সওগাত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মনে রাখার বিষয় :
- "সওগাত" গল্পটি " লিপিকা" কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
- "সওগাত " কথাটির অর্থ হল " উপঢৌকন "
- "সওগাত " কথাটি একটি ফারসী শব্দ।
শরৎ কাল প্রিয় সম্মিলনের ঋতু। এই সময় প্রবাসী ( প্রবাসী অর্থাৎ যারা কর্মসূত্রে বা অন্য কোন কারণে দেশ ছেড়ে দূরে থাকে ) চায় নিজের ঘরে ফিরতে। মা দুর্গা যেমন এই সময় তাঁর মার কাছে ফিরে আসেন , তেমনই সবাই চায় তার মায়ের কাছে ফিরে আসতে। পুজোর গন্ধর সঙ্গে মায়ের গন্ধ মিশে থাকে। তাই "রবীন্দ্রনাথের " মনে পড়া " কবিতাতে পুজোর গন্ধ মায়ের গন্ধ হয়ে যায়।
গল্পের শুরুতে দেখা যায় পুজোর সময়েও বাড়ির ছেলেরা সবাই মায়ের থেকে দূরে রয়েছে। একমাত্র মায়ের কোলের ছেলেটি মায়ের কাছে আছে। মা তার সেই দূরে থাকা ছেলেদের জন্য , কুটুম্বদের জন্য নানা উপঢৌকন পাঠাচ্ছেন। বেনারসী কাপড়, সোনার অলঙ্কার , ভান্ড ভরে ক্ষীর দই, পাত্র ভরে মিষ্টান্ন। মায়ের থেকে দূরে থাকা ছেলেরা মায়ের স্নেহের বদলে রাশীকৃত জিনিস পেয়েছে যা অর্থমূল্যে অতি সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। ছোটছেলেটি উপঢৌকনের বাইরের চাকচিক্য দেখে আকর্ষিত হয়ে মার কাছে গিয়ে অনুযোগ জানাচ্ছে। মা তখন সবথেকে মূল্যবান উপহার "মায়ের স্নেহচুম্বন " শুধু ছোট ছেলেটিকে দেয়। মায়ের স্নেহ যা শুধুমাত্র মায়ের কাছেই পাওয়া যায়।
এই হচ্ছে মায়ের দেওয়া সেরা " সওগাত " তার সন্তান কে।
( উৎসাহী ছাত্রছাত্রীদের জন্য :
.সুন্দর রঙবেরঙের ঢাকা দেওয়া সওগাত গুলি দেখে .ছেলেটির মন উৎসুক হয়ে উঠেছিল অথচ মায়ের হৃদয়ের দানের তুলনায় তাঁর এই পুজোর পরবের দান যে কত মূল্যহীন তা বোঝানোর জন্য সব সওগাত চলে যাওয়ার পর দিনান্তের অসামান্য একটি সাংকেতিক রূপকল্প সৃষ্টি হয়েছে :
"দিনের শেষ নৈবেদ্যের সোনার ডালি নিয়ে সূর্যাস্তের শেষ আভা নক্ষত্রলোকের পথে নিরুদ্দেশ হল "
সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় যে মায়াবী আলোর ও দৃশ্যের সৃষ্টি হয় তা অত্যন্ত সাময়িক। কিছু সময় পরেই তা বিলীন হয়ে যায়। সেই রকম মায়ের পাঠানো দামী ও সুন্দর দ্রব্যগুলি একদিন শেষ হয়ে যাবে রয়ে যাবে শুধু মায়ের স্নেহ , মায়ের আদর যা একমাত্র পেল মায়ের কাছে থাকা কোলের ছেলেটি। )
No comments:
Post a Comment