Tuesday, 27 April 2021

দেবতার বিদায়

 দেবতার বিদায় 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

দেবতা মন্দির মাঝে ভকত প্রবীণ 

জপিতেছে জপমালা বসি নিশিদিন 

হেনকালে সন্ধ্যাবেলা ধূলিমাখা দেহে 

বস্ত্রহীন জীর্ণ দীন পশিল সে গেহে 

কহিল কাতর কন্ঠে , " গৃহ মোর নাই,

একপাশে দয়া করে দেহ মোরে ঠাঁই। " 

সসংকোচে ভক্তবর কহিলেন তারে ,

" আরে আরে অপবিত্র , দূর হয়ে যা রে।  " 

সে কহিল," চলিলাম "- চক্ষের নিমেষে 

ভিখারি ধরিল মূর্তি দেবতার বেশে। 

ভক্ত কহে, " প্রভু মোরে কী ছল ছলিলে। "

দেবতা কহিল , " মোরে দূর করি দিলে। 

জগতে দরিদ্ররূপে ফিরি দয়াতরে 

গৃহহীনে গৃহ  দিলে আমি থাকি ঘরে। " 

উৎস : " দেবতার বিদায় " কবিতাটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত " চৈতালি " কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

কবিতা সংক্ষেপ : দেবমন্দিরে এক প্রবীণ ভক্ত দেবতার নাম জপ করেন রাতদিন।  একদিন সন্ধ্যায় সেখানে আসে এক দীন দরিদ্র মানুষ।  সে ভক্তকে জানালো যে , সে আশ্রয়হীন এবং অনুরোধ করল - তাকে মন্দিরের এক কোণে আশ্রয় দেওয়ার জন্য।  খালি গায়ে ধুলোমাখা অত্যন্ত রোগা মানুষটিকে দেখে সসংকোচে প্রবীণ ভক্ত তাকে অপবিত্র বলে মন্দির থেকে চলে যেতে বলেন।  মুহূর্তের মধ্যে সেই " অপবিত্র " ভিখারি দেবতার বেশ ধারণ করলেন। ভক্ত তখন কেঁদে জানালেন , --- প্রভু কেন তাকে এমনভাবে ছলনা করলেন ! দেবতা বলেন -- তিনি পৃথিবীতে দীনবেশেই ঘুরে বেড়ান।  যেখানে দীন , দরিদ্র আশ্রয় পায় , সেখানে তিনি অবস্থান করেন।  

   কবিতার মূলভাব : 

মানুষের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজমান।  অসহায় মানুষকে সেবার মধ্য দিয়েই দেবতাকে লাভ করা যায়।  

" জীবে প্রেম করে যেই জন 

সেইজন সেবিছে ঈশ্বর " 

মানুষকে অস্পৃশ্য ও অশুচি বলে ঘৃণা করলে দেবতাকে পাওয়া যায় না।  প্রবীণ ভক্ত এ ব্যাপারে অন্ধ ছিলেন।  তাই ধূলো কাদা মাখা আশ্রয়হীনের কাতর প্রার্থনাকে উপেক্ষা করে তিনি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।  প্রকৃতপক্ষে তিনি দেবতাকেই বিদায় দিয়েছিলেন।  

প্রশ্ন : 

১।  " দেবতার বিদায় " কবিতাটি কোন  কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

উত্তরঃ  " দেবতার বিদায় " কবিতাটি ' চৈতালি ' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

২।  ভক্ত সারাদিন কোথায় কী করছেন ? 

উত্তরঃ ভক্ত সারাদিন মন্দিরে বসে জপমালা নিয়ে ঠাকুরের নাম জপ করছে।  

৩।  সন্ধ্যাবেলা মন্দিরে কে প্রবেশ করেছিল ? 

উত্তরঃ সন্ধ্যাবেলা মন্দিরে দেবতা  দীন -হীন নিরাশ্রয় ভিখারির রূপ ধরে  প্রবেশ করেছিল। 

৪।  ভক্ত তার সঙ্গে কীরূপ ব্যবহার করলেন ? 

উত্তরঃ ভক্ত তাকে ' অপবিত্র ' বলে তিরস্কার করে মন্দির থেকে দূর করে দিলেন।  

(৫) ভিখারি কার রূপ ধারণ করেছিল ? 

উত্তরঃ ভিখারি চোখের পলকে দেবতার রূপ ধারণ করেছিল। 

(৬) জপমালা কাকে বলে ? 

উত্তরঃ যে মালার গুটিকা বা পুঁতি গুনে গুনে ঠাকুরের নাম জপ করা হয় তাকে জপমালা বলে।  

(৭) দেবতার গৃহ বলতে কী বোঝায় ? 

উত্তরঃ সাধারণভাবে দেবতার গৃহ বলতে মন্দির বোঝায়।  দেবতার প্রকৃত গৃহ বলতে বোঝায় যেখানে  মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা আছে।

(৮) দেবতার সেবা হয় কীসে ? 

উত্তরঃ দরিদ্র মানুষের সেবাতেই হয় প্রকৃত দেব-সেবা। মানুষের মধ্যেই দেবতার অধিষ্ঠান। তাই মানুষের সেবা করলে , বিপন্ন মানুষকে রক্ষা করলে দেবতা প্রীত হন।  সেইজন্য দেবসেবার শ্রেষ্ঠ উপায় মানবসেবা।  

(৯) দেবতা ছলনা করে ভক্তকে কী শিক্ষা দিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ দেবতা ছলনা করে ভক্তকে শিক্ষা  দিতে চেয়েছিলেন যে , " জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। " মানুষকে ঘৃণা করলে দেবতাকেই ঘৃণা করা হয়।  মানুষকে কাছে টেনে না নিলে দেবতাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়।  

(১০) ভক্ত কহে -" প্রভু মোরে কী ছল ছলিলে !" 

(ক) ভক্ত কে ? 

(খ) সে কি প্রকৃতই ভক্ত ? 

