উৎস :
'দেখা হলো ভালোবাসা বেদনায় ' কাব্যগ্রন্থ
বিষয় :
'এই জীবন ' কবিতাটিতে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মানুষকে মানুষের মতো বাঁচার কথা বলেছেন। কবি আমাদের জীবনকে 'জীবন্ত ' করে তুলতে চেয়েছেন। কবিতাটিতে বহুবারই মানুষের মতো বাঁচার কথা বলা হয়েছে। এর থেকে সন্দেহ জাগে আমরা কি সত্যিই বেঁচে আছি। কবির মতে বহু মানুষই বেঁচে আছেন শুধুমাত্র প্রয়োজনের তাগিদে। কখনও অভাবের তাড়নায় শুধুমাত্র দুবেলা - দুমুঠো অন্ন জোগানোকেই অনেকে মনে করেন বেঁচে থাকা। আবার যাদের অন্নচিন্তা নেই সেই মানুষগুলোও শুধুমাত্র অভ্যাসের বশে খেয়ে-ঘুমিয়ে শারীরিকভাবে বেঁচে আছে। কবি এই দুই ধরণের মানুষকেই বলেছেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টাতে। কবি মনে করেন, পৃথিবীর রূপ - রস -গন্ধ - স্পর্শ সবকিছুকে আস্বাদন করে বাছাই মানুষের মতো বাঁচাই মানুষের মতো বাঁচা। তিনি তাঁর জীবন থেকে কিছুই বাদ দিতে চান না। রোদ - বৃষ্টি -প্রকৃতি যা কিছু পৃথিবীর মানুষের জন্য ঢেলে দিচ্ছে সেই সবকিছুই কবি চাইছেন আস্বাদন করতে। কবি বলছেন , তাঁর ক্ষুধার অন্নও চাই, কিন্তু সেই অন্ন যেন নিছক দেহকে বাঁচানোর জন্যই না হয় , তা যেন মনেরও খাদ্য জোগায়। কবি এও বলেছেন ,' নইলে গোটা দুনিয়া খাব ', এই পংক্তিটির মধ্যে দিয়ে কবির ক্ষোভপূর্ণ প্রতিবাদের মূর্তিটি চোখে পড়ে। তিনি যেন পৃথিবীর বাকি ক্ষুধার্ত মানুষদেরও দাবী করতে বলছেন। কবি বলছেন , তাঁকে কেউ বঞ্চিত করে রাখবে , ঠকিয়ে ভুলিয়ে রাখবে। সুতোর কলে , কামারশালায় তাকে নিলাম করবে তা তিনি সহ্য করবেন না অর্থাৎ তিনি 'পণ্য ' হিসেবে ব্যবহৃত হতে নারাজ। মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ তার স্বাধীনতায় অস্তিত্বে। মানুষ যদি সেই স্বাধীনতা খুইয়ে শুধুমাত্র পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে হয় মনুষ্যত্বের চরম অবমাননা। কবি তা কিছুতেই হতে দেবেন না। তিনি নিজের 'মানুষ' হিসাবে বাঁচার অধিকার যেমন করে হোক আদায় করে নেবেন। তিনি যখন পৃথিবীতে এসেছিলেন তখন শুধু মানুষের মত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে অর্থাৎ শারীরিক ভাবে ( মানুষ সেজে আসা ) এসেছিলেন , কিন্তু তিনি চান যখন তিনি আবার ফায়ার যাবেন তখন শুধু মানুষের শরীর নিয়ে নয়, মানুষের সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে ফিরে যাবেন। তিনি আমাদের সবাইকে মানুষের মত বেঁচে উঠতে বলছেন, তবেই জীবনটা জীবন্ত হয়ে উঠবে।
Monday, 24 January 2022
এই জীবন - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
Thursday, 30 December 2021
দাম - নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যাখ্যা কর :
(১) " কত শ্রদ্ধা নিয়ে লিখেছে "
উল্লিখিত উক্তিটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'দাম' ছোটগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা গল্পকথক সুকুমারের ছোটবেলার স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক।
