নবম শ্রেণি ( CBSE )
সাহিত্য সঞ্চয়ন
গদ্য : দাম
লেখক : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
গল্পের উৎস :
'দাম' ছোটগল্পটি ১৩৬৫ বঙ্গাব্দের শারদীয়া 'তরুণের স্বপ্ন' তে প্রথম প্রকাশিত হয়।
গল্পকথক :
'সুকুমার' নামক একব্যক্তি।
গল্পের সারসংক্ষেপ :
গল্পকথক সুকুমারের কাছে তার ছোটবেলার স্কুলের অংকের মাস্টারমশাই ছিলেন আতঙ্কস্বরূপ। একেই সে অংকে অত্যন্ত দুর্বল ছিল তার উপর অত্যন্ত রাগী ও অসাধারণ অংকে দক্ষ মাস্টারমশাইয়ের জন্য অংক তার কাছে বিভীষিকা হয়ে উঠেছিল। মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ক না শিখলে জীবনে কিছুই কেউ করতে পারবে না , এমন কী তার জন্য স্বর্গের দরজাও বন্ধ থাকবে। স্কুলে যারা অঙ্কে ভাল ছিল তারাও মাস্টারমশাইয়ের ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত , আর সুকুমারের মতো যারা টেনেটুনে কুড়ি পেত তাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। তাই অঙ্ক সুকুমারের কাছে বরাবরই অপছন্দের বিষয় হয়েই থেকে গেছে। পরবর্তীকালে সে কলেজের বাংলাভাষার অধ্যাপক হয়েছে। ছোটোখাটো লেখকরূপে তার অল্প বিস্তর নামযশ ও হয়। তখন এক অনামি পত্রিকার তরফে তার বাল্যস্মৃতি লেখার জন্য প্রস্তাব আসে। সে তখন তার সেই আতঙ্কস্বরূপ অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের গল্পটি লেখেন এবং তার জন্য নগদ দশ টাকা পারিশ্রমিক পান। স্বভাবতই সে তার কিশোরবেলায় দেখা মাস্টারমশাইয়ের সেই বিভীষিকাময় রূপটি ই তার স্মৃতিকথায় তুলে ধরেন এবং সে রূপ যে খুব উজ্জ্বল নয় তা বলাই বাহুল্য। তার স্মৃতিকথায় সে এও বলে যে মাস্টারমশাইয়ের শেখানোর পদ্ধতিতে ভুল ছিল কারণ জোর করে বা মেরে বা ভয় দেখিয়ে ছাত্রদের কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায় না।
এরপর বহুদিন পেরিয়ে যায়। সুকুমারকে বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজ থেকে বার্ষিক অনুষ্ঠানে অতিথি হবার ডাক পড়ে। সেখানে সে প্রচুর সম্বর্ধনা পায় এবং সেখানেই তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন তার সেই মাস্টারমশাই। বিস্মিত সুকুমার জানতে পারে যে তার লেখা সেই বাল্যস্মৃতিটি এখন তার মাস্টারমশাইয়ের সর্বক্ষণের সঙ্গী। শিক্ষাদান, ছাত্র ও অঙ্ক-অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাই তাঁর সহজাত সারল্যে সুকুমারের সমালোচনাকেও উদারমনে গ্রহণ করেছেন। ছাত্রের গর্বে তিনি গর্বিত। সুকুমারের যাবতীয় সমালোচনা যেন মাস্টারমশাইয়ের পায়ে ছাত্রের বিনম্র শ্রদ্ধা হয়ে ঝরে পড়েছে। সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অপ্রস্তুত সুকুমার উপলব্ধি করে যে কিশোর হিসেবে সে সেদিন শুধু মাস্টারমশাইয়ের শাসনকেই দেখেছিলেন, অনুভব করতে পারে নি ছাত্রদের প্রতি তাঁর অন্তহীন স্নেহ।
পৃথিবীতে এমন অনেক জিনিস আছে যা দাম দিয়ে কেনা যায় না, যেমন- স্নেহ, ভালোবাসা , মমতার সম্পর্কগুলি। মাস্টারমশাইকে নিয়ে তার ছোটবেলার অভিজ্ঞতা বিক্রি করে সুকুমার দশ টাকা পেয়েছিল-- এটাই তাকে চরম আত্মঅনুশোচনায় ভোগায়। মাস্টারমশাইয়ের উদ্দেশে করা সমালোচনা দাম দিয়ে বিক্রি করা যায় , কিন্তু তাঁর স্নেহ দাম দিয়ে কেনা যায় না। স্নেহ অমূল্য , তাকে শুধু মাথা পেতে গ্রহণ করতে হয়।
No comments:
Post a Comment