Tuesday, 27 April 2021

দেবতার বিদায়

 দেবতার বিদায় 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

দেবতা মন্দির মাঝে ভকত প্রবীণ 

জপিতেছে জপমালা বসি নিশিদিন 

হেনকালে সন্ধ্যাবেলা ধূলিমাখা দেহে 

বস্ত্রহীন জীর্ণ দীন পশিল সে গেহে 

কহিল কাতর কন্ঠে , " গৃহ মোর নাই,

একপাশে দয়া করে দেহ মোরে ঠাঁই। " 

সসংকোচে ভক্তবর কহিলেন তারে ,

" আরে আরে অপবিত্র , দূর হয়ে যা রে।  " 

সে কহিল," চলিলাম "- চক্ষের নিমেষে 

ভিখারি ধরিল মূর্তি দেবতার বেশে। 

ভক্ত কহে, " প্রভু মোরে কী ছল ছলিলে। "

দেবতা কহিল , " মোরে দূর করি দিলে। 

জগতে দরিদ্ররূপে ফিরি দয়াতরে 

গৃহহীনে গৃহ  দিলে আমি থাকি ঘরে। " 

উৎস : " দেবতার বিদায় " কবিতাটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত " চৈতালি " কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

কবিতা সংক্ষেপ : দেবমন্দিরে এক প্রবীণ ভক্ত দেবতার নাম জপ করেন রাতদিন।  একদিন সন্ধ্যায় সেখানে আসে এক দীন দরিদ্র মানুষ।  সে ভক্তকে জানালো যে , সে আশ্রয়হীন এবং অনুরোধ করল - তাকে মন্দিরের এক কোণে আশ্রয় দেওয়ার জন্য।  খালি গায়ে ধুলোমাখা অত্যন্ত রোগা মানুষটিকে দেখে সসংকোচে প্রবীণ ভক্ত তাকে অপবিত্র বলে মন্দির থেকে চলে যেতে বলেন।  মুহূর্তের মধ্যে সেই " অপবিত্র " ভিখারি দেবতার বেশ ধারণ করলেন। ভক্ত তখন কেঁদে জানালেন , --- প্রভু কেন তাকে এমনভাবে ছলনা করলেন ! দেবতা বলেন -- তিনি পৃথিবীতে দীনবেশেই ঘুরে বেড়ান।  যেখানে দীন , দরিদ্র আশ্রয় পায় , সেখানে তিনি অবস্থান করেন।  

   কবিতার মূলভাব : 

মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজমান।  অসহায় মানুষকে সেবার মধ্য দিয়েই দেবতাকে লাভ করা যায়।  

" জীবে প্রেম করে যেই জন 

সেইজন সেবিছে ঈশ্বর " 

মানুষকে অস্পৃশ্য ও অশুচি বলে ঘৃণা করলে দেবতাকে পাওয়া যায় না।  প্রবীণ ভক্ত এ ব্যাপারে অন্ধ ছিলেন।  তাই ধূলো কাদা মাখা আশ্রয়হীনের কাতর প্রার্থনাকে উপেক্ষা করে তিনি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।  প্রকৃতপক্ষে তিনি দেবতাকেই বিদায় দিয়েছিলেন।  

প্রশ্ন : 

১।  " দেবতার বিদায় " কবিতাটি কোন  কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

উত্তরঃ  " দেবতার বিদায় " কবিতাটি ' চৈতালি ' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

২।  ভক্ত সারাদিন কোথায় কী করছেন ? 

উত্তরঃ ভক্ত সারাদিন মন্দিরে বসে জপমালা নিয়ে ঠাকুরের নাম জপ করছে।  

৩।  সন্ধ্যাবেলা মন্দিরে কে প্রবেশ করেছিল ? 

উত্তরঃ সন্ধ্যাবেলা মন্দিরে দেবতা  দীন -হীন নিরাশ্রয় ভিখারির রূপ ধরে  প্রবেশ করেছিল। 

৪।  ভক্ত তার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করলেন ? 

উত্তরঃ ভক্ত তাকে ' অপবিত্র ' বলে তিরস্কার করে মন্দির থেকে দূর করে দিলেন।  

(৫) ভিখারি কার রূপ ধারণ করেছিল ? 

উত্তরঃ ভিখারি চোখের পলকে দেবতার রূপ ধারণ করেছিল। 

(৬) জপমালা কাকে বলে ? 

উত্তরঃ যে মালার গুটিকা বা পুঁতি গুনে গুনে ঠাকুরের নাম জপ করা হয় তাকে জপমালা বলে।  

(৭) দেবতার গৃহ বলতে কী বোঝায় ? 

উত্তরঃ সাধারণভাবে দেবতার গৃহ বলতে মন্দির বোঝায়।  দেবতার প্রকৃত গৃহ বলতে বোঝায় যেখানে  মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে।

(৮) দেবতার সেবা হয় কীসে ? 

উত্তরঃ দরিদ্র মানুষের সেবাতেই হয় প্রকৃত দেব-সেবা। মানুষের মধ্যেই দেবতার অধিষ্ঠান। তাই মানুষের সেবা করলে , বিপন্ন মানুষকে রক্ষা করলে দেবতা প্রীত হন।  সেইজন্য দেবসেবার শ্রেষ্ঠ উপায় মানবসেবা।  

(৯) দেবতা ছলনা করে ভক্তকে কী শিক্ষা দিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ দেবতা ছলনা করে ভক্তকে শিক্ষা  দিতে চেয়েছিলেন যে , " জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। " মানুষকে ঘৃণা করলে দেবতাকেই ঘৃণা করা হয়।  মানুষকে কাছে টেনে না নিলে দেবতাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়।  

(১০) ভক্ত কহে -" প্রভু মোরে কী ছল ছলিলে !" 

(ক) ভক্ত কে ? 

(খ) সে কি প্রকৃতই ভক্ত ? 

(গ) 'প্রভু ' বলতে এখানে কাকে বোঝানো হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

(ক) এক দেবমন্দিরে নিশিদিন জপমালা নিয়ে নাম জপকারী একজন প্রবীণ পূজারি  এখানে ভক্ত। 

(খ) প্রবীণ ভক্তের অন্তরে দেবতার জন্য অনেক ভক্তি আছে কিন্তু তিনি তাঁর দেবতাকে চেনেন না।  প্রকৃত ভক্ত তাই করতে চেষ্টা করে যা তাঁর দেবতা চান।  কারণ ভক্তের কাজই প্রভুকে সন্তুষ্ট করা।  ওই প্রবীণ ভক্ত তা করতে পারেন নি বা করতে চাননি।  তাই তিনি প্রকৃত ভক্ত নন।  তিনি দেবতাকে চিনতে পারেন নি।  

(গ) 'প্রভু ' বলতে এখানে দেবতাকে অর্থাৎ ঈশ্বরকে বোঝানো হয়েছে।  






  







 




1 comment:

পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...