মাস্টারমশাইয়ের অঙ্কে দুর্বল ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে লেখক হয়ে একটি পত্রিকায় বাল্যস্মৃতি লিখেছিলেন। সেই লেখায় মাস্টারমশাইয়ের মেরে অঙ্ক শেখানোর পদ্ধতিকে সমালোচনা করেন তিনি। সেটি পরে সরল মনের মাস্টারমশাই তাকে ছাত্রের শ্রদ্ধার্ঘ্য বলেই গ্রহণ করেছিলেন এবং সেই প্রসঙ্গে তিনি উল্লিখিত উক্তিটি করেন।
'দাম' গল্পে দেখা যায় ছাত্ররা অঙ্ক না পারলে অঙ্ক - অন্তঃপ্রাণ মাস্টারমশাই তাদের ভয়ানক প্রহার করতেন। তাঁর এক ছাত্র সুকুমার পরবর্তীকালে একটি পত্রিকায় মাস্টারমশাইয়ের সেই বিভীষিকাময় শাসনের কথা লিখে যথেষ্ট সমালোচনাও করেন। মাস্টারমশাই কিন্তু সেই সমালোচনাকে ছাত্র তথা সন্তানের অধিকার বলেই গ্রহণ করেন। তাঁর মনে হয় , ছাত্র তাঁর কথা মনে রেখে অনেক শ্রদ্ধা নিয়েই তাঁকে নিয়ে গল্প লিখেছে। মাস্টারমশাইয়ের উদারতায় সুকুমারের সব সমালোচনা তাঁর কাছে ছাত্রের শ্রদ্ধার প্রকাশ বলে মনে হয়।
(২) " অহেতুক তাড়না করে কাউকে শিক্ষা দেওয়া যায় না। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া করতে গেলে গাধাটিই পঞ্চত্ব পায়। "
উল্লিখিত উক্তিটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'দাম' ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার তার অঙ্কের মাস্টারমশাই শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে উক্তিটি করে।
গল্পের কথক সুকুমারের স্কুলের অঙ্কশিক্ষক তার কাছে বিভীষিকাস্বরূপ ছিল। অঙ্ক -অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ক না পারা এক ভয়ঙ্কর অপরাধ। তাই তিনি যে ছাত্ররা অঙ্ক পারত না তাদের তিনি প্রচন্ড প্রহার করতেন। মাস্টারমশাইয়ের সম্পর্কে গল্প লিখতে গিয়ে গল্পকথক তাঁর শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে উল্লিখিত উক্তিটি করে।
কথকের মাস্টারমশাইয়ের শিক্ষাপদ্ধতি সম্পর্কে এহেন উপলব্ধি হয়েছিল নিজের জীবনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থেকে। শৈশবে স্কুলের অঙ্কের মাস্টারমশাই অঙ্ক না পারলে প্রচন্ড প্রহারের সঙ্গে পা ধরে পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। পুরুষমানুষ হয়ে অঙ্ক না পারা ও তার জন্য বকুনি বা মার খেয়ে চোখের জল ফেলা দুই-ই তাঁর কাছে অপরাধ ছিল। এর ফলে অঙ্ক বিষয়টিই সুকুমারের কাছে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণেই ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করে কথক মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে রেহাই পেতে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করেনি। বর্তমানে কথক একটি কলেজের বাংলার অধ্যাপক। একদিন মাস্টারমশাই যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে যেনতেনপ্রকারেণ অঙ্ক শেখাতে চাইছেন, আজ সেই অঙ্ক ছাড়াই কথক উজ্জ্বল ভবিষ্যতে পচে গেছে। মাঝ থেকে অঙ্কের সাধারণ সমস্যাগুলির সমাধান ও সে আর করতে পারে না এবং অঙ্ক সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসহীন হয়ে পড়েছে সে। অভিজ্ঞতা দিয়ে তাই কথক বুঝতে পেরেছে অহেতুক তাড়না দিয়ে কাউকে কিছু শেখানো যায় না - মাঝ থেকে শিক্ষার্থীর মৃত্যু প্রাপ্তি হয়।
(৩) " মনে এলো মাস্টারমশাইয়ের কথা। লিখলুম তাঁকে নিয়েই......................"
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত "দাম" ছোটগল্পের গল্পকথক সুকুমার প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি মনে মনে ভাবেন।
গল্পকথক সুকুমার একটি কলেজের বাংলার প্রফেসর। একটি পত্রিকার পক্ষ থেকে তার কাছে তার ছোটবেলার বিষয়ে গল্প লেখার ফরমাশ আসে। গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবতে গিয়ে উল্লিখিত উক্তিটি সে মনে মনে করে।
কলেজের প্রফেসর সুকুমারের কাছে তার স্কুলের অংকের শিক্ষক ছিলেন এক বিভীষিকা। অঙ্ক-অন্তপ্রাণ মাস্টারমশাই মনে করতেন অঙ্ক না জানা অপরাধ। তাই তিনি মেরে ধরে ছাত্রদের অঙ্ক করাতেন। অঙ্কের মাস্টারমশাইকে সুকুমার এতই ভয় পেত যে সে অঙ্ক বিষয়টি থেকেই দূরে সরে গেল। ম্যাট্রিকুলেশনের পর অঙ্ক ও অঙ্কের মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে নিস্তার পেয়ে সে স্বস্তির নিস্তার ফেলল ও এর পরে সে এম-এ পাশ করে একটি কলেজে বাংলার শিক্ষক হয়। পত্রিকা থেকে যখন তার কাছে ছোটবেলার গল্প লেখার জন্য ফরমায়েশ আসে তখন তার প্রথমেই অংকের মাস্টারমশাইয়ের শিক্ষাপদ্ধতি টি যে ছাত্রদের জন্য কতখানি ক্ষতিকর ছিল তা সে তার গল্পের মাধ্যমে সবাইকে জানাবে। এই ভেবে সে অংকের মাস্টারমশাইকে সে গল্পের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেয়।
Wednesday, 6 October 2021
পদ্মানদীর মাঝি (সাহিত্য মুকুল - অষ্টম শ্রেণি )
প্রশ্ন ও উত্তর
(১) " পদ্মানদীর মাঝি " গল্পটি কার লেখা ? মূল উপন্যাসের নাম কী ?
উত্তর : " পদ্মানদীর মাঝি " গল্পটি মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা।
মূল উপন্যাসের নাম " পদ্মানদীর মাঝি " .
(২) ইলিশ মাছ ধরার মরশুম কোন সময় ? " মরশুম " কথাটির অর্থ কী ?
উত্তর :
ইলিশ মাছ ধরার মরশুম হল বর্ষাকাল।
" মরশুম " কথাটির অর্থ হল বিশেষ সময়।
(৩) সন্ধ্যার সময় জাহাজ ঘাটে দাঁড়ালে কী দেখা যায় ?
উত্তরঃ সন্ধ্যার সময় জাহাজ ঘাটে দাঁড়ালে নদীর বুকে নৌকার শত শত আলো অনির্বাণ জোনাকির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখা যায়।
(৪) নৌকার খোলের মধ্যে কী জমে উঠেছিল ? সেগুলি কেমন দেখতে লাগছিল ?
উত্তরঃ নৌকার খোলের মধ্যে মৃত সাদা ইলিশ জমে উঠেছিল।
লন্ঠনের আলোয় সাদা ইলিশ মাছগুলির আঁশ চকচক করছিল আর মাছের চোখগুলি স্বচ্ছ নীলাভ মণির মতো দেখাচ্ছিল।
(৫) কুবের কোথায় মাছ ধরছিল ?
উত্তরঃ কুবের দেবীগঞ্জের মাইল দেড়েক উজানে মাছ ধরছিল।
(৬) কুবের কাদের সঙ্গে মাছ ধরছিল ?
উত্তর : কুবের ধনঞ্জয় ও গনেশের সঙ্গে মাছ ধরছিল।
(৭) তিনজনের বাড়ি কোথায় ?
উত্তর : তিনজনের বাড়ি কেতুপুর গ্রামে।
(৮) " জেলে নৌকার এল ওগুলি "
(ক) কার লেখা , কোন গল্পের অংশ ?
(খ) জেলে নৌকার বর্ণনা দাও।
(গ) কোথায় দাঁড়ালে জেলে নৌকার আলো দেখা যায় ?
উত্তরঃ
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'পদ্মানদীর মাঝি" গল্পের অংশ।
(খ) পদ্মার বুকে মাঝিদের মাছ ধরার নৌকাগুলি খুব একটা বড় হয় না। নৌকার পিছনদিকে সামান্য একটু ছাউনি থাকে যেখানে বৃষ্টি -বাদলের দিনে দু-তিনজনে কোনরকমে মাথা গুঁজে থাকতে পারে। নৌকার পাটাতনে যে হাত-দুই ফাঁক থাকে তার মধ্যে দিয়ে নৌকার খোলের মধ্যে মাছ জমা করে রাখা হয়। নৌকার পাশে ত্রিকোণ বাঁশের ফ্রেমে মাছ ধরার জাল ও তার হাতল থাকে।
(গ) সন্ধ্যার সময় জাহাজ -ঘটে দাঁড়ালে পদ্মা নদীর বুকে জেলে নৌকার এল দেখা যায়।
(৯) " আগাগোড়া সে শুধু নৌকার হাল ধরিয়া বসিয়া থাকে।"
(ক) কে হাল ধরে বসে থাকে ?
(খ) কেন হাল ধরে বসে থাকে ?
(গ) তার সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর :
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা " পদ্মানদীর মাঝি" গল্পে কুবেরের সঙ্গী ধনঞ্জয় হাল ধরে বসে থাকে।
(খ) কুবের , গণেশ আর ধনঞ্জয় তিনজন একসঙ্গে বর্ষায় ইলিশের মরশুমে পদ্মা নদীতে সারারাত ইলিশ মাছ ধরে। যে নৌকা ও জাল নিয়ে তারা মাছ ধরতে যায় সেই দুটোই ধনঞ্জয়ের সম্পত্তি। নৌকা ও জালের মালিক বলে ধনঞ্জয় কম পরিশ্রম করে। তাই মাছ ধরার সময় সে হাল ধরে বসে থাকে।
(গ) ধনঞ্জয়ও কুবের আর গনেশের মত একজন পদ্মানদীর মাঝি। সেও ওদের সঙ্গে সমস্ত বর্ষাকাল ধরে ইলিশ মাছ ধরে পদ্মানদীতে। নৌকা ও মাছ ধরার জালটি ধনঞ্জয়ের সম্পত্তি হওয়ায় সে মাছধরার কাজে কম পরিশ্রম করে এবং ভাগে মাছও বেশি পায়। ধনঞ্জয়ের বাড়ি কেতুপুর গ্রামে। মাছ ধরার সময় যখন সে শোনে অন্য নৌকার মাঝিরাও অনেক মাছ পাচ্ছে তখন সে কিছুটা আশাহত হয় কারণ বাজারে তাহলে মাছের দাম কমে যাবে।
(১০) " এ সময় একটা রাত্রিও ঘরে বসিয়া থাকিলে কুবেরের চলিবে না "
(ক) কুবের কে ?
(খ) একটা রাত্রিও তার ঘরে বসে থাকলে চলবে না কেন ?