(গ) 'প্রভু ' বলতে এখানে কাকে বোঝানো হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

(ক) এক দেবমন্দিরে নিশিদিন জপমালা নিয়ে নাম জপকারী একজন প্রবীণ পূজারি  এখানে ভক্ত। 

(খ) প্রবীণ ভক্তের অন্তরে দেবতার জন্য অনেক ভক্তি আছে কিন্তু তিনি তাঁর দেবতাকে চেনেন না।  প্রকৃত ভক্ত তাই করতে চেষ্টা করে যা তাঁর দেবতা চান।  কারণ ভক্তের কাজই প্রভুকে সন্তুষ্ট করা।  ওই প্রবীণ ভক্ত তা করতে পারেন নি বা করতে চাননি।  তাই তিনি প্রকৃত ভক্ত নন।  তিনি দেবতাকে চিনতে পারেন নি।  

(গ) 'প্রভু ' বলতে এখানে দেবতাকে অর্থাৎ ঈশ্বরকে বোঝানো হয়েছে।  






  







 




Sunday, 25 April 2021

বিড়াল ও টুনটুনির গল্প - উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী




 প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) গৃহস্থের ঘরের পিছনে কী গাছ ছিল ? 

উত্তরঃ গৃহস্থের ঘরের পিছনে বেগুন গাছ ছিল। 

(২) টুনটুনি কীভাবে বাসা বেঁধেছে ? 

উত্তরঃ  বেগুন   গাছের  পাতা ঠোঁট  সেলাই করে টুনটুনি পাখি তার বাসা বেঁধেছে।  

(৩) বাসার ভিতরে ছানারা কী করত ? 

উত্তরঃ বাসার ভিতরে ছানারা খালি হাঁ  করে আর চিঁ চিঁ করত। 

(৪) গৃহস্থের বিড়ালটা কীরকম ? 

উত্তরঃ গৃহস্থের বিড়ালটা ভারি দুষ্টু। 

(৫) গৃহস্থের বিড়ালটা কী ভাবত ? 

উত্তরঃ গৃহস্থের বিড়ালটা  কী করে  টুনটুনির ছানা খাবে ভাবত। 

(৬) টুনটুনির ব্যবহারে বিড়ালনী খুশি হত কেন ? 

উত্তর : টুনটুনি রোজ বিড়ালনীকে প্রণাম করত আর মহারানি বলত , তাই টুনটুনির ব্যবহারে বিড়ালনী খুশি হত।  

(৭) টুনটুনির বাচ্ছারা উড়ে কোন গাছের ডালে বসেছিল ? 

উত্তরঃ  টুনটুনির বাচ্চারা উড়ে তালগাছের ডালে বসেছিল।  

(৮) বেগুনগাছে কে কীভাবে বাসা বেঁধেছিল ? 

উত্তরঃ বেগুনগাছের পাতা ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে টুনটুনি পাখি তার বাসা বেঁধেছিল।  

(১০)  টুনটুনির ছানারা উড়তে শিখতে টুনটুনি খুশি হল কেন ? 

উত্তরঃ ছানারা উড়তে শিখে গেলে দুষ্টু বিড়াল আর ছানাদের খেতে পারবে না , তাই ছানারা উড়তে শিখলে টুনটুনি খুশি হল।

(১১) বেগুনগাছে কে বাসা করেছিল ? 

উত্তরঃ বেগুনগাছে  টুনটুনি পাখি বাসা করেছিল।  

(১২) বাসার ভিতরে কয়টি ছোট্ট ছানা ছিল ? 

উত্তরঃ বাসার ভিতরে তিনটি ছোট্ট ছিল।  

(১৩) " কি করছিস লা টুনটুনি ?" ...... কে বলেছিল ? 

উত্তরঃ গৃহস্থের বিড়াল টুনটুনিকে বলেছিল।  

(১৪) " প্রণাম হই , মহারানী " ....... মহারানী কে ? 

উত্তরঃ মহারানী হল গৃহস্থের বিড়াল।  

(১৫) " দূর হ লক্ষ্মীছাড়ী বিড়ালনী " ---- একথা কে  কাকে বলেছে ? 

উত্তরঃ   একথা টুনটুনি গৃহস্থের  দুষ্টু বিড়ালকে বলেছে।  

(১৬) বেগুন কাঁটায় নাকাল হয়ে কে ঘরে ফিরেছিল ? 

উত্তরঃ গৃহস্থের দুষ্টু বিড়ালটা বেগুন কাঁটায় নাকাল হয়ে  ঘরে ফিরেছিল।  















Thursday, 22 April 2021

বিদূষক

 বিদূষক 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বিদূষক ' গল্পটি লেখকের 'লিপিকা' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

        গল্পে  কাঞ্চীর রাজা একজন নির্মম ও নৃশংস রাজা।  তিনি কর্ণাট জয় করে চন্দন , হাতির দাঁত , সোনা মানিক লুঠ করে হাতি বোঝাই করে দেশে ফিরে চলেছেন। তিনি এতটাই নির্মম যে যুদ্ধের হত্যাতেই থেমে থাকেন নি যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে পুজো দিলেন।  তাঁর রক্তবস্ত্র , রক্তচন্দনের তিলক আর জবার মালা উগ্র সেই নির্মমতারই বর্ণ - সংকেত।  পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় রত কর্ণাটের ছেলের দল যখন 'বুক ফুলিয়ে ' কাঞ্চী রাজকে বলল যে , তাদের এই খেলায় কর্ণাটের জিত আর কাঞ্চীর হার তখন কাঞ্চীরাজের ' চক্ষু রক্তবর্ণ ' হয়ে উঠল।  ছেলেদের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেত্রাঘাতের আদেশ দেওয়া হল।  অবোধ ছেলেদের জন্য গ্রাম থেকে ছুটে আসা মা-বাপের মার্জনাভিক্ষায় রাজার ক্রোধ যেন আরো জ্বলে উঠল।  'কাঞ্চীর রাজাকে কোনোদিন যেন ভুলতে না পারে ' - গ্রামকে এমন শিক্ষাদানের জন্য সেনাপতিকে হুকুম করে রাজা শিবিরে চলে গেলেন।  সেনাপতি সন্ধেবেলায় এসে জানাল ,'শৃগাল  কুকুর ছাড়া  এ গ্রামে কারো মুখে শব্দ শুনতে ' পাওয়া যাবে না।  হত্যাকাণ্ডের ইঙ্গিতটি এখানে অস্পষ্ট রয়ে গেছে।  গ্রামের এই উচিত শিক্ষায় স্বস্তি লাভ করে মন্ত্রী বললেন " মহারাজের মান রক্ষা হল " , আর পুরোহিত রাজার প্রশস্তি করে বললেন , 'বিশ্বেশ্বরীর মহারাজের সহায়। "  

