প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা কর :
(১) " কত শ্রদ্ধা নিয়ে লিখেছে "
উল্লিখিত উক্তিটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'দাম' ছোটগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা গল্পকথক সুকুমারের ছোটবেলার স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক।
মাস্টারমশাইয়ের অঙ্কে দুর্বল ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে লেখক হয়ে একটি পত্রিকায় বাল্যস্মৃতি লিখেছিলেন। সেই লেখায় মাস্টারমশাইয়ের মেরে অঙ্ক শেখানোর পদ্ধতিকে সমালোচনা করেন তিনি। সেটি পরে সরল মনের মাস্টারমশাই তাকে ছাত্রের শ্রদ্ধার্ঘ্য বলেই গ্রহণ করেছিলেন এবং সেই প্রসঙ্গে তিনি উল্লিখিত উক্তিটি করেন।
'দাম' গল্পে দেখা যায় ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে অঙ্ক - অন্তঃপ্রাণ মাস্টারমশাই তাদের ভয়ানক প্রহার করতেন। তাঁর এক ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে একটি পত্রিকায় মাস্টারমশাইয়ের সেই বিভীষিকাময় শাসনের কথা লিখে যথেষ্ট সমালোচনাও করেন। মাস্টারমশাই কিন্তু সেই সমালোচনাকে ছাত্র তথা সন্তানের অধিকার বলেই গ্রহণ করেন। তাঁর মনে হয় , ছাত্র তাঁর কথা মনে রেখে অনেক শ্রদ্ধা নিয়েই তাঁকে নিয়ে গল্প লিখেছে। মাস্টারমশাইয়ের উদারতায় সুকুমারের সব সমালোচনা তাঁর কাছে ছাত্রের শ্রদ্ধার প্রকাশ বলে মনে হয়।
(২) " অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করতে গেলে গাধাটিই পঞ্চত্ব পায়। "
উল্লিখিত উক্তিটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার তার অঙ্কের মাস্টারমশাই শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে উক্তিটি করে।
গল্পের কথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কশিক্ষক তার কাছে বিভীষিকাস্বরূপ ছিল। অঙ্ক -অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ক না পারা এক ভয়ঙ্কর অপরাধ। তাই তিনি যে ছাত্ররা অঙ্ক পারত না তাদের তিনি প্রচন্ড প্রহার করতেন। মাস্টারমশাইয়ের সম্পর্কে গল্প লিখতে গিয়ে গল্পকথক তাঁর শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে উল্লিখিত উক্তিটি করে।
কথকের মাস্টারমশাইয়ের শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে এহেন উপলব্ধি হয়েছিল নিজের জীবনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থেকে। শৈশবে স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই অঙ্ক না পারলে প্রচন্ড প্রহারের সঙ্গে পা ধরে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। পুরুষমানুষ হয়ে অঙ্ক না পারা ও তার জন্য বকুনি বা মার খেয়ে চোখের জল ফেলা দুই-ই তাঁর কাছে অপরাধ ছিল। এর ফলে অঙ্ক বিষয়টিই সুকুমারের কাছে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণেই ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করে কথক মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে রেহাই পেতে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করেনি। বর্তমানে কথক একটি কলেজের বাংলার অধ্যাপক। একদিন মাস্টারমশাই যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে যেনতেনপ্রকারেণ অঙ্ক শেখাতে চাইছেন, আজ সেই অঙ্ক ছাড়াই কথক উজ্জ্বল ভবিষ্যতে পচে গেছে। মাঝ থেকে অঙ্কের সাধারণ সমস্যাগুলির সমাধান ও সে আর করতে পারে না এবং অঙ্ক সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়েছে সে। অভিজ্ঞতা দিয়ে তাই কথক বুঝতে পেরেছে অহেতুক তাড়না দিয়ে কাউকে কিছু শেখানো যায় না - মাঝ থেকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু প্রাপ্তি হয়।
(৩) " মনে এলো মাস্টারমশাইয়ের কথা। লিখলুম তাঁকে নিয়েই......................"
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত "দাম" ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি মনে মনে ভাবেন।
গল্পকথক সুকুমার একটি কলেজের বাংলার প্রফেসর। একটি পত্রিকার পক্ষ থেকে তার কাছে তার ছোটবেলার বিষয়ে গল্প লেখার ফরমাশ আসে। গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবতে গিয়ে উল্লিখিত উক্তিটি সে মনে মনে করে।
কলেজের প্রফেসর সুকুমারের কাছে তার স্কুলের অংকের শিক্ষক ছিলেন এক বিভীষিকা। অঙ্ক-অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ক না জানা অপরাধ। তাই তিনি মেরে ধরে ছাত্রদের অঙ্ক করাতেন। অঙ্কের মাস্টারমশাইকে সুকুমার এতই ভয় পেত যে সে অঙ্ক বিষয়টি থেকেই দূরে সরে গেল। ম্যাট্রিকুলেশনের পর অঙ্ক ও অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে নিস্তার পেয়ে সে স্বস্তির নিস্তার ফেলল ও এর পরে সে এম-এ পাশ করে একটি কলেজে বাংলার শিক্ষক হয়। পত্রিকা থেকে যখন তার কাছে ছোটবেলার গল্প লেখার জন্য ফরমায়েশ আসে তখন তার প্রথমেই অংকের মাস্টারমশাইয়ের শিক্ষাপদ্ধতি টি যে ছাত্রদের জন্য কতখানি ক্ষতিকর ছিল তা সে তার গল্পের মাধ্যমে সবাইকে জানাবে। এই ভেবে সে অংকের মাস্টারমশাইকে সে গল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেয়।