Friday, 17 June 2022

দাম - নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়


প্রশ্ন ও উত্তর  ( প্রথম অংশ ) 

(১) " স্কুলে কী বিভীষিকাই যে ছিলেন ভদ্রলোক !" 

এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? তিনি কেন বিভীষিকা ছিলেন ? 

উত্তরঃ 

আলোচ্য অংশটিতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' গল্পের কথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কথা বলা হয়েছে।  

          অঙ্কে অসাধারণ দক্ষ সেই মাস্টারমশাই যে কোনো অঙ্কই মুহূর্তে সমাধান করে ফেলতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে অঙ্ক না জানলে জীবন বৃথা।  তাই মাস্টারমশাই অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে ছাত্রদের অঙ্ক শেখানোর চেষ্টা করতেন।  ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে ক্রূদ্ধ মাস্টারমশাই এর প্রকান্ড হাতের প্রচন্ড চড় তাদের পিঠে নেমে আসত  কিন্তু কাঁদবার জো ছিল না, এ কারণেই তিনি ছাত্রদের কাছে বিভীষিকা ছিলেন।  

(২) " সব যেন ওঁর মুখস্থ " 

-- যাঁর কথা বলা হয়েছে তাঁর সব মুখস্থ ছিল বলে ছাত্রদের কেন মনে হত ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে।  ছাত্রদের মনে হত , পৃথিবীর সব অনেক মাস্টারমশাইয়ের মুখস্থ ছিল।  কারণ , যেসব জটিল অঙ্ক তারা কিছুতেই মেলাতে পারত না , মাস্টারমশাই মাত্র একবার সেটি দেখেই বোর্ডে তার সমাধান করে দিতেন।  শুধু  তাই নয় , এমন অনায়াস ভঙ্গিতে তিনি অঙ্কের সমাধান করে দিতেন।  শুধু তাই নয় , এমন অনায়াস ভঙ্গিতে তিনি অঙ্কের সমাধান করতেন যে মনে হত , সেটি যেন অদৃশ্য হরফে বোর্ডে লেখা আছে আর তিনি শুধু তার উপর খড়ি বোলাচ্ছেন।  

(৩) " ওঁর ভয়ে তারাই তটস্থ হয়ে থাকত " - কার ভয়ে করা কেন তটস্থ হয়ে থাকত ? 

উত্তরঃ

 নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পে অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের ভয়ে যারা পরীক্ষায় একশোতে একশো পেত তারাও তটস্থ হয়ে থাকত। 

              স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই ছিলেন অসাধারণ দক্ষ।  যে কোন জটিল অঙ্কই তিনি অনায়াসে সমাধান করে ফেলতেন।   মাস্টারমশাই মনে করতেন , অঙ্ক না জানলে জীবন বৃথা।  তাই তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাভরে ছাত্রদের অঙ্ক শেখাতেন।  কিন্তু ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে তিনি ভয়ানক রেগে গিয়ে তাদের মারতেন বলেই লেখাপড়ায় ভালো ছাত্ররাও তাঁকে ভয় পেত।  

(৪) " কিন্তু কাঁদবার জো  ছিল না " 

- (ক) কাদের কাঁদবার জো ছিল না ? 

(খ) কেন তাদের কাঁদবার জো ছিল না ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার ও তাঁর স্কুলের সহপাঠীদের কাঁদবার জো ছিল না।  

   সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই মনে করতেন প্রতিটি ছাত্রের উচিত অঙ্ক জানা এবং অঙ্ককে ভালোবাসা।  তিনি ছাত্রদের প্রাণপণে অঙ্ক শেখানোর চেষ্টা করতেন।  আর এই জন্য প্রয়োজনে তাদের প্রহার করতেও দ্বিধা করতেন না।  মাস্টারমশাইয়ের মতে , অঙ্ক না পেরে কাঁদার বিষয়টি একেবারেই পুরুষোচিত নয়।  মার্ খেয়ে ছাত্রদের কান্না পেলেও তারা কাঁদতে পারত না।  কারণ কাঁদলে মাস্টারমশাই আরো রেগে যেতেন। 

(৫)  " পুরুষ মানুষ হয়ে অঙ্ক পারিসনে " 

