তোতাকাহিনি
সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখ :
(১) " অল্প পুঁথির কর্ম নয় "
উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে।
এক মূর্খ তোতা পাখি ছিল। সে গান গাইত , লাফাত , উড়ত কিন্তু শাস্ত্র পড়ত না। কায়দাকানুন কাকে বলে জানত না। পাখিকে অত্যন্ত অকেজো মনে হল রাজার। তাই তাকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। রাজার ভাগ্নের পাখিটার শিক্ষার আয়োজন শুরু করলেন। বড়ো বড়ো পন্ডিতেরা এসে পাখিটাকে দেখলেন তখন পাখিটাকে শিক্ষা দেওয়ার প্রসঙ্গে উল্লিখিত উক্তিটি করেন।
পন্ডিতদের পরামর্শক্রমে স্যাকরা এসে পাখির শিক্ষার জন্য শিক্ষায়তন হিসেবে সোনার খাঁচা বানাতে বসল। সেই আশ্চর্য মূল্যবান খাঁচাটি দেখতে দেশবিদেশের লোক সপ্রশংস দৃষ্টিতে তার ওপর ঝুঁকে পড়ল। এরপর পন্ডিতেরা পাখিকে শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পুঁথি রচনায় মনোযোগী হলেন। যথার্থ শিক্ষাদান যেহেতু 'অল্প পুঁথির কর্ম নয় ' , সেহেতু তাঁরা লিপিকরদের নিয়ে রাশিরাশি পুঁথির নকল করাতে শুরু করলেন।
(২) " শুধু শব্দ নয় , পিছনে অর্থও কম নয় "উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে।রাজভাগনে রাজাকে এ কথা জানিয়েছিলেন। তোতার শিক্ষা কীভাবে চলছে , তা দেখার জন্য রাজা তাঁর পাত্র , মিত্র, অমাত্যদের নিয়ে শিক্ষালয়ে পা রাখা মাত্র শঙ্খ , ঘন্টা , ঢাক , ঢোল , কাড়া নাকাড়া , রণশিঙা , পটহ , রণভেরি , কাঁশি , বাঁশি , কাঁসর , খোল , করতাল , পাখোয়াজ , জয়ঢাক প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র বেজে ওঠে। পন্ডিতদের মন্ত্রপাঠ এবং সমবেত জনতার জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক। গর্বিত , আনন্দিত ভাগনে রাজাকে সেই 'কান্ডটা ' লক্ষ করতে বললে রাজা বলেন 'আশ্চর্য ' ! শব্দ কম নয়। ' এরই উত্তরে ভাগনে প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেন।ভাগনের বক্তব্য হল রাজার আগমন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র , মন্ত্রপাঠ ও সমবেত জনতার জয়ধ্বনির যে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে , তার জন্য বিপুল অর্থও ব্যয়িত হয়েছে। পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিদ্যালয় পরিদর্শন। বিদ্যালয়ে শিক্ষার অগ্রগতি দেখার জন্য স্কুল-পরিদর্শকেরা মাঝে মাঝেই পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু স্কুল - পরিদর্শনে এসে , স্কুল - কতৃপক্ষের কাছে তাঁরা এতখানিই সমাদর লাভ করেন যে , তাঁরা সেখানে আসার উদ্দেশ্যই কখনো কখনো ভুলে যান। সেই আড়ম্বরপূর্ণ অর্থ -ব্যয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীর মঙ্গলের পরিবর্তে পরিদর্শকের তুষ্ট করার অনৈতিক উদ্দেশ্যই লুকিয়ে থাকে।(৩) স্যাকরা থলি বোঝাই করিয়া বকশিশ পাইল।উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে।" তোতাকাহিনি " পাঠ্যাংশে এক মূর্খ তোতা পাখি ছিল। সে গান গাইত , লাফাত , উড়ত কিন্তু শাস্ত্র পড়ত না। কায়দাকানুন কাকে বলে জানত না। পাখিকে অত্যন্ত অকেজো মনে হল রাজার। তাই তাকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। রাজার ভাগ্নের পাখিটার শিক্ষার আয়োজন শুরু করলেন। বড়ো বড়ো পন্ডিতেরা এসে পাখিটাকে দেখলেন এবং বললেন যে পাখিটির জন্য একটি পাখির সোনার খাঁচা বানাতে হবে। খাঁচা বানানোর জন্য স্যাকরা থলি বোঝাই করে বকশিশ পেয়ে বাড়ির দিকে পাড়ি দিয়েছিল।পন্ডিতেরা বলেছিলেন ছোট্ট তোতা পাখিটির অবিদ্যার কারণ তার ক্ষুদ্র বাসা। তাই পন্ডিতরা নির্দেশ দেন যে পাখির শিক্ষা উপযুক্তভাবে পরিচালনার জন্যসর্বাগ্রে একটি ভালো খাঁচা তৈরী করা প্রয়োজন। পাখির শিক্ষায়তন হিসেবে স্যাকরা সোনার খাঁচা বানায় এবং সেই মহার্ঘ খাঁচাটি এত অসামান্য সুন্দর দেখতে হয় , দেশ বিদেশের লোক সপ্রশংস দৃষ্টিতে তা দেখতে আসে। শিক্ষা নয় , শিক্ষার আয়োজনে মুগ্ধ হয়ে রাজা তাই স্যাকরাকে থলি বোঝাই করে বকশিশ দেন।
No comments:
Post a Comment