Friday, 25 December 2020

কুঠার ও জলদেবতা

 

কুঠার ও জলদেবতা

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

উৎস : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত " কুঠার ও জলদেবতা " গল্পটি তাঁর রচিত " কথামালা " গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। " 

গল্পের মূলভাব : কখনও কারও প্রতি হিংসা বা লোভ করতে নেই।  সব সময় সৎভাবে চলতে পারলে তার ফল অবশ্যই পাওয়া যায়।  আলোচ্য গল্পে প্রথম দুঃখী কাঠুরিয়া সৎ ছিল বলে জলদেবতা তাকে তার নিজের কুড়ুল এবং অন্য দুটো সোনার ও রূপোর কুড়ুল দান করেন।  কিন্তু দ্বিতীয় কাঠুরিয়া ছিল লোভী ও মিথ্যাবাদী।  এজন্য জলদেবতা তাকে কিছুই দেননি বরং তিরস্কার করে বিদায় দিয়েছেন।  ফলে সে তার নিজের কুড়ুলখানাও হারিয়েছে।   

 প্রশ্ন ও উত্তর ঃ

(১) প্রথম ব্যক্তিকে জলদেবতা প্রথমে কীরকম কুঠার দেখিয়েছিলেন ?

উত্তর ঃ  প্রথম ব্যক্তিকে জলদেবতা প্রথমে স্বর্ণময় কুঠার দেখিয়েছিলেন

(২) দ্বিতীয়বার জলদেবতা দুঃখী ব্যক্তিকে কী রূপ কুঠার দেখিয়েছিলেন ?

উত্তর ঃ  দ্বিতীয়বার জলদেবতা দুঃখী ব্যক্তিকে রজতময় কুঠার দেখিয়েছিলেন

(৩) দুঃখী লোকটিকে জলদেবতা কী কী দিয়েছিলেন ?

উত্তর ঃ দুঃখী লোকটিকে জলদেবতা স্বর্ণময় ও রজতময় কুঠারদুটির সাথে দুঃখী লোকটির নিজের লোহার কুঠারটিও দিয়েছিলেন

(৪) দুঃখী লোকটির স্বভাবের কী পরিচয় পাওয়া যায় ?

উত্তর ঃ দুঃখী লোকটি ছিল নির্লোভ , সত্যনিষ্ঠ ও ধর্মপরায়ণ . 

 

(৫) দ্বিতীয় ব্যক্তিকে জলদেবতা কীরূপ কুঠার দেখিয়েছিলেন ?

উত্তর ঃ দ্বিতীয় ব্যক্তিকে জলদেবতা প্রথমে সোনার কুঠার দেখিয়েছিলেন ।

(৬ ) কুঠার দেখে দ্বিতীয় ব্যক্তি জলদেবতাকে কী বলেছিল ?

উত্তর ঃ সোনার কুঠার দেখে দ্বিতীয় ব্যক্তি অত্যন্ত ব্যগ্র হয়ে জলদেবতাকে বলেছিল যে সেটা তার কুঠার ।

(৭) দ্বিতীয় ব্যক্তির  কথায় তার কোন স্বভাবের পরিচয় পাওয়া যায় ?

উত্তর ঃ দ্বিতীয় ব্যক্তির কথায় বোঝা  যায় যে সেই ব্যক্তি অত্যন্ত লোভী ও মিথ্যাবাদী ।

(৮) " তুমি কি জন্য এত রোদন করিতেছ?  " 

(ক) উল্লিখিত অংশটি কে কাকে বলেছে ? 

(খ) 'রোদন ' কথাটির অর্থ কী ? 

(গ) কে কেন রোদন করছিল ? 

উত্তর: 

(ক) উল্লিখিত অংশটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত " কুঠার ও জলদেবতা " গল্পে জলদেবতা দুঃখী ব্যক্তিটিকে বলেছে।  

(খ) 'রোদন' কথাটির অর্থ কান্না।  

(গ) দুঃখী ব্যক্তিটি গাছ কাটতে গিয়ে হাত ফসকে তার একমাত্র কুঠারটি নদীর জলে হারিয়ে ফেলে।  তাই সে নিজের দুর্ভাগ্যের জন্য কাঁদছিল।  

(৯) " আপনি  আমায় জন্মের মতো কিনিয়া রাখিলেন

(ক) বক্তা কে ? 

(খ) বক্তা উল্লিখিত উক্তিটি কেন করেছে ? 

উত্তর : 

(ক) বক্তা এখানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত " কুঠার ও জলদেবতা " গল্পে দুঃখী ব্যক্তিটি।  

(খ) গাছ কাটতে গিয়ে হাত ফসকে দুঃখী ব্যক্তিটি তার একমাত্র কুঠারটি নদীর জলে হারিয়ে ফেলে।  কুঠারটি আর কোনদিন ফায়ার পাবে না ভেবে সে কাঁদতে থাকে।  তার কান্না দেখে সে নদীর জলদেবতার দয়া হয় এবং তিনি দুঃখীর সেই কুঠারটি যখন নদীর তলা থেকে তুলে এনে দেখায় তখন নিজের কুঠারটি ফিরে  পাবার আশায়  দুঃখী ব্যক্তিটি প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি বলে।  

(১০) " তুই এ কুঠার পাবার যোগ্য পাত্র নহিস।

(ক) কে কাকে উল্লিখিত উক্তিটি বলেন ? 

(খ) কেন বলেন ? 

উত্তর : 

(ক) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত " কুঠার ও জলদেবতা " গল্পে নদীর জলদেবতা দুঃখী ব্যক্তিটির এক লোভী প্রতিবেশীকে বলেছিলেন।  

(খ) দুঃখী ব্যক্তিটির কাছ থেকে তার প্রতিবেশীরা জানতে পারে যে নদীর দয়ালু জলদেবতা তাকে দয়া করে তার একমাত্র লোহার কুঠারের সাথে তাকে  একটি সোনার ও একটি রুপোর কুঠার ও দিয়েছে।  প্রতিবেশীদের মধ্যে এক লোভী ব্যক্তি নদীর ধারে গিয়ে তার লোহার কুঠারটি হাত ফসকে পড়ে গেছে এই রকম ভান করে কাঁদতে থাকে।  জলদেবতা যখন তাকে পরীক্ষা করার জন্য প্রথমে সোনার তৈরি এক কুঠার দেখায় তখন সেই ব্যক্তি লোভ সামলাতে না পেরে বলে সেই সোনার কুঠারটিই  তার।  তখন জলদেবতা খুব রেগে যান এবং ওই লোভী ব্যক্তিকে তিরস্কার করে প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেন। 

 




 

 

 

Sunday, 6 December 2020

অরণ্যের রূপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,

 অরণ্যের রূপ 

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 

সাহিত্য মুকুল বইয়ে "অরণ্যের রূপ "  অংশটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত "আরণ্যক " উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে।  

                  ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ খ্ৰীষ্টাব্দ 'আরণ্যক ' -এর রচনাকাল।  ভাগলপুরের আজমাবাদ , লবটুলিয়া , ইসমাইলপুর , রিজার্ভ ফরেস্ট এর প্রান্তসীমা -এই অঞ্চলে পরিব্যপ্ত অরণ্যই "আরণ্যক"। 

           " আরণ্যক " এর কাহিনী সরল ও জটিলতাবর্জিত।  নায়ক সত্যচরণ ভাগলপুরের কোনো জমিদারী এস্টেটে চাকরি পেয়ে ম্যানেজার হিসেবে সেখানে গিয়েছে।  প্রাথমিক ভাবে তার নাগরিক মন এই নির্জন অরণ্যবাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেও একটু একটু করে প্রকৃতি তার সম্মোহনকারী প্রভাব বিস্তার করেছে সত্যচরণের ওপরে। ক্রমে তার আর অরণ্যের থেকে সামান্য বিচ্ছেদও সহ্য হয় না।  

প্রশ্ন : 

(১) "একদিনের কথা জীবনে কখনও ভুলিব না " 

(ক) সেদিন কী উৎসব ছিল ? 

(খ) সেদিন কাছারির সিপাহীরা কী করেছিল ? 

(গ) সেদিন গল্পকথক অনেক রাত পর্যন্ত কী করছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত " অরণ্যের রূপ " রচনাংশ থেকে জানা যায় সেদিন দোল পূর্ণিমার উৎসব ছিল।  

(খ) সেদিন কাছারির সিপাহিরা ছুটি নিয়ে সারাদিন ঢোল বাজিয়ে হোলি খেলছিল।  সন্ধ্যার সময়ও তাদের নাচগানের বিরাম ছিল না।  

(গ) সেদিন গল্পকথক অনেক রাত পর্যন্ত নিজের ঘরে টেবিলে আলো জ্বালিয়ে হেড অফিসের জন্য চিঠিপত্র লিখছিলেন। 

(২) " মনে হইল এক অজানা পরীরাজ্যে আসিয়া পড়িয়াছি " 

(ক) লাইনটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ? কার লেখা ? 

(খ) কোন স্থানকে পরীরাজ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে ? 

(গ) ঐ জায়গায় ফাগুনের মাঝামাঝি কোন ফুল ফোটে ? 

উত্তরঃ 

(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটি ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়  রচিত " আরণ্যক " উপন্যাসের অন্তর্গত            " অরণ্যের রূপ " শীর্ষক রচনাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে।  

(খ) ফুলকিয়া বইহারের জ্যোৎস্না রাত্রির অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে পরীরাজ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।  

(গ) ফুলকিয়া বইহারের সমস্ত প্রান্তরে ফাগুনের মাঝামাঝি দুধলি ফুল ফোটে।  

(৩) " সে জ্যোৎস্নারাত্রের বর্ণনা নাই " 

(ক) কোন জায়গায়  জ্যোৎস্না রাত্রির কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) সেই জায়গায় কী কী গাছ দেখা যায় ? 

(গ) সেই রাত্রে সিপাহি রা কী করছিল ? 

উত্তরঃ 

(ক) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ' আরণ্যক ' উপন্যাসের অন্তর্গত 'অরণ্যের রূপ ' শীর্ষক রচনাংশ থেকে ফুলকিয়া বইহারের জ্যোৎস্না রাত্রির বর্ণনার কথা বলা হয়েছে।  

(খ) সেই জায়গায় বড় বড় গাছ দেখা যায় না , শুধু ছোটখাটো বন ঝাউ ও কাশবন দেখা যায়।  

(গ) সিপাহিরা সারাদিন আমোদ প্রমোদের পর ক্লান্ত দেহে ঘুমিয়ে পড়েছিল। 

(৪) " জ্যোৎস্না রাতের দুধলি ফুলের মিষ্ট সুবাস প্রাণ ভরিয়া আঘ্রাণ করিয়াছি " 

(ক) দুধলি ফুল কখন ফোটে ? 

(খ) 'আঘ্রাণ ' শব্দের অর্থ কী ? 

(গ) জ্যোৎস্না রাতের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।  

উত্তরঃ 

(ক) ফাগুনের মাঝামাঝি দুধলি ফুল ফোটে।  

(খ) " অঘ্রাণ " শব্দের অর্থ গন্ধ। 

(গ) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ' অরণ্যের রূপ ' রচনাংশে গল্পকথক ফুলকিয়া বইহারের পরিপূর্ন জ্যোৎস্না রাত্রির রূপ বর্ণনা করেছেন।  নিঃশব্দ , নিস্তব্ধ সেই ছায়াবিহীন জ্যোৎস্না রাত্রির রূপ দেখে গল্পকথক মুগ্ধ হয়ে গেছেন।চকচকে সাদা বালি মেশানো জমি ও আধ শুকনো কাশ বনে জ্যোৎস্না এক অপার্থিব জগতের সৃষ্টি করেছে।  সেই অপার্থিব সৌন্দর্য্য দেখে তিনি যেমন মুগ্ধ তেমনই তার মনে ভয়েরও সঞ্চার করেছে।  গল্পকথক মনে করছেন তিনি যেন এক অজানা পরীরাজ্যে এসে পড়েছেন।  

(৫) " মনে হইল এক অজানা পরীরাজ্যে আসিয়া পড়িয়াছি " 

(ক) কার একথা মনে হয়েছিল ? 

(খ) 'পরী ' কাদের বলা হয় ? 

(গ) কখন তাঁর একথা মনে হয়েছিল ? 

(৬) " ভগবানের সৃষ্টির একটি অপূর্ব রূপ তাহার নিকট অপরিচিত রহিয়া গেল " 

(ক) কার লেখা , কোন গদ্যের অংশ ? 

(খ) কোথায় এ রূপ দেখা যায় ? 

(গ) সেই রূপ কেমন ছিল ? 

(৭) " কলিকাতার গোলমালের মধ্যে আর ফিরিতে পারিব না " 

(ক) উল্লিখিত অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

(খ) কে কোলকাতার গোলমালের মধ্যে আর ফিরতে পারবেন না ? 

(গ) কেন ফিরতে পারবেন না ? 
















 
















Wednesday, 25 November 2020

কবিতা : দেখব এবার জগৎটাকে

দেখব এবার জগৎটাকে 

কাজী নজরুল ইসলাম 

থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে ; দেখব এবার জগৎটাকে ,

কেমন ক'রে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।  

দেশ হতে দেশ-দেশান্তরে , ছুটছে তারা কেমন ক'রে। 

কিসের নেশায় কেমন ক'রে মরছে যে  বীর লাখে লাখে , 

কিসের আশায় ক'রছে  তারা বরণ -মরণ যন্ত্রণাকে। 

কেমন ক'রে বীর ডুবুরি সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনে , 

কেমন ক'রে দুঃসাহসী চলছে উড়ে স্বর্গপানে।  

জাপটে  ধরে ,ঢেউয়ের ঝুঁটি যুদ্ধ - জাহাজ চলছে ছুটি '-

কেমন ক'রে আনছে মানিক বোঝাই ক'রে সিন্ধু-যানে ,

কেমন জোরে টানলে সাগর উথলে উঠে জোয়ার বানে।  

কেমন ক'রে মথলে পাথার লক্ষ্মী উঠেন পাতাল ফুঁড়ে ,

কিসের অভিযানে মানুষ চলছে হিমালয়ের চূড়ে , 

তুহিন মেরু পার হয়ে যায় , সন্ধানীরা কিসের আশায় ? 

