Wednesday, 21 June 2023

 বাবু বলেন 

শঙ্খ ঘোষ 


উৎস : 

'বাবু বলেন ' কবিতাটি কবির 'বাবরের প্রার্থনা ' থেকে নেওয়া। 

 ( ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে 'বাবরের প্রার্থনা ' কাব্যের জন্য তিনি সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। ) 


মূল বিষয়বস্তু :

অষ্টাদশ -ঊনবিংশ শতকের বাবু সম্প্রদায়ের উত্তর পুরুষ এ যুগের বাবুদের সম্পর্কে কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর 'বাবু বলেন ' কবিতায় বলেছেন।  সমাজে যুগে যুগে বাবুত্বের ধারণা বদলে গেছে।  ইংরেজ রাজত্বের আগে 'বাবু' কোন বিশেষ অর্থ বহন করে না।  ইংরেজ যুগে ব্রিটিশ সরকারের উপাধি 'বাবু' আবার ধনী , বিলাসী , অকর্মন্যরাও 'বাবু '। যুগে যুগে 'বাবু' বলতে আমরা বুঝি সমাজের গণ্যমান্য সম্প্রদায় সে তারা অর্থ কৌলিন্যে হোক , জাত  কৌলিন্যে বা বিদ্যা-বুদ্ধির কৌলিন্যে।  ঊনবিংশ শতাব্দীর 'বাবু' সম্প্রদায় আর নেই কিন্তু নতুন যুগে যে নতুন 'বাবু' শ্রেণির উদ্ভব হয়েছে তার বর্ণনাই কবি দিয়েছেন।  

                      পূর্ববর্তী বাবুদের মতো এ যুগের বাবুরাও নিষ্কর্মা এবং পুঁথিগত বিদ্যার দ্বারা তাদের জ্ঞান সীমিত।  কর্মব্যবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করতে চায় না এই বাবুরা।  তাদের কেবল বাক্চাতুর্য্য আর বিদ্যা জাহির করার আস্ফালন।  তারা মনে করে কর্মীর জীবনযাপন করবে তাদের চাকর-বাকরেরা।  তাই তারা বলে- 

" আমি কেবল কথাই বলে 

পুঁথিই পড়ি বসে 

জীবনযাপন ? করুক সেটা 

চাকরবাকরেরা। " 


চাকরবাকরেরা অর্থাৎ যারা শ্রম বিক্রি করে বাবুদের কাছে।  বাবুরা নিয়ন্ত্রণ করে চাকরবাকরদের জীবন।  বাবুদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত জীবনে মৃত্যু ঘটলে সেই মৃত্যুর ডে নিতে অস্বীকার করে বাবুরা। অহংকারী বাবুর দল মনে করে বিদ্যাবুদ্ধির জেরে তারাই সকলের সেরা।  তাই তাদের মতে যে যেখানে মারা যাচ্ছে , তারা তাদের নির্বুদ্ধিতার জন্যই মারা যাচ্ছে।

" মরছে যারা মরুক তারা 

নিজের নিজের দোষে 

আমি জানি, মাথার জোরে 

আমিই সবার সেরা। "

তথাকথিত দাম্ভিক এই বাবুর দল বলে , 

" মানুষ ছুঁতে চাই না বটে ,

মানবতার জ্ঞানে " 

দম্ভের চূড়ায় বসে তাদের থেকে যে শ্রমজীবি মানুষরা আছে তাদের মানুষ  বলে মনে করে না।  তাই মানবিকতার আঙ্গিক থেকে তাদের ছুঁতে চায় না , বুঝতে বা তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না।  যে মানুষ অপর একজন মানুষকে মানবতার জ্ঞানে  বা মানবিকভাবে ছুঁতে চায় না তার না ছোঁয়ায় মঙ্গল কারণ সে নিজেই মানুষ হয়ে উঠতে পারে নি।  মানুষ হয়ে উঠতে না পারার কারণ 

" হৃদয়মেধা থাকে আমার 

সব সময়ে ঘেরা "

হৃদয় বা মেধা সবসময় ঘেরা থাকলে তার বিকাশ লাভ সম্ভব নয়। মিথ্যে অন্তঃসারশূন্য বাক্যের আস্ফালন দিয়ে তারা পৃথিবীকে পাল্টে দিতে চায়।  পৃথিবীকে চালিত করতে চায়।  তারা তাদের মিথ্যে তৈরি ভুবনে নিজেদের ভুলিয়ে রাখেন। অপরদিকে শ্রমজীবি মানুষের দল 'জীবনযাপন ' করে চলে।  

           কবিতার শেষে কবি বলেন বাবুদের এই অন্তঃসারশূন্যতা সবাই বুঝতে পারবে।  তারা যে 'মিথ্যে এবং মেকি', সবার কাছে তা ধরা পরে যাবে।  ফলে তাদের মিথ্যের 'আখ্যানে-ব্যাখ্যানে ' দিয়ে তৈরি 'ডেরা ' পুড়ে যায়।  তখন সেই মিথ্যের ডেরায় পুড়তে পুড়তে জানালা দিয়ে দেখতে পায় তাদের যে চাকর বাকরেরা আছে তারা নিজেদের মত করে জীবনকে যাপন করে চলেছে অর্থাৎ জীবন কাটিয়ে চলেছে। 



No comments:

Post a Comment

পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...