু সেই অন্ন যেন নিছক দেহকে বাঁচানোর জন্যই না হয় , তা যেন মনেরও খাদ্য জোগায়।  কবি এও বলেছেন ,' নইলে গোটা দুনিয়া খাব ', এই পংক্তিটির মধ্যে দিয়ে কবির ক্ষোভপূর্ণ প্রতিবাদের মূর্তিটি চোখে পড়ে।  তিনি  যেন পৃথিবীর বাকি ক্ষুধার্ত মানুষদেরও দাবী করতে বলছেন।  কবি বলছেন , তাঁকে কেউ বঞ্চিত করে রাখবে , ঠকিয়ে ভুলিয়ে রাখবে।  সুতোর কলে , কামারশালায় তাকে নিলাম করবে তা তিনি সহ্য করবেন না অর্থাৎ তিনি 'পণ্য ' হিসেবে ব্যবহৃত হতে নারাজ। মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ তার স্বাধীনতায় অস্তিত্বে। মানুষ যদি সেই স্বাধীনতা খুইয়ে শুধুমাত্র পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে হয় মনুষ্যত্বের চরম অবমাননা।  কবি তা কিছুতেই হতে দেবেন না।  তিনি নিজের 'মানুষ' হিসাবে বাঁচার অধিকার যেমন করে হোক আদায় করে নেবেন।  তিনি যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন শুধু মানুষের মত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে অর্থাৎ শারীরিক ভাবে ( মানুষ সেজে আসা ) এসেছিলেন , কিন্তু তিনি চান যখন তিনি আবার ফায়ার যাবেন তখন শুধু মানুষের শরীর নিয়ে নয়, মানুষের সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে ফিরে  যাবেন।  তিনি আমাদের সবাইকে মানুষের মত বেঁচে উঠতে বলছেন, তবেই জীবনটা জীবন্ত হয়ে উঠবে। 






 

Thursday, 30 December 2021

দাম - নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

 প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা কর :

(১) " কত শ্রদ্ধা নিয়ে লিখেছে " 


উল্লিখিত উক্তিটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'দাম' ছোটগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা গল্পকথক সুকুমারের ছোটবেলার স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক।  

                   মাস্টারমশাইয়ের অঙ্কে দুর্বল ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে লেখক হয়ে একটি পত্রিকায় বাল্যস্মৃতি লিখেছিলেন।  সেই লেখায় মাস্টারমশাইয়ের মেরে অঙ্ক শেখানোর পদ্ধতিকে সমালোচনা করেন তিনি। সেটি পরে সরল মনের মাস্টারমশাই তাকে ছাত্রের শ্রদ্ধার্ঘ্য বলেই গ্রহণ করেছিলেন এবং সেই প্রসঙ্গে তিনি উল্লিখিত উক্তিটি করেন। 

                  'দাম' গল্পে দেখা যায় ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে অঙ্ক - অন্তঃপ্রাণ মাস্টারমশাই তাদের ভয়ানক প্রহার করতেন।  তাঁর এক ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে একটি পত্রিকায় মাস্টারমশাইয়ের সেই বিভীষিকাময় শাসনের কথা লিখে যথেষ্ট সমালোচনাও করেন।  মাস্টারমশাই কিন্তু সেই সমালোচনাকে ছাত্র তথা সন্তানের অধিকার বলেই গ্রহণ করেন।  তাঁর মনে হয় , ছাত্র তাঁর কথা মনে রেখে অনেক শ্রদ্ধা  নিয়েই তাঁকে নিয়ে গল্প লিখেছে। মাস্টারমশাইয়ের উদারতায় সুকুমারের সব সমালোচনা তাঁর কাছে ছাত্রের শ্রদ্ধার প্রকাশ বলে মনে হয়। 


(২) " অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না।  গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করতে গেলে গাধাটিই পঞ্চত্ব পায়। " 

উল্লিখিত উক্তিটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার তার অঙ্কের মাস্টারমশাই শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে উক্তিটি করে।  

