প্রশ্ন ও উত্তর
১) বালকদের সর্দারের নাম কী ?
উত্তরঃ ফটিক চক্রবর্তী
(২) ফটিকের ভাইয়ের নাম কী ?
উত্তরঃ মাখন চক্রবর্তী
(৩) ফটিকের মামার নাম কী ?
উত্তরঃ বিশ্বম্ভর বাবু
(৪) মামা কোথায় কাজে গিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ পশ্চিমে
(৫) প্রকান্ড শালকাঠটা কোথায় কেন পড়েছিল ?
উত্তরঃ প্রকান্ড শালকাঠটা নদীর পাড়ে , মাস্তুলে পরিণত হওয়ার জন্য পড়েছিল।
(৬) নৌকার গলুইয়ে বসে ফটিক কী চিবোচ্ছিল ?
উত্তরঃ ঘাস
(৭) ফটিকের বয়স কত ছিল ?
উত্তরঃ তেরো - চোদ্দ বছর
(৮) ফটিকের মামা ফটিকের মাকে কী প্রস্তাব দিয়েছিল ?
উত্তরঃ ফটিকের মামা বিশ্বম্ভর বাবু ফটিককে তাঁর কাছে কোলকাতায় নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা শেখাবেন বলেছিলেন।
(৯) ফটিকের মামার কটি ছেলে মেয়ে ছিল ?
উত্তরঃ তিনটি ছেলে।
(১০) " তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এই প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল "
(ক) কার লেখা , কোন গল্পের অংশ ?
(খ) প্রসঙ্গ কী ?
(গ) বক্তব্য কী ?
উত্তরঃ
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা "ছুটি" গল্পের অংশ।
(খ) নদীর ধারে একটি প্রকান্ড শালকাঠ মাস্তুল তৈরির জন্য কেউ ফেলে রেখেছিল। ফটিক ও তার বন্ধুরা মিলে ঠিক করে সেটা সকলে মাইল নদীর জলে গড়িয়ে ফেলে দেবে। এটা ভেবে তাদের আনন্দ হল যে সে লোকটা কার্যকালে কাঠটা না পেয়ে কীরূপ অসুবিধায় পড়বে - এই প্রসঙ্গেই প্রশ্নে উল্লিখিত এই উক্তি।
(গ) বালকদের সর্দার ফটিক তার বন্ধুদের কাছে প্রস্তাব রাখে যে নদীর জলে শাল কাঠের গুঁড়িটা গড়িয়ে দেবে। বালকেরা এই প্রস্তাব অনুমোদন করলে সকলে মাইল গুঁড়িটা গড়াতে আরম্ভ করে। কিন্তু ফটিকের ছোটভাই মাখন যখন সেই গুঁড়িটায় এসে বসে , খেলার আনন্দ মাটি হয়ে যায়।
(১১) " তখন আর ফটিকের সহ্য হইল না "
-(ক) ফটিক কে ?
(খ) তার কী সহ্য হল না ও কেন ?
(গ) এরপর সে কী করে ?
উত্তরঃ
(ক) আলোচ্য অংশটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " ছুটি" ছোটগল্পে বালকদের সর্দার ও গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক।
(খ) নদীর ধারে পরে থাকা একটি প্রকান্ড শালকাঠের গুঁড়িকে নীচে গড়িয়ে দিয়ে মজা করে খেলার পরিকল্পনা করছিল ফটিক ও তার বন্ধুরা। কিন্তু ফটিকের ভাই মাখন শালকাঠের গুঁড়ির ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে এসে বসে এবং বার বার উঠে যেতে বললেও সে ওঠে না। তখন গুঁড়িশুদ্ধ গড়াতেই তার বিপত্তি ঘটে। সে মাটিতে পড়ে যায়। কিন্তু বাড়িতে ফিরে সে মায়ের কাছে মিথ্যে কথা বলে যে ফটিক তাকে মেরেছে। মায়ের কাছে এই মিথ্যে কথাটা ফটিকের সহ্য হল না।
(গ) ফটিক তার মেক জানায় যে সে মাখনের গায়ে হাত তোলেনি। মাখনকে পুনর্বার জিজ্ঞাসা করায় মাখন জানায় যে ফটিক তাকে মেরেছে। মাখনের এই মিথ্যে কথা ফটিকের সহ্য হয় না। সে মাখনের গালে সশব্দে এক চড় বসিয়ে দেয়। মা এতে আরও রেগে গিয়ে ফটিককে মারে। রগে ফটিক মাকে ঠেলে দেয়।
(১২) " বিধবা এ প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হইলেন। "
(ক) বাক্যটি কোন রচনার অন্তর্গত ? লেখকের নাম কী ?
(খ) বিধবা মহিলার পরিচয় দাও।
(গ) বিধবা কোন প্রস্তাবে সহজেই সম্মত হলেন ?
উত্তরঃ
(ক) বাক্যটি "ছুটি " রচনার অন্তর্গত।
লেখকের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
(খ) বিধবা মহিলা হলেন ফটিক ও মাখনলালের মা।
(গ) ফটিকের মা তাঁর ভাই বিশ্বম্ভর বাবুকে জানায় যে ফটিক অবাধ্য এবং লেখাপড়ায় অমনোযোগী। একথা শোনার পর বিশ্বম্ভর বাবু ফটিককে কোলকাতায় নিয়ে যাবার প্রস্তাব দেন। মামার ইচ্ছা কোলকাতায় তিনি নিজ দায়িত্বে ফটিককে শিক্ষা দেবেন। একথা শুনে ফটিকের মা সহজেই সম্মত হলেন।
ফটিকের মা ফটিককে নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন। তাই তিনি ভেবেছিলেন ফটিক মামার বাড়িতে ঠিকমতো বড়ো হয়ে উঠুক , তাই তিনি বিশ্বম্ভর বাবুর প্রস্তাবে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন।
(১৩) " তেরো- চৌদ্দ বৎসরের ছেলের মতো পৃথিবীতে এমন বালাই আর নেই। "
---- সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ
উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'ছুটি' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
'ছুটি' গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক একটি তের-চৌদ্দ বছরের বালক। এই প্রসঙ্গে গল্পকথক উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।
তের-চৌদ্দ বছর বয়স এমনই যে অনেকের কাছেই তা বালাই বা ঝামেলা বলে মনে হয়। এই বয়সে ছেলেমানুষী ভাব যেমন ন্যাকামি বলে লোকে মনে করে তেমনই একটু পরিণত বয়সের মতো কথাবার্তাকেও পাকামি বা জ্যাঠামিসুলভ আচরণ বলে বিরক্তিকর মনে করে। ছোট বয়সের মিষ্টতাও তাদের মধ্যে থাকে না , আবার দায়িত্বপালনে সক্ষম না হওয়ায় সংসারের কোন কাজেও লাগে না। তাই লোকের মনে স্নেহ উদ্রেক করতেও তারা ব্যর্থ হয়। আকারে বড় হয়ে উঠলেও আচরণে বা বুদ্ধিতে তারা পরিণত হয় না। অহেতুক কৌতূহল অন্যের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে। কৈশোর বয়সের এই অসহায়তার কথা বোঝাতেই গল্পকথক প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।
(১৪) " এইটে ফটিকের সবচেয়ে বাজিত "
(ক) ফটিক কে ?
(খ) সে কোলকাতায় কার বাড়িতে এসেছিল এবং সেখানে তার অবস্থা কী হয়েছিল ?
(গ) কোনটি তার সবচেয়ে বাজত এবং কেন ?
উত্তরঃ
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা " ছুটি" ছোটগল্পে বালকদের সর্দার ও গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক।
(খ) ফটিক কোলকাতায় তার মামা বিশ্বম্ভরবাবুর সঙ্গে তার বাড়িতে এসেছিল। ফটিককে নিজের কাছে রেখে লেখাপড়া শেখাবেন বলে তার মামা নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তার মামি ফটিকের এই মামাবাড়িতে আসাটা একদম পছন্দ করেন নি। ফলে কোলকাতায় মামারবাড়িতে ফটিকের দিনগুলো অত্যন্ত অনাদরে ,অবহেলা ও স্নেহহীন ব্যবহারের মধ্যে অত্যন্ত মনোকষ্টের মধ্যে দিন কাটছিল।
(গ) ফটিক তার মামাবাড়িতে এসে মামির ও বাড়ির সকলের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করত। তাই মামি কোন কাজ তাকে করতে বললে সে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে করত। কিন্তু মামির কাছ থেকে একটুও ভালোবাসা বা ভালো ব্যবহার সে পায় না। মামির চোখে সে একটি দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হত তাই মামির স্নেহহীন ব্যবহার ও অনাদর ফটিকের মনে সবচেয়ে বাজত।
(১৫) " মা , এখন আমার ছুটি হয়েছে মা , এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি। "
(ক) উল্লিখিত অংশটি কার কোন রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে ?
(খ) বক্তা কে ? এখানে বক্তা কোন ছুটির কথা বলেছে ?
(গ) কেন তার অকালে ছুটি হল এবং এর জন্য কারা দায়ী ?
উত্তরঃ
(ক) উল্লিখিত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ' ছুটি' ছোটগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
(খ) বক্তা ফটিক জ্বরের ঘোরে প্রলাপের মধ্যে সে একথা বলে। ফটিকের জ্বর অত্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় সে প্রলাপের ঘোরে তার অবচেতন মনে যা জমে ছিল সেইগুলিই বলে চলে। ছুটিতে তার গ্রামে মার কাছে যাবার কথা তার বার বার মনে হয়েছে। তাই মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে চিরছুটির দেশে যাত্রা করছে সে। তাই সে মেক বলে তার ছুটি হয়ে গেছে ও সে চিরদিনের জন্য তার বাড়িতে চলে যাচ্ছে।
(গ) ফটিক গ্রামের সহজ সরল পরিবেশে বড়ো হয়ে উঠেছে। মামার সঙ্গে সে নিজের ইচ্ছেতে কোলকাতায় এলেও মামার বাড়িতে মামীর স্নেহহীন ব্যবহার , সবার অবহেলা তাকে নিঃসঙ্গ করে তুলেছিল। তাই কোলকাতায় চার দেওয়ালের মধ্যে কেবলই তার মা ও গ্রামের কথা মনে পড়ত। ছুটি হলে সে বাড়ি যেতে পারবে এই কথা অবচেতন মনে সারাক্ষণ ঘুরত। একদিন তার জ্বর হয় কিন্তু তার অসুস্থতার জন্য সবার কাছে বিশেষত মামির কাছে তাকে কী পরিমাণ গঞ্জনা সহ্য করতে হবে সেটা বুঝতে পেরে সে একাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়ে। রাস্তা না চেনা থাকায় স্বভাবতই ব্যর্থ হয়। পুলিশ যখন তাকে খুঁজে মামার বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে যায় তখন আর কিছু করার ছিল না। সবাইকে ছেড়ে সে চিরছুটির দেশে পাড়ি দেয়। তার এই অকাল ছুটির জন্য তার মা, মামা, মামি , মামাতো ভাইয়েরা , স্কুলের শিক্ষক সবার স্নেহহীন ব্যবহার ও অনাদরই দায়ী।