--- উক্তিটির আলোকে বক্তার মনোভাব ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্প থেকে উল্লিখিত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই। 

      মাস্টারমশাই নিজে ছিলেন অঙ্ক -অন্তঃপ্রাণ।  তিনি বিশ্বাস করতেন , অঙ্ক জানা এবং অঙ্ককে ভালোবাসা প্রতিটি ছাত্রের অবশ্য কর্তব্য।  মাস্টারমশাই ছেলেদের স্কুলে পড়াতেন , তাই তাঁর কাছে পৌরুষ এবং ছেলেদের অঙ্কে দক্ষতা প্রায় সমার্থক ছিল।  অঙ্ক না পেরে তাঁর হাতে মার্ খেয়ে ছেলেরা কাঁদলে তিনি এভাবেই তাদের ধিক্কার জানাতেন। 

(৬) " এখনি পা ধরে স্কুলের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেবো " 

-----   বক্তা কেন পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্প থেকে নেওয়া উক্তিটি সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের।  

            অঙ্ক -অন্তঃপ্রাণ মাস্টারমশাইয়ের ক্লাসের কোনো ছাত্র অঙ্ক না পারলেই তার পিঠে নেমে আসত তাঁর প্রকান্ড হাতের  প্রচন্ড চড়।  সে চড় খেয়ে কোনো ছাত্র কাঁদলেই তাকে তিনি পা ধরে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিতেন।  তাঁর মতে অঙ্ক না পৰ এবং কাঁদা , দুটোই পুরুষমানুষের পক্ষে চরম লজ্জার বিষয়। 

(৭) " এমন ঘটনা কল্পনাও করতে পারতেন না। " 

- যাঁর কথা বলা হয়েছে , তিনি কোন অঘটন কল্পনা করতে পারতেন না ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের  কথা বলা হয়েছে।  

               গল্পকথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের অঙ্কে অসাধারণ দক্ষতা ছিল।  যে-কোনো ধরণের জটিল অঙ্কের দিকে একবার মাত্র তাকিয়েই তিনি অনায়াসে সেটি সমাধান করে ফেলতে পারতেন।  তিনি বিশ্বাস করতেন অঙ্ক জানা এবং অঙ্ককে ভালোবাসা প্রতিটি ছাত্রের অবশ্য কর্তব্য।  মাস্টামশাই ছেলেদের স্কুলে পড়াতেন , তাই তাঁর কাছে পৌরুষ এবং ছেলেদের অঙ্কে দক্ষতা প্রায় সমার্থক ছিল।  একজন পুরুষমানুষ অঙ্ক পারে না , এটাই ছিল মাস্টারমশাইয়ের কাছে অঘটন।  এমন অঘটন তিনি কল্পনাও করতে পারতেন না।  

(৮) " প্লেটোর দোরগোড়ায় কী লেখা ছিল , জানিস ? " 

(ক) প্লেটো কে ? 

(খ) বক্তা প্লেটোর দোরগোড়ায় কোন লেখার কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পে উল্লিখিত প্লেটো ছিলেন প্রাচীন  গ্রিসের বিখ্যাত দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ।  তিনি সক্রেটিসের শিষ্য ছিলেন।  তাঁর লেখা বিখ্যাত গ্রন্থ 'দ্য রিপাবলিক'। 

(খ) অঙ্ক -অন্তঃপ্রাণ মাস্টারমশাই বলতেন যে , প্লেটোর বাড়ির দোরগোড়ায় লেখা ছিল যারা অঙ্ক জানে না তাঁর বাড়িতে তাদের প্রবেশ নিষেধ।  মাস্টারমশাইয়ের মতে স্বর্গের দরজাতেও নাকি ওই একই কথা লেখা আছে।  

(৯) " সে স্বর্গের চাইতে লক্ষ যোজন দূরে থাকাই আমরা নিরাপদ বোধ করতুম " 

-- বক্তার এই রকম মনে করার কারণ কী ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের  অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের কাছে অঙ্ক না পারাটা ছিল অপরাধ।  তিনি ছাত্রদের বলতেন যে গ্রিক গণিতজ্ঞ প্লেটোর বাড়ির দোরগোড়ায় লেখা ছিল যারা অঙ্ক জানে না তাঁর বাড়িতে তাদের প্রবেশ নিষেধ।  মাস্টারমশাই বলতেন স্বর্গের দরজাতেও নাকি ওই একই কথা লেখা আছে।  তাই গল্পকথক সুকুমার ও তাঁর সহপাঠীদের মনে হত , যে স্বর্গে ঢুকেই জ্যামিতির এক্সট্রা বা স্কোয়ার মেজারের অঙ্ক করতে হয় তার থেকে দূরে থাকাই নিরাপদ। 











                       























 







Thursday, 9 June 2022

খেয়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) " খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে " 

- পংক্তিটির উৎস লিখে নৌকার কাজের বর্ননা দাও। 

উত্তরঃ 

প্রশ্নে উল্লিখিত পংক্তিটির উৎস হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের    'চৈতালী 'কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'খেয়া ' কবিতা।  

                       নদী পারাপারের মাধ্যম হল খেয়া  তরি ।  কর্মসূত্রে বা অন্য প্রয়োজনে এক গ্রামের মানুষকে নদী পার হয়ে অন্য গ্রামে যেতেই হয় , তখনই তাদের প্রয়োজন হয় খেয়া তরির।  নদী পারাপারের সূত্রকে কেন্দ্র করেই এই খেয়া নৌকা দুই গ্রামের মানুষকে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে চলেছে আবহমানকাল ধরে।  নদীকূলবর্তী দুই গ্রামের মানুষের প্রাত্যহিক জীবন 'খেয়া নৌকা'র মাধ্যমে এভাবেই আবর্তিত হয়।  

(২)  " খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে "  

-- নদীস্রোতের প্রসঙ্গের মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ 

খেয়া নৌকার মাধ্যমে নদীর দুই পারের মানুষ আপন আপন প্রয়োজনে এক পার থেকে পরপারে যাওয়া-আসা করে।  কেউ কর্মের তাগিদে বাড়ি থেকে বাইরে যায় আবার কেউ-বা বাইরে থেকে ঘরে ফেরে।  আবহমানকাল ধরে যেমন নদী প্রবহমান , তেমনই মানুষের কর্মস্রোতও অনন্তকাল ধরেই চলে আসছে।  নদীবক্ষে বয়ে চলা খেয়া নৌকা মানবজীবনের শাশ্বত বহমানতাকেই প্রকাশ করছে।  কবি নদী স্রোতের মাধ্যমে জীবনের এই সত্যকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন।  

(৩) " কেহ যায় ঘরে , কেহ আসে ঘর হতে " 

--- 'কেহ ' বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তারা কীভাবে যাওয়া -আসা করে ? 

উত্তরঃ 

প্রশ্নের এই অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'খেয়া ' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।  এখানে নদীর দুই পারে অবস্থিত গ্রামের মানুষদের 'কেহ ' বলা হয়েছে , যারা খেয়া নৌকায় নদী পারাপার হয়। 

              খেয়া নৌকার মাধ্যমে নদীর দুই তীরের মানুষ নিত্য যাওয়া -আসা করে।  কেউ কর্মের তাগিদে বাড়ি থেকে বাইরে যায় , আবার কেউ বা কাজ শেষে বাড়ি ফেরে ওই খেয়া নৌকায় সওয়ার হয়ে।  নদীর মতোই মানুষের এই যাওয়া -আসা প্রবহমান , যার মাধ্যম হল খেয়া তরি। 

(৪) " নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস " 

--- কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি ? কীভাবে নতুন ইতিহাস গড়ে ওঠে ? 

উত্তরঃ 

কবি মানব -ইতিহাসের সংঘাত , ধ্বংস ও সৃষ্টির চিরসত্যতা প্রসঙ্গেই 'খেয়া ' কবিতায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।  

            কবি উপলব্ধি করেছেন অহংবোধ , ক্ষমতার লোভ , হিংসার বশবর্তী হয়ে শক্তিরাষ্ট্রগুলি পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত হয় বারংবার।  ফলে একটি সাম্রাজ্য ধ্বংস হয় আবার সেই ধবংসস্তূপের ওপরেই স্থাপিত হয় নতুন সাম্রাজ্য।  আবহমানকাল ধরেই এভাবে সাম্রাজ্যের ভাঙাগড়া চলে আসছে।  এই গড়ার মাধ্যমেই রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস। 

(৫) " পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব , কত সর্বনাশ " 

---- এই দ্বন্দ্ব -সংঘাতের কারণ কী ? এর পরিনাম  কী ? 

উত্তরঃ 

আবহমানকাল ধরে পৃথিবীতে মানব -ইতিহাস কলঙ্কিত হচ্ছে দ্বন্দ্ব সংঘাত ও পারস্পরিক যুদ্ধের কারণে। শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রকে দখল করার চেষ্টায় রত।  ক্ষমতার লোভ , অহংবোধ , হিংসাই হল দ্বন্দ্ব সংঘাতের মূল কারণ। পাশবিক স্বার্থপরতার কারণেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে তথা মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব -সংঘাত সংগঠিত হয়।  

                    দ্বন্দ্ব -সংঘাতের ফলেই রক্তাক্ত হয় মানব -ইতিহাস।  দুর্বল শোষিত ও পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়।  এই দ্বন্দ্বের ফলেই সৃষ্টি হয় যুদ্ধ তাতে ধ্বংস হয় এক সাম্রাজ্য , আবার গড়ে ওঠে নতুন এক সাম্রাজ্য।  

(৬) " সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে" 

----- কোথায় ,কীভাবে এমন ঘটনা ঘটে ? 

উত্তরঃ 

----- পৃথিবীতে যেখানে মানবসভ্যতার বিজয়রথ এগিয়ে চলেছে সেখানেই 'সোনার মুকুট ' ফুটে আর টুটে।  

    সুখ- দুঃখ আনন্দ বেদনাময় পৃথিবীতে  দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই আছে।  এখানেই রচিত হয় সভ্যতার ইতিহাস।  ক্ষমতার দম্ভে শক্তিশালী রাষ্ট্র দুর্বল রাষ্ট্রকে পেশি শক্তি প্রয়োগ করে নিজের ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে।  জয় -পরাজয় , সিংহাসন , স্বর্ণ মুকুট এই সবই রাজাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু সাধারণ মানুষ এই সবের থেকে দূরে থাকে।  তারা তাদের দৈনন্দিন সাধারণ জীবন শান্তিপূর্ণ ভাবে কাটিয়ে দেয়।  এক রাজা সিংহাসনে বসে ,চলে যায় , অন্য রাজা আবার সিংহাসনে বসে।  কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই ভাবেই পৃথিবী আবহমানকাল ধরেই চলে। 

(৭) " রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে " 

---- 'রক্তপ্রবাহ ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? এখানে  'ফেনাইয়া ' শব্দ ব্যবহারের গুরুত্ব কী ? 

উত্তরঃ 

'রক্তপ্রবাহ ' বলতে রক্তস্রোতের কথাই বলা হয়েছে।  সভ্যতার ইতিহাস হল রক্তাক্ত ইতিহাস।  অধিক শক্তিধর রাষ্ট্র নিজেদের পেশিশক্তির মাধ্যমে দুর্বল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা হরণ করে।  এর জন্য যুদ্ধ হয় , রক্তস্রোত বয়।  এই রক্তস্রোতকেই কবি 'রক্তপ্রবাহ ' বলেছেন। 

                     ' ফেনা' অস্থায়ী।  সৃষ্টির ক্ষণকালের মধ্যেই বুদ্বুদের মতো তার বিনাশ ঘটে।  অশুভ শক্তির গর্বোদ্ধত আচরণও সভ্যতার ইতিহাসে ক্ষণকালের জন্যই।  বুদ্বুদের মতো অল্প সময়েই তার বিনাশ ঘটে।  এই সত্যটিকেই কবি 'ফেনাইয়া ' শব্দের মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। 

(৮)  "উঠে কত হলাহল , উঠে কত সুধা !" 

--কোন প্রসঙ্গে কবি এই মন্তব্যটি করেছেন ?  উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'খেয়া' কবিতায় কবি মানব সভ্যতার অগ্রগতি প্রসঙ্গে উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।  

          মানুষ তার জীবনযাত্রার মানকে ক্রমাগত উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।  তার এই ক্রমাগত উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।  তার এই ক্রমাগত উন্নতির ইতিকথাই হল মানব সভ্যতার ইতিহাস।  

               মানুষ যত সুখস্বাচ্ছন্দ্য পেয়েছে , ততই তার মধ্যে আরও বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা লোভ জেগেছে।  সভ্যতার অগ্রগতি মানুষের  হাতে ভয়ংকর অস্ত্রের যোগান দিয়েছে।  ক্ষমতা দখলের লোভে মানুষ মেতে উঠেছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে।  এক সাম্রাজ্যের অবসানে সূচনা হয়েছে নতুন সাম্রাজ্যের। রক্তস্রোতের মধ্যে লেখা হয়েছে মানব সভ্যতার ইতিহাস।  

              পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী সমুদ্র মন্থনে হলাহল এবং সুধা অর্থাৎ বিষ ও অমৃত দুইই উঠেছিল।  কবির মতে সভ্যতার অগ্রগতিতেও তেমনি বিষ আর অমৃত দুইই উঠে এসেছে। কবি সভ্যতার ক্ষতিকারক রূপকে বিষ আর কল্যাণময় রূপকে সুধা বলেছেন।  দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকক্ষেত্রেই সভ্যতার ক্ষতিকারক রূপ তার কল্যাণময় রূপকে ছাপিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে।  নাগরিক জীবনের এই পরিণতি কবিকে কষ্ট দিয়েছে।  তাই তিনি পল্লীজীবনের শান্ত - মাটির গন্ধমাখা রূপটির উল্লেখ করেছেন।  সেখানে সভ্যতার অগ্রগতি তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেই বোধহয় আবহমান কাল ধরে মানুষের সঙ্গে মানুষের মানবিক সম্পর্ক বেঁচে আছে। 


           










Wednesday, 8 June 2022

বাংলাদেশ - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

 কোন দেশেতে তরুলতা 

সকল দেশের চাইতে শ্যামল 

কোন দেশেতে চলতে গেলেই 

দলতে হয় রে দূর্বা কোমল ? 

কোথায় ফলে সোনার ফসল ,

সোনার কমল ফোটে রে ? 

সে আমাদের বাংলা দেশ 

আমাদেরি বাংলা রে। 


কোথায় ডাকে দোয়েল শ্যামা 

ফিঙে গাছে গাছে নাচে ? 

কোথায় জলে মরাল চলে 

মরালী তার পাছে পাছে ;

বাবুই কথা বাসা বোনে

 চাতক বারি  যাচে রে ? 

সে আমাদের বাংলা দেশ 

আমাদেরি বাংলা রে। 


কোন দেশের দুদর্শায় মোরা 

 সবার অধিক পাই রে দুখ ? 

কোন দেশের গৌরবের কথায় 

বেড়ে ওঠে মোদের বুক ? 

মোদের পিতৃ-পিতামহের 

চরণধূলি কোথায় রে ?

সে আমাদের বাংলা দেশ

 আমাদেরি বাংলা রে। 



শব্দার্থ : 

তরুলতা- গাছপালা 

দলতে - মাড়িয়ে যেতে 

কোমল - নরম 

মরাল- রাজহাঁস 

মরালী - রাজহংসী 

চরণধূলি - পায়ের ধুলো 

সোনার ফসল- ধান , পাকা ধানের রঙ হলুদ।  তাই ধান পাকলে মনে হয়  মাঠে সোনা ফলে আছে। 

চাতক - এক রকমের ছোটো পাখি।  কথিত আছে যে ,  এরা মেঘের কাছে জল প্রাথর্না করে  এবং বৃষ্টির জল ছাড়া অন্য জল পান করে না। 

শ্যামল- সবুজ 

দূর্বা - ছোটো ঘাস 

কমল- পদ্ম 

বারি -জল 

দুর্দশা - দুরবস্থা 

অধিক - বেশি 

পিতামহ - ঠাকুরদা 

যাচে - চায় 

গৌরব - সম্মান 

পিতৃ- পিতা ,বাবা 


প্রশ্ন ও উত্তর : 

(১) "বাংলাদেশ " কবিতাটি কে লিখেছেন ? 

উত্তর : সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত 

(২) বাংলাদেশে চলতে গেলে কী দলতে হয় ? 

উত্তরঃ  দূর্বা ঘাস 

(৩) কোথায় ফলে সোনার ফসল এবং কোথায় সোনার কমল ফোটে ? 

উত্তরঃ  বাংলাদেশে সোনার ফসল  ফলে এবং সোনার কমল ফোটে। 

(৪) এ দেশে কোন কোন পাখি গান গায় ? কোন পাখি বাসা বোনে ? 

উত্তরঃ দোয়েল আর শ্যামা পাখি গান গায়।  বাবুই পাখি বাসা বোনে। 

(৫) এ দেশের জলে কী চড়ে বেড়ায় ? 

উত্তরঃ  এ দেশের জলে মরাল মরালী চড়ে বেড়ায়। 

(৬) এ দেশের দুর্দশার কথা শুনলে আমাদের কেমন লাগে ?

উত্তরঃ এ দেশের দুর্দশার কথা শুনলে আমাদের সবথেকে বেশি দুঃখ হয়। 

(৭) এ দেশের গৌরবের কথা শুনলে আমাদের কেমন লাগে ? 

উত্তরঃ এ দেশের গৌরবের কথা শুনলে আমাদের গর্বে বুক ফুলে ওঠে।  

(৮) এ দেশের মাটিতে কাদের চরণধূলি মিশে আছে ? " চরণধূলি " কথার অর্থ কী ? 

উত্তরঃ এ দেশের মাটিতে আমাদের পূর্বপুরুষের চরণধূলি মিশে আছে।  

" চরণধূলি " কথাটির অর্থ হল পায়ের ধুলো।  

(৯) 'পিতৃ -পিতামহ' বলতে কী বোঝায় ? তাঁরা কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করেন ? 

উত্তরঃ আমাদের পূর্বপুরুষ অর্থাৎ বাবা ও ঠাকুরদা হলেন যথাক্রমে পিত বা পিতৃ এবং পিতামহ। 

                     আমাদের  জন্মভূমিতে আমাদের আগে তাঁদের জীবন অতিবাহিত করেছেন।  এই জন্মভূমির মাটিতেই তাঁরা পদচারণা করেছেন।  তাই এর ধুলো পবিত্র ও পুণ্যময় রূপে আমাদের প্রভাবিত করে।  

(১০) 'তরুলতা ' কী ? বাংলাদেশের তরুলতা কেমন ? 

উত্তরঃ বৃক্ষ -গুল্ম-লতা ইত্যাদিকে কবি একত্রে তরুলতা বলেছেন।  

                        সকল দেশের গাছপালার থেকেও বাংলাদেশের গাছপালা বা তরুলতা সবুজ।  

(১১) বাংলাদেশের ধানকে কবি সোনার ফসল বলেছেন কেন ? 

উত্তরঃ পাকা ধানের রঙ হলুদ।  তাই সারা মাঠের ধান যখন পেকে ওঠে , তখন মনে হয় যেন সোনা ফলেছে।  তাই কবি বাংলাদেশের ধানকে সোনার ফসল বলেছেন।  

(১২) বাংলাদেশে যেসব পাখি দেখা যায় তাদের নাম বলো।  

উত্তরঃ বাংলাদেশে চড়ুই , শালিখ, কাক, টিয়া , ময়না, কোকিল , হাঁস , কাকাতুয়া , দোয়েল, শ্যামা, ফিঙে প্রভৃতি পাখি দেখা যায়। 

(১৩) 'বাংলাদেশ ' কবিতায় কোন কোন পাখির কী কী কাজের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ ' বাংলাদেশ ' কবিতায় দোয়েল , শ্যামা , ফিঙে , রাজহাঁস , রাজহংসী , বাবুই ও চাতক  পাখির কথা বলা হয়েছে।  

                এখানে দোয়েল ও শ্যামা পাখি সুন্দর শুরে ডাকে , ফিঙে পাখি গাছে গাছে নেচে বেড়ায় , রাজহংসী রাজহাঁসের পেছন পেছন জলে সাঁতার কাটে , বাবুই পাখি গাছের ডালে বাসা বোনে আর চাতক পাখি বৃষ্টির জল প্রার্থনা করে।  



পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...