                         গল্পের কথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কশিক্ষক তার কাছে বিভীষিকাস্বরূপ ছিল।  অঙ্ক -অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ক না পারা এক ভয়ঙ্কর  অপরাধ।  তাই তিনি যে ছাত্ররা অঙ্ক পারত না তাদের তিনি প্রচন্ড প্রহার করতেন। মাস্টারমশাইয়ের সম্পর্কে গল্প লিখতে গিয়ে গল্পকথক তাঁর শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে উল্লিখিত উক্তিটি করে।  

                               কথকের মাস্টারমশাইয়ের শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে এহেন উপলব্ধি হয়েছিল নিজের জীবনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থেকে। শৈশবে স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই অঙ্ক না পারলে প্রচন্ড প্রহারের সঙ্গে পা ধরে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখাতেন।  পুরুষমানুষ হয়ে অঙ্ক না পারা ও তার জন্য বকুনি বা মার খেয়ে চোখের জল ফেলা দুই-ই তাঁর কাছে অপরাধ ছিল।  এর ফলে অঙ্ক বিষয়টিই সুকুমারের কাছে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়।  আর এ কারণেই ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করে কথক মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে রেহাই পেতে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করেনি।  বর্তমানে কথক একটি কলেজের বাংলার অধ্যাপক।  একদিন মাস্টারমশাই যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে যেনতেনপ্রকারেণ অঙ্ক শেখাতে চাইছেন, আজ সেই অঙ্ক ছাড়াই কথক উজ্জ্বল ভবিষ্যতে পচে গেছে।  মাঝ থেকে অঙ্কের সাধারণ সমস্যাগুলির সমাধান ও সে আর করতে পারে না এবং অঙ্ক সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়েছে সে।  অভিজ্ঞতা দিয়ে তাই কথক বুঝতে পেরেছে অহেতুক তাড়না দিয়ে কাউকে কিছু শেখানো যায় না - মাঝ থেকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু প্রাপ্তি হয়।  


(৩) " মনে এলো মাস্টারমশাইয়ের কথা।  লিখলুম তাঁকে নিয়েই......................" 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত "দাম" ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি মনে মনে ভাবেন। 

       গল্পকথক সুকুমার একটি কলেজের বাংলার প্রফেসর।  একটি পত্রিকার পক্ষ থেকে তার কাছে তার ছোটবেলার বিষয়ে গল্প লেখার ফরমাশ আসে।  গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবতে গিয়ে উল্লিখিত উক্তিটি সে মনে মনে করে।  

       কলেজের প্রফেসর সুকুমারের কাছে তার স্কুলের অংকের শিক্ষক ছিলেন এক বিভীষিকা।  অঙ্ক-অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ক না জানা অপরাধ।  তাই তিনি মেরে ধরে ছাত্রদের অঙ্ক করাতেন।  অঙ্কের মাস্টারমশাইকে  সুকুমার এতই ভয় পেত যে সে অঙ্ক বিষয়টি থেকেই দূরে সরে গেল।  ম্যাট্রিকুলেশনের পর অঙ্ক ও অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে নিস্তার পেয়ে সে স্বস্তির নিস্তার ফেলল ও এর পরে সে এম-এ পাশ করে একটি কলেজে বাংলার শিক্ষক হয়। পত্রিকা থেকে যখন তার কাছে ছোটবেলার গল্প লেখার জন্য ফরমায়েশ আসে তখন তার প্রথমেই অংকের মাস্টারমশাইয়ের শিক্ষাপদ্ধতি টি  যে ছাত্রদের জন্য কতখানি ক্ষতিকর ছিল তা সে তার গল্পের মাধ্যমে সবাইকে জানাবে।  এই ভেবে সে অংকের মাস্টারমশাইকে সে গল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেয়।  

 
















             