                    গল্পে বিদূষক একবার মাত্র হেসেছে।  সেই হাসিই যেন তার প্রতিবাদ।  গল্পের শেষে বিদূষক নির্মম কাঞ্চীর রাজার সভা থেকে বিদায় নিলেন।  

"বিদূষক"গল্পের মূল কথা :

'বিদূষক' অর্থাৎ রাজার রসিক সহচর যার কাজ রাজাকে হাসানো।  কাঞ্চীর রাজা সর্বদা বিদূষক নিয়ে চলেন।  কিন্তু সম্পূর্ণ গল্পে রাজাকে একটি বারের জন্যও হাসতে দেখা যায় না।  বরং কর্ণাটজয়ী  কাঞ্চীর রাজা অত্যন্ত নির্মম। বলেশ্বরীর মন্দির বলির রক্তে ভাসিয়ে পুজো দেওয়া , তাঁর রক্তবস্ত্র , রক্তচন্দনের তিলক , জবার মালা সবকিছুই তাঁর নির্মমতারই প্রতীক।  এমনকি ছোটশিশুদের খেলাকেও তিনি সহজভাবে  না নিয়ে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠে সম্পূর্ণ গ্রামকে কঠিন শাস্তি দেন।  শক্তির অহংকারে উন্মত্ত কাঞ্চীররাজার বিরুদ্ধে কেউই মাথা তুলে দাঁড়ায় না। একমাত্র ব্যতিক্রম বিদূষক।  বজ্রপাত শুধুমাত্র একটি জায়গাকে ধ্বংস করতে পারে কিন্তু রাজরোষ সমগ্র রাজ্যকেই ধ্বংস করে দিতে পারে।  বিদূষক বুঝতে পেরেছিল শক্তির গর্বে উন্মত্ত এই কাঞ্চীর রাজ্যে কোন আনন্দ , শান্তি কিছুই থাকবে না।  তাই সে কাঞ্চীর রাজার সভা ত্যাগ করে চলে যায়।  বিদূষক এই গল্পে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নিঃশব্দ প্রতীক। 

প্রশ্ন ও উত্তর 

(১)  ' পুজো দিয়ে চলে আসছেন ' 

(ক)  কে কখন কোথায় পুজো দিয়ে ফিরছিলেন ? 

(খ) ফেরার পথে তিনি কী দেখলেন ? 

উত্তর : 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " বিদূষক " গল্পে কাঞ্চীর রাজা কর্ণাট জয় করার পরে বলেশ্বরী মন্দির থেকে পুজো দিয়ে ফিরছিলেন।  

(খ) ফেরার পথে রাজা দেখলেন যে রাস্তার  ধারে আমবাগানে একদল ছেলে পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছে।  

(২) " এ গ্রামে  কারো মুখে শব্দ শুনতে পাবেন না " 

(ক) কে কাকে কথাটি বলেছেন ? 

(খ) কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে ? 

(গ) কথাটি শুনে মন্ত্রী , পুরোহিত ও বিদূষক কী বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) কাঞ্চীর সেনাপতি কাঞ্চীর রাজাকে কথাটি বলেছেন।  

(খ) কাঞ্চীর রাজা সেনাপতিকে বলেছিলেন যে গ্রামের ছেলেদের গাছে বেঁধে বেত মারতে এবং সেই গ্রামকে এমন শাস্তি দিতে যে এই গ্রাম কখন যেন কাঞ্চীর রাজাকে ভুলতে না পারে।  এই প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে।  

(গ) মন্ত্রী বলেছিলেন 'মহারাজের মান  রক্ষা হল ' , পুরোহিত বলেছিলেন ' বিশ্বেশ্বরীর মহারাজের সহায়' এবং বিদূষক বলেছিলেন তাঁকে বিদায় দিতে।  

(৩) " ওরা অবোধ , ওরা  খেলা করছিল " 

(ক) " ওরা " বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) ওরা কী করছিল ? 

(গ) রাজা ওদের জন্য কী হুকুম দিয়েছিলেন ? কেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) " বিদূষক " গল্পে কাঞ্চীর রাজা যখন মন্দির থেকে পুজো দিয়ে ফিরে আসছিলেন তখন তিনি একদল ছেলেকে পথের ধারে আমবাগানে খেলতে  দেখেছিলেন।  এখানে 'ওরা' বলতে ওই ছেলের দলের কথা বলা হয়েছে।  

(খ) ওরা দুই সারি পুতুল নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছিল। 

(গ) রাজা ওদের জন্য সেনাপতিকে হুকুম দিয়েছিলেন যে সব কটা ছেলেকে গাছের 

সাথে বেঁধে বেত মারতে।  

                   কর্ণাটের সঙ্গে কাঞ্চীর যুদ্ধে কাঞ্চীর রাজার জয় হয়েছিল, কিন্তু ছেলেরা গর্বের সঙ্গে বলেছিল কর্ণাটের জিত আর কাঞ্চীর হার।  তাই ক্রোধে উন্মত্ত কাঞ্চীর রাজা ওদের  শাস্তি  দিতে চেয়েছিলেন।  


(৪) " মহারাজের সভায় থাকলে আমি হাসতে ভুলে যাব " 

(ক)  বক্তা কে ? 

(খ) তিনি কোন মহারাজের সভায় ছিলেন ?

(গ) কেন তিনি হাসি ভুলে যাবার কথা বলেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত  " বিদূষক "  গল্পে  এখানে বক্তা হল বিদূষক। 

(খ) তিনি কাঞ্চীর রাজার সভায় ছিলেন।  তাঁর কাজ ছিল লোককে হাসানো  এবং আনন্দিত রাখা আর নিজেকেও আনন্দিত রাখা। 

(গ) কাঞ্চীর রাজা সেনাপতিকে হুকুম দিয়েছিলেন যে ছেলেদের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেত মারতে এবং গ্রামটিকে এমন শিক্ষা দিতে যে তারা যেন কাঞ্চীর রাজাকে কোনদিন ভুলতে না পারে।  বিদূষকের কাজ হল লোকেদের হাসানো আর আনন্দে রাখা।  যদি তিনি এমন নির্মম রাজায় সভায় থাকেন যে খুব অহংকারী এবং অত্যাচারী তাহলে তিনি নিজে হাসতে ভুলে যাবেন আর রাজার মতন অত্যাচারী হয়ে যাবেন।  

(৫) " বিদূষক হা-হা করে হেসে উঠল " 

(ক) অংশটি কার লেখা , কোন রচনা থেকে গৃহীত ? 

