গল্পের সারসংক্ষেপ :
"ছুটি" গল্পটি ১২৯৯ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যার " সাধনা" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটিতে এক পল্লীশিশুর সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং শহরের কৃত্রিম আবহে পল্লীশিশুটির অকালমৃত্যু গল্পটিকে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে।
বালকদের সর্দার ফটিক নিত্য-নৈমিত্তিক খেলার নতুন নতুন পরিকল্পনা করে। নতুন খেলার উদ্ভাবন করে সে আনন্দ পায়। তাই নদীর ধরে পড়ে থাকা শালকাঠের গুঁড়িকে গড়িয়ে জলে ফেলে দিতে বন্ধুদের সঙ্গে মনস্থ করে। ফটিকের সঙ্গে তার ভাই মাখনের একদমই বনিবনা হয় না। ফটিকের বিধবা মা এক সংসার চালাতে ও দুটি ছেলেকে মানুষ করতে হিমসিম খায়। ফটিক ও মাখনের ঝগড়ার সময় অধিকাংশ সময় বয়সে ছোট বলে মাখনের পক্ষ নেয় এবং ফটিককে বকে। মাখন তাই সুযোগ পেলেই ফটিককে বিরক্ত করে। তাই ফটিক ও তার বন্ধুরা যখন শালগাছের গুঁড়িটাকে নিয়ে একটু মজা করতে চায় তখন মাখন সেই শালগাছের গুঁড়িটার ওপর গিয়ে বসে পড়ে। ফটিকের প্রস্তাবমতো মাখনকে সহ ঐ কাঠ গড়াতে গেলে মাখন পড়ে যায়। এতে রেগে গিয়ে মাখন ফটিককে অন্ধভাবে মারতে থাকে। মাখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যায়। এমন সময় একটি নৌকা ঘাটে এসে লাগে। অর্ধবয়সী এক ভদ্রলোক চক্রবর্ত্তীদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে ফটিক অনির্দিষ্টভাবে উত্তর দে 'ওই হোথা। ' পুনরায় প্রশ্ন করলে বলে 'জানিনে।' অচিরেই ফটিকের মা ফটিককে ডেকে পাঠান। মাখনকে কেন্দ্র করে অশান্তি হয়। মা ফটিককে প্রহার করেন। ফটিক মাকে ঠেলে দেয়। এমনসময় সেই অর্ধবয়সী ভদ্রলোক ঘরে ঢোকেন -- জানা যায় ইনি ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু। ফটিকের অবাধ্যতা ওপড়াশোনায় অমনোযোগের কথা বোনের কাছে শুনে বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে নিয়ে কলিকাতায় রওনা হন। কলিকাতায় মামীর সঙ্গে ফটিকের সম্পর্ক তেমন সুখের হয় না। মামীর স্নেহহীন চোখে সে যে দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হয় এতেই ছিল তার দুঃখ। শুধু তাই নয় গ্রামের খোলামেলা প্রকৃতির কাছে জীবনযাপনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কলিকাতায় শহরের পরিবেশ তার কাছে সদৃশ হয়ে ওঠে। ফটিক এই অসহায় পরিস্থিতিতে মামাকে মার্ কাছে পৌঁছে দেবার জন্য বারংবার আবেদন করে। মামা বলেন স্কুলের ছুটি হোক। কিন্তু তার তখনো অনেক দেরি। ফটিক এর মধ্যে বই হারিয়ে মামীর কাছে তিরস্কৃত হয়। স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী এবং মামাতো ভাইদের কাছেও সে ক্রমাগত হেনস্থ হতে থাকে। সবার এই স্নেহহীন ব্যবহারে ফটিক খুব অসহায় বোধ করতে থাকে। নিজের গ্রামের খোলা মাঠ আর মায়ের কথা তার সবসময় মনে পড়তে থাকে। ক্রমেই অভিমান ফটিকের মনের মধ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফটিক প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়। সে জানে তার এই অসুখ মামী ক্ষমা করবে না। সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেদিন প্রবল বর্ষণ। অসুস্থ ফটিককে পুলিশের লোক বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়। ফটিকের অসুস্থতা বৃদ্ধি পায়। সে মায়ের প্রতীক্ষায় থাকে এবং বিড়বিড় করে বকতে থাকে , ' একবাঁও মেলে না। দো বাঁও মেলে-এ -এ না। 'কলিকাতায় আসার পথে স্টিমারের খালাসিরা জল মাপছিল 'ফটিক প্রলাপে তাহাদেরই অনুকরণে করুণস্বরে জল মাপিতেছে এবং যে অকূল সমুদ্রে যাত্রা করিতেছে , বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না। ' এমন সময়ে তার মা কাঁদতে কাঁদতে এসে পৌঁছায় , কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। মায়ের ডাক শুনে ফটিক জানায় ' মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি। ' সবাইকে ছেড়ে সে চিরছুটির দেশে পাড়ি দেয়।
No comments:
Post a Comment