Friday, 6 November 2020

ইলিয়াস

 ইলিয়াস 

লিও তলস্তয় 


আজ আমি নবম শ্রেণির পাঠ্য লিও তলস্তয়ের লেখা " ইলিয়াস " গল্পটির  মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করব।  " ইলিয়াস " গল্পটি নেওয়া হয়েছে লেখকের Twenty Three Tales গল্প সংকলন থেকে। 

     গল্পটি একজন পরিশ্রমী , কর্মঠ , সাধারণ ভালো মানুষের জীবন উপলব্ধির কাহিনি।  গল্পের প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্র ইলিয়াস।  ঊনবিংশ শতাব্দীতে , আর্থ-সামাজিক সমাজ ব্যবস্থা যখন সামন্ততান্ত্রিক থেকে পুঁজিবাদীতে পরিবর্তিত হচ্ছিল তখন সাধারণ লোকেদের জীবন ধারণের জন্য প্রচুর কাজ করতে হত।  পরিবারের জন্য , ঈশ্বর চিন্তার জন্য কোন সময় থাকত না. ইলিয়াস ও তার স্ত্রীর জীবনও সেই রকম ছিল।  প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , এখনও মানুষের জীবন সেইরকমই।  

                           গল্পটিতে আমরা দেখতে পাই যে ইলিয়াস এমন একজন মানুষ যে নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম , প্রচেষ্টা ও সুব্যবস্থাপনায় প্ৰভূত সম্পত্তি অর্জন করেছিল।  ধনী অবস্থায় সে ছিল অত্যন্ত অতিথি বৎসল ও দয়ালু মানুষ।  কিন্তু গল্পের শেষে দেখা যায় ভাগ্যের ফেরে সে একজন কপর্দকহীন মানুষে পরিণত হয়েছে।  সে ও তার স্ত্রী তার প্রতিবেশীর বাড়িতে ভাড়াটে মজুরের মত কাজ করে জীবন কাটাচ্ছিল।  কিন্তু সেই নিয়ে ইলিয়াস ও তার স্ত্রী শাম-শেমাগির কোন আফশোস ছিল না।  বরং গল্পের শেষে তার স্ত্রীর জবানীতে আমরা জানতে পারি তাদের দুজনের জীবন -উপলব্ধির কথা।  ধনসম্পত্তি থাকলেও মনে শান্তি ছিল না ইলিয়াস দম্পতির।  অর্থ , লোকবল , সম্পত্তি ইত্যাদি প্রাচুর্যের মধ্যেও ছিল দুশ্চিন্তা ও অশান্তি।  সম্পত্তি হারিয়ে শাম-শেমাগি ও  ইলিয়াস  প্রকৃত সুখ ও সত্যের তাৎপর্য বোঝে।  তখন ভাড়াটে মজুর হিসেবে কাজের বিনিময়ে অন্ন- বাসস্থান পেলেও স্বামী-স্ত্রীতে একান্তে মনের কথা আলোচনা করার মত সময় পেত।  ঝগড়া ও দুশ্চিন্তার বদলে মনিবের কাজেই তাদের অধিকাংশ সময় কেটে যেত।  মনের কথা আলোচনা করা ও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করারও অবকাশ ছিল।  তাই শাম -শেমাগির এই উপলব্ধি হয় যে , পঞ্চাশ বছরের দাম্পত্য জীবনে সুখ খুঁজে খুঁজে এতদিনে তারা হদিশ পেয়েছে।  

              এই গল্পটি আমাদের এক চিরকালীন সত্যের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।  সম্পদ ও বৈভব থেকে মানুষের মনের শান্তি পাওয়া যায় না।  বরঞ্চ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনই শান্তির বার্তা নিয়ে আসে।  আপন লোকেদের সাথে সময় কাটানো , ঈস্বরচিন্তা ও আত্মচিন্তাই মানুষকে সঠিক শান্তি দিতে পারে ও মনকে আনন্দে ভরে তুলতে পারে।  

