কবিতার মূলভাব :
'আবহমান ' কথাটির অর্থ হল বহুকাল ধরে যা চলে আসছে , অর্থাৎ যা চিরপ্রচলিত অথবা যা ক্রমাগত একইরকমভাবে হয়ে চলেছে।
উঠোনের লাউমাচাটির পাশে সান্ধ্য বাতাসে একটা ফুল দোলে। এই উঠোন ফেলে আসা শৈশবের উঠোন। এই ফুল জীবনের এক একটি অতীত মুহূর্ত। এই স্মৃতিতাড়িত অতীত মুহূর্তের কথাই কবি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন। এখানেই একদিন অনেক বছর আগে নিবিড় অনুরাগে ঘর বাঁধা হয়েছিল। হয়তো পরিস্থিতির কারণে একদিন হারিয়ে গিয়েছিলাম আমরা , হয়তো অনেক দূরে কোথাও চলে গিয়েছিলাম। এই মাটি , এই হাওয়াতে ভালোবেসেই আবার ফিরে এসেছি। আসলে শৈশবের প্রতি মানুষের ভালোবাসা -আকর্ষণ যে কোনদিনই ফুরোয় না। তাই স্মৃতির সরণি বেয়ে আমরা ফিরে যাই আমাদের অতীতে, আপন মনে সারাটা দিন ঘাসের গন্ধ মাখি ; সারাটা রাত স্বপ্নের জাল বুনি। তবু অতীত থেকে নির্বাসিত হওয়ার দুঃখ যন্ত্রণা মনের ভিতরে চিরকাল জেগে থাকে। সেই দুঃখকে আমরা লালন করি বুকের ভিতর। কারণ সে-দুঃখ কখনও বাসি হয় না। আসলে মানুষ বড়ো হয় , বৃদ্ধ হয় , তার বয়স বাড়ে ; কিন্তু স্মৃতি মেদুর মনের বয়স বাড়ে না। তাই নটে গাছটি বুড়িয়ে গেলেও , মুড়িয়ে যায় না। উঠোন , লাউমাচা , সান্ধ্য হাওয়ায় ফুল দোলা অর্থাৎ ফেলে আসা জীবন ও প্রকৃতির রূপচ্ছবি অবিকৃত থাকে। আসলে মাতৃভূমির সঙ্গে , শিকড়ের সঙ্গে , শৈশব স্মৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চিরকালীন। সংসারের প্রয়োজনে হয়ত কখনো আমাদের দূরে চলে যেতে হয় , কিন্তু মনের মধ্যে সেই স্মৃতি ফল্গু ধারার ন্যায় বয়ে চলে। সেই ফেলে আসা অতীত, ছেলেবেলার শৈশব-গন্ধ মাখা নানান আনন্দঘন মুহূর্ত , তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে সেই ফেলে আসা সময়ে , তার শৈশবের বাসভূমিতে।
No comments:
Post a Comment