উত্তর :
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত " পদ্মানদীর মাঝি " গল্পে কুবের একজন জেলেমাঝি যে পদ্মানদীতে মাছ ধরে।
(খ) কুবের পদ্মার তীরে বসবাসকারী একজন দরিদ্র জেলে মাঝি। বর্ষাকালে ইলিশের মরশুমের সময় সে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে গনেশ ও ধনঞ্জয়ের সঙ্গে পদ্মানদীতে মাছ ধরে। তার নৌকা পদ্মার বুকে মাছ ধরার মতো নৌকা বা বড় জাল নেই। তাই ধনঞ্জয় বা নড়াইলের যদুর মতো বড় জেলেমাঝির সঙ্গে তাকে দু-আনা , চার আনা ভাগে মজুরি খাটতে হয়। টাকার অভাবে সে অখিল সাহার পুকুরও জমা নিতে পারে নি। তাই পদ্মার ইলিশের মরশুমের উপার্জনই তার জন্য সবকিছু। ইলিশের মরশুম শেষ হয়ে গেলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরা খুবই দুঃসাধ্য কাজ হয়ে ওঠে। তাই এই সময় শরীর খারাপ থাকলেও কুবের ঘরে বসে থাকতে পারে না।
(১১) " ভোরে দেবীগঞ্জের মাছের দর না-জানা অবধি এটা সৌভাগ্য কিনা বলা যায় না "
- এরূপ মন্তব্যের কারণ কী ?
উত্তর :
উল্লিখিত উক্তিটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত " পদ্মানদীর মাঝি " গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
পদ্মানদীর তীরে বসবাসকারী বেশিরভাগ জেলেমাঝি খুবই দরিদ্র। বর্ষাকালে ইলিশের মরশুমে যে উপার্জন করে তার উপরি তারা খুবই নির্ভরশীল। তাই শরীর খারাপ থাকলেও একটা রাতও তারা ঘরে বসে থাকতে পারে না। কুবের , গণেশ ও ধনঞ্জয় এই রকমই পদ্মার জেলে মাঝি। তারা দেবীগঞ্জের উজানে মাছ ধরতে গিয়েছিল। সেই রাতে তাদের প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছিল। তাতে তারা একদিকে যেমন খুশি হচ্ছিল আবার তারা ভাবছিল বাকি জেলেমাঝিদের যদি বেশি বেশি মাছ ধরা পরে তাহলে দেবীগঞ্জের বাজারে মাছের দাম কমে যাবে। তাই তাদের বেশি মাছ ধরতে পারাটা সৌভাগ্য কিনা তারা বুঝতে পারছিল না।
(১২) " নিজের বিরাট বিস্তৃতির মাঝে কোনখানে সে যে তার মীনসন্তানগুলিকে লুকাইয়া ফেলে খুঁজিয়া বাহির করা কঠিন হইয়া দাঁড়ায়। "
(ক) নিজের বলতে কার কথা বলা হয়েছে ?
(খ) মীনসন্তান বলতে কী বোঝান হয়েছে ?
(গ) কেন খুঁজে বার করা কঠিন হয় ?
উত্তরঃ
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত " পদ্মা নদীর মাঝি " গল্প থেকে উল্লিখিত অংশে 'নিজের' বলতে এখানে পদ্মানদীর কথা বলা হয়েছে।
(খ) 'মীনসন্তান ' বলতে পদ্মানদীতে বসবাসকারী মাছেদের কথা বলা হয়েছে।