জীবনে কিছুই চিরস্থায়ী নয়।  তাই সুখের মতো দুঃখকেও হাসিমুখে মেনে নিতে পারলেই শান্তির সন্ধান  পাওয়া সম্ভব।  












 


     

খেয়া

 


উৎস : 


১৯১১ খ্রিস্টাব্দে  প্রকাশিত  " চৈতালী " কাব্যগ্রন্থের ১৩ সংখ্যক কবিতা " খেয়া" ।   
         কবি ১৩০২ বঙ্গাব্দে পূর্ববঙ্গের পতিসরে নদীবক্ষে জমিদারীর কাজ উপলক্ষ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  সেই সময় অধিকাংশ সময়ই তিনি নদীবক্ষে বোটেই থাকতেন। নদীমাতৃক বাংলার নদনদীর তীর , 
তীরবর্তী গ্রাম , সেখানকার মানুষের সহজসরল অনাড়ম্বর জীবনকে নিবিড় কৌতূহলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করেছিলেন।  সেই আটপৌরে প্রকৃতির পটে যে-জীবনকে তিনি দেখেছেন তারই পরিপ্রেক্ষিতে আবহমান জীবনের ছবি কবি তাঁর এই "খেয়া " কবিতাটি লিখেছেন।


কবিতার সারসংক্ষেপ :

স্বয়ং কবি " খেয়া " কবিতাটি প্রসঙ্গে বলেছেন যে , এটি একটি স্থানিক রঙে রঞ্জিত কবিতা।  এই স্থানিক রংটি  হল একটি নদী , তার দুই তীরে দুটি গ্রাম , প্রতিদিনের আনাগোনায় তারা পরস্পরের পরিচিত।  নদীবক্ষে ভেসে  চলেছে নৌকা, সে নৌকায় কেউ ঘর ছেড়ে বিশ্বজীবনের পথে পা রাখে , আবার কেউ ঘরে ফেরে। একান্তই নিরাভরণ একটি সাদামাটা জীবন।  এ জীবন দেখতে দেখতেই কবির মনে একটি ভাবনার উদয় হয়েছে।  এই পৃথিবীতে কত 
দ্বন্দ্ব-রেষারেষি , রক্তক্ষয় , সাম্রাজ্যের উত্থানপতন প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে।  কিন্তু তার কোনো ছায়া এই একান্তই নিরাভরণ , সরল, অনাড়ম্বর নদী তীরবর্তী গ্রাম্য জীবনে পড়ে না।  তাদের কেউ জানেও না ,চেনেও না। নদীর উভয় তীরের গ্রাম দুটি শুধু নিজেরাই নিজেদেরকে জানে  , চেনে, পরস্পর পরস্পরকে অবলম্বন করে বেঁচে থাকে।  অনন্তকাল ধরে এই নদীপথেই খেয়া চলে চিরদিন। 
এ খেয়া হল জীবনের খেয়া -অনন্ত মানবপ্রবাহ।  নাগরিক সভ্যতার উত্থানপতন , তার 'নব নব তৃষ্ণা ' ,' ক্ষুধা ' ,হলাহল  বা  অমৃত কোন কিছুই স্পর্শ করতে পারে না।  
               পৃথিবীর ইতিহাস হল রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বসংঘাতের ইতিহাস।  লোভের আগুনে পুড়ে যায় মানবতা।  ধ্বংসলীলায় মত্ত ক্ষমতাদর্পীদের হানাহানিতে সাম্রাজ্যের উত্থানপতন ঘটে অনবরত।  সোনার মুকুট যেমন 'ফুটে' আবার 'টুটে'ও।  কিন্তু প্রবহমান মানবসভ্যতার প্রেক্ষাপটে সাম্রাজ্যলোভীদের বিজয়গৌরব তুচ্ছ ঘটনামাত্র।  ক্ষমতার দম্ভ জলের  বুদ্বুদের মতই ক্ষণস্থায়ী।  ক্ষমতার দর্পে উন্মত্ত মানুষের প্রমত্তলীলা সভ্যতাকে শুধু কলঙ্কিতই করেছে।  
তবু এই ধ্বংসের মধ্য দিয়েই জীবন বয়ে চলেছে নদীর স্রোতে ভাসা      'খেয়া ' র মতই।  




আবহমান

 

কবিতার মূলভাব : 


'আবহমান ' কথাটির  অর্থ হল বহুকাল ধরে যা চলে আসছে , অর্থাৎ যা চিরপ্রচলিত  অথবা যা ক্রমাগত একইরকমভাবে হয়ে চলেছে।  
            উঠোনের  লাউমাচাটির পাশে সান্ধ্য বাতাসে একটা ফুল দোলে।  এই উঠোন ফেলে আসা শৈশবের উঠোন।  এই ফুল জীবনের এক একটি অতীত মুহূর্ত।  এই স্মৃতিতাড়িত অতীত মুহূর্তের কথাই কবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন।  এখানেই একদিন অনেক বছর আগে নিবিড় অনুরাগে ঘর বাঁধা হয়েছিল।  হয়তো পরিস্থিতির কারণে একদিন হারিয়ে গিয়েছিলাম আমরা , হয়তো অনেক দূরে কোথাও চলে গিয়েছিলাম।  এই মাটি , এই হাওয়াতে ভালোবেসেই আবার ফিরে  এসেছি।  আসলে শৈশবের প্রতি মানুষের ভালোবাসা -আকর্ষণ যে কোনদিনই ফুরোয় না।  তাই স্মৃতির সরণি বেয়ে আমরা ফিরে  যাই আমাদের অতীতে, আপন মনে সারাটা দিন ঘাসের গন্ধ মাখি ; সারাটা রাত স্বপ্নের জাল বুনি।  তবু অতীত থেকে   নির্বাসিত হওয়ার দুঃখ যন্ত্রণা মনের ভিতরে চিরকাল জেগে থাকে। সেই দুঃখকে আমরা লালন করি বুকের ভিতর। কারণ সে-দুঃখ কখনও বাসি হয় না।  আসলে মানুষ বড়ো হয় , বৃদ্ধ হয় , তার বয়স বাড়ে ; কিন্তু স্মৃতি মেদুর মনের বয়স বাড়ে না।  তাই নটে  গাছটি বুড়িয়ে গেলেও , মুড়িয়ে যায় না।  উঠোন , লাউমাচা , সান্ধ্য হাওয়ায় ফুল দোলা অর্থাৎ ফেলে আসা জীবন ও প্রকৃতির রূপচ্ছবি অবিকৃত থাকে।  আসলে মাতৃভূমির সঙ্গে , শিকড়ের সঙ্গে , শৈশব স্মৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চিরকালীন।  সংসারের প্রয়োজনে হয়ত কখনো আমাদের দূরে চলে যেতে হয় , কিন্তু মনের মধ্যে সেই স্মৃতি ফল্গু ধারার ন্যায় বয়ে চলে।  সেই ফেলে আসা অতীত, ছেলেবেলার শৈশব-গন্ধ মাখা নানান আনন্দঘন মুহূর্ত , তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে সেই ফেলে আসা সময়ে , তার শৈশবের বাসভূমিতে।  


দাম (গল্প)

 নবম শ্রেণি ( CBSE ) 

সাহিত্য সঞ্চয়ন 
গদ্য : দাম 
লেখক : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় 


গল্পের উৎস : 
'দাম' ছোটগল্পটি ১৩৬৫ বঙ্গাব্দের শারদীয়া 'তরুণের স্বপ্ন' তে প্রথম প্রকাশিত হয়।  

গল্পকথক : 
 'সুকুমার' নামক একব্যক্তি। 

গল্পের সারসংক্ষেপ :

গল্পকথক সুকুমারের কাছে তার ছোটবেলার স্কুলের অংকের মাস্টারমশাই ছিলেন আতঙ্কস্বরূপ।  একেই সে অংকে অত্যন্ত দুর্বল ছিল তার উপর অত্যন্ত রাগী ও অসাধারণ অংকে দক্ষ মাস্টারমশাইয়ের জন্য অংক তার কাছে বিভীষিকা হয়ে উঠেছিল। মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ক না শিখলে জীবনে কিছুই কেউ করতে পারবে না , এমন কী তার জন্য স্বর্গের দরজাও বন্ধ থাকবে।  স্কুলে যারা অঙ্কে ভাল ছিল তারাও মাস্টারমশাইয়ের  ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত , আর সুকুমারের মতো যারা টেনেটুনে কুড়ি পেত তাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।  তাই অঙ্ক সুকুমারের কাছে বরাবরই অপছন্দের বিষয় হয়েই থেকে গেছে। পরবর্তীকালে সে কলেজের  বাংলাভাষার অধ্যাপক হয়েছে। ছোটোখাটো লেখকরূপে তার অল্প বিস্তর নামযশ ও হয়।  তখন এক অনামি পত্রিকার তরফে তার বাল্যস্মৃতি লেখার জন্য প্রস্তাব আসে।  সে তখন তার সেই আতঙ্কস্বরূপ অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের গল্পটি লেখেন এবং তার জন্য নগদ দশ টাকা পারিশ্রমিক পান। স্বভাবতই  সে তার কিশোরবেলায় দেখা মাস্টারমশাইয়ের সেই বিভীষিকাময় রূপটি ই তার স্মৃতিকথায় তুলে ধরেন এবং সে রূপ যে খুব উজ্জ্বল নয় তা বলাই বাহুল্য। তার স্মৃতিকথায় সে এও বলে যে  মাস্টারমশাইয়ের শেখানোর পদ্ধতিতে ভুল ছিল কারণ জোর করে বা মেরে বা ভয় দেখিয়ে ছাত্রদের কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায় না।  
            এরপর বহুদিন পেরিয়ে যায়।  সুকুমারকে বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজ থেকে বার্ষিক অনুষ্ঠানে অতিথি হবার ডাক পড়ে।  সেখানে সে প্রচুর সম্বর্ধনা পায় এবং সেখানেই তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন তার সেই মাস্টারমশাই।  বিস্মিত সুকুমার জানতে পারে যে তার লেখা সেই বাল্যস্মৃতিটি এখন তার মাস্টারমশাইয়ের সর্বক্ষণের সঙ্গী। শিক্ষাদান, ছাত্র ও অঙ্ক-অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাই তাঁর সহজাত সারল্যে সুকুমারের সমালোচনাকেও উদারমনে গ্রহণ করেছেন। ছাত্রের গর্বে তিনি গর্বিত।  সুকুমারের যাবতীয় সমালোচনা যেন মাস্টারমশাইয়ের পায়ে ছাত্রের বিনম্র শ্রদ্ধা হয়ে ঝরে পড়েছে। সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অপ্রস্তুত সুকুমার উপলব্ধি করে যে কিশোর হিসেবে সে সেদিন শুধু মাস্টারমশাইয়ের শাসনকেই দেখেছিলেন, অনুভব করতে পারে নি ছাত্রদের প্রতি তাঁর অন্তহীন স্নেহ। 
            পৃথিবীতে এমন অনেক জিনিস আছে যা দাম দিয়ে কেনা যায় না, যেমন- স্নেহ, ভালোবাসা , মমতার সম্পর্কগুলি।  মাস্টারমশাইকে নিয়ে তার ছোটবেলার অভিজ্ঞতা বিক্রি করে সুকুমার দশ টাকা পেয়েছিল-- এটাই তাকে চরম আত্মঅনুশোচনায় ভোগায়। মাস্টারমশাইয়ের উদ্দেশে করা সমালোচনা দাম দিয়ে বিক্রি করা যায় , কিন্তু তাঁর স্নেহ দাম দিয়ে কেনা যায় না।  স্নেহ অমূল্য , তাকে শুধু মাথা পেতে গ্রহণ করতে হয়।    


পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...