Friday, 6 November 2020

দীনদান

 দীনদান 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


কবিতার উৎস: 
" দীনদান " কবিতাটি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত " কথা ও কাহিনী " কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।  

বিষয় সংক্ষেপ : 
রাজভৃত্য এসে রাজাকে খবর দেয় যে সাধুশ্রেষ্ঠ নরোত্তম রাজার তৈরি সোনার দেবালয়ে আশ্রয় না নিয়ে পথের পাশে গাছতলায় বসে নাম সংকীর্তন করছে। তাঁকে অনুরোধ করা হলেও তিনি দেবালয়ে আশ্রয় নিতে রাজি হন নি।  ভ্রমর বা মৌমাছি যেমন কমলগন্ধে মত্ত হয়ে সোনার তৈরি মধুর ভান্ড ফেলে ছুটে যায় পদ্মবনে তেমনই ভক্তবৃন্দও সোনার তৈরি দেবালয় ছেড়ে সাধুর সঙ্গলাভের আশায় গাছের তলায় ছুটে গেছে।  তাদের আনন্দাশ্রুতে পৃথিবীর ধূলি ভিজে পবিত্র হয়ে গেছে।  দেবাঙ্গন শূন্য পরে রয়েছে।  রত্নবেদীর উপর দেবতার মূর্তি একা  পড়ে   রয়েছে।  
           রাজা এই খবর পেয়ে অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে ছুটে যান যেখানে সাধুশ্রেষ্ঠ নরোত্তম গাছের তলায় বসে নাম সংকীর্তন করছেন।  রাজা প্রণাম করে জিজ্ঞাসা করেন যে আকাশ ছোঁয়া সোনার তৈরি দেবালয় ছেড়ে এই পথের প্রান্তে বসে সাধুশ্রেষ্ঠ কেন দেবতার স্তবগান করছেন।  সাধু উত্তর দেন রাজার তৈরি সেই স্বর্ণ দেবালয়ে দেবতা নেই।  রাজা এই উত্তর শুনে খুবই রেগে গিয়ে সাধুশ্রেষ্ঠকে বললেন তিনি নাস্তিকের মতো কথা বলছেন।  দেবালয়ের রত্নসিংহাসনের উপরে যে বিগ্রহ বিরাজমান তা সবাই দেখতে পাচ্ছে। সে তো শূন্য নয়।  সন্ন্যাসী বলেন তা শূন্য নয় , রাজ  অহংকারে পূর্ণ।  তিনি মন্দিরের বেদীতে দেবতাকে নয় , নিজেকেই স্থাপন করেছেন। অহংকারী রাজা বলেন যে বিশ  লক্ষ  স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করে যে গগনভেদী মন্দির তিনি তৈরি করেছেন ,পূজামন্ত্র দিয়ে তা দেবতাকে দানও করেছেন , সেই মন্দিরে দেবতার স্থান হয়নি একথা অবিশ্বাস্য।  সন্ন্যাসী শান্তমুখে  জানায় , যখন অগ্নিকান্ডে গৃহহীন , অন্নবস্ত্রহীন , দীন দুঃখী প্রজারা রাজার কাছে সাহায্যের প্রার্থনায় এসেছিল তখন নিষ্ঠূর রাজা তাদের কোনরকম সাহায্য না করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল।  অথচ সেই বছরই লক্ষ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা ব্যয় করে তিনি দেবতার জন্য স্বর্ণমন্দির তৈরি করেছিলেন। তখনই ভগবান তার মন্দির ছেড়ে চলে গেছেন।  " তাঁর " গৃহের চারটি স্তম্ভ হল সত্য , শান্তি , দয়া ও প্রেম।  যে রাজা নিজের অসহায় , গৃহহীন প্রজাদের আশ্রয় দিতে পারেন না , তিনি ঈশ্বরকে কখনোই গৃহ দিতে পারেন না।  সমুদ্রের মাঝখানে ঢেউয়ের ফেনা  কিছুক্ষনের জন্য দেখা দিয়ে মিলিয়ে যায় কারণ তা শূন্য।  সেই রকমই রাজার তৈরি স্বর্ণ মন্দির শুধুমাত্র রাজার স্বর্ণ ও অহংকারের প্রতীক এবং তাও শূন্য।  তাই ঈশ্বর তার মন্দির থেকে বেরিয়ে পথপ্রান্তে অসহায় আর্তজনের পাশে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।  
                   মূর্খ রাজা এই কথা শুনে রেগে গেলেন ও সাধু শ্রেষ্ঠ নরোত্তমকে তার রাজ্য থেকে চলে যেতে বললেন।  তাতে সন্ন্যাসী একটুও বিচলিত না হয়ে বললেন ভগবানকেই তিনি যখন তার রাজ্য থেকে নির্বাসন দিয়েছেন তখন ভক্তকেও সেখানে পাঠালে সেটা ভক্তের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়।  

No comments:

Post a Comment

পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...