(গ) বর্ষাকাল ইলিশের মরশুম। ইলিশমাছ লোনাজলের মাছ। কিন্তু বর্ষাকালে সমুদ্র থেকে ডিম পাড়ার জন্য ের ঝাঁকে ঝাঁকে গঙ্গা , পদ্মা ইত্যাদি নদীতে প্রবেশ করে। তখন পদ্মার পাড়ে বসবাসকারী জেলে মাঝিরা খুব সহজেই এদের ধরতে পারে। কিন্তু বর্ষা চলে গেলেই বেশিরভাগ ইলিশ মাছ সমুদ্রে চলে যায়। যে অল্পসংখ্যক মাছ থেকে যায় তারা পদ্মার বিরাট জলরাশির মধ্যে কোথায় থাকে তা জেলেদের পক্ষে জানা দুঃসাধ্য হয়ে পরে। তাই লেখক বলেছেন যে পদ্মানদী যেন তার 'মীনসন্তান' দের জেলেদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য লুকিয়ে ফেলে।
Tuesday, 14 September 2021
পাড়াগাঁ - গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী
রোদ উঠেছে , ফুল ফুটেছে, ঘাসে শিশির মেলা ;
চুপড়ি হাতে , যায় খেতেতে প্রাতে কৃষক-বালা।
শীতের প্রভাত, নয় প্রতিভাত , কুয়ার ধুঁয়ায় ঢাকা ;
সুদূর দূরে , নাই কিছুরে কেবলি ধূম মাখা।
তুলছে খুঁটি , কলাই শুঁটি , খেতের মাঝে বসে।
বালক রবির , সোনার কিরণ গায় পড়েছে এসে।
ছোটো -ছোটো , হলদে ফুলে , সরষের খেত আলা ;
পুরব ধারে, মেঘের শিরে, রাঙা সোনার থালা।
গাছের খোপে , ঝোপে ঝোপে পাখির বাসা বাঁধা ;
কাঁপিয়ে ডানা , চিঁ -চিঁ ছানা , মায়ের ঠোঁটে আদা।
পথের ধারে , ঝিলের তীরে , বক সাদা-সাদা;
খেজুর গাছে , গলার কাছে , কলসিগুলি বাঁধা।
কুঁড়ের পিছে , তালের গাছে বাবুই বাসার সার।
কি চাতুরী , কারিগরি , মানুষ মানে হার।
প্রশ্ন ও উত্তর
(১) "পাড়া গাঁ " কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?
উত্তরঃ "পাড়া গাঁ " কবিতাটি " অশ্রুকণা" কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
(২) কবিতাটিতে কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ কবিতাটিতে শীতের সকালের কথা বলা হয়েছে।
(৩) 'প্রতিভাত' কথার অর্থ কী ?
উত্তরঃ 'প্রতিভাত' কথার অর্থ আলোকিত।
(৪) খেজুর গাছে কী বাঁধা আছে ?
উত্তরঃ খেজুর গাছে কলসিগুলি বাঁধা আছে।
(৫) কৃষক বালা কী হাতে নিয়ে খেতে যায় ?
উত্তরঃ কৃষক বালা চুপড়ি হাতে নিয়ে খেতে যায়।
(৬) সরষের খেত কীসে ভরা আছে ?
উত্তরঃ ছোটো ছোটো হলদে সরষে ফুলে সরষের খেত ভরে যায়।
(৭) কোথায় সাদা বক দেখা যায় ?
উত্তরঃ পথের ধারে আর ঝিলের তীরে সাদা সাদা বক দেখা যায়।
(৮) কোন গাছে বাবুই পাখির বাসা ছিল ?
উত্তরঃ তালগাছে বাবুই পাখির বাসা ছিল।
(৯) কবিতাটিতে 'রাঙা সোনার থালা ' কাকে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ কবিতাটিতে 'রাঙা সোনার থালা ' ভোরবেলার সূর্যকে বলা হয়েছে।
(১০) পাখির ছানারা কী করছে ?
উত্তরঃ পাখির ছানারা ডানা কাঁপিয়ে চিঁ চিঁ করছে।
Saturday, 24 July 2021
আগামী - সুকান্ত ভট্টাচার্য
প্রশ্নঃ (১) "আগামী" কবিতাটি কার লেখা ? কার আগামী দিনের কথা এই কবিতায় বলা হয়েছে ? আগামী দিনে সে কী হবে এবং কী করবে তা লেখো।
উত্তরঃ " আগামী " কবিতাটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা।
একটি অংকুরিত চারাগাছের আগামী দিনের কথা আপাত দৃষ্টিতে বলা হয়েছে। রূপক অর্থে , একটি মানব শিশুর আগামী দিনের কথা বলা হয়েছে।
আগামী দিনে সদ্য অংকুরিত চারাগাছটি মহীরুহে পরিণত হবে। একদিনে সে মহীরুহে পরিণত হবে না ;হবে ধীরে ধীরে। পাতা মেলবে , বাতাসে মাথা নাড়বে , ডালপালা ছড়াবে , ফোটাবে ফুল। বিস্ময় ফুটবে প্রতিবেশী গাছেদের মুখে। ঝড় আসবে ; তার গায়ে আছড়ে পর্বে ; কিন্তু আত্মশক্তি দিয়ে ঝড়কে প্রত্যাহত করবে সে। আগামী বসন্তেই সে বড়ো গাছের মর্যাদা পাবে। তখন যারা অংকুরিত হবে , তারা তার আহ্বানে মুখরিত হবে। তাকে সকলে সংবর্ধনা জানাবে। আজ সে ক্ষুদ্র , তাই বলে সম্ভাবনাহীন নগণ্য নয়। বড়ো সে হবে , এই আত্মপ্রত্যয় তার মধ্যে দৃঢ়। তখন যদি মানুষ তার উপর কুড়ুল হানে , তবু সে তাদেরকে ছায়া-দানে , ফল-দানে , ফুল -দানে, পাখির কূজন- দানে বঞ্চিত করবে না। সে মানুষের আপনজন হয়ে থাকবে।
প্রশ্নঃ (২) " সেদিন ছায়ায় এস ; হান যদি কঠিন কুঠারে ,
তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেব বারে বারে।"
(ক) কোন কবির কোন কবিতা থেকে অংশটি নেওয়া ?
(খ) 'সেদিন' বলতে কোন দিনকে বোঝানো হয়েছে ?
(গ) কুঠারের আঘাত সহ্য করেও কে বার বার হাতছানি দিতে চায় এবং কেন ?
(ঘ) অংশটিতে কবির কোন মনোভাব ফুটে উঠেছে ?
উত্তরঃ
(ক) কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের " আগামী " কবিতা থেকে অংশটি নেওয়া।
(খ) সদ্য অংকুরিত চারাগাছটি 'সেদিন ' বলতে আগামী দিনে যখন সে বনস্পতি হবে , সেই দিনটিকে বুঝিয়েছে।
(গ) কুঠারের আঘাত সহ্য করেও আগামী দিনের বনস্পতি ( আজ যে অংকুরিত মাত্র ) বার বার হাতছানি দিতে চায়।
ভাবী বনস্পতি এই কারণে হাতছানি দিতে চায় যে, সে এবং আঘাতকারী মানুষ একই মাটিতে পুষ্ট , এবং সে নিজেকে মানুষের আপনজন বলে মনে করে।
(ঘ) অংশটিতে কবির মহান মনোভাব ফুটে উঠেছে। একই মাটিতে যারা পুষ্ট , তারা আপনার জন ;তারা আঘাত করলেও প্রত্যাঘাত না করে তাদের উপকার করা এবং আনন্দ বিধান করাই ধর্ম --- এই মনোভাবটি প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটিতে ফুটে উঠেছে।
প্রশ্নঃ (৩) " একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন "
(ক) উল্লিখিত অংশটি কার লেখা কোন কবিতায় আছে ?
(খ) উল্লিখিত অংশের বক্তা কে ?
(গ) ' তোমাদের' বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ?
(গ) তারা কীভাবে একই মাটিতে পুষ্ট তা বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ
(ক) উল্লিখিত অংশটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা " আগামী " কবিতায় আছে।
(খ ) উল্লিখিত অংশের বক্তা সদ্য অংকুরিত একটি চারাগাছ।
(গ) " তোমাদের " বলতে এখানে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়েছে।
(ঘ) গাছ মাটিতে জন্মে। মাটির ভেতর শিকড় চালিয়ে সে বাঁচবার শক্তি সংগ্ৰহ করে। মাটিতে দাঁড়িয়ে সে সূর্যকিরণ ও বাতাস থেকেও জীবনীশক্তি সংগ্ৰহ করে। এভাবে সে মাটিতে পুষ্ট। অন্যদিকে মানুষও মাটