Friday, 26 April 2024

পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর 


 (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ? 

উত্তরঃ ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত্রিকায় দ্বিতীয় সংখ্যায় ১৮৯২ সালে প্রকাশিত হয়।  

(২) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোথায় বসে লেখা ? 

উত্তরঃ ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি শিলাইদহে বসে লেখা। 

(৩)  পোস্টমাস্টার যে গ্রামে চাকরি করতে আসেন সেই গ্রামের নাম কী ? 

উত্তরঃ পোস্টমাস্টার যে গ্রামে চাকরি করতে আসেন সেই গ্রামের নাম উলাপুর। 

(৪) গ্রামে এসে কলিকাতার ছেলে পোস্টমাস্টারের কেমন অবস্থা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ গ্রামে এসে কলিকাতার ছেলে পোস্টমাস্টারের  অবস্থা 

হয় জলের মাছকে ডাঙায় তুললে যে অবস্থা হয় তার মতো। 

(৫) ' পোস্টমাস্টার' গল্পে  পোস্টমাস্টারের কাছে যে মেয়েটি কাজ করত তার নাম কী ছিল ? তার বয়স কত ছিল ? 

উত্তরঃ ' পোস্টমাস্টার' গল্পে  পোস্টমাস্টারের কাছে যে মেয়েটি কাজ করত তার নাম ছিল রতন। 

                        তার বয়স ছিল বারো -তেরো। 

(৬) কাজের বিনিময়ে পোস্টমাস্টারের কাছ থেকে রতন কী পেত ?

উত্তর : কাজের বিনিময়ে রতন পোস্টমাস্টারের কাছ থেকে কোন বেতন পেত না, শুধু খেতে পেত। 

(৭) রতন পোস্টমাস্টারের কোন কোন কাজ করে দিত ?

উত্তরঃ রতন পোস্টমাস্টারের ঘর পরিষ্কার করা , উনুন ধরানো, তামাক সাজা , জল তোলা , রুটি সেঁকে দেওয়া এই সব কাজ করত।  

(৮) পোস্টমাস্টার নিজে রেঁধে খেতেন কেন ? 

উত্তরঃ পোস্টমাস্টারের বেতন খুব অল্প ছিল , তাই রাঁধুনি রাখার সাধ্য ছিল না।  তাই নিজেই রেঁধে খেতেন। 

(৯) পোস্টমাস্টারের বাড়িতে কে কে আছেন ? 

উত্তরঃ পোস্টমাস্টারের বাড়িতে তাঁর ছোটভাই , দিদি আর মা আছেন।  

(১০) রতনের বাড়িতে কে কে আছেন ? 

উত্তরঃ রতনের আপন বলতে কেউ নেই। 

(১১) পোস্টমাস্টারের স্নানের জল রতন কোথা  থেকে তুলে আনত ?

উত্তরঃ পোস্টমাস্টারের স্নানের জল রতন নদী থেকে তুলে আনত। 

(১১) পোস্টমাস্টার কীভাবে তাঁর অবসর কাটাতেন ? 

উত্তরঃ পোস্টমাস্টার মাঝে মাঝে কবিতা লেখার চেষ্টা করতেন , বাড়ির আত্মীয় স্বজনদের কথা ভাবতেন , রতনের সঙ্গে গল্প করতেন ,একসময় তিনি রতনকে পড়াতে শুরু করেন। 

(১২) কে রতনকে মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসত ?

উত্তরঃ রতনের বাবা রতনকে তার মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসত। 

(১৩) সন্ধ্যার সময় গ্রামের ঝোপে ঝোপে কী ডাকত ?

উত্তরঃ সন্ধ্যার সময় গ্রামের ঝোপে ঝোপে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকত। 

(১৪) " জলের মাছকে ডাঙায় তুলিলে যেরকম হয়  , এই গন্ডগ্রামের মধ্যে আসিয়া পোস্টমাস্টারেরও সেই দশা উপস্থিত হইয়াছে। "

(ক) মাছকে ডাঙায় তুললে কী হয় ? 

(খ) পোস্টমাস্টারের কী দশা হয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) জলের মাছকে ডাঙায় তুললে তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার হয়।  বেশীক্ষণ ডাঙায় রাখলে শ্বাসরোধ হয়ে জলের মাছ মরে যায়। 

(খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ' পোস্টমাস্টার ' গল্পে শহুরে , শিক্ষিত , রুচিবান পোস্টমাস্টার গন্ডগ্রাম উলপুরে এসে নিজেকে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারেন না।  উলাপুর গ্রাম তাঁর একদম পছন্দ হয় না।  গ্রামের মানুষগুলির সাথে তাঁর একদম রুচির মিল হয় না।  শুধুমাত্র কাজের তাগিদেই তাঁর এই গন্ডগ্রামে পরে থাকা।  আপিসে কাজও কম, বেতনও কম , তাঁর আটচালা আপিস ঘরটি , আপিস ঘরের অদূরে পানা পুকুর এবং পুকুরের চারিধারের জঙ্গল , রাত্রির অন্ধকার , গ্রামের পথ-ঘাট এসব কোন কিছুই পছন্দ হয় না। কুঠির গোমস্তা প্রভৃতি যে সকল কর্মচারী আছে তাদের কথা বলার অবসরও নেই।  এই রকম অস্বস্তিকর পরিবেশে পোস্টমাস্টার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে।  পোস্টমাস্টারের এই রকম দশার সাথে রবীন্দ্রনাথ জল থেকে ডাঙায় তোলা মাছের তুলনা করেছেন। জল থেকে মাছকে ডাঙায় তুলতে যেমন তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে শহুরে পোস্টমাস্টারের অচেনা , অজানা, অপছন্দের বদ্ধ পরিবেশে এসে তেমনই শ্বাসরোধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। 
















Friday, 8 March 2024

আম আঁটির ভেঁপু ( সপ্তম ও অষ্টম অধ্যায় )

 সপ্তম অধ্যায় 

আতুরী ডাইনি 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর : 

(১) " অপু শুনিয়াও সুনীল না " 

        - অপু শুনেও কী শুনল না ? 

উত্তরঃ অপু তার মা সর্বজয়ার কথা শুনল না।  অপু বিকেলবেলা বেড়াতে যাবে ভাবছিল।  তার মা তার জন্য চাল   ভাজা  ও ছোলা ভাজা ভাজছিল এবং তাকে খেয়ে যেতে বলছিল কিন্তু সে তার মার কথা না শুনে খেলতে চলে যায়। 

(২) অপু বিকেলে কাদের বাড়ি খেলতে গিয়েছিল ?

উত্তরঃ অপু নীলুদের বাড়িতে খেলতে গিয়েছিল। 

(৩) নীলু অপুকে কোথায় যাওয়ার কথা বলে ?

উত্তরঃ নীলু অপুকে দক্ষিণের মাঠে পাখির ছানা দেখতে যাওয়ার কথা বলে।  

(৪)  ফিরতে গিয়ে  অপু আর নীলুর কী অবস্থা হয় ? 

উত্তরঃ ফিরতে গিয়ে  অপু আর নীলু পথ হারিয়ে ফেলে। 

(৫) অপু আর নীলু কোথায় আতুরী ডাইনির বাড়ি দেখতে পায় ? 

উত্তরঃ নীলু আর অপু দক্ষিণের মাঠে পাখির ছানা দেখতে গিয়ে ফেরার সময় পথ হারিয়ে ফেলে।  আমবাগানের ধার দিয়ে যে সুঁড়ি  পথটা ধরে তারা ফিরছিল সেই পথটা যে উঠানে গিয়ে শেষ হয় সেখানে একটি ছোট চালাঘর ও একপাশে একটা বিলাতী আমড়ার গাছ ছিল ---- সেটিই ছিল আতুরী ডাইনির বাড়ি। 

(৬ )  আতুরী ডাইনি সম্পর্কে কীরূপ জনশ্রুতি আছে ? 

উত্তরঃ আতুরী ডাইনি তার উঠোনের আমড়া পাড়বার অপরাধে জেলেপাড়ার কোন এক ছেলের প্রাণ কেড়ে নিয়ে কচুপাতায় বেঁধে জলে ডুবিয়ে রেখেছিল , পরে মাছে তা খেয়ে ফেলবার সঙ্গে  সঙ্গে বেচারীর প্রাণ বেড়িয়ে যায়।  আতুরী ডাইনি ইচ্ছা করলেই চোখের চাহনিতে ছোট ছেলেদের রক্ত চুষে খেয়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে পারে।  যার রক্ত খেল সে কিছুই জানতে পারবে না।  সে বাড়ি গিয়ে খেয়ে দেয়ে বিছানায় শোবে কিন্তু আর পরদিন উঠবে না। 

অষ্টম অধ্যায়  

রেলের পথ 

(১) হরিহর কেন অপুকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল তার শিষ্যের বাড়িতে ?

উত্তরঃ বাড়িতে থেকে অপু ভালো মন্দ কিছু খেতে পায় না।  তাই বাড়ির বাইরে  গেলে শিষ্যের বাড়িতে দুধটা ,ঘিটা পাবে ,ওর শরীরটা সারবে।  তাই হরিহর  অপুকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল তার শিষ্যের বাড়িতে। 

(২) বৈশাখ -জ্যৈষ্ঠ মাসে খুব গরম পড়লে অপু ও দুর্গা কোথায় গিয়ে দাঁড়াত ? 

উত্তর : বৈশাখ -জ্যৈষ্ঠ মাসে খুব গরম পড়লে অপু ও দুর্গা বিকেল বেলা নদীর ঘাটে গিয়ে দাঁড়াত। 

(৩) গ্রামের বাইরে কোন কোন স্থানে অপুর যাতায়াত ছিল ? 

উত্তরঃ অপু তার গাঁয়ের বকুলতলা , গোঁসাইবাগান , চালতেতলা ,নদীর ধার , বড় জোর নবাবগঞ্জ যাবার  পাকা সড়ক পর্যন্তই তার যাতায়াত ছিল।  

(৪) দুর্গাপুরের রাস্তায় উঠে তার বাবাকে কী  জিজ্ঞাসা করল ?

উত্তরঃ দুর্গাপুরের রাস্তায় উঠে রেলের রাস্তা কোন দিকে তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করল। 

(৫) দক্ষিণ মাঠে অপু ও দুর্গা কাকে খুঁজতে গিয়েছিল ?

উত্তরঃ  দক্ষিণ মাঠে অপু ও দুর্গা তাদের রাঙি - গাইকে খুঁজতে গিয়েছিল। 

(৬) অপু ও দুর্গা কী দেখতে গিয়ে বাড়ি ফেরার পথ হারিয়ে ফেলেছিল ? 

উত্তরঃ অপু ও দুর্গা রেলের রাস্তা দেখতে গিয়ে বাড়ি ফেরার পথ হারিয়ে ফেলেছিল। 

(৭) কোন স্থানে যাবার পথে অপু রেলের রাস্তা দেখতে পায় ? 

উত্তরঃ বাবার সঙ্গে লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি যাওয়ার পথে অপু রেলের রাস্তা দেখতে পায়। 

(৮) রেলের রাস্তা দেখার পর অপুর কীরূপ প্রতিক্রিয়া হয় ? 

উত্তরঃ অপু একদৌড়ে ফটক পার হয়ে রেলের রাস্তায় এসে ওঠে।  তারপর অসীম বিস্ময়ে দুপাশে তাকিয়ে থাকে।  তার মনে অজস্র প্রশ্ন ভিড় করে আসে।  

(৯) অপু তার বাবার কাছে কীসের বায়না করে ? 

উত্তরঃ অপু তার বাবার কাছে রেলগাড়ি দেখে যাওয়ার বায়না করে।  

(১০) অপুর কেন তার বাবার প্রতি  অভিমান হয় ? 

উত্তরঃ রেলগাড়ি দেখার জন্য অপুর বাবা অপেক্ষা করতে রাজি হয় না , ফলে অপুর ও রেলগাড়ি দেখা হয় না।  তাই তার বাবার প্রতি অভিমান হয়। 

 






Wednesday, 21 June 2023

 বাবু বলেন 

শঙ্খ ঘোষ 


উৎস : 

'বাবু বলেন ' কবিতাটি কবির 'বাবরের প্রার্থনা ' থেকে নেওয়া। 

 ( ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে 'বাবরের প্রার্থনা ' কাব্যের জন্য তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ) 


মূল বিষয়বস্তু :

অষ্টাদশ -ঊনবিংশ শতকের বাবু সম্প্রদায়ের উত্তর পুরুষ এ যুগের বাবুদের সম্পর্কে কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর 'বাবু বলেন ' কবিতায় বলেছেন।  সমাজে যুগে যুগে বাবুত্বের ধারণা বদলে গেছে।  ইংরেজ রাজত্বের আগে 'বাবু' কোন বিশেষ অর্থ বহন করে না।  ইংরেজ যুগে ব্রিটিশ সরকারের উপাধি 'বাবু' আবার ধনী , বিলাসী , অকর্মন্যরাও 'বাবু '। যুগে যুগে 'বাবু' বলতে আমরা বুঝি সমাজের গণ্যমান্য সম্প্রদায় সে তারা অর্থ কৌলিন্যে হোক , জাত  কৌলিন্যে বা বিদ্যা-বুদ্ধির কৌলিন্যে।  ঊনবিংশ শতাব্দীর 'বাবু' সম্প্রদায় আর নেই কিন্তু নতুন যুগে যে নতুন 'বাবু' শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে তার বর্ণনাই কবি দিয়েছেন।  

                      পূর্ববর্তী বাবুদের মতো এ যুগের বাবুরাও নিষ্কর্মা এবং পুঁথিগত বিদ্যার দ্বারা তাদের জ্ঞান সীমিত।  কর্মব্যবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করতে চায় না এই বাবুরা।  তাদের কেবল বাক্চাতুর্য্য আর বিদ্যা জাহির করার আস্ফালন।  তারা মনে করে কর্মীর জীবনযাপন করবে তাদের চাকর-বাকরেরা।  তাই তারা বলে- 

" আমি কেবল কথাই বলে 

পুঁথিই পড়ি বসে 

জীবনযাপন ? করুক সেটা 

চাকরবাকরেরা। " 


চাকরবাকরেরা অর্থাৎ যারা শ্রম বিক্রি করে বাবুদের কাছে।  বাবুরা নিয়ন্ত্রণ করে চাকরবাকরদের জীবন।  বাবুদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জীবনে মৃত্যু ঘটলে সেই মৃত্যুর ডে নিতে অস্বীকার করে বাবুরা। অহংকারী বাবুর দল মনে করে বিদ্যাবুদ্ধির জেরে তারাই সকলের সেরা।  তাই তাদের মতে যে যেখানে মারা যাচ্ছে , তারা তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্যই মারা যাচ্ছে।

" মরছে যারা মরুক তারা 

নিজের নিজের দোষে 

আমি জানি, মাথার জোরে 

আমিই সবার সেরা। "

তথাকথিত দাম্ভিক এই বাবুর দল বলে , 

" মানুষ ছুঁতে চাই না বটে ,

মানবতার জ্ঞানে " 

দম্ভের চূড়ায় বসে তাদের থেকে যে শ্রমজীবি মানুষরা আছে তাদের মানুষ  বলে মনে করে না।  তাই মানবিকতার আঙ্গিক থেকে তাদের ছুঁতে চায় না , বুঝতে বা তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না।  যে মানুষ অপর একজন মানুষকে মানবতার জ্ঞানে  বা মানবিকভাবে ছুঁতে চায় না তার না ছোঁয়ায় মঙ্গল কারণ সে নিজেই মানুষ হয়ে উঠতে পারে নি।  মানুষ হয়ে উঠতে না পারার কারণ 

" হৃদয়মেধা থাকে আমার 

সব সময়ে ঘেরা "

হৃদয় বা মেধা সবসময় ঘেরা থাকলে তার বিকাশ লাভ সম্ভব নয়। মিথ্যে অন্তঃসারশূন্য বাক্যের আস্ফালন দিয়ে তারা পৃথিবীকে পাল্টে দিতে চায়।  পৃথিবীকে চালিত করতে চায়।  তারা তাদের মিথ্যে তৈরি ভুবনে নিজেদের ভুলিয়ে রাখেন। অপরদিকে শ্রমজীবি মানুষের দল 'জীবনযাপন ' করে চলে।  

           কবিতার শেষে কবি বলেন বাবুদের এই অন্তঃসারশূন্যতা সবাই বুঝতে পারবে।  তারা যে 'মিথ্যে এবং মেকি', সবার কাছে তা ধরা পরে যাবে।  ফলে তাদের মিথ্যের 'আখ্যানে-ব্যাখ্যানে ' দিয়ে তৈরি 'ডেরা ' পুড়ে যায়।  তখন সেই মিথ্যের ডেরায় পুড়তে পুড়তে জানালা দিয়ে দেখতে পায় তাদের যে চাকর বাকরেরা আছে তারা নিজেদের মত করে জীবনকে যাপন করে চলেছে অর্থাৎ জীবন কাটিয়ে চলেছে। 



Thursday, 8 June 2023

বাংলায় গুরুদেবের তাৎপর্য ও 'গিন্নি' , 'লালু' , 
' বামা' গল্পে গুরুদেবের প্রসঙ্গ 

বাঙালি ধর্মভীরু জাতি।  বিশ্ব সংসারের সবকিছুকেই সে ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করে।  শিক্ষা , সংসারের সমৃদ্ধি বা নিজের প্রাণ সবকিছুকেই সে ঈশ্বরের দান মনে করে।  আর এই ঈশ্বরের প্রতিনিধিরূপে সে 'গুরু'কে  নিজের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে। কখনো সে শিক্ষাগুরু আবার কখনো সে ধর্মগুরু।  'শিক্ষাগুরু'র বিভিন্নরূপ আমরা বাংলা সাহিত্যে অনেক পাই।  যেমন রবীন্দ্রনাথের 'মাস্টারমশাই ', 'অচলায়তন ','গিন্নি' ; বনফুলের 'যোগেন পন্ডিত' , নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' গল্পে।  ধর্মগুরুর বিভিন্ন রূপ দেখতে পাই শরৎচন্দ্রের    'লালু ' , পরশুরামের ' বিরিঞ্চিবাবা' গল্পে। 
                                রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'গিন্নি' গল্পে 'শিক্ষাগুরু'র উল্লেখ আমরা গল্পের প্রথমেই দেখতে পাই।  গল্পকথক আমাদের জানান তার স্কুলে ছাত্রবৃত্তি ক্লাশের দুই তিন শ্রেণি নীচে তাদের শিক্ষক ছিলেন শিবনাথ পন্ডিত।  শিবনাথ পন্ডিতের চেহারা বা ছাত্রদের প্রতি তাঁর ব্যবহারের যে বর্ণনা গল্পকথক দিয়েছেন তার কোনটাই তেমন সুখবর নয় , বিশেষভাবে ছাত্রদের তিনি যেভাবে শাসন করতেন।  কথায় আছে " শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে। " শিবনাথ পন্ডিতের চরিত্রে ছাত্রদের প্রতি স্নেহের প্রকাশ কখনোই দেখা যায় না।  গল্পকথক বলেছেন  শিবনাথ পন্ডিতের "কিল চড়চাপড়  চারাগাছের বাগানের উপর শিলাবৃষ্টির মতো " যেমন অজস্র বর্ষিত হাত তেমনই তাঁর 'তীব্র বাক্যজ্বালায় ' প্রাণ বের হয়ে যেত।  ছাত্রদের কষ্ট দেওয়ার আর একটি নতুন ও অভিনব অস্ত্র তাঁর ছিল।  তিনি ছাত্রদের চেহারা বা কিছু কাজ অনুযায়ী তাদের অত্যন্ত অপমানজনক নামকরণ করতেন।  তার ফলে ছাত্রটি সবার কাছে অত্যন্ত ব্যঙ্গের শিকার হত।  যেমন হয়েছিল আশু।  সে নিতান্ত বেচারা ভালোমানুষ ও লাজুক ছাত্র ছিল।  সে তার ব্যক্তিগত জীবন সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করত।  কিন্তু শিবনাথ পন্ডিত একদিন ঘটনাক্রমে জানতে পারেন যে আশু তার ছোটবোনের সঙ্গে                 ' পুতুলের বিয়ে ' খেলছিল।  ছোটবোনের একদিনের সেই নিরীহ খেলার জন্য আশুকে তিনি নামকরণ করেন 'গিন্নি' কারণ তাঁর কাছে 'পুতুলের বিয়ে' খেলা 'মেয়েলি' ও 'হাস্যকর '। তিনি একবার ও ভাবলেন না এই নামকরণের ফলে একটি ছোটছেলের মন কতখানি আহত ও বিপর্যস্ত হল। 'শিক্ষাগুরু'  হিসেবে শিবনাথ পন্ডিত আমাদের কাছে শ্রদ্ধার আসন বিচ্যুত হলেন। 
                           শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'লালু' গল্পে আমরা যে  গুরুদেবের  সাক্ষাৎ পাই।  তিনি যদিও সংসার ত্যাগ করে ভগবানের সাধনা করার জন্য আশ্রমে থাকেন তবুও তিনি যখন শিষ্যার বাড়িতে আসেন তখন তাঁর জাগতিক সুখ ভোগের দিকেই বেশি লক্ষ্য থাকে।  গুরুদেব একজন অত্যন্ত সাধারণ ও আরামপ্রিয় মানুষ।  কিন্তু লালুর মা অন্ধভক্তি দ্বারা তাকে দেবত্বে উন্নীত করতে চেয়েছিলেন।  লালু দুষ্টুমি করে গুরুদেব ও মাকে  জব্দ করতে চেয়েছিল কিন্তু গুরুদেবের রাতভোর যে দুর্ভোগ হয় তার মাধ্যমে লেখক হয়তো বলতে চেয়েছেন অন্ধভক্তি যখন মানুষের বোধবুদ্ধিকে ভোঁতা করে দেয় তখন মানুষের জীবনেও নেমে আসে দুর্ভোগ।  
                             বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'বামা' গল্পে আমরা আবার আর এক 'ঠাকুরমশাই' এর সাক্ষাৎ পাই।  তিনি নিজে দৈব মাদুলি ও ঔষধ বিক্রয় করেন কিন্তু নিজের বিপদের সময় দৈবে ঠিক ভরসা রাখতে পারেন না।  বরং এক বুদ্ধিমতী গৃহবধূর উপস্থিত বুদ্ধিতে বিপদ থেকে উদ্ধার পান।  ঠাকুরমশাই তাঁর  জীবনদাত্রী গৃহবধূ বামাকে চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। 












Thursday, 6 April 2023

জ্ঞানচক্ষু -আশাপূর্ণা দেবী

 (১)  " তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল " 

---- চোখ মার্বেল হয়ে যাওয়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

চোখ 'মার্বেল' হওয়ার অর্থ 'অবাক হওয়ার জন্য চোখ গোল হয়ে বিস্ফারিত হওয়া '। 

              " জ্ঞানচক্ষু " গল্পের তপন  করত লেখক , কবি , সাহিত্যিকরা সাধারণ মানুষ নন।  কিন্তু যখন শুনল  মেসোমশাই একজন লেখক এবং তাঁর অনেক লেখা ছাপাও হয়েছে , তখন যেন সে নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।  লেখকদের সম্পর্কে তার যে-ধারণা ছিল, তা মিথ্যে হওয়ায় এবং এত কাছ থেকে একজন সাহিত্যিককে দেখতে পাওয়ার রোমাঞ্চে তার চোখ 'মার্বেল' হয়ে গেল। 

(২) " এ বিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের "

--- তপনের কোন বিষয়ে কেন সন্দেহ ছিল ? 

উত্তরঃ 

আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু '  গল্পের তপন লেখকদের এক অন্য জগতের বাসিন্দা বলে মনে করত।  তাঁরাও যে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই রোজকার জীবনযাপন করেন , তা ছিল তপনের কল্পনার বাইরে।  সে আগে কোনদিন কোনো লেখকে কাছ থেকে দেখেনি।  এমনকি লেখকদের যে দেখা পাওয়া যায় এ কথাও তার জানা ছিল না।  তাই লেখকরা যে তার বাবা , কাকা, মামাদের মতোই সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে তার সন্দেহ ছিল। 

(৩) " একেবারে নিছক মানুষ " 

(ক) কাকে 'নিছক মানুষ ' বলা হয়েছে ? 

(খ) 'একেবারে নিছক মানুষ ' বলার কারণ কী ? 

উত্তরঃ 

(ক) আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্প থেকে নেওয়া এই অংশে তপনের লেখক ছোটমেসোকে 'নিছক মানুষ ' বলা হয়েছে। 

(খ) লেখক  মেসোকে দেখার আগে পর্যন্ত তপনের ধারণা ছিল , লেখকরা নিশ্চয় ইহজগতের মানুষ নন -- হয়তো তাঁরা আকাশ থেকে পড়া জীব।  কিন্তু নতুন ছোটমেসো তার বাবা , ছোটমামা কিংবা মেজকাকুর মতোই মানুষ এবং তিনিও সাধারণ মানুষের মতোই দাড়ি কামান , সিগারেট খান , চানের সময় চান করেন , ঘুমোনোর সময় ঘুমোন , খবরের কাগজ পড়ে তর্ক জুড়ে দেন, সিনেমা দেখেন , বেড়াতে বের হন  অর্থাৎ তিনি একেবারে সাধারণ আটপৌরে মানুষের মতো জীবন ধারণ করেন দেখে বিস্মিত তপন তাঁকে 'নিছক মানুষ ' বলেছে। 

(৪) " নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের " 

(ক) 'জ্ঞানচক্ষু ' বলতে কী বোঝায় ? 

(খ) তা কীভাবে তপনের খুলে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে ' জ্ঞানচক্ষু' বলতে মানুষের অন্তর্দৃষ্টিকে বোঝানো হয়েছে , যার সাহায্যে মানুষ সত্যকে যাচাই করে নিতে পারে।  

(খ) একজন লেখক সম্পর্কে তপনের মনে যে ধারণা ছিল তা নতুন মেসোর সংস্পর্শে এসে ভেঙে যায়।  লেখকরা যে তার বাবা , মামা ও কাকাদের  সাধারণ জীবনযাপন করে সেটা সে প্রত্যক্ষ করে।  তাদের মতোই দাড়ি কামান , সিগারেট খান , খেতে বসে খাবার তুলে দেন , পলিটিক্যাল তর্কও করেন - এসব দেখেই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়।  সে ভাবে লেখকরা আকাশ থেকে পড়া কোন জীব নয়, নিছক মানুষ।  

(৫)  "রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই " 

--- কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। 

উত্তরঃ 

 মূল্যবান রত্ন বিশেষজ্ঞকে 'জহুরি ' বলা হয়।  আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে 'জহুরি ' বলতে নতুন মেসোকে বোঝানো হয়েছে।  লেখক মেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তপন একটা আস্ত গল্প লিখে ছোটমাসিকে দেখায়।  ছোটমাসি তা নিয়ে সারাবাড়িতে শোরগোল বাধিয়ে নতুন মেসোকে দেখাতে যায়।  তপন মুখে আপত্তি জানালেও মনে মনে পুলকিত হয় এই ভেবে যে তার লেখার মূল্য একমাত্র যদি কেউ বোঝে তবে ছোটমেসোই বুঝবে।  জহুরির রত্ন চেনার মতো একজন লেখকই পারে কোনো লেখার মূল্যায়ণ করতে।  

(৬) " তোমার গল্প আমি ছাপিয়ে দেব " 

(ক) বক্তা কে ? 

(খ) উল্লিখিত উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার কোন মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় ? 

উত্তরঃ 

(ক) আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে উল্লিখিত উক্তিটির বক্তা তপনের ছোটমেসো। 

(খ) তপনের লেখা পড়ে তার লেখক ছোটমেসো তাকে উৎসাহ দেন।  তিনি এ কথাও বলেন যে , লেখাটা একটু'কারেকশান ' করে দিলে ছাপানোও যায়। তাঁর সঙ্গে 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকার সম্পাদকের জানাশোনা আছে।  মেসো অনুরোধ করলে তিনি তা না করতে পারবেন না।  আপাতদৃষ্টিতে এটি তাঁর উদারতার পরিচয় বলেই মনে হয়।  কিন্তু একটু গভীরে বিচার করলে বোঝা যায় , শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কাছে নিজের প্রভাব জাহির করার জন্যি তিনি এ কাজ করেছিলেন। 

(৭) " বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা " 

--- কোন কথাটা উঠেছিল ? 

উত্তরঃ 

আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে তপন লেখক মেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি গল্প লেখে তার স্কুলে ভর্তি হওয়ার দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে। তা ছোটমাসির হাতে পড়ে এবং মাসি তা নিয়ে বেশ হইচই করে তার লেখক-স্বামীকে গল্পটি দেখায়।  তাঁর স্বামী গল্প দেখে তপনকে ডেকে তার গল্পের প্রশংসা করেন এবং সামান্য কারেকশান করে দিলে তা ছাপার যোগ্য এ কথাও বলেন।  মাসির অনুরোধে মেসো তপনকে কথা দেন  'সন্ধ্যাতারা 'য় তার গল্প ছাপিয়ে দেবেন।  এ কথাটাই চায়ের টেবিলে উঠেছিল। 

(৮) "তপনের হাত আছে।  চোখও আছে। " 

---- এখানে 'হাত' ও 'চোখ' আছে বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে তপনের লেখা গল্প শুনে বাড়ির সবাই হাসাহাসি করলেও নতুন মেসো তার প্রতিবাদ করে আলোচ্য উক্তিটি করেন।  

              এখানে 'হাত' আছে বলতে বোঝানো হয়েছে যে , তপনের লেখার ক্ষমতা আছে , বা ভাষার দখল আছে।  আর 'চোখ' আছে কথার অর্থ হল তপন তার চারপাশের দুনিয়াটা ভালো করে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখতে ও উপলব্ধি করতে পারে।  তার গল্প লেখার বিষয় নির্বাচন থেকেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায়। 

(৯) " বিষণ্ণ মন নিয়ে বসে আছে "

--- কে কেন 'বিষণ্ণ' মন নিয়ে বসে আছে ? 

উত্তরঃ 

আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে লেখক মেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তপন তার ভরতির দিনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি নিয়ে একটি গল্প লিখে ফেলে।  মাসির মারফত সেই গল্পটি লেখক-মেসোর হাতে যায়।  তার লেখার জন্য সে প্রশংসাও পায়। এমনকি তিনি জানান একটু 'কারেকশান' করে তা ছাপানোর ব্যবস্থাও করবেন।  এদিকে এই সংবাদ বাড়ির সবাই জেনে যায়।  ফলে দিনরাত তপনকে ঠাট্টা শুনতে হয়।  বেশ কিছুদিন চলে যায় , তপন আরও দু-তিনটে গল্প লিখে ফেলে।  কিন্তু মেসোর নিয়ে যাওয়া গল্পটি আর ছাপা হয়ে আসে না।  এই কারণেই তপন বিষণ্ণ হয়ে বসে থাকে। 

(১০) " বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের। "

-- প্রসঙ্গ উল্লেখ সহ আলোচনা করো। 

উত্তরঃ 

প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটি আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। 

         'বুকের রক্ত ছলকে ওঠা ' কথাটির অর্থ হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে পড়া।  তপনের লেখা 'প্রথম দিন' গল্পটি পড়ে মুগ্ধ ছোটমেসো জানিয়েছিলেন যে , তিনি তা বিখ্যাত 'সন্ধ্যাতারা ' পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করে দেবেন।  তারপর থেকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে তপন অপেক্ষা করে থাকত -- কবে তার লেখাটি পত্রিকায় প্রকাশিত হবে। তপন মন খারাপ করে বসে ছিল।  এমন সময় একদিন তার মাসি আর মেসোকে পত্রিকা হাতে তাদের বাড়িতে আসতে দেখে তপন আনন্দে উত্তেজিত হয়ে ওঠে।  তপনের মনে হয় নিশ্চয় তার গল্পটি প্রকাশিত হয়েছে বলে নতুন মেসো তাদের বাড়িতে এসেছেন।  আশা ও ঔৎসুক্য তপনের মনে জেগে ওঠার কারণেই তার 'বুকের রক্ত ছলকে ' উঠেছিল। 


(১১) " পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে ? " 

(ক) 'অলৌকিক ' কথার অর্থ কী ? 

(খ) কোন প্রসঙ্গে কার মনে এই প্রশ্নটি এসেছে ? 

(গ) ঘটনাটিকে 'অলৌকিক' বলা হয়েছে কেন ?  

উত্তরঃ 

(ক) " অলৌকিক' কথার অর্থ হল অবাস্তব বা অসম্ভব ব্যাপার। 

(খ) আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে তপন তার লেখক ছোটমেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একটা গল্প লেখে।  তপনের লেখা গল্প তার লেখক মেসো ছাপিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে যান।  এমনই একদিন নিতান্ত আশাহত তপন যখন ক্ষুণ্ণ মনে বসে আছে , তখনই তার মাসি ও মেসো 'সন্ধ্যাতারা ' পত্রিকার একটি সংখ্যা নিয়ে তাদের বাড়ি আসেন।  মুহূর্তেই তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে এই ভেবে যে সত্যি কি তার গল্প পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তার লেখা হাজার হাজার পাঠকের হাতে হাতে ঘুরছে।  কল্পনার দৃষ্টিতে এমনভাব জেগে ওঠায় তপনের মনে  উল্লিখিত প্রশ্নটি আসে। 

(গ)  লেখক মেসোমশাইকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তপন একটা গল্প লিখে ফেললেও সে ভাবতে পারেনি তার গল্প কোন পত্রিকায় ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হবে।  তার গল্প ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হবে এবং সেটি হাজার হাজার পাঠক পড়বে সেটা তপনের মতো ছোট ছেলের কাছে স্বপ্নের মতোই কাল্পনিক।  তাই এই গল্প চেপে বেড়োনোর ঘটনাটি তপনের কাছে 'অলৌকিক ঘটনা ' মনে হয়েছে।  

(১২) " গল্প ছাপা হলে যে ভয়ংকর আহ্লাদটা হওয়ার কথা , সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না " 

---- কার গল্প ? গল্প ছাপা হওয়ার পরেও বক্তার মনে আনন্দ নেই কেন ? 

উত্তরঃ 

আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে তপনের লেখা                 ' প্রথম দিন' গল্পের কথা এখানে বলা হয়েছে। 

                    লেখক মেসোর প্রভাব ও পরিচিতির জোরে ছোট্ট তপনের লেখা গল্পটি 'সন্ধ্যাতারা ' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।  তপনের লেখা গল্প ছাপা হওয়ার সংবাদে সারাবাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়।  কিন্তু তপনের কৃতিত্বের বদলে মেসোর মহত্ত্বকেই বাড়ির বড়োরা বেশি গুরুত্ব দেয়।  তাদের মতে মেসোই ও গল্প ছাপিয়ে দিয়েছেন।  মেজোকাকু বলেন , এমন মেসো থাকলে তারাও একবার চেষ্টা করে দেখতেন।  এসব নানা কথায় তপন ক্রমশ যেন হারিয়ে যায়।  তাই মনটা একটু তিক্ত হয়ে যাওয়ায় ; গল্প ছাপা হওয়ায় ভয়ংকর আহ্লাদটা সে আর খুঁজে পায় না। 

(১৩) " তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন " 

(ক) 'আজ ' বলতে কোন দিনের কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ কী ? 

উত্তরঃ 

(ক) আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্পে 'আজ' বলতে সেই দিনটির কথা বলা হয়েছে , যেদিন তপনের মাসি ও মেসো 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকা নিয়ে তাদের বাড়িতে আসেন , যাতে তপনের প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। 

(খ) নিজের লেখা গল্প ছাপার অক্ষরে হাতে পাওয়ার জন্য তপন বেশ কিছুদিন অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে প্রতীক্ষা করেছিল।  হঠাৎ তার ছোটো মাসি ও মেসো 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকা নিয়ে আসে যেখানে তপনের লেখা প্রথম গল্প 'প্রথম দিন ' ছাপা হয়েছিল।  একসময় মায়ের অনুরোধে নিজের মুখে গল্পটি পড়ে শোনাতে গিয়ে উপলব্ধি করে এই ছাপানো গল্পের কোনো লাইন তার লেখা নয়।  প্রত্যেকটি লাইন নতুন , আনকোরা , গল্পটি তার নতুন লেখক মেসো তার পাকা হাতের কলমে সম্পূর্ণ নতুন করে লিখেছেন। এর ফলে তপন চরম অপমানিত বোধ করে।  সবাই বাহবা দিলেও আরও একবার জোরালোভাবে শোনা যায় তপনের লেখক মেসো তপনের গল্পটি ছাপিয়ে দিয়েছে।  তপনের লেখার থেকেও মেসোর 'কারেকশান ' ও ছাপিয়ে দেওয়াই বেশি গুরুত্ব পেতে থাকে। এতে তপনের লেখকসত্তা আহত হয়েছিল বলেই বিশেষ দিনটিকে সে সবচেয়ে দুঃখের দিন বলে মনে করে। 

(১৪) " শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন "

(ক) কার , কোন দুঃখের কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) এরপর সে কী ধরণের সংকল্প গ্রহণ করেছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'জ্ঞানচক্ষু ' গল্প থেকে উল্লিখিত উক্তিটি নেওয়া হয়েছে। নিজের লেখা গল্প ছাপার অক্ষরে হাতে পাওয়ার জন্য তপন বেশ কিছুদিন অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে প্রতীক্ষা করেছিল।  হঠাৎ তার ছোটো মাসি ও মেসো 'সন্ধ্যাতারা' পত্রিকা নিয়ে আসে যেখানে তপনের লেখা প্রথম গল্প 'প্রথম দিন ' ছাপা হয়েছিল।  একসময় মায়ের অনুরোধে নিজের মুখে গল্পটি পড়ে শোনাতে গিয়ে উপলব্ধি করে এই ছাপানো গল্পের কোনো লাইন তার লেখা নয়।  প্রত্যেকটি লাইন নতুন , আনকোরা , গল্পটি তার নতুন লেখক মেসো তার পাকা হাতের কলমে সম্পূর্ণ নতুন করে লিখেছেন। এর ফলে তপন চরম অপমানিত বোধ করে।  সবাই বাহবা দিলেও আরও একবার জোরালোভাবে শোনা যায় তপনের লেখক মেসো তপনের গল্পটি ছাপিয়ে দিয়েছে। তপন নিজের লেখার মধ্যে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়াই তার দুঃখের কারণ। 

(খ) প্রবল দুঃখের আঘাতে তপন  কঠোর সংকল্প গ্রহণ করে।  প্রতিজ্ঞা করে , যদি কখনও সে লেখা ছাপতে দেয় , তবে নিজে গিয়ে দিয়ে আসবে।  তার কাঁচা হাতের লেখায় সে পাঠাবে। কোনো অবস্থাতেই প্রতিষ্ঠিত কিংবা পরিচিত লেখকের মাধ্যমে লেখা পাঠাবে না।  সেই লেখা ছাপা হোক বা না হোক , তাকে যেন আর শুনতে না-হয় যে অমুক তপনের লেখা ছাপিয়ে দিয়েছে। নিজের গল্প পড়তে বসে তাকে যেন অন্যের লেখা লাইন পড়তে না হয় -এটাই তার দৃঢ় সংকল্প ছিল।  



           

                      





















Wednesday, 8 February 2023

আম আঁটির ভেঁপু ( নবম ও দশম অধ্যায় )

নবম অধ্যায় 

শকুনির ডিম

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) অপু কোথায় কড়ি খেলতে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ অপু জেলেপাড়ায় কড়ি খেলতে গিয়েছিল।  বাবুরাম পাড়ুইয়ের বাড়ির কাছে তেঁতুলতলায়  খেলা জমে ওঠে। 

(২) জেলেপাড়ার ছেলেদের মধ্যে ব্যতিক্রম কে ছিল ? 

উত্তরঃ জেলেপাড়ার ছেলেদের মধ্যে ব্যতিক্রম  ছিল পটু।  সে ব্রাহ্মণ পাড়ার ছেলে। 

(৩) অপুর সঙ্গে পটুর তেমন আলাপ ছিল না কেন ? 

উত্তরঃ পটুর যে পাড়ায় বাড়ি অপুদের বাড়ি থেকে তা  অনেক দূর।  তাই অপুর সঙ্গে পটুর তেমন আলাপ ছিল না। 

(৪) অপু পটুকে প্রথম কোথায় দেখেছিল ? 

উত্তরঃ অপুর প্রথম যেদিন প্রসন্ন গুরুমহাশয়ের পাঠশালায় ভর্তি হতে গিয়েছিল সেদিন সে পটুকে শান্তভাবে তালপাতা চিবুতে দেখেছিল। 

(৫) পটুর অত্যন্ত শখের জিনিস কী ছিল ?

উত্তরঃ রাঙা সুতার বুনানি কড়ি  রাখার ছোট্ট গেঁজেটি পটুর অত্যন্ত শখের জিনিস। 

(৬) পটুর গেঁজেতে কটি কড়ি ছিল ? 

উত্তরঃ পটুর গেঁজেতে সতেরোটা কড়ি ছিল।  

(৭) পটুর গেঁজেতে কটি সোনা-গেঁটে  কড়ি ছিল ?

উত্তরঃ পটুর গেঁজেতে সাত টি  সোনা-গেঁটে কড়ি ছিল। 

(৮) পটুর গেঁজেতে কত কড়ি ধরে ? 

উত্তরঃ পটুর গেঁজেতে এক পণ কড়ি ধরে।  

(৯) পটু কয়েকদিন  আগে কী আবিষ্কার করেছিল ? 

উত্তরঃ কড়ি-খেলায় পটুর  হাতের লক্ষ্য অব্যর্থ হয়ে উঠেছে , এই সত্যটি সে কয়েকদিন  আগে আবিষ্কার করেছিল।  

(১০) জেলেপাড়ার ছেলেরা পটুকে খেলার কী শর্ত দিয়েছিল ও কেন ?

উত্তরঃ জেলেপাড়ার ছেলেরা পটুকে বলে যে তাকে আরোও একহাত দূর থেকে কড়ি মারতে 

হবে।  কারণ পটুর হাতের টিপ বেশি।  

(১১) কড়ি খেলতে গিয়ে পটুর কী দুর্দশা হয়েছিল

উত্তরঃ পটু জেলেপাড়ায় কড়ি খেলতে গিয়ে অনেক কড়ি জিতেছিল।  কিন্তু জেলেপাড়ার ছেলেরা তাকে মারধর করে কড়ি কেড়ে নেয়। 

(১২) পটুর দুর্দশায় অপু প্রথমে খুশি হয়েছিল কেন ?

উত্তরঃ পটুর কাছে অপুও অনেক কড়ি হেরেছিল।  তাই জেলেপাড়ার ছেলেদের কাছে পটুর দুর্দশায় অপু প্রথমে খুশি হয়েছিল। 

(১৩) " অপু কাউকে একথা এখনো বলে নাই"

উত্তরঃ জেলেপাড়ায় কড়ি  খেলতে গিয়ে  জেলেপাড়ার ছেলেদের হাত থেকে পটুকে বাঁচাতে গিয়ে অপুও মার খায়।  একথা অপু কাউকে একথা এখনো বলে নি। 

(১৪) " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইটি অপু কোথায় পায় ? 

উত্তরঃ " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইটি অপু তার বাবার বইয়ের বাক্সে পায়। 

(১৫) " একদিন সে পড়িল বড়  অদ্ভত  কথাটা !" ---- কথাটা কী ?

উত্তরঃ  " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইয়ে অপু পড়েছিল শকুনির ডিমের মধ্যে পারদ পুরে  কয়েকদিন রোদে রাখতে হয় , পরে সেই ডিম মুখের ভিতর পুরে মানুষ ইচ্ছা করলে শূন্যমার্গে যেদিকে ইচ্ছা বিচরণ করতে পারে। 

(১৬) " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইটি অপু কোথায় লুকিয়ে রাখে ? 

উত্তরঃ " সর্ব-দর্শন সংগ্রহ " বইটি অপু তার ডালাভাঙা বাক্সে লুকিয়ে রাখে।  

(১৭) শকুনিরা  কোথায় বাসা বাঁধে অপু কাকে কাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ? 

উত্তরঃ শকুনিরা  কোথায় বাসা বাঁধে অপু তার দিদি দুর্গা , পাড়ার ছেলেদের - সতু , নীপু , কিনু , পটল ,নেড়া সকলকে জিজ্ঞাসা করেছিল।  

(১৮) পারদ মানে কী ? পারদ অপু কথা থেকে সংগ্ৰহ করবে ভেবেছিল

উত্তরঃ পারদ মানে পারা।  অপুদের বাড়িতে একটা ভাঙা আয়না আছে।  আয়নার পিছনে পারা মাখানো থাকে।  অপু সেখান থেকে পারদ সংগ্রহ করবে ভেবেছিল।  

(১৯) " সন্ধান অবশেষে মিলিল " --- অবশেষে কী মিলল ? কার কাছে মিলল ? 

উত্তরঃ অপু যে শকুনির ডিমের সন্ধান করছিল তার সন্ধান মিলল।  হীরু নাপিতের কাঁঠালতলায় জটলা করা রাখালদের কাছ থেকে  শকুনির ডিমের সন্ধান করছিল সন্ধান মিলল।  

(২০) রাখালের কাছ থেকে অপু ক'পয়সায় শকুনির ডিম কেনে ? 

উত্তরঃ  রাখালের কাছ থেকে অপু চার পয়সায় শকুনির ডিম কেনে। 

(২১) কিসের বিনিময়ে অপু  রাখালের কাছ থেকে শকুনির ডিম সংগ্রহ করেছিল ? 

উত্তরঃ চার পয়সা ও কিছু কড়ির বিনিময়ে  অপু  রাখালের কাছ থেকে শকুনির ডিম সংগ্রহ করেছিল। 

(২২) শকুনির ডিম হাতে পেয়ে অপু কী ভাবে ? 

উত্তরঃ শকুনির ডিম মুখে পুরে সে কোথায় যাবে , মামার বাড়ির দেশে নাকি বাবা যেখানে আছে , নাকি নদীর ওপারে অপু এই কথাই ভাবছিল। 

(২৩) শেষ পর্যন্ত শকুনির ডিমের কী অবস্থা হয় ? 

উত্তরঃ সলতে পাকাবার জন্য দুর্গা ছেঁড়া ন্যাকড়া খুঁজতে গিয়ে তাকের উপর হাঁড়ি-কলসির পাশে গোঁজা ছেঁড়া -খোঁড়া কাপড়ের টুকরোর তাল হাতড়াতে হাতড়াতে তার হাত লেগে শকুনির ডিম মেঝের উপরে গড়িয়ে পড়ে ভেঙে যায়।  

(২৪) " অপু সমস্ত দিন খাইল না " -- কেন ? 

উত্তরঃ এত কষ্ট করে জোগাড় করা শকুনির ডিম ভেঙে যেতে প্রচন্ড রাগ ও অভিমানে অপু সারাদিন কিছু খেল না।  

দশম অধ্যায় 

মুচুকুন্দ -চাঁপা  



সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর 

 ( ১) গ্রামের কোন বৃদ্ধের সঙ্গে অপুর খুব ভাব ছিল ? 

উত্তরঃ গ্রামের বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির সঙ্গে অপুর বড় ভাব ছিল।  

(২) নরোত্তম দাস বাবাজি দেখতে কেমন ছিলেন ? তিনি কোথায় বাস করতেন ? তিনি কোন ধর্মের মানুষ ছিলেন ? 

উত্তরঃ নরোত্তম দাস বাবাজি ছিলেন গৌরবর্ণ , সদানন্দ বৃদ্ধ।  

                        তিনি সামান্য একখানি খড়ের ঘরে বাস করতেন।  তিনি বিশেষ গোলমাল ভালোবাসেন না , তাই নির্জনে থাকতে ভালবাসতেন। 

                        তিনি বৈষ্ণব ধর্মের মানুষ ছিলেন। 

(৩) অপুর সঙ্গে নরোত্তম দাসের সঙ্গে ভাব হয়েছিল কিকরে ? 

উত্তরঃ অপুর ছোটবেলা থেকেই হরিহর তাকে সঙ্গে করে মাঝে মাঝে নরোত্তম দাসের কাছে নিয়ে যেতেন , সেই থেকেই অপুর সঙ্গে নরোত্তম দাসের সঙ্গে ভাব হয়েছিল।  

(৪) অপু  ও নরোত্তম দাস পরস্পরকে  কী বলে সম্বোধন করত ?

উত্তরঃ অপু নরোত্তম দাসকে 'দাদু'  বলে সম্বোধন করত এবং নরোত্তম দাস অপুকে 'দাদাভাই' বলে সম্বোধন করত।  

(৫) নরোত্তম দাসের কাছে এলে অপুর  কেন সঙ্কোচ লজ্জা  দূর হয়ে যায় ? 

উত্তরঃ নরোত্তম দাসের সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনযাত্রার জন্য  নরোত্তম দাসের কাছে এলে অপুর   সঙ্কোচ লজ্জা  দূর হয়ে যায়।  

(৬) নরোত্তম দাস বাবাজি অপুকে কী বলেন ? 

উত্তরঃ নরোত্তম দাস বাবাজি অপুকে 'বালক গোরা ' বলেন। 

(৭) অপু নরোত্তম দাসের কাছে কী বই দেখতে চেয়েছিল ?  বইটিতে কটি ছবি ছিল ? 

উত্তরঃ অপু নরোত্তম দাসের কাছে " প্রেমভক্তি - চন্ডিকা " বইটি দেখতে চেয়েছিল।  

                                         বইটিতে ছবি ছিল মাত্র দুটি। 

(৮) নরোত্তম দাস বাবাজির কাছে আসার জন্য অপুর আকর্ষণের কারণ কী ? 

উত্তরঃ সহজ সামান্য অনাড়ম্বর জীবনের গতিপথ বেয়ে এখানে কেমন একা অন্তঃসলিলা মুক্তির ধারা সে খুঁজে পায় , বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির সাহচর্য , মাটি, বিচিত্র পাখি ও গাছপালার সাহচর্যের মতো মনে হয়।  

(৯) বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির বাড়ি থেকে ফেরার সময় অপু কী নিয়ে আসে ? 

উত্তরঃ বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির বাড়ি থেকে ফেরার সময় অপু তাঁর উঠানের গাছতলাটা থেকে একরাশি মুচুকুন্দ চাঁপা ফুল নিয়ে আসে।  

(১০) অপু রাতে বিছানায়  শুয়ে কী ভাবে ? 

উত্তরঃ অপু রাতে বিছানায় শুয়ে সেদিনের সব খেলাধুলা , সারাদিনের সকল আনন্দের স্মৃতির কথা ভাবতে  থাকে।  বিছানায় শুয়ে মুচুকুন্দ চাঁপা ফুলের রাশির মধ্যে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেয়।  







Saturday, 28 January 2023

রবীন্দ্রনাথের প্রতি - বুদ্ধদেব বসু

 তোমারে স্মরণ করি আজ এই দারুণ দুর্দিনে 

হে বন্ধু, হে প্রিয়তম।  সভ্যতার শ্মশান-শয্যায় 

সংক্ৰমিত মহামারী মানুষের মর্মে ও মজ্জায় ; 

প্রাণলক্ষ্মী নির্বাসিতা।  রক্তপায়ী উদ্ধত সঙিনে 

সুন্দরেরে বিদ্ধ ক'রে , মৃত্যুবহ পুষ্পকে উড্ডীন 

বর্বর রাক্ষস হাঁকে , ' আমি শ্রেষ্ঠ , সবচেয়ে বড়ো। '

দেশে -দেশে সমুদ্রের তীরে তীরে কাঁপে থরোথরো 

উন্মত্ত জন্তুর মুখে জীবনের সোনার হরিণ। 

প্রাণ রুদ্ধ, প্রাণ স্তব্ধ।  ভারতের স্নিগ্ধ উপকূলে 

লুব্ধতার লালা ঝরে।  এত দুঃখ , এ দুঃসহ ঘৃণা -

এ-নরক সহিতে কি পারিতাম , হে বন্ধু , যদি না 

লিপ্ত হ'তো রক্তে মোর , বিদ্ধ হ'তো গূঢ় মর্মমূলে 

তোমার অক্ষয় মন্ত্র।  অন্তরে লভেছি তবে বাণী 

তাই তো মানি না ভয় , জীবনেরই জয় হবে , জানি। 

উৎস : 

" ২২ শে শ্রাবণ " কাব্যগ্রন্থ।  (রবীন্দ্রনাথের ' সভ্যতার সংকট ' থেকে প্রেরণা )। 

শব্দার্থ : 

স্মরণ - মনে করা 

দুর্দিন -খারাপ দিন বা খারাপ সময় 

প্রিয়তম - সর্বাপেক্ষা প্রিয় 

শয্যা -বিছানা 

শ্মশান শয্যা - মৃত্যুর বিছানা 

মর্মে - অন্তরে বা মনে 

মহামারী - মড়ক (সংক্ৰমণ রোগে ব্যাপক মৃত্যু ) 

মজ্জা - শরীরের ভিতর হাড়ের মধ্যের স্নেহ জাতীয় যে পদার্থ                   থাকে 

নির্বাসিতা - নির্বাসন দেওয়া বা গৃহ থেকে বহিষ্কার করা 

রক্তপায়ী - যে রক্ত পান করে 

উদ্ধত - গর্বিত 

উড্ডীন - উড়ন্ত 

উন্মত্ত - ক্ষিপ্ত বা উত্তেজিত 

রুদ্ধ - বন্ধ বা আটক 

স্তব্ধ - থেমে  যাওয়া 

স্নিগ্ধ - শান্ত 

লুব্ধতা -লোভ 

ঘৃণা - ঘেন্না করা 

গূঢ় - নিভৃত 

অক্ষয় - ক্ষয়হীন  বা চিরস্থায়ী 

লিপ্ত - মিশে যাওয়া 

বিদ্ধ - গেঁথে দেওয়া 

সঙিন - বন্দুকের মুখ সংলগ্ন বেধনাস্ত্র বিশেষ , বেয়নেট 


বিষয় সংক্ষেপ :  

আধুনিক বাংলা কাব্য-আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ বুদ্ধদেব বসু।  রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরের বছর লেখা হয় ' রবীন্দ্রনাথের প্রতি'। 

        দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে বিশ্বব্যাপী যে অনিশ্চয়তা তাঁর আঁচে প্রতিটি বিবেকী মানুষ দগ্ধ হয়েছে।  মন হয়েছে অস্থির। এই চঞ্চলতার মুহূর্তে কবি স্মরণ করেছেন রবীন্দ্রনাথকে ,--

" তোমাকে স্মরণ করি আজ এই দারুণ দুর্দিনে 

হে বন্ধু , হে প্রিয়তম। "

শুধু স্মরণ নয় , তাঁকে 'বন্ধু' এবং 'প্রিয়তম' রূপে সম্বোধনে বোঝা যায় কবির অন্তরের কতখানি জায়গা জুড়ে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বযুদ্ধ বহু মানুষকে শুইয়েছে শেষ শয্যায় , মন্বন্তর ,মহামারী মানুষের অন্তরকেও দিয়েছে একেবারে নিঃস্ব করে। এই সর্ব নিঃস্বতার পরিবেশে সুন্দরের কোনও স্থান নেই।  সে প্রতি মুহূর্তে বিদ্ধ হচ্ছে রক্তপায়ী মানুষজনের উদ্যত সঙ্গিনে। যে আকাশ ছিল মুক্তির প্রতীক, যেখানে রামায়ণের কালে শ্রীরামচন্দ্রের বাহন পুষ্পক বিহার করত জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে সেই আকাশ এখন দখল করেছে মৃত্যুবাহী যুদ্ধবিমান।  কবি আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন সেই মৃত্যুদূত স্বরূপ সর্বগ্রাসী রাক্ষসদের তান্ডবে।  তারা প্রমাণ করতে চায় তারা সবচেয়ে বড় - 'আমি শ্রেষ্ঠ , সবচেয়ে বড়ো'। 

তাদের দাপটে --

" দেশে দেশে সমুদ্রের তীরে তীরে কাঁপে থরো থরো 

উন্মত্ত জন্তুর মুখে জীবনের সোনার হরিণ। "

লক্ষণীয় সে সময় জাপানী আক্রমণ অত্যন্ত তীব্র হয়েছে। হিটলার অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে চরম সিদ্ধির লক্ষ্যে - ফলে সাধারণ মানুষের অবস্থা হয়েছে উন্মত্ত জন্তুর মুখে হরিণের মতো অসহায়।  

যে ভারতবর্ষ এককালে সারা পৃথিবীতে সন্ধান দিয়েছে মৃত্যুজয়ী অমৃতের সেই ভারতবর্ষ শক্তিমানের নিষ্ঠুরতায় , শোষকের শোষণে ও রক্তচক্ষু প্রদর্শনে প্রাণের প্রবাহ গিয়েছে রুদ্ধ হয়ে , জীবন হয়ে উঠেছে বিষময় , প্রাণ রুদ্ধ , এর কারণ শোষকের শোষণ বাসনা অতি তীব্র।  দীর্ঘকাল ধরে চলেছে এই শোষণ।  কিন্তু বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ও শোষণের ভয়াবহ রূপ দেখে ব্যথিত হয়ে উঠেছেন কবি।  তাই কবি বলেছেন -----

' এত দুঃখ , এ দুঃসহ ঘৃণা -----

এ নরক সহিতে কি পারিতাম , হে বন্ধু যদি না 

লিপ্ত হ'তো রক্তে মোর , বিদ্ধ হ'তো  গৃঢ় মর্মমূলে 

তোমার অক্ষয় মন্ত্র। "

কবি বুঝেছেন তাঁর এই সহ্যশক্তির মূলে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাসের অমোঘমন্ত্র।  তাঁর পরিবেশিত জীবনের অমৃতশক্তি, আনন্দবাদী রবীন্দ্রনাথ সংশয়ী  কবি বুদ্ধদেবের মনে জায়গা করে নিয়েছেন এই সর্বনষ্ট জগতের বুকে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করেন নি কবি।  তিনি জানেন শেষ পর্যন্ত "জীবনের জয় হবে" । এই অস্তি চেতনা , এই আনন্দবাদী অনুভব  কবি বুদ্ধদেবকে কবি রবীন্দ্রনাথের কাছাকাছি এনেছে। 









পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...