হাউই চ'ড়ে চায় যেতে কে চন্দ্রলোকের অচিনপুরে -

শুনব আমি ইঙ্গিত কোন মঙ্গল হ'তে আসছে উড়ে।  

রইব নাকো বদ্ধ খাঁচায় , দেখব এবার ভুবন ঘুরে , 

আকাশ বাতাস , চন্দ্র তারায় সাগর -জলে পাহাড়-চূড়ে 

আমার সীমার বাঁধন টুটে , দশ দিকেতে প'ড়ব লুটে , 

পাতাল ফেঁড়ে নামব নীচে , উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে , 

বিশ্বজগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।  


সার-সংক্ষেপ :  

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ' দেখব এবার জগৎটাকে ' কবিতায় এক কিশোরের সঙ্কল্পের কথা বলা হয়েছে।  সে বদ্ধ হয়ে ঘরে বসে থাকবে না।  সে সারা পৃথিবীর কোথায় কী হচ্ছে , আর কোথায় কী আছে সব জানার সঙ্কল্প করেছে।  সে বিভিন্ন দুঃসাহসিক অভিযান করে সব কিছুকে হাতের মুঠোর মধ্যে আয়ত্ত করে নেবে।  সে দেখতে চায় মানুষ কিসের নেশায় দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়াচ্ছে , আর লাখে লাখে বীর যুদ্ধে তাদের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে। সে এও জানতে চায় কিসের আশায় তারা মরণের যন্ত্রণাকে বরণ করে নিচ্ছে।  সে জানতে চায় কেমন করে বীর ডুবুরি সমুদ্রের তলা থেকে মুক্তা তুলে আনে , কেমন করে দুঃসাহসী মানুষ রকেটে করে মহাকাশে উড়ে যাচ্ছে।  যুদ্ধ জাহাজ কেমন করে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝুঁটি ধরে সমুদ্রের উপর দিয়ে ছুটে চলেছে আবার সেই জাহাজই সম্পদ বোঝাই করে নিয়ে আসছে।  কেমন করে জোয়ারের টানে সাগর উথলে উঠছে ও কেমন পাতাল ফুঁড়ে মানুষ লক্ষ্মী তুলে আনছে তাও ছেলেটি জানতে চায়।  ( ' পাতাল ফুঁড়ে লক্ষ্মীকে তুলে আনা ' অর্থাৎ তেলের খনি , কয়লার খনির কথা বোঝান হয়েছে।  ) মানুষ অভিযান করতে কখনোও হিমালয়ের চূড়ায় উঠে যাচ্ছে , আবার কখনো তুষার মেরু পার হয়ে সন্ধানীরা ছুটে চলেছে আবিষ্কারের নেশায়।  সন্ধানীরা রকেটে চড়ে চাঁদে উড়ে যাচ্ছে আর মঙ্গলগ্রহ থেকে কীসের ইঙ্গিত উড়ে আসছে সেই সম্পর্কেও সে জানতে চায়।  সে একদম ঘরে বদ্ধ হয়ে থাকতে চায় না।  সে সব রকম বাঁধন ভেঙে আকাশ , বাতাস , চাঁদ , তারা , সাগর -জলে ঘুরে বেড়াবে।  কিশোরটি তার সীমার বাঁধন ভেঙে দশ দিকে ( দশ দিক অর্থাৎ উত্তর , দক্ষিণ , পূর্ব , পশ্চিম , ঈশান , অগ্নি , বায়ু , নৈঋত , উর্দ্ধ , অধঃ ) ছড়িয়ে পড়বে।  কখনো পাতাল ভেদ করে নীচে নেমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে দেখবে আবার আকাশ থেকে মহাকাশে ছুটে চলবে।  বিশ্বজগতকে নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে পুরে ফেলে সে অসম্ভবকে সম্ভব করতে চাইছে।  


জেনে রাখো : 

লক্ষ্মী উঠেন পাতাল ফুঁড়ে : 

পুরাণে আছে যে , একবার দেবতা ও অসুরের মধ্যে বিবাদ বাধলে লক্ষ্মী ভয়ে পাতালে গিয়ে আশ্রয় নেন।  তখন দেবতা ও অসুররা সমুদ্র মন্থন করলে লক্ষ্মী বের হয়ে আসেন। 


কিসের অভিযানে মানুষ চলছে হিমালয়ের চূড়ে : 

মানুষের জানার আগ্রহের শেষ নেই।  এই জানার আগ্রহেই তেনজিং আর এডমন্ড হিলারী এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে সক্ষম হন।  


চন্দ্রলোকের অচিনপুরে : 

মানুষের অদম্য বাসনা মানুষকে জলে স্থলে অন্তরীক্ষে ঘুরিয়ে বেড়ায়।  এই অদম্য বাসনার জন্যই মানুষ বিজ্ঞান বলে মহাকাশকে জয় করে চাঁদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।  চাঁদে প্রথম পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন।  এটি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২১ সে জুলাইয়ের ঘটনা।  

প্রশ্ন ও উত্তর 

(১) " দেখব এবার জগৎটাকে " কবিতায় কবি কী ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ? 

উত্তর :    "দেখব এবার জগৎটাকে " কবিতায় কবি পরিচিত জগতের বাইরে বেরোতে চেয়েছেন।  অচেনা -অজানাকে চেনা-জানার দুর্নিবার ইচ্ছার কথাই কবি এই এই কবিতায় প্রকাশ করেছেন।  

(২) কারা , কোথা থেকে মুক্তা আনে ? 

উত্তরঃ   ডুবুরিরা সাগর সেঁচে মুক্তা আনে।  

(৩) কারা এবং কেন মৃত্যুযন্ত্রণাকে বরণ করেন ? 

উত্তরঃ দেশের বীর জওয়ানরা মৃত্যুযন্ত্রণাকে বরণ করেন।  

      দেশের তথা দেশজননীকে সুরক্ষিত রাখতে বিদেশি আক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে মরণ যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করেও তাঁরা নিজের জীবন বিসর্জন দেন।  

(৪) "চন্দ্রলোকের অচিনপুরে " বলতে কী বোঝ ? 

উত্তর :  চাঁদ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ।   একসময় মানুষের কাছে পৃথিবীর এই উপগ্রহটি ছিল অজানা এক স্থান।  কিন্তু ওই চাঁদের সম্বন্ধে জানার কৌতূহল ছিল অদম্য।  তাই কবি এখানে চাঁদকে 'অচিনপুর' বলেছেন।  

(৫) কারা স্বর্গের দিকে উড়ে চলেছেন ? 

উত্তরঃ দুঃসাহসীরা স্বর্গের দিকে উড়ে চলেছেন।   

(৬) কবি  বিশ্বজগৎকে কী ভাবে দেখতে চান ? 

উত্তরঃ কবি বিশ্বজগৎকে হাতের মুঠোয় পুরে দেখতে চান।  

(৭) হাউই চড়ে কে কোথায় যেতে চায় ? 

উত্তরঃ হাউই চড়ে মহাকাশচারীদের মতো কবিও  চাঁদে ও মঙ্গলগ্রহে যেতে চায়।  









Saturday, 7 November 2020

সকল দেশের সেরা


 
সকল দেশের সেরা 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় 

ধনধান্যপুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা ,

তাহার মাঝে  আছে দেশ এক -সকল দেশের সেরা ;

ও সে , স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ , স্মৃতি দিয়ে ঘেরা ; 

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, 

সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।  


চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা , কোথায় উজল ধারা , 

কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে ? 

তার       পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি , পাখির ডাকে জেগে।  

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, 

সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।   


এত স্নিগ্ধ  নদী কাহার , কোথায় এমন ধুম্র পাহাড় ! 

কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশতলে মেশে ! 

এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে ! 

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, 

সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।  


পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী ; কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখী ; 

গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে -

তারা ,  ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে ; 

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, 

সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।  


ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ !

-- ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি , 

আমার এই দেশেতে জন্ম -- যেন এই দেশেতে মরি ---

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, 

সকল দেশের রানি সে যে - আমার জন্মভূমি।  


কবিতার উৎস : কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় একাধারে তিনি ছিলেন নাট্যকার ও সঙ্গীতজ্ঞ।  তাঁর রচিত " সকল দেশের সেরা " কবিতাটি প্রকৃতপক্ষে একটি গান।  তাঁর " গান " কাব্যগ্রন্থ থেকে " সকল দেশের সেরা " সংকলিত হয়েছে।  


কবিতার  মূলভাব : 

ধনধান্য এবং পুষ্পে ভরা এই বসুন্ধরার মাঝে এক দেশ আছে।  এই দেশ কবির জন্মভূমি এবং সকল দেশের সেরা।  কবির এই স্বদেশ স্বপ্ন দিয়ে তৈরি এবং স্মৃতি দিয়ে ঘেরা।  কবির কাছে এই দেশ সকল দেশের রানি।  এর চাঁদ , সূর্য , গ্রহ , তারা অতিশয় উজ্জ্বল।  এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও তুলনাহীন।  কবি এই দেশের ভৌগলিক অবস্থানকেও কবিতায় তুলে ধরেছেন।  এর নদী , পাহাড় , খেত -খামার , বৃক্ষলতা সবই মনোহর।  কবি এই দেশ মাতার চরণ দুখানি বক্ষে জড়িয়ে ধরে কৃতার্থ হন।  সমগ্র কবিতায় কবি তাঁর স্বদেশভূমির গৌরব কথাকে বাণীমূর্তি দান করেছেন। 

প্রশ্ন : 

(১) "তাহার মাঝে দেশ এক ----- সকল দেশের সেরা "

(ক) উল্লিখিত অংশটি কার লেখা ও কোন কবিতার অংশ ? 

(খ) কে , কাকে সকল দেশের সেরা বলেছেন ? 

(গ) কেন তাকে কবি সকল দেশের সেরা বলেছেন ? 

উত্তরঃ  

(ক) উল্লিখিত  অংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় " সকল দেশের সেরা " কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।  

(খ) কবি তাঁর মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে " সকল দেশের সেরা " বলেছেন।  

(গ) কবির চোখে তাঁর মাতৃভূমি ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদ , সৌন্দর্যে , আন্তরিকতায় , মা- ভাইয়ের স্নেহে অনেক বেশি সম্পদশালী।  তাই কবি ভারতবর্ষকে " সকল দেশের সেরা " বলেছেন।  

(২) " এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে " 

(ক) এখানে কোন দেশের কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) এই দেশের নদী , পাহাড় ,  ধানের ক্ষেত্রটি কেমন ? 

(গ )  কবি নিজের দেশকে কী নামে ডেকেছেন ? 

উত্তরঃ (ক)  " সকল দেশের সেরা " কবিতায় এখানে ভারতবর্ষের কথা বলা হয়েছে।  

(খ) এই দেশের পাহাড় ধুম্র অর্থাৎ ধোঁয়ার মতো রঙের ও নদীর রূপ  স্নিগ্ধ।  সবুজ ক্ষেত এত বিশাল যে মনে হয় আকাশে মিশে গেছে।  

(গ ) কবি নিজের দেশকে " সকল দেশের রানি বলে ডেকেছেন।  


(৩) " তারা ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে " 

(ক) এখানে " তারা " বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? 

(খ) কবিতার এই অংশে কবি তাঁর জন্মভূমির যে দৃশ্যের কথা বর্ণনা করেছেন তা লেখ।  


উত্তরঃ  (ক) "সকল দেশের সেরা " কবিতায় এখানে "তারা " বলতে অলি অর্থাৎ ভ্রমরদের কথা বলা হয়েছে।  

(খ) কবি কবিতায় বলেছেন তাঁর জন্মভূমি ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি বৃক্ষ ফুলে ফুলে ভরে থাকে আর সেই ফুলের বাগানে পাখী গান গেয়ে বেড়ায়।  ভ্রমররা গুনগুন করে দলে দলে ধেয়ে আসে সেই ফুলের মধু খাওয়ার জন্য আর ফুলের মধু খেয়ে তারা সেই ফুলের উপরই ঘুমিয়ে পড়ে।  


(৪)"  ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি " 

(ক)  কবিতাটিতে কাকে 'মা' বলা হয়েছে ? 

(খ) সেই মায়ের কাছে কবি কী প্রার্থনা করেছেন ? 

(গ) কেন তিনি এমন প্রার্থনা করেছেন ? 

উত্তরঃ  

(ক) " সকল দেশের সেরা " কবিতায় কবি তাঁর " মাতৃভূমি " ভারতবর্ষকে " মা " বলেছেন।  

(খ) কবি তাঁর মাতৃভূমিরূপ "মা" এর পা দুটি বুকে ধরে  প্রার্থনা করেছেন যে তাঁর এই দেশেতেই যেমন জন্ম হয়েছে তেমন তাঁর যেন এই দেশেতেই মৃত্যু হয়। 

(গ) কবির মতে তাঁর মাতৃভূমি ভারতবর্ষের মত মা-ভাইয়ের স্নেহ অন্য কোন দেশে পাওয়া যায় না।  এই দেশে জন্মগ্রহণ করে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন।  এই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অন্য সব দেশের থেকে বেশি।  তাই তিনি এই দেশেতেই যেমন জন্মগ্রহণ করেছেন তেমন তিনি এই দেশেই মৃত্যুবরণ করতে চান।   

(৫) " স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ , স্মৃতি দিয়ে ঘেরা " 

(ক) আলোচ্য অংশটি কার লেখা ? কোন কবিতার অংশ ? 

(খ) কে কোন দেশকে " স্বপ্ন দিয়ে তৈরি " দেশ বলেছেন ? 

(গ) কেন কবি একথা বলেছেন ? 

উত্তর : 

(ক)  আলোচ্য অংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা 'সকল দেশের সেরা ' কবিতার অংশ।  

(খ) কবি তাঁর মাতৃভূমি / জন্মভূমি ভারতবর্ষকে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি দেশ বলেছেন।  

(গ) এই পূণ্যভূমি  ভারতবর্ষে কত শত মহাপুরুষের জন্ম হয়েছে।  এই দেশকে সুন্দর করে গড়ে তোলার স্বপ্ন তাঁরা দেখেছেন।  তাঁদের সেই স্বপ্ন ও জীবনস্মৃতিতে ঘেরা আছে কবির জন্মভূমি ভারতবর্ষ।  

(৬) " কোথায় এমন হরিৎ ক্ষেত্র আকাশতলে মেশে " 

(ক) কবি এই কবিতায় কোন দেশের কথা বলতে চেয়েছেন ? 

(খ) কবি এই দেশকে কী কী নাম ডেকেছেন ? 

(গ) 'হরিৎক্ষেত্র ' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় 'সকল দেশের সেরা ' কবিতায় তাঁর জন্মভূমি ভারতবর্ষের কথা বলতে চেয়েছেন।  

(খ) কবি এই দেশকে তাঁর জন্মভূমি ও 'সকল দেশের রানি ' বলে ডেকেছেন। 

(গ) 'হরিৎক্ষেত্র ' বলতে সবুজ রঙের ক্ষেত বুঝিয়েছেন।  

(৭) " সকল দেশের রানি সে যে " 

(ক) কবি কাকে সকল দেশের রানি বলেছেন ? 

(খ) কেন বলেছেন ? 


উত্তরঃ 

(ক) 'সকল দেশের সেরা ' কবিতায় কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর জন্মভূমি ভারতবর্ষকে 'সকল দেশের রানি ' বলেছেন।  

(খ) রূপে গুণে সেরা রমণীকেই রানি বলে অভিহিত করা হয়।  কবির চোখে তাঁর জন্মভূমি ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্য যে কোন দেশের তুলনায় প্রাকৃতিক সম্পদ , সৌন্দর্যে , আন্তরিকতায় , মা-ভাইয়ের স্নেহে অনেক বেশি সম্পদশালী।  তাই কবি ভারতবর্ষকে 'সকল দেশের রানি ' বলে অভিহিত করেছেন।  










 


Friday, 6 November 2020

আবার আসিব ফিরে







  আবার আসিব ফিরে 

জীবনানন্দ দাশ 

আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে - এই বাংলায় 

হয়তো মানুষ নয় - হয়তো -বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে , 

হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে -

কুয়াশার  বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায় ; 

হয়তো বা হাঁস হব - কিশোরীর ঘুঙুর রহিবে লাল পায় ,

সারাদিন কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে ; 

আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ  ক্ষেত্রে ভালোবেসে 

জলাঙ্গি  ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়। 

হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন  উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে ;

হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপ্যাঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে ; 

হয়তো খইয়ের ধান ছড়াইতেছে শিশু এক উঠোনের ঘাসে 

রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদাছেঁড়া -পালে 

ডিঙা বায় , রাঙা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকার আসিতেছে নীড়ে ,

দেখিবে ধবল বক : আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে।   


 বিষয় সংক্ষেপ : 

রবীন্দ্রোত্তর কাব্যধারার অন্যতম পথপ্রদর্শক জীবনানন্দ দাশ(১৮৯৯-১৯৫৪)।  রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতাকে বলেছেন 'চিত্ররূপময়'।  " আবার আসিব ফিরে " কবিতা টি একটি সনেট  জাতীয় কবিতা।  এটি "রূপসী বাংলা " কাব্য গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

           'আবার আসিব ফিরে ' কবিতাটিতে কবির প্রকৃতি প্রেম , গ্রামবাংলার প্রতি কবির  ভালোবাসা ও গভীর আকর্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।  

              গ্রাম বাংলার প্রকৃতি , ইতিহাস ও সৌন্দর্য জীবনানন্দের  কবিমানসের যে  অনুভূতির  সঞ্চার করেছে।  তারই কাব্যিক রূপায়ণ হল এই কবিতা।  পল্লিবাংলার পরিবেশ এবং তার সৌন্দর্য মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে এখানে। বাংলার  পল্লি -প্রকৃতিকে তিনি এত ভালোবেসেছিলেন যে, মৃত্যুর পরও যদি কোনো জন্মান্তর থাকে তবে কবির এই  আকাঙ্ক্ষা   কবিতাকে  এক অন্য মাত্রা দিয়েছে।  কবি বলেছেন , তিনি পুনরায় এই পল্লি বাংলার ধানসিড়ি নদীর তীরে জন্ম নিতে চান।  মানুষ রূপে জন্মগ্রহণ করতে না পারলেও কবির কোনো দুঃখ থাকবে না। শঙ্খচিল কিংবা শালিখ অথবা ভোরের কাক  হয়ে কার্তিক মাসের সকালে কুয়াশা ভেজা নবান্নের দেশে কাঁঠালের ছায়ায় ঘেরা শান্ত বাংলায় ভেসে বেড়াতে চান কবি। হয়তো হাঁস হয়ে তিনি বিচরণ করবেন কলমীর গন্ধভরা পুকুরের শান্ত নিস্তরঙ্গ জলে , গ্রাম্য কিশোরীর পায়ের ঘুঙুরের মতো কলমীর লতা জড়ানো থাকবে তার লাল পায়ে।   বাংলার নদী , মাঠ , ক্ষেত কবির ভালোবাসার  স্থান।  তিনি আবার এখানে ফিরে আসতে চান জলঙ্গি নদীর ঢেউয়ে ভেসে সবুজ প্রকৃতির কোলে।  

             বাংলার আকাশে উড্ডীন সুদর্শন পাখির মতো সন্ধ্যার বাতাসে মিশে থাকতে পারেন কবি।  হয়তো শিমুল গাছের ডালে বসে ডাকছে যে লক্ষ্মীপেঁচা তার অস্তিত্বের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে কবিকে।  উঠানের  ঘাসে খই ছড়াচ্ছে যে শিশু বা রূপসা নদীর ঘোলাজলে সাদা পাল ছেঁড়া ডিঙা ভাসাচ্ছে যে কিশোর তার মধ্য দিয়েই কবি ফিরবেন পল্লি বাংলায়। কবি বলেছেন যে , সাদা বকেরা রাঙা মেঘের মধ্য দিয়ে সাঁতার দিয়ে অন্ধকারের বুক চিরে পড়ন্ত সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফেরে তাদেরই ভিড়ে মিশে থাকবেন কবি হয়তো তাদেরই একজন হয়ে।  এই ভাবেই প্রকৃতির গভীরতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে মৃত্যুর পর পুনরায় এ বাংলার পল্লীজীবনে বারবার ফিরে আসতে চেয়েছেন কবি নানা রূপে , নানা ভাবে।  


 প্রশ্নোত্তর : 

(১) " আবার আসিব ফিরে " কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ? 

উত্তর : " রূপসী বাংলা " কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।  


(২) " আবার আসিব ফিরে " কী জাতীয় কবিতা ? 

উত্তর :  সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা। 


(৩) কবি কোথায় ফিরে আসতে চান ? 

উত্তর : কবি এই বাংলায় ধানসিড়িটির তীরে ফিরে আসতে চান। 


(৪) তিনি কোন কোন রূপে ফিরে আসতে চেয়েছেন ? 

উত্তরঃ কবি আগামী জন্মে শালিখ , শঙ্খচিল , হাঁস ইত্যাদি রূপে ফিরে আসতে চেয়েছেন।  


(৫) কবির ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা কেন ? 

উত্তরঃ  বাংলার মাটির সঙ্গে কবির চেতনা এমন গভীর ভাবে অন্বিত যে মৃত্যুর মাধ্যমে বাংলা থেকে বিচ্ছেদ তিনি সহ্য করতে পারে না।  তাই তাঁর অন্তরে সুতীব্র বাসনা জাগ্রত হয়েছে। 


(৬) " সবুজ করুণ ডাঙায় " কথাটির অর্থ কী ? 

উত্তরঃ কবি বাংলার শ্যামলভূমিকে সবুজ ডাঙা বলেছে।  " করুণ " বলার মধ্যে নিহিত আছে এই ভূমি থেকে বিচ্ছেদজনিত বেদনার অনুভূতি।  

(৭) "সুদর্শন " কথাটির অর্থ কী ? কোন প্রসঙ্গে  এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ? 

উত্তরঃ  " সুদর্শন " কথাটির অর্থ চিল।  

              বাংলার  সন্ধ্যার আকাশে চিলের চক্রাকারে আকাশ পরিভ্রমণ অতি স্বাভাবিক দৃশ্য।  এই প্রসঙ্গে " সুদর্শন " শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।  


(৮) " খইয়ের ধান " কথাটির অর্থ লেখ।  

উত্তরঃ  খই ভাজার পর ধানের বহিরাবরণ ছড়িয়ে রাখা হয়।  শিশুরা সেগুলি নিয়ে খেলা করে।  সেই চিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য " খইয়ের ধান " বলা হয়েছে।  


(৯)  " আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে " 

----   কাকে কাদের ভিড়ে পাওয়া যাবে বলা হয়েছে ? 

উত্তর : কবি বাংলার দৃশ্য সম্পদকে এমনই ভালবাসেন যে , মৃত্যুর পর নিজেকে সেই  সব দৃশ্যের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন রূপে অন্বিত( যুক্ত )  হতে চেয়েছেন।  সন্ধ্যার আকাশের চিল, শিমূলের ডালে বসা  লক্ষ্মীপেঁচা , উঠোনের ঘাসে খই -এর ধান ছড়ানো শিশু , সাদা ছেঁড়া পলে ডিঙা বেয়ে চলা কিশোর , অন্ধকারে ঘরে ফেরা ধবল বক ইত্যাদির মধ্যে কবি নিজের অস্তিত্ব অন্বিত করে বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন।  

(১০) " আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে-- এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়    ................." 

(ক) কবির এইরূপ ইচ্ছার কারণ কী ? 

(খ) কবি কীসে বিশ্বাসী ? 

(গ) তিনি কীভাবে এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) কবির এই রূপ ইচ্ছার কারণ বাংলার প্রতি তাঁর  গভীর  ভালোবাসা।  কবি বাংলার নদী , মাঠ , ঘাটকে ভালোবেসে ফিরে আসতে চান এই বাংলায়।  

(খ) কবি জন্মান্তরে বিশ্বাসী।  তাঁর বিশ্বাস  এ জন্মে নয় পরের 

জন্মেও কবি এই বাংলায় ফিরে আসবেন।  মানুষ হয়ে না এলেও হয়তো অন্য কোনো প্রাণী যেমন -শঙ্খচিল , শালিখ, কাক , হাঁস অথবা অন্য কিছুর রূপ নিয়ে এই বাংলাতেই জন্মগ্রহণ করবেন। 

(গ) কবি বারবার ফিরে আসতে চেয়েছেন এই বাংলায় হয়তো শঙ্খচিল অথবা শালিখের বেশে।  হয়তো ভোরের কাক হয়ে কুয়াশার বুকে ভেসে ভেসে আসতে চান - কাঁঠাল ছায়ায় কার্তিকের নবান্নের দেশে কিংবা হাঁস হয়ে আসতে চান -কলমির গন্ধ ভরা জলে ভেসে তার সারাদিন কেটে যাবে। নদী -মাঠ -ঘাট ভালোবেসে কবি আবার আসতে চান জলঙ্গীর জলে ভেজা এই বাংলার সবুজ করুণ পেলব ডাঙায় ফিরে আসতে চান।    

(১১) " এক সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙা বায় " 

(ক) কে ডিঙা বায় ? কোথায় ডিঙা বায় ? 

(খ) কীভাবে ডিঙা বায় ? 

(গ) কবির ঐকান্তিক ইচ্ছা কী ? 

উত্তরঃ 

(ক) কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত " আবার আসিব ফিরে " কবিতায় কবি বর্ণনা করেছেন এক কিশোর রূপসা নদীর ঘোলা জলে ডিঙা বায়।  

(খ) কিশোরটি রূপসার ঘোলা জলে ছেঁড়া পাল ডিঙাটি বেয়ে চলেছে।  অস্তমিত সূর্যের রক্তিম বর্ণে পশ্চিম আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।  স্তরে স্তরে সঞ্চিত রক্তিম মেঘগুলিকে সাঁতরে অন্ধকার অতিক্রম করে নীড়ে ফিরে আসছে যে সাদা বক , কবির মনে হচ্ছে কিশোরটিও সাদা ছেঁড়া পাল নিয়ে তার নীড়ে ফিরে আসছে।  

(গ) কবির ঐকান্তিক ইচ্ছা কবিও জন্মান্তরে ওই কিশোরটির মতো কিংবা স্তরে স্তরে সজ্জিত রক্তিম বর্ণের মেঘের সমুদ্র পার হয়ে ওই সাদা বকটির মতো উড়ে আসবেন এই বাংলায়।  কবি জন্মান্তরে বাংলাকে ভালোবেসে বার বার ফিরে আসতে চান এই বাংলায়। 

(১২) আমাকেই পাবে তুমি ইহাদের ভিড়ে " 

(ক) প্রসঙ্গ কী ? 

(খ) 'ইহাদের ভিড়ে ' বলতে কী বোঝ ? 

উত্তরঃ 

(ক) কবি জীবনানন্দ দাশ " আবার আসিব ফিরে " কবিতায় বলেছেন তিনি জন্মান্তরে বিশ্বাসী।  তিনি আবার ফিরে আসবেন এই বাংলায় তাঁর জন্মভূমিতে।  কিন্তু কী রূপে আসবেন তা তিনি জানেন না।  এই প্রসঙ্গেই কবি প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।  

(খ) কবির বিশ্বাস তিনি মানুষ হয়ে না ফিরতে পারলেও কোনো ক্ষতি নেই।  ওই যে শঙ্খচিল , শালিক , হাঁস কিংবা লক্ষ্মীপেঁচা যাদের ডাক প্রতিনিয়ত শোনা যায় বাংলার বুকে -তাদের কারও একজনের রূপ ধরে ফিরে আসবেন গ্রাম বাংলার কোন এক কাঁঠাল গাছের ছায়ায় , কিংবা কোন কিশোরীর হাঁস হয়ে অথবা যে সাদা বকটি রাঙা মেঘ সাঁতরিয়ে নিজের নীড়ে ফিরে আসছে তাদের সবার মাঝখানে কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে কবি মনে করেছেন।  



















বাংলাভাষা


বাংলাভাষা  

অতুলপ্রসাদ সেন 

মোদের গরব , মোদের আশা ,  আ মরি বাংলা ভাষা। 

তোমার কোলে তোমার  বোলে কতই শান্তি ভালোবাসা 

         কী জাদু বাংলা গানে ---

          গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে ! 

         এমন কোথা  আর আছে গো 

গেয়ে  গান নাচে বাউল , গান গেয়ে ধান কাটে চাষা।  

          ওই ভাষাতেই নিতাই গোরা

 আনল দেশে ভক্তিধারা - ---

মরি হায় হায় রে ! 

আছে কই এমন ভাষা , এমন দুঃখ শ্রান্তিনাশা ! 

      বিদ্যাপতি , চন্ডী , গোবিন 

      হেম  মধু   বঙ্কিম  নবীন ---

আরও কত মধুপ গো ! 

ওই ফুলেরি মধুর রসে বাঁধল সুখে মধুর বাসা।  

বাজিয়ে রবি তোমার বীণে ,

আনল মালা  জগৎ জিনে -

গরব কোথায় রাখি গো ! 

তোমার চরণ -তীর্থে আজি জগৎ করে যাওয়া-আসা।  

        ওই ভাষাতেই প্রথম বোলে 

          ডাকনু  মায়ে  "মা" "মা" বোলে ;

এই ভাষাতেই বলব "হরি " সাঙ্গ  হলে কাঁদা -হাসা। 

কবিতার সারসংক্ষেপ : 

'বাংলা ভাষা " কবিতাটি একটি গান বিশেষ।  এই গানটি কবির " গীতিগুঞ্জ " থেকে নেওয়া হয়েছে।  

                        বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব , আমাদের আশা -ভরসা।  এই ভাষার কাছে আশ্রয় নিয়ে , এই ভাষায় কথা বলে আমরা শান্তি ও ভালোবাসার সন্ধান পাই।  বাংলা গানের সম্মোহনী শক্তি আছে যা আমাদের বিভোর করে দেয়।  তাই মাঝি নৌকা চালায় , বাউল নেচে বেড়ায় , কৃষক ধান কাটে এই ভাষাতেই গান গেয়ে। গৌরাঙ্গ এবং নিত্যানন্দ এই ভাষাতেই কীর্তন গেয়ে দেশে ভক্তির জোয়ার এনেছিলেন।  কবির মতে বাংলা ভাষার মত এমন কোন ভাষা নেই যা আমাদের দুঃখ , ক্লান্তি সব কিছু দূর করে দেয়।  মা যখন  তার সন্তানকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে আদর করলে সন্তানের সমস্ত দুঃখ , কষ্ট , ক্লান্তি দূর হয়ে যায় বাংলা ভাষাও সেই রকম আমাদের মনকে সেই রকম শান্তি দেয়।  

         বিদ্যাপতি, চন্ডীদাস, গোবিন্দদাস, হেমচন্দ্র , মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র , নবীনচন্দ্র ও আরোও অনেক বাংলার কবি সাহিত্যিক এই ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।  বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এই ভাষাতেই সাহিত্য সৃষ্টি করে নোবেল পুরস্কার পেয়ে আমাদের গর্বিত করেছেন।  

       কবি বলেছেন তিনি জন্মগ্রহণ করে বাংলাযখন তিনি  ভাষাতেই প্রথম " মা" বলে ডেকেছেন , আবার এই ভাষাতেই " হরি " ডেকে জীবনের শেষ দিনে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন।  


মনে রাখা দরকার : 

কবি এখানে তাঁর মাতৃভাষা বাংলার গুণগান গেয়েছেন।  নিজের মাতৃভাষা সবার কাছে খুব প্রিয়।  সেটা কারোর জন্য তামিল , কারোর জন্য হিন্দি  বা কারোর জন্য মারাঠী হতে পারে।  তাই মাতৃভাষা আমাদের সবার কাছে নিজের মা ও  জন্মভূমির মতো প্রিয় ও গর্বের বিষয়।  


ব্যাখ্যা : 


(১) তোমার কোলে , তোমার বোলে 

        কতই শান্তি ভালোবাসা। 

নিজের জন্মভূমিতে নিজের মাতৃভাষায় কথা বলার মতো শান্তি আর কিছুতেই নেই।  মা যেমন তাঁর সন্তানকে আদর করে কোলে তুলে নিলে সন্তানের সমস্ত দুঃখ , কষ্ট, শ্রান্তি দূর হয়ে যায় তেমনি মাতৃভাষাও তাঁর সন্তানকে কোলে ঠাঁই দেন।  

(২) কী জাদু বাংলা গানে --

গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে।  

কবির মতে , বাংলা ভাষার মধ্যে যেন কোনো জাদু আছে।  তাই তার আকর্ষণে নৌকোর মাঝি ভাটিয়ালি গান গেয়ে নৌকো বেয়ে নিয়ে যায়।  বাংলা নদীমাতৃক দেশ।  বাংলা দেশের মাঝিরা নৌকো চালাতে চালাতে যে লোকসঙ্গীত  গায় তার নাম ভাটিয়ালি।  

( " গান গেয়ে ধান কাটে চাষা"  ---  চাষীও ধান কাটার সময় বাংলা ভাষায় গান গায়।  

রবীন্দ্রনাথও তাঁর কবিতায় বলেছেন :

ডিঙি চ'ড়ে  আসে চাষী , কেটে লয় ধান ,

বেলা গেলে গাঁয়ে ফেরে গেয়ে সারিগান "  ) 

(৩) গেয়ে গান নাচে বাউল ,

গান গেয়ে ধান কাটে চাষা 

" বাউল " বলতে বোঝায় ধর্মীয় সংকীর্নতা ও সংস্কার থেকে মুক্ত সাধক সম্প্রদায়।  সংগীত এঁদের সাধনার অঙ্গ।  এঁরা প্রচলিত হিন্দু বা মুসলমান কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নন।  এই বাউলরা একতারা বাজিয়ে গান গাইতে গাইতে গ্রামের পথে পথে ঘুরে বেড়ায়।  

                      কবি এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে , বাংলার মানুষ যে যে কাজই  করুক না কেন সে ভাগ্যে ভাতেই গান গেয়ে কাজের কষ্ট লাঘব করে ও মনের আনন্দে কাজ করতে পারে। 


(৪) ওই ভাষাতেই নিতাই গোরা 

   আনল দেশে ভক্তি ধারা 

বাংলা ভাষায় কীর্তন অর্থাৎ কৃষ্ণের গান গেয়ে দেশে ভক্তির ধারা এনেছিল নিতাই ও গৌড়।  

        চৈতন্যদেব এবং তাঁর পার্ষদ নিত্যানন্দ বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করে বাংলাদেশে ভক্তিধারা এনেছিলেন।  প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বাইরে গিয়ে অর্থাৎ হিন্দু বা মুসলমান কোন ধর্মেই না থেকে তাঁরা কৃষ্ণনাম সংকীর্তনকেই একমাত্র ঈশ্বর সাধনার পথ বলে মনে করেছিলেন। এই আদর্শেই প্লাবিত হয়েছিল জাতি -ধর্ম -নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষ।  নিতাই -গোরা বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করে মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিল।  

      

(৫)"  আছে কই এমন ভাষা , এমন দুঃখ শ্রান্তি নাশা " 

কবির মতে , বাংলা ভাষায় যে জাদু আছে তা শুধু প্রকাশের মাধ্যম নয় - আত্মার সঙ্গে তার যোগ।  পরিশ্রমে ও সাধনায় - কৃষকের শ্রমে বা বাউলের সাধন সঙ্গীতে এই ভাষাই তাই একমাত্র অবলম্বন।  এই ভাষায় গান গেয়েই পাওয়া যায় আনন্দের সন্ধান , মনের মুক্তি ও প্রশান্তির সন্ধান।  তাই কবি এই ভাষাকে " দুঃখ শ্রান্তি নাশা " বলে বর্ণনা করেছেন।  


(৬) আরও কত মধুপ গো 

ওই ফুলেরি মধুর রসে বাঁধল সুখে মধুর বাসা 

বাংলা ভাষা যেন মধুতে ভরা ফুল আর বাংলার সব কবি সাহিত্যিক হলেন মধুপ অর্থাৎ মৌমাছি।  বিদ্যাপতি , চন্ডীদাস , গোবিন্দদাস , হেমচন্দ্র , মধুসূদন , বঙ্কিমচন্দ্র , নবীনচন্দ্রের মতো আরো কত কবি সাহিত্যিক বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন।  

(৭) বাজিয়ে রবি তোমার বীণে 

  আনলো মালা জগৎ জিনে 

"রবি" বলতে এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বোঝানো হয়েছে।  বাংলা ভাষা যেন সাতটি তারের সুরে বাঁধা বীণা।  সেই বীণায় গান বেঁধে জগৎবাসীকে  মন জিতে বাংলার জন্য জয়ের মালা এনে দিয়েছিলেন।  

              যদিও " গীতাঞ্জলি" র ইংরাজী অনুবাদ করে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।  কিন্তু তাঁর কবি প্রতিভার বিচিত্র বিকাশ এই বাংলা ভাষাতেই হয়েছিল।  তাই কবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথের  নোবেল পুরস্কার পাওয়া আসলে বাংলা ভাষারই বিশ্বজয়।  

(৮) " ওই ভাষাতেই প্রথম বোলে ,

        ডাকনু 'মা' 'মা' বোলে ;

এই ভাষাতেই বলব 'হরি' সাঙ্গ  হলে কাঁদা-হাসা। " 

প্রতিটি শিশু তার মায়ের মুখের ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষাই প্রথম শেখে।  মায়ের মুখের ভাষা দিয়ে তার জীবন চলা শুরু হয়।  'মা' ডাক আর মাতৃভাষায় কথা বলা এখানে সমার্থক হয়ে গেছে।  

            আবার যেদিন এই পৃথিবীতে  জীবনের সমস্ত বোঝাপড়া শেষ হয়ে আমরা অমৃতধামে যাত্রা করব সেদিন এই মায়ের ভাষাতেই ঈশ্বরকে স্মরণ করব। 


প্রশ্ন ও উত্তর :  


(১) বাংলা ভাষাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি কেন ? 

উত্তরঃ 

আমাদের মাতৃভাষা বাংলাভাষা আমাদের গর্ব।  আমাদের আশা -ভরসা , মনের যাবতীয় ভাব আমরা এই ভাষাতেই প্রকাশ করি।  এই ভাষায় গান গেয়ে মাঝি নৌকা বায় , কৃষক ধান কাটে ,বাউল তার মনের মানুষ খুঁজে বেড়ায়।  গৌরাঙ্গ এবং নিত্যানন্দ এই ভাষাতেই কীর্তন গেয়ে দেশে ভক্তির জোয়ার এনেছিলেন।  বিদ্যাপতি , চন্ডীদাস , গোবিন্দদাস , হেমচন্দ্র , মধুসূদন , বঙ্কিমচন্দ্র , নবীনচন্দ্র  ও অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক এই ভাষাতেই কাব্য ও সাহিত্য রচনা করে খ্যাতিলাভ করেছেন।  রবীন্দ্রনাথ লাভ করেছেন নোবেল পুরস্কার।  

(২) বাউল কাদের বলে ? 

উত্তরঃ 

ধর্মীয় সংকীর্নতা ও সংস্কার থেকে মুক্ত সাধক সম্প্রদায়।  সঙ্গীত এঁদের সাধনার অঙ্গ।  এঁরা প্রচলিত হিন্দু অথবা মুসলমান কোনো ধর্মেই বিশ্বাসী নন।  

(৩) " কী জাদু বাংলা গানে " 

(ক) এই ' জাদু ' র টানে মাঝি  কী করেন ? 

(খ) বাউল কী করেন ? 

(গ) চাষী কী করেন ? 

উত্তরঃ 

(ক) এই জাদুর টানে মাঝিরা 'ভাটিয়ালি ' গান গেয়ে নৌকা বায়।মাঝি দাঁড় টেনে নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।  একাজ খুব পরিশ্রমের।  কিন্তু বাংলা গানের এমন জাদু মাঝির সেই পরিশ্রম দূর হয়ে যায় বাংলার প্রাণ মাতানো গানে।   

(খ) বাউলরা গান গেয়ে ঈশ্বরের সাধনা করেন। 

(গ) চাষীও ধান  কাটতে কাটতে বাংলার সারিগান গায়।  

( রবি ঠাকুরের কবিতায় আছে :

" ডিঙি  চ'ড়ে আসে চাষি, কেটে লয় ধান,

বেলা গেলে গাঁয়ে ফেরে গেয়ে সারিগান " ) 







 








 




ইলিয়াস

 ইলিয়াস 

লিও তলস্তয় 


আজ আমি নবম শ্রেণির পাঠ্য লিও তলস্তয়ের লেখা " ইলিয়াস " গল্পটির  মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করব।  " ইলিয়াস " গল্পটি নেওয়া হয়েছে লেখকের Twenty Three Tales গল্প সংকলন থেকে। 

     গল্পটি একজন পরিশ্রমী , কর্মঠ , সাধারণ ভালো মানুষের জীবন উপলব্ধির কাহিনি।  গল্পের প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্র ইলিয়াস।  ঊনবিংশ শতাব্দীতে , আর্থ-সামাজিক সমাজ ব্যবস্থা যখন সামন্ততান্ত্রিক থেকে পুঁজিবাদীতে পরিবর্তিত হচ্ছিল তখন সাধারণ লোকেদের জীবন ধারণের জন্য প্রচুর কাজ করতে হত।  পরিবারের জন্য , ঈশ্বর চিন্তার জন্য কোন সময় থাকত না. ইলিয়াস ও তার স্ত্রীর জীবনও সেই রকম ছিল।  প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , এখনও মানুষের জীবন সেইরকমই।  

                           গল্পটিতে আমরা দেখতে পাই যে ইলিয়াস এমন একজন মানুষ যে নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম , প্রচেষ্টা ও সুব্যবস্থাপনায় প্ৰভূত সম্পত্তি অর্জন করেছিল।  ধনী অবস্থায় সে ছিল অত্যন্ত অতিথি বৎসল ও দয়ালু মানুষ।  কিন্তু গল্পের শেষে দেখা যায় ভাগ্যের ফেরে সে একজন কপর্দকহীন মানুষে পরিণত হয়েছে।  সে ও তার স্ত্রী তার প্রতিবেশীর বাড়িতে ভাড়াটে মজুরের মত কাজ করে জীবন কাটাচ্ছিল।  কিন্তু সেই নিয়ে ইলিয়াস ও তার স্ত্রী শাম-শেমাগির কোন আফশোস ছিল না।  বরং গল্পের শেষে তার স্ত্রীর জবানীতে আমরা জানতে পারি তাদের দুজনের জীবন -উপলব্ধির কথা।  ধনসম্পত্তি থাকলেও মনে শান্তি ছিল না ইলিয়াস দম্পতির।  অর্থ , লোকবল , সম্পত্তি ইত্যাদি প্রাচুর্যের মধ্যেও ছিল দুশ্চিন্তা ও অশান্তি।  সম্পত্তি হারিয়ে শাম-শেমাগি ও  ইলিয়াস  প্রকৃত সুখ ও সত্যের তাৎপর্য বোঝে।  তখন ভাড়াটে মজুর হিসেবে কাজের বিনিময়ে অন্ন- বাসস্থান পেলেও স্বামী-স্ত্রীতে একান্তে মনের কথা আলোচনা করার মত সময় পেত।  ঝগড়া ও দুশ্চিন্তার বদলে মনিবের কাজেই তাদের অধিকাংশ সময় কেটে যেত।  মনের কথা আলোচনা করা ও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করারও অবকাশ ছিল।  তাই শাম -শেমাগির এই উপলব্ধি হয় যে , পঞ্চাশ বছরের দাম্পত্য জীবনে সুখ খুঁজে খুঁজে এতদিনে তারা হদিশ পেয়েছে।  

              এই গল্পটি আমাদের এক চিরকালীন সত্যের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।  সম্পদ ও বৈভব থেকে মানুষের মনের শান্তি পাওয়া যায় না।  বরঞ্চ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনই শান্তির বার্তা নিয়ে আসে।  আপন লোকেদের সাথে সময় কাটানো , ঈস্বরচিন্তা ও আত্মচিন্তাই মানুষকে সঠিক শান্তি দিতে পারে ও মনকে আনন্দে ভরে তুলতে পারে।  

জীবনে কিছুই চিরস্থায়ী নয়।  তাই সুখের মতো দুঃখকেও হাসিমুখে মেনে নিতে পারলেই শান্তির সন্ধান  পাওয়া সম্ভব।  












 


     

পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...