দশম শ্রেণি : সাহিত্য সঞ্চয়ন
গদ্য: জ্ঞানচক্ষু
উৎস: " জ্ঞানচক্ষু" গল্পটি আশাপূর্ণা দেবীর লেখা " কুমকুম" গল্পসংকলন থেকে গৃহীত।
বিষয় সংক্ষেপ :
গল্পের প্রধান চরিত্র তপন একটি ছোট ছেলে যে বিয়েবাড়ি উপলক্ষে মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। তপনের আজন্ম ধারণা ছিল যে লেখকরা আলাদা শ্রেণির মানুষ --সাধারণ মানুষের থেকে তাদের আচার -আচরণ , কথাবার্তা, খাদ্যাভ্যাস সম্পূর্ণ আলাদা হয়। লেখকদের বিষয়ে সে মনে মনে একধরনের শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম পোষণ করত। কিন্তু তার নতুন মেসোমশাইকে দেখে সে উপলব্ধি করে, ' লেখক' মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নন - তাঁরা তপনের বাবা , মামাদের মতোই একজন সাধারণ মানুষ। তপনও তার নতুন মেসোমশাইকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি গল্প লিখে ফেলে এবং তপনের ছোটমাসির দৌলতে সেই লেখা গিয়ে পৌঁছায় লেখক ছোটমেসোর হাতে। মুখে আপত্তি জানালেও তপন মনে মনে খুব খুশি হয়। সে মনে করে একমাত্র লেখক ছোটমেসোই পারবেন তার লেখার প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করতে। ছোটমেসোও বলেন লেখাটি একটু কাঁচা হলেও গল্পের বিষয়বস্তু বেশ ভালো। লেখাটি একটু "কারেকশান " করে দিলে আর তিনি নিজে যদি অনুরোধ করেন তাহলে এই লেখাটি ছাপতে "সন্ধ্যাতারা " র সম্পাদক "না " বলতে পারবেন না।
এরপর বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পর ছোটমাসি ও লেখক ছোটমেসো আসে " সন্ধ্যাতারা" পত্রিকা নিয়ে এবং সত্যিই তপনের লেখা ছাপা হয়েছে। তপন দেখে , গল্পটি যথাবিধ তার নামে ছাপা হয়েছে সত্যি, কিন্তু সেই সঙ্গে সে তার লেখকসত্তার মর্যাদাবোধ হারিয়েছে।গল্পের প্রত্যেকটি লাইন নতুন আনকোরা ও অপরিচিত তার। ছাপার অক্ষরে গল্পটি গিয়ে তপন বুঝতে পারে , মেসো তার গল্পটিকে আগাগোড়া "কারেকশান" করে নিজের পাকা হাতের কলমে তাকে সার্থক করে তুলতে গিয়ে তিনি পরোক্ষে তপনের লেখকসত্তাকেই অপমান করেছেন।
গল্পটি শুনে সবাই ধন্য ধন্য করলেও রাগে , দুঃখে তপনের চোখে জল চলে আসে। সে অনুভব করে - সেটি তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন। কিন্তু সেই দুঃখের মুহূর্তেও সে গভীরভাবে সংকল্প করে যে, তার কাঁচা হাতের লেখা ছাপা হোক বা না-হোক , এরপর সে নিজেই ছাপতে দিয়ে আসবে। অন্যের দয়ায় তার লেখা ছাপা হয়েছে বা নিজের লেখা গল্প পড়তে গিয়ে যেন তা অন্যের লেখা বলে মনে না হয়। কারণ এর থেকে অপমানের ও লজ্জার কিছু নেই একজন লেখকের কাছে। তপন নিজে ঠকে অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বিষয়টি উপলব্ধি করে।
No comments:
Post a Comment