(খ) বিদূষক হেসে উঠেছিল কেন ? 

(গ) তখন রাজা কী হুকুম দিলেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " বিদূষক " রচনা থেকে গৃহীত।  

(খ) কাঞ্চীর রাজা অস্ত্রবলে ও সৈন্যবলে  কর্ণাটের রাজার থেকে শক্তিশালী হতে পারেন , কাঞ্চীর রাজা যুদ্ধে কর্ণাটের রাজাকে পরাজিত করে কর্ণাট জয় করতে পারেন , কিন্তু তাতে মানুষের মন জয় করতে পারেন না।  অবোধ শিশুরাও   নিজেদের  রাজার জয় চায়।  তাই তারা কর্ণাটের সঙ্গে কাঞ্চীর 'যুদ্ধ যুদ্ধ ' খেলার ফল হিসেবে 'কর্ণাটের জয় , কাঞ্চীর হার ' বলে।  অবোধ শিশুদের মনে ভয় থাকে না , তাই তারা মনের কথা সত্যি করে বলতে পেরেছে।  মদমত্ত রাজা ,শিশুদের সহজ জবাবে হেসে খেলাটি উপভোগ করতে পারতেন।  কিন্তু তিনি ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠলেন।   সহজ-সুন্দর হাসির উপাসক বিদূষক  ছেলেদের এই খেলা ও কথা শুনে হেসে উঠল।  

(গ) কাঞ্চীর রাজা সেনাপতিকে হুকুম দিয়েছিলেন যে ছেলেদের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেত মারতে এবং গ্রামটিকে এমন শিক্ষা দিতে যে তারা যেন কাঞ্চীর রাজাকে কোনদিন ভুলতে না পারে।

(৬) " দেখে আসি ওরা কি খেলছে। " 

(ক) উক্তিটি কার ? 

(খ) 'ওরা " বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? 

(গ) তারা কোথায় কী খেলছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'বিদূষক ' গল্পে উক্তিটি কাঞ্চীর রাজার।  

(খ) 'ওরা ' বলতে আমবাগানে  যে ছেলেগুলি খেলছিল তাদের কথা বলা হয়েছে।  

(গ) ছেলেরা আমবাগানে দুই সারি পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলছিল।  












Friday, 16 April 2021

রাজ্যলাভের উৎসবে

 রাজ্যলাভের উৎসবে 

কৃত্তিবাস ওঝা  

রথ রথী ঘোড়া সাজে ,                  নানা রঙ্গে বাদ্য বাজে 

মুনি সব করে জয়ধ্বনি। 

জয় জয় হুলাহুলি ,                         করে সবে কোলাকুলি 

সর্বলোকে কি দুঃখী কি ধনী।

শিশুনারী  জয়ান্বিত ,                        পুষ্পগন্ধে সুশোভিত ,

আমোদ প্রমোদ সব ঘরে।  

স্বর্গপুরী তুল্য বেশ ,                               অযোধ্যায় সর্বদেশ

 নাচে গায় হরিষ অন্তরে। 

সবে ভাবে রঘুপতি                                   হইলেন মহীপতি 

ঘুচিল সবার আজি ক্লেশ।  

না হইবে দুঃখ শোক                          আনন্দিত সর্বলোক 

নিস্তার পাইল সর্বদেশ। 


প্রশ্ন ও উত্তর  

(১)  " রাজ্যলাভের উৎসবে " কবিতাটি কে লিখেছেন ও কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

উত্তরঃ     " রাজ্যলাভের উৎসবে " কবিতাটি কবি কৃত্তিবাস ওঝার লিখেছেন ও " শ্রীরাম পাঁচালী " কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। 

(২)  মুনিরা কী করছিলেন ? 

উত্তরঃ  মুনিরা সব জয়ধ্বনি করছিলেন।  

(৩) শিশু ও নারী কোন গন্ধে সুশোভিত হয়েছিল ? 

উত্তরঃ    শিশু ও নারী পুষ্পগন্ধে সুশোভিত হয়েছিল।  

(৪) আমোদ প্রমোদ কোথায় হচ্ছিল ? 

উত্তরঃ   অযোধ্যার সব ঘরে ঘরে আমোদ প্রমোদ হচ্ছিল।  

(৫) সবাই কী ভাবছিল ? 

উত্তরঃ   শ্রীরামচন্দ্র রাজা হওয়ায় সবাই ভাবছিল এইবার তাদের দুঃখ শোক সব দূর হয়ে যাবে।  

(৬) 'রথী ' শব্দের অর্থ কী ? 

উত্তরঃ   রথী শব্দের অর্থ 'যোদ্ধা'। 

(৭) 'রঘুপতি ' বলতে কাকে বোঝান হয়েছে ?

 উত্তরঃ  রঘুপতি বলতে শ্রীরামচন্দ্রকে বোঝানো হয়েছে। 

(৮) শ্রী রামচন্দ্র কোথাকার রাজা হয়েছেন ? 

উত্তরঃ শ্রী রামচন্দ্র অযোধ্যার  রাজা হয়েছেন। 

(৯) " মহীপতি " শব্দের অর্থ কী ? 

উত্তরঃ " মহীপতি " শব্দের অর্থ রাজা।  

(১০) কাদের ক্লেশ দূর হবে ?

উত্তরঃ  অযোধ্যাবাসীর ক্লেশ দূর হবে।  

(১১) অযোধ্যার সব ঘরে ঘরে কী হচ্ছিল ? 

উত্তরঃ অযোধ্যার সব ঘরে ঘরে আমোদ প্রমোদ  হচ্ছিল। 

(১২) " সর্বলোকে কি দুঃখী কি ধনী " 

(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ? কার লেখা ? 

(খ) 'সর্বলোকে' কী করছে ? 

(গ) কেন করছে ? 

উত্তরঃ 

(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটি 'রাজ্যলাভের উৎসবে' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। 

                            কৃত্তিবাস ওঝার লেখা।  

(খ) 'সর্বলোক ' অর্থাৎ অযোধ্যাবাসী আনন্দে কোলাহল করছে  ও পরস্পরের সাথে কোলাকুলি করছে।  

(গ) শ্রী রামচন্দ্র রাজা হওয়ায় সবাই ভাবছে এবার তাদের সব দুঃখ - কষ্ট  ঘুচে যাবে।  তাই তারা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে কোলাকুলি করছে। 

(১৩) " না হইবে দুঃখ শোক        আনন্দিত সর্বলোক 

                                 নিস্তার পাইল সর্বদেশ

(ক) কেন কোন দুঃখ শোক থাকবে না ? 

(খ) 'নিস্তার' শব্দের অর্থ কী ? 

(গ) সর্বদেশ কীভাবে নিস্তার পেল ? 

উত্তরঃ  

(ক) শ্রীরামচন্দ্র রাজা হওয়ায় কোন দুঃখ শোক থাকবে না।  

(খ) 'নিস্তার' শব্দের অর্থ মুক্ত। 

(গ) শ্ৰীরামচন্দ্রকে রাজা দশরথ   রাজা করার কথা ঘোষণা করবার পর প্রজাদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।  সমগ্র রাজ্যবাসী মনে করে দুঃখ থেকে   নিস্তার পেল।  

(১৪) " সবে ভাবে রঘুপতি                     হইলেন মহীপতি 

                            ঘুচিল সবার ক্লেশ "  

(ক) পংক্তিটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

(খ) কার লেখা ? 

(গ) কে মহীপতি হয়েছেন ? 

(ঘ) সবার ক্লেশ ঘুচে যাবে কেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) পংক্তিটি ' রাজ্যলাভের উৎসবে' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। 

(খ) কৃত্তিবাস ওঝার লেখা।  

(গ) শ্রী রামচন্দ্র মহীপতি হয়েছেন। 

(ঘ) অযোধ্যার রাজা দশরথ তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র রামচন্দ্রকে রাজা করার কথা ঘোষণা করবার পর প্রজাদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়।  শিশু -নারী , দরিদ্র - ধনী নির্বিশেষে সবাই আনন্দে মাতোয়ারা  হয়ে ওঠে।  সবাই মনে করে এবার তাদের ক্লেশ ঘুচে যাবে।  











Thursday, 15 April 2021

মামা ভাগ্নের গল্প 

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী 

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন : 

(১) শিয়াল কার ভয়ে তার পুরোনো গর্তে যায় না ? 

উত্তরঃ  শিয়াল নরহরি দাসের ভয়ে তার পুরোনো গর্তে যায় না।  

(২) শিয়ালের নতুন গর্তের কাছে কী ছিল ? 

উত্তরঃ শিয়ালের নতুন গর্তের কাছে একটি কুয়ো ছিল।  

(৩) শিয়াল কুয়োর মুখে কী বিছিয়ে ছিল ? 

উত্তরঃ শিয়াল কুয়োর মুখর একটি মাদুর বিছিয়েছিল।  

(৪) জলখাবারের কথা শুনে কে খুশি হয়েছিল ? 

উত্তরঃ জলখাবারের কথা শুনে বাঘমামা খুশি হয়েছিল।  

(৫) " আধমরা " বলতে কী বোঝ ? 

উত্তরঃ " আধমরা " বলতে বোঝায় অর্ধমৃত অর্থাৎ খুবই খারাপ অবস্থা।  

(৬) কে থতোমতো খেয়েছিল ? 

উত্তরঃ বাঘমামা শিয়ালের কথা শুনে থতোমতো খেয়েছিল।  

(৭) কুমিরটা কত হাত লম্বা ছিল ? 

উত্তরঃ কুমিরটা বিশ হাত লম্বা ছিল।  

(৮) কুমির কাকে ধরে জলে নামিয়েছিল ? 

উত্তরঃ কুমির বাঘমামাকে ধরে জলে নামিয়েছিল।  

(৯) শিয়াল মাদুর দিয়ে কী করেছিল ? 

উত্তরঃ শিয়াল মাদুরটাকে কুয়োর মুখে বিছিয়ে দিয়েছিল।  

(১০) কে কুয়োতে পড়ে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বাঘমামা কুয়োতে পড়ে গিয়েছিল।   

(১১) বাঘ কেন ভারি খুশি হয়ে উঠেছিল ?

উত্তরঃ বাঘ জলখাবারের কথা শুনে ভারি খুশি হয়ে উঠেছিল। 


Tuesday, 13 April 2021

"তোতাকাহিনি " (প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা )


তোতাকাহিনি 

 সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা লেখ :  

(১) " অল্প পুঁথির কর্ম নয় " 

উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে।  

        এক মূর্খ তোতা পাখি ছিল।  সে গান গাইত , লাফাত , উড়ত  কিন্তু শাস্ত্র পড়ত  না। কায়দাকানুন কাকে বলে জানত না।  পাখিকে অত্যন্ত অকেজো মনে হল রাজার।  তাই তাকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।  রাজার ভাগ্নের পাখিটার শিক্ষার আয়োজন শুরু করলেন।  বড়ো বড়ো পন্ডিতেরা এসে পাখিটাকে দেখলেন তখন পাখিটাকে শিক্ষা দেওয়ার প্রসঙ্গে উল্লিখিত উক্তিটি করেন।  

              পন্ডিতদের পরামর্শক্রমে স্যাকরা এসে পাখির শিক্ষার জন্য শিক্ষায়তন হিসেবে সোনার খাঁচা বানাতে বসল।  সেই আশ্চর্য মূল্যবান খাঁচাটি দেখতে দেশবিদেশের লোক সপ্রশংস দৃষ্টিতে তার ওপর ঝুঁকে পড়ল।  এরপর পন্ডিতেরা পাখিকে শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পুঁথি রচনায় মনোযোগী হলেন।  যথার্থ শিক্ষাদান যেহেতু 'অল্প পুঁথির কর্ম নয় ' , সেহেতু তাঁরা লিপিকরদের নিয়ে রাশিরাশি পুঁথির নকল করাতে শুরু করলেন। 

(২) " শুধু শব্দ নয় , পিছনে অর্থও কম নয় "

উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে। 
         রাজভাগনে রাজাকে এ কথা জানিয়েছিলেন।  তোতার শিক্ষা কীভাবে চলছে , তা দেখার জন্য রাজা তাঁর পাত্র , মিত্র, অমাত্যদের নিয়ে শিক্ষালয়ে পা রাখা মাত্র   শঙ্খ , ঘন্টা , ঢাক , ঢোল , কাড়া নাকাড়া , রণশিঙা , পটহ , রণভেরি , কাঁশি , বাঁশি , কাঁসর , খোল , করতাল , পাখোয়াজ , জয়ঢাক প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র বেজে ওঠে।  পন্ডিতদের মন্ত্রপাঠ  এবং সমবেত জনতার জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক।  গর্বিত , আনন্দিত ভাগনে রাজাকে সেই 'কান্ডটা ' লক্ষ করতে বললে রাজা বলেন 'আশ্চর্য ' ! শব্দ কম নয়। ' এরই উত্তরে ভাগনে প্রশ্নে উল্লিখিত  উক্তিটি করেন। 
             ভাগনের বক্তব্য হল রাজার আগমন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র , মন্ত্রপাঠ ও সমবেত জনতার জয়ধ্বনির যে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে , তার জন্য বিপুল অর্থও  ব্যয়িত হয়েছে।  পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিদ্যালয় পরিদর্শন।  বিদ্যালয়ে শিক্ষার অগ্রগতি দেখার জন্য স্কুল-পরিদর্শকেরা মাঝে মাঝেই পরিদর্শনে আসেন।  কিন্তু স্কুল - পরিদর্শনে এসে , স্কুল - কতৃপক্ষের কাছে তাঁরা এতখানিই সমাদর লাভ করেন যে , তাঁরা সেখানে আসার উদ্দেশ্যই কখনো কখনো ভুলে যান।  সেই আড়ম্বরপূর্ণ অর্থ -ব্যয়ের মধ্যে শিক্ষার্থীর মঙ্গলের পরিবর্তে পরিদর্শকের তুষ্ট করার অনৈতিক উদ্দেশ্যই লুকিয়ে থাকে। 

(৩) স্যাকরা থলি বোঝাই করিয়া  বকশিশ পাইল।    

উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'তোতাকাহিনি' থেকে নেওয়া হয়েছে।  
      " তোতাকাহিনি " পাঠ্যাংশে এক মূর্খ তোতা পাখি ছিল।  সে গান গাইত , লাফাত , উড়ত  কিন্তু শাস্ত্র পড়ত  না। কায়দাকানুন কাকে বলে জানত না।  পাখিকে অত্যন্ত অকেজো মনে হল রাজার।  তাই তাকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন।  রাজার ভাগ্নের পাখিটার শিক্ষার আয়োজন শুরু করলেন।  বড়ো বড়ো পন্ডিতেরা এসে পাখিটাকে দেখলেন  এবং বললেন যে পাখিটির জন্য একটি   পাখির সোনার  খাঁচা বানাতে হবে। খাঁচা  বানানোর জন্য স্যাকরা  থলি বোঝাই করে বকশিশ পেয়ে  বাড়ির দিকে  পাড়ি  দিয়েছিল।  
                পন্ডিতেরা বলেছিলেন ছোট্ট তোতা পাখিটির অবিদ্যার কারণ তার ক্ষুদ্র বাসা।  তাই পন্ডিতরা নির্দেশ দেন যে পাখির শিক্ষা উপযুক্তভাবে পরিচালনার জন্য 
সর্বাগ্রে একটি ভালো খাঁচা তৈরী করা প্রয়োজন।  পাখির শিক্ষায়তন হিসেবে স্যাকরা সোনার খাঁচা বানায় এবং সেই মহার্ঘ খাঁচাটি এত অসামান্য সুন্দর দেখতে হয় , দেশ বিদেশের লোক সপ্রশংস দৃষ্টিতে তা দেখতে আসে।  শিক্ষা নয় , শিক্ষার আয়োজনে মুগ্ধ  হয়ে রাজা তাই স্যাকরাকে থলি বোঝাই করে বকশিশ দেন।  



      









Monday, 12 April 2021

" তোতা কাহিনি " ...(প্রশ্ন ও উত্তর )

" তোতা কাহিনি " 

প্রশ্ন ও উত্তর 

প্রশ্ন : (১) " পাখিটাকে শিক্ষা দাও ---" 

(ক) পাখিটার শিক্ষার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল ? 

(খ) পাখিটার শেষ পরিণতি কী হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) তোতাকে শিক্ষিত করার প্রয়োজনে প্রথমেই রাজপন্ডিতদের পরামর্শে স্যাকরাকে  দিয়ে একটি ভালো সোনার খাঁচা তৈরি করা হয়।  সেই খাঁচায় নিয়মতন্ত্রের বেড়াজালে তোতাকে বন্দি করা হয়।  

                        এরপর পন্ডিতেরা লিপিকরদের ডেকে রাশি রাশি পুঁথি নকল করে পর্বত প্রমাণ স্তূপ নির্মান করেন।  খাঁচাটাকে কেন্দ্র করে তদারকি , মেরামতি , ঝাড়া-মোছা , পালিশ ইত্যাদি আয়োজনের সীমা রইল না।  প্রচুর লোক তোতার শিক্ষার বিভিন্ন দায়িত্ব নিযুক্ত হল এবং তাদের ওপর নজর রাখার জন্য বহু লোক নিযুক্ত হল।  শিক্ষার জন্য রাজকোষ থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় হতে লাগল।  

(খ) মুক্ত তোতাটিকে সোনার খাঁচায় বন্দি করে রাশি রাশি পুঁথির পাতা জোরপূর্বক কলমের ডগা দিয়ে মুখের মধ্যে ঠেসে দিয়ে শিক্ষার নাম নির্মম পীড়নের জন্য পাখিটি মারা গিয়েছিল।  

(২) " নিন্দুকের যেন আচ্ছা ক্রিয়া কান মলিয়া দেওয়া হয়। ......." 

(ক) কার লেখা ? কোন গল্পের অংশ ? 

(খ) কাকে বলেছেন ? কখন বলেছেন ? 

(গ) নিন্দুকের কেন কান মুলে দিতে হবে ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ' তোতাকাহিনি ' গল্পের অংশ। 

(খ) রাজামশাই যখন তোতা পাখিটি ও তার শিক্ষার আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন দেখে ফায়ার যাচ্ছিলেন তখন কানমলা সর্দারকে বলেন যে নিন্দুকের যেন কান মুলে দেওয়া হয়।  

(গ) সোনার খাঁচার ভিতরে বাইরে আড়ম্বরের বাহুল্যে তোতাপাখিটিকে প্রায় দেখাই যায় না।  তবু নিন্দুকদের নিন্দাবাদ ও মন্দ রটনা বন্ধ করার জন্যই রাজা পাখিটিকে দেখলেন।  তিনি দেখলেন যে  , খাঁচাটার মধ্যে তুচ্ছ দানা -পানি রাখা হয়নি , তবে রাশি রাশি পুঁথির পাতা ছিঁড়ে কলমের ডগা দিয়ে পাখির মুখের ঠাসা হচ্ছে।  পাখির গান তো সে কারণে বন্ধই তার চিৎকার করারও কোনো আর উপায় রাখা হয়নি।                                  তোতার  শিক্ষার  এই পরিণতি দেখে রাজা বুঝতে পারলেন যে নিন্দুকেরা মিথ্যে কথা বলছে।  তাই তিনি কানমলা সর্দারকে নির্দেশ দিলেন নিন্দুকের কান মিলে দিয়ে যেন তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।  

(৩) " তাদের সংসারে আর টানাটানি রহিল না। " 

(ক) কার লেখা , কোন গল্পের অংশ ? 

(খ) এখানে কাদের সংসারের কথা বলা হয়েছে ? 

(গ) কেন টানাটানি রইল না ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " তোতাকাহিনি " গল্পের অংশ।  

(খ) পুঁথির লিপিকরদের সংসারের কথা বলা হয়েছে।  

(গ) মূর্খ বন্য পাখিটিকে শিক্ষিত করে তুলতে এসে পন্ডিতেরা জানান যে এই শিক্ষাদান " অল্প পুঁথির কর্ম নয়। " তাই বহু সংখ্যক পুঁথির প্রয়োজন পড়ে।  পুঁথি লেখকরা রাশি রাশি পুঁথির নকল করে এবং নকলের নকল করে স্তূপীকৃত করে তোলে।  শিক্ষার এই আড়ম্বরপূর্ন আয়োজন দেখে মুগ্দ্ধ রাজা বলদ বোঝাই করে বিপুল পরিমাণ পারিতোষিক দেন লিপিকরদের।  তাই লিপিকরদের সংসারে আর টানাটানি রইল না।  

(৪) " উন্নতি হইতেছে। " 

(ক) কিসের উন্নতির কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) করা এই উন্নতির হবার কথা বলেছে ? 

(গ) পাখিটির কী উন্নতি হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " তোতাকাহিনি " পাঠ্যাংশে মুক্ত তোতাকে রাজার  আদেশে , রাজপন্ডিতদের পরামর্শে ও রাজার ভাগিনেয়দের  তৎপরতায়  খাঁচায় বন্দি করে শিক্ষিত করে তোলার জন্য যে বিপুল আয়োজন করা হয়েছে , সেই আয়োজনকে লক্ষ করেই তোতার শিক্ষার বা শিক্ষা - ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলা হয়েছে।  

(খ) যে সমস্ত মানুষ বাইরের আড়ম্বর দেখে মুগ্দ্ধ হয় , তারাই তোতার শিক্ষার আয়োজন দেখে মুগ্দ্ধ বিস্ময়ে এই কথা বলেছে।  

(গ) ছোট্ট তোতাটি বনে বনে উড়ে বেড়াতো , মুক্তির আনন্দে লাফাতো , গান করতো , বনের ফল খেয়ে ক্ষুধানিবৃত্তি করতো।  কিন্তু রাজার আদেশে তাকে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।  রাজার ভাগিনীদের ওপর পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব অর্পিত হয়। রাজপন্ডিতেরা বহু বিচার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে পাখিটির সাধারণ ক্ষুদ্র বাসাটি  জ্ঞানসমৃদ্ধ শিক্ষার পক্ষে উপযুক্ত নয়।  তাই পাখির শিক্ষার আয়োজন করতে হলে প্রথমেই একটা ভালো খাঁচা বানানো দরকার।  পন্ডিতদের পরামর্শক্রমে  স্যাকরা এসে পাখির শিক্ষার জন্য সোনার খাঁচা বানাতে বসল।  

      এরপর  পন্ডিতেরা পাখিকে শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পুঁথি রচনায় মনোযোগী হলেন।  যথার্থ শিক্ষাদান যেহেতু ' অল্প  পুঁথির কর্ম নয় ' , সেহেতু তাঁরা লিপিকরদের নিয়ে রাশি রাশি  পুঁথির নকল করতে শুরু করলেন।  সকলে এই আয়োজন দেখে বাহবা দিল।  

            রাজার  ভাগিনেয়রা অত্যন্ত ব্যস্ততা ও তৎপরতার সঙ্গে খাঁচার দেখাশুনা , ঝাড়ামোছা , পালিশ করা , মেরামতির ঘটা লেগেই রইল।  প্রচুর লোকের ওপর এই বৃহৎ কর্মকান্ডের দায়িত্ব অর্পিত হল।  আবার তাদের ওপর নজরদারির জন্যও আরো লোক নিযুক্ত হল।  প্রতিমাসে এত কর্মীর বেতন বাবদও অপরিমিত ব্যয় হতে লাগল।  

পাখির শিক্ষার জন্য এত বিপুল আয়োজন , এত কর্মী , নজরদারি ,ও অপরিমিত অর্থব্যয়ের ঘটা দেখেই সাধারণ মানুষের মনে হয়েছে যে পাখির শিক্ষার যথেষ্ঠ উন্নতি হচ্ছে।  

(৫) পাখির খাঁচা তৈরির উপদেশ কারা দিয়েছিল ? 

উত্তরঃ  পন্ডিতেরা পাখির খাঁচা তৈরির উপদেশ দিয়েছিল।  

(৬) তনখা  কাকে বলে ? 

উত্তরঃ  তনখা হল কোন কাজের পরিবর্তে পাওয়া পারিশ্রমিক। 

(৭) কারা খেতে পায়  না বলে মন্দ কথা বলে ? 

উত্তরঃ নিন্দুকেরা খেতে পায়  না বলে মন্দ কথা বলে।  

(৮) পারিতোষিক পেয়ে বলদ বোঝাই কারা করেছিল ? 

উত্তরঃ লিপিকরের দল পারিতোষিক পেয়ে বলদ বোঝাই করেছিল।  

(৯) মৃদঙ্গ কী ? 

উত্তরঃ মৃদঙ্গ একটি বাদ্যযন্ত্র বিশেষ। 

(১০) " লোকসান ঘটায় " ........কে কীভাবে লোকসান ঘটায় ? 

উত্তরঃ 'তোতা কাহিনি' গল্পের তোতা পাখিটি বনের ফল খেয়ে রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।  


















































Tuesday, 6 April 2021

কাজের লোক










 কাজের লোক 

নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য 


' মৌমাছি মৌমাছি 

কোথা যাও নাচি নাচি , 

দাঁড়াও না একবার ভাই !'


'ওই ফুল ফোটে বনে ,

যাই মধু আহরণে 

দাঁড়াবার সময় তো নাই। '


'ছোটো  পাখি , ছোটো পাখি 

কিচিমিচি ডাকি 

কোথা যাও বলে যাও শুনি। '


' এখন না কব কথা 

আনিয়াছি তৃণলতা ,

আপনার বাসা আগে শুনি। ' 


'পিপীলিকা , পিপীলিকা ,

দল-বল ছাড়ি একা 

কোথা যাও , শুনি যাও বলি। '


'শীতের সঞ্চয় চাই ,

খাদ্য খুঁজিতেছি তাই 

ছয় পায় পিলপিল চলি। ' 


প্রশ্ন : 

(১) " দাঁড়াবার সময় তো নাই " 

(ক) কোন কবিতার অংশ ? 

(খ) কার লেখা ?

(গ) কার কেন দাঁড়াবার সময় নেই ? 

উত্তর : 

(ক) " কাজের লোক" কবিতার অংশ।  

(খ) নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের লেখা।  

(গ) মৌমাছি বনের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে যাবে।  তাই তার দাঁড়াবার সময় নেই।  


প্রশ্ন 

(২) " আপনার বাসা আগে বুনি " 

(ক) কোন কবিতার অংশ ? কার লেখা ? 

(খ) 'আপনার ' কথাটির অর্থ কী ? 

(গ) কে তার বাসা কী দিয়ে বোনে ? 

উত্তরঃ 

(ক) নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের লেখা " কাজের লোক "  কবিতার অংশ।  

(খ) ' আপনার' কথাটির অর্থ নিজের।  

(গ) ছোটো পাখি ঘাস ও লতা দিয়ে নিজের বাসা বোনে।  


প্রশ্ন 

(৩) " খাদ্য খুঁজিতেছি তাই " 

(ক) কার লেখা ও কোন কবিতার অংশ ? 

(খ) কে খাদ্য খুঁজছে ও কেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের লেখা " কাজের লোক "  কবিতার অংশ। 

(খ) পিপীলিকা শীতের সঞ্চয়ের জন্য খাদ্য খুঁজছে।  


প্রশ্নঃ 

(৪) ছোটো পাখি কেমন করে ডাকে ? 

উত্তরঃ  ছোটো পাখি কিচিমিচি করে ডাকে।  


প্রশ্নঃ 

(৫)  পিপীলিকা কয় পায়ে চলে ? 

উত্তরঃ পিপীলিকা ছয় পায়ে  পিলপিল চলে। 

প্রশ্নঃ 

(৬)  মৌমাছি কোথা থেকে মধু সংগ্রহ করে ? 

উত্তরঃ  মৌমাছি বনের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে।  

প্রশ্নঃ 

(৭) ' দাঁড়াও  না একবার ভাই। '

(ক) কাকে 'ভাই' বলা হচ্ছে ? 

(খ) সে কোথায় যাচ্ছে ? 

(গ) 'ভাই' কি অনুরোধ করল ? 

উত্তরঃ 

(ক) মৌমাছিকে ' ভাই ' বলা হচ্ছে। 

(খ) সে বনের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে যাচ্ছে।  

(গ) 'ভাই' মৌমাছিকে একবার দাঁড়াতে অনুরোধ করল।  

প্রশ্নঃ 

(৮) 'আনিয়াছি তৃণলতা ' 

--- তৃণলতা কে এনেছে ? 

উত্তরঃ ছোটো পাখি তৃণলতা এনেছে।  

প্রশ্নঃ 

(৯) কোনটা কোথায় বসবে বেছে নিয়ে জায়গামতো বসাও : 

তৃণলতা                     মধু আহরণে                ফুলের বনে                             

শীতের সঞ্চয়           খাদ্য খুঁজতে                 বাসা বুনতে 

(ক) মৌমাছি যাচ্ছে ? _______________

        কেন যাচ্ছে ? __________________

(খ ) পাখি এনেছে ? _______________

      কেন এনেছে ? ____________________

(গ) পিপীলিকা  যাচ্ছে ? ___________ 

          খাদ্য কী হবে ? _______________

 


প্রশ্নঃ 

(১০) ' কাজের লোক ' কবিতায় কাদের কাজের লোক বলা হয়েছে  ও কেন ? 

উত্তরঃ 

'কাজের লোক ' কবিতায় মৌমাছি, ছোটো পাখি ও পিপীলিকাকে  কাজের লোক বলা হয়েছে।  

           মৌমাছি , পাখি, পিঁপড়ে সবাই নিজের কাজ সময়মতো করে  নেয়।  কেউ কাজ ফেলে রাখে না।  আর কাজের সময় তারা কথা বলে সময়ও নষ্ট করে না। তাই এদের কাজের লোক বলা হয়েছে।  























পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...