সার - সংক্ষেপ :
রবীন্দ্রনাথের " লিপিকা" গ্রন্থের অন্তর্গত " তোতাকাহিনী" একটি রূপকধর্মী রচনা। ব্যঙ্গে - কটাক্ষে পূর্ন এই রচনায় আছে একটি তোতাপাখিকে শিক্ষিত করা তোলার বিবরণ।
এক মূর্খ তোতাপাখি ছিল। সে গান গাইত , লাফাত , উড়ত কিন্তু শাস্ত্র পড়ত না। কায়দাকানুন কাকে বলে তাও জানত না। পাখিকে অত্যন্ত অকেজো মনে হল রাজার। তাই তিনি তাকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব পড়ল রাজার ভাগ্নেদের ওপর। ভাগ্নেরা শিক্ষার আয়োজনে কোনো ত্রূটি রাখল না। বড়ো বড়ো পন্ডিতদের আনা হল। স্যাকরাদের দিয়ে বানানো হল সুদৃশ্য সোনার খাঁচা। লিপিকরদের দিয়ে নকল করানো হল রাশি রাশি পুঁথি। বহু লোক পাখিটির শিক্ষা সংক্রান্ত কোন না কোন কাজে যুক্ত হয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে লাগল। একসময় নিন্দুকদের মুখ থেকে খবর রটল , খাঁচার উন্নতি হচ্ছে ঠিকই , কিন্তু পাখিটার খবর কেউ রাখে না। রাজা শুনে ভাগ্নের কাছে সব জানতে চাইলে ভাগ্নে তাঁকে সন্তোষজনক জবাব দিল। শিক্ষা কেমন চলছে দেখার জন্য রাজা স্বয়ং একদিন শিক্ষাশালায় উপস্থিত হলেন। বিপুল আয়োজন করে রাজাকে অভ্যর্থনা জানানো হল। খুশি হয়ে রাজা পাখিটিকে না দেখেই চলে যাচ্ছিলেন , কিন্তু নিন্দুকের কথায় আবার ফিরে এলেন। তিনি দেখলেন পাখিটাকে দানাপানি দেওয়া বন্ধ হয়েছে , কেবল রাশি রাশি পুঁথির পাতা কলম দিয়ে তার মুখে ঠেসে দেওয়া হচ্ছে। গান তো বন্ধই , চিৎকার করার ও জো নেই। রাজা দেখেশুনে খুশি হলেন। এদিকে দিনে দিনে আধমরা পাখিটা খাঁচার বাইরে যাওয়ার জন্য ছটপট করতে থাকলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হল। এইভাবেই একদিন মৃত্যু হল পাখিটার। কিন্তু কেউ টের পায়নি। নিন্দুকের কথা কানে যাওয়ায় রাজার নির্দেশে পাখিটাকে আনা হল। রাজা পাখিটাকে টিপলেন কিন্তু " সে হাঁ করিল না , হুঁ করিল না। কেবল তার পেটের মধ্যে পুঁথির শুকনো পাতা খসখস গজগজ করিতে লাগিল। "
তোতাপাখির এই কাহিনির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের শিক্ষাব্যবস্থাকে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গে বিদ্ধ করেছেন। তিনি দেখাতে চেয়েছেন , শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষার উপকরণ ও পদ্ধতিকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় , তাতে প্রকৃত শিক্ষা কিছুই হয় না। শিক্ষাকে উপলক্ষ করে খরচ হয় রাশি রাশি অর্থ , চোখ ধাঁধিয়ে যায় আয়োজনের আড়ম্বরে ; কিন্তু যার জন্য শিক্ষা , সেই শিক্ষার্থীর খোঁজ নেওয়া হয় না। উপকরণ ও পদ্ধতির চাপে নষ্ট হয় তার প্রাণশক্তি। উপকরণসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কী সাংঘাতিক ফাঁকি রয়েছে , লেখক এখানে তাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন।