Monday, 25 July 2022

ছুটি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 গল্পের সারসংক্ষেপ


"ছুটি" গল্পটি ১২৯৯ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যার " সাধনা" পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটিতে এক পল্লীশিশুর  সূক্ষ্ম মনস্তত্ত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং শহরের কৃত্রিম আবহে পল্লীশিশুটির অকালমৃত্যু গল্পটিকে ভিন্ন মাত্রা দান করেছে।  

                            বালকদের সর্দার ফটিক নিত্য-নৈমিত্তিক খেলার নতুন নতুন পরিকল্পনা করে।  নতুন খেলার উদ্ভাবন করে সে আনন্দ পায়।  তাই নদীর ধরে পড়ে থাকা শালকাঠের গুঁড়িকে গড়িয়ে জলে ফেলে দিতে বন্ধুদের সঙ্গে মনস্থ করে।  ফটিকের সঙ্গে তার ভাই মাখনের একদমই বনিবনা হয় না।  ফটিকের বিধবা মা এক সংসার চালাতে ও দুটি ছেলেকে মানুষ করতে হিমসিম খায়।  ফটিক ও মাখনের ঝগড়ার সময় অধিকাংশ সময় বয়সে ছোট বলে মাখনের পক্ষ নেয় এবং ফটিককে বকে।  মাখন তাই সুযোগ পেলেই ফটিককে বিরক্ত করে।  তাই ফটিক ও তার বন্ধুরা যখন শালগাছের গুঁড়িটাকে নিয়ে একটু মজা করতে চায় তখন মাখন সেই শালগাছের গুঁড়িটার ওপর গিয়ে বসে পড়ে।  ফটিকের প্রস্তাবমতো মাখনকে সহ ঐ কাঠ গড়াতে গেলে মাখন পড়ে  যায়।  এতে রেগে গিয়ে মাখন  ফটিককে অন্ধভাবে মারতে থাকে।  মাখন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যায়।  এমন সময় একটি নৌকা ঘাটে এসে লাগে।  অর্ধবয়সী এক ভদ্রলোক চক্রবর্ত্তীদের বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে ফটিক অনির্দিষ্টভাবে উত্তর দে 'ওই হোথা। ' পুনরায় প্রশ্ন করলে বলে 'জানিনে।' অচিরেই ফটিকের মা ফটিককে ডেকে পাঠান।  মাখনকে কেন্দ্র করে অশান্তি হয়।  মা ফটিককে প্রহার করেন।  ফটিক মাকে ঠেলে দেয়।  এমনসময় সেই অর্ধবয়সী ভদ্রলোক ঘরে ঢোকেন -- জানা যায় ইনি ফটিকের মামা বিশ্বম্ভরবাবু।  ফটিকের অবাধ্যতা ওপড়াশোনায় অমনোযোগের কথা বোনের কাছে শুনে বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে নিয়ে কলিকাতায়  রওনা হন।  কলিকাতায় মামীর সঙ্গে ফটিকের সম্পর্ক তেমন সুখের হয় না।  মামীর স্নেহহীন চোখে সে যে দুর্গ্রহের মতো প্রতিভাত হয় এতেই ছিল তার দুঃখ।  শুধু তাই নয় গ্রামের খোলামেলা প্রকৃতির কাছে জীবনযাপনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কলিকাতায় শহরের পরিবেশ তার কাছে  সদৃশ হয়ে ওঠে।  ফটিক এই অসহায় পরিস্থিতিতে মামাকে মার্ কাছে পৌঁছে দেবার জন্য বারংবার আবেদন করে।  মামা বলেন স্কুলের ছুটি হোক।  কিন্তু তার তখনো অনেক দেরি।  ফটিক এর মধ্যে বই হারিয়ে মামীর কাছে তিরস্কৃত হয়।  স্কুলের শিক্ষক, সহপাঠী এবং মামাতো ভাইদের কাছেও সে ক্রমাগত হেনস্থ হতে থাকে। সবার এই স্নেহহীন ব্যবহারে ফটিক খুব অসহায় বোধ করতে থাকে।  নিজের গ্রামের খোলা মাঠ আর মায়ের কথা তার সবসময় মনে পড়তে থাকে।  ক্রমেই অভিমান ফটিকের মনের মধ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকে।  ফটিক প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়।  সে জানে তার এই অসুখ মামী ক্ষমা করবে না।  সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।  সেদিন প্রবল বর্ষণ।  অসুস্থ ফটিককে পুলিশের  লোক বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায়।  ফটিকের অসুস্থতা বৃদ্ধি পায়।  সে মায়ের প্রতীক্ষায় থাকে এবং বিড়বিড় করে বকতে থাকে , ' একবাঁও মেলে না।  দো বাঁও মেলে-এ -এ না। 'কলিকাতায় আসার পথে স্টিমারের খালাসিরা জল মাপছিল 'ফটিক প্রলাপে  তাহাদেরই অনুকরণে করুণস্বরে জল মাপিতেছে এবং যে অকূল সমুদ্রে যাত্রা করিতেছে , বালক রশি ফেলিয়া কোথাও তাহার তল পাইতেছে না। ' এমন সময়ে তার মা কাঁদতে কাঁদতে এসে পৌঁছায় , কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।  মায়ের ডাক শুনে ফটিক জানায় ' মা, এখন আমার ছুটি হয়েছে মা, এখন আমি বাড়ি যাচ্ছি। ' সবাইকে ছেড়ে সে চিরছুটির দেশে পাড়ি দেয়।  

                  
























Tuesday, 19 July 2022

দাম - নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

 প্রশ্ন ও উত্তর (দ্বিতীয় অংশ ) 

(১০) "...... সেই বিভীষিকা মন থেকে গেল না "

---------বক্তা এখানে কোন বিভীষিকার কথা বলেছেন ? 

উত্তরঃ  

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পে অঙ্কে অসাধারণ দক্ষ মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ককে ভালোবাসা এবং অঙ্ক জানা প্রতিটি ছাত্রের অবশ্য কর্তব্য।  ছাত্ররা অঙ্ক না পারলেই মাস্টারমশাইয়ের প্রকান্ড হাতের প্রচন্ড মার্ খেতে হত তাদের।  সুকুমার ও তাঁর সহপাঠীদের কাছে তখন অংকের ভয়কে ছাপিয়ে যেত মাস্টারমশাই য়ের মারের ভয়।  অঙ্ক এবং অঙ্কের মাস্টারমশাই ---- এই দুই আতঙ্ক বা বিভীষিকার কথাই এখানে বলা হয়েছে। 

(১১) " লিখলাম তাঁকে নিয়েই " ---- বক্তা কাকে নিয়ে কী লিখেছিলেন ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের কথক সুকুমার যখন লেখক হিসেবে অল্পসল্প নাম করেছেন তখন এক অনামি পত্রিকা থেকে তাঁর  বাল্যস্মৃতি লেখার প্রস্তাব আসে।  সুকুমার তাঁর স্কুলের বিভীষিকাস্বরূপ অঙ্কের মাস্টারমশাইকে নিয়ে স্মৃতিকথাটি লেখেন।  

             লেখাটিতে তিনি ভয় দেখিয়ে এবং মারধর করে মাস্টারমশাইয়ের অঙ্ক শেখানোর পদ্ধতিকে রীতিমতো সমালোচনা করেন।  তাঁর মতে , ভয় কোনো বিষয়কে ভালোবাসতে সাহায্য করে না বরং সেই বিষয়টি থেকে ছাত্রকে আরও দূরে ঠেলে দেয়।  

(১২) " ছবিটা যা ফুটল , তা খুব উজ্জ্বল নয় " 

------ এখানে কোন ছবির কথা বলা হয়েছে ? ছবিটা উজ্জ্বল নয় কেন ? 

উত্তরঃ 

আলোচ্য অংশে "ছবি" বলতে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের কথক সুকুমারের লেখায় মাস্টারমশাইয়ের যে রূপ ধরা পড়েছিল তার কথা বলা হয়েছে।  

                 বাস্তব ও কল্পনার খাদ মিলিয়ে মাস্টারমশাইয়ের যে ছবি সুকুমার এঁকেছিল তাতে তাঁর সমালোচনাই ছিল সর্বত্র।  কথক লিখেছিলেন যে অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না।  মাস্টারমশাই এত প্রহার করেও তাঁকে অঙ্ক শেখাতে পারেন নি , বরং যা শিখেছিলেন তাও ভুলে গিয়েছিলেন।  এইভাবে যে নেতিবাচক ছবি মাস্টারমশাইয়ের আঁকা  হয়েছিল তা তাঁর চরিত্রকে পাঠকদের কাছে  উজ্জ্বল করেনি।  


(১৩) " এখানকার চড়ুইপাখিও সেখানে রাজহংসের সম্মান পায় " 

-উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের কথক সুকুমার ছিলেন মাঝারি মাপের লেখক।   বাংলাদেশের এক প্রান্তিক কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়ার ও বক্তৃতা  দেওয়ার ডাক পাওয়ার প্রসঙ্গেই তিনি প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।  শহর কোলকাতার মানুষ সম্পর্কে মফস্সলের লোকজন অযথা উচ্চ ধারণা পোষণ করেন।  কোলকাতা থেকে সাধারণ মানের লেখক সেখানে গেলেও খ্যাতনামা সাহিত্যিকের সংবর্ধনা পান।  তাই সুকুমার বলেছেন কোলকাতার চড়ুই পাখিও সেখানে রাজহংসের সম্মান পায়।  

(১৪) " কত শ্রদ্ধা নিয়ে লিখেছে " --- উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।  

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পে  ছাত্ররা অনেক না পারলে অঙ্ক -অন্তপ্রাণ

মাস্টারমশাই তাদের ভয়ানক প্রহার করতেন।  তাঁর এক ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে একটি পত্রিকায় মাস্টারমশাইয়ের সেই বিভীষিকাময় শাসনের কথা লিখে যথেষ্ট সমালোচনাও করেন।  মাস্টারমশাই কিন্ত সেই সমালোচনাকে ছাত্র তথা সন্তানের অধিকার  বলেই গ্রহণ করেন।  তাঁর মনে হয়, ছাত্র তাঁর কথা মনে রেখে অনেক শ্রদ্ধা নিয়ে গল্প লিখেছে।  মাস্টারমশাইয়ের উদারতায় সুকুমারের সব সমালোচনা তাঁর কাছে ছাত্রের শ্রদ্ধার প্রকাশ বলেই মনে হয়।  

(১৫) " স্নেহ -মমতা -ক্ষমার এক মহা সমুদ্রের ধারে এসে দাঁড়িয়েছে " 

---- কোন পরিপ্রেক্ষিতে বক্তার এ কথা মনে হয়েছে ? 

উত্তরঃ 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার তাঁর স্কুলের  বিভীষিকাস্বরূপ অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের সমালোচনা করে পত্রিকায় বাল্যস্মৃতি লিখেছিলেন।  এর অনেক বছর পরে হঠাৎ মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে দেখা হতে তিনি জানতে পারেন যে এই সরল মনের মানুষটি এত বছর ধরে সেই লেখাটিকে পড়ে সযত্নে সঙ্গে রেখেছেন।  ছাত্রের সমালোচনাকে তিনি উদারমনে গ্রহণ করে তাকে ছাত্র তথা সন্তানের অধিকার বলে স্বীকৃতিও দিয়েছেন।  তখনই লজ্জাবশত সুকুমারের এই কথা মনে হয়েছে। 









পোস্টমাস্টার

প্রশ্ন ও উত্তর    (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ?  উত্তরঃ  ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...