ভোরাই
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
কবিতার প্রকৃতির বর্ণনা :
" ভোরাই " কথাটির অর্থ হল " ভোরের সুর " বা " ভোরবেলাকার গান"। কবিতাটিতে কবি ভোরবেলাকার অপূর্ব প্রকৃতির এক সুন্দর দৃশ্য অঙ্কন করেছেন। উষার কোমল আলোর স্পর্শে কবি প্রকৃতির সেই অধরা মাধুরীকে নিজের সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে অনুভব করেছেন।
ভোর হতেই সূর্যের আলোয় পদ্মকলি বিকশিত হয়ে উঠেছে , সে যেন হাই তুলছে। রাতের বেলায় পরম নিশ্চিন্ত সুপ্তিতে শায়িত নিদ্ মহল ভোরের আগমনে জাগ্রত হয়েছে - মৃদুমন্দ বাতাস যেন ' অথই নিথর পাথার জলে " আল্পনা এঁকে দিয়েছে।
নিশীথের ঘোর অন্ধকারের পর আলোর ছোঁয়াতে সমস্ত মাঠ আলোকময় হয়ে উঠেছে। দিগন্তে বিসৃত সবুজ শ্যামল ধানক্ষেতে আজকে যেন সোহাগের শ্যামলিমার রঙ এঁকে দিয়েছে, আর 'সেই সোহাগের একটু পরাগ ' কচুরিপানার উপর বর্ষিত হয়েছে। কবির মনে আলোড়ন তুলেছে উদার আকাশের নীল রঙ - অপরাজিতা যেন সেই নীল কাজললতা থেকেই একটু রঙ নিয়ে নিজের চোখে কাজল পরে নিয়েছে।
কবির মনে দাগ কেটেছে শরতের পেঁজা তুলোর মত মেঘের সারি- রৌদ্রের আলোয় স্নাত হয়ে সাদা পায়রাগুলি উড়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আকাশ গাঙে আজ কে যেন কবুতররূপী পদ্মের পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছে। কবির মন আজ কল্পনার পাখায় ভর করে হালকা হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে উড়ে চলেছে নিঃসীম সৌন্দর্যলোকের দিকে। এ যেন এক অনিকেত অভিসার যার না আছে কোন শুরু , না আছে কোন শেষ। ভোরের অপূর্ব প্রকৃতিতে এই কল্পনাই কবির সম্বল।
শরতের লীলাময়ী প্রকৃতি একদিকে তার সুন্দর সুধীর সুশান্ত রূপ এবং অপরদিকে সে বিধ্বংসী। পূর্ব আকাশের অনন্ত নীলিমা যখন মনকে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান করে তোলে , তখনই পশ্চিমে কালো মেঘের জটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় ----'জীবনে সুখ -দুঃখ দুইই আছে'। আকাশে সাতটা রঙ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে আর শ্বেতশুভ্র হাঁসের দল দিগন্তের পটভূমিকায় ফুটে উঠেছে - কবি মানসে অঙ্কিত হয়েছে এক অনন্য চিত্র। পুষ্পক রথে চড়ে রামধনু রঙের পাড়ওলা শাড়ি পরে লাবণ্যময়ী অপ্সরার দল যেন গগন ভেদ করে চলেছে স্বর্গের নন্দনকাননের অভিমুখে। কবি মানস পৌঁছে গেছে ভাব সৌন্দর্যের জগতে।
শিশির কণায় মাণিক ঘনায় , দূর্বাদলে দীপ জ্বলে।....... রাতের বেলায় দূর্বার ডগায় পড়া শিশিরের থেকে রৌদ্রের আলোকের প্রতিফলন আমাদেরকে ভ্রান্ত করে - -- ভ্রম হয় সেখানে বুঝি অসংখ্য দীপ জ্বলে উঠেছে। তার ভোরের বেলায় শীতল শিথিল শিউলি যেমন বৃন্তচ্যুত হয়ে পড়ে যায়। শিশুরাও তেমন মাতৃক্রোড় ত্যাগ করে চলে আসে ' রূপ রস গন্ধে ভরা ' বাস্তব জগতে। সুখস্বপ্নের সুনিশ্চিত নিশ্চিন্তের জগৎ থেকে তারা উত্তরণ করবে বাস্তব জগতে আর জানবে যে ' এ জগৎ স্বপ্ন নয়'।
ভোরের বেলায় বিচিত্র সব পাখির বিচিত্র কলকাকলিতে এ জগৎ হরবোলা হয়ে উঠেছে। যে প্রভাতে ফিঙে পাখি তার বাসা তৈরির জন্য খড়কুটো নিয়ে যাচ্ছে , বুলবুলি মিষ্টি সুর তুলেছে আর পাখির গানে আনন্দে ভরে উঠেছে সেই প্রভাতে কবির মনে প্রশ্ন জেগেছে ........
" আজ কি উচিত ডঙ্কা দিয়ে ঝান্ডা নিয়ে ঝড় তোলা ?"
ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ছন্দোময় কবিতা " ভোরাই " প্রকৃত অর্থেই হয়ে উঠেছে শরতের বার্তাবহ। এই কবিতার প্রতিটি ছত্রে প্রতিটি স্তবকে ফুটে উঠেছে শরৎকালীন প্রকৃতির ছন্দবদ্ধ রূপ। পদ্মকলির হাইতোলা , দিগন্ত বিসৃত ধানক্ষেতের সবুজ রঙ , কচুরিপানায় সবজে , সবই শরৎ ঋতুর কথাই মনে করিয়ে দেয়। পূর্বদিকে যখন ' থির নীলিমার ' মন ভুলানো রঙ , পশ্চিমদিকে তখন সিংহ কেশরের ন্যায় সজল মেঘের সারি, প্রকৃতির এই রূপ শরতেরই নিজস্ব। এর সাথে যোগ হয়েছে পানসি ওজন পেঁজা তুলোর ন্যায় মেঘ, অপরাজিতার কাজল-নীল রঙ এবং " শীতল শিথিল শিউলি' র বৃন্তচ্যুত হয়ে পরে যাওয়া - যা সবই শরতেরই চিত্রকল্প।
Thank you @Maheshweta Ghosh....this article was really helpful.
ReplyDeleteHi
ReplyDeleteHlw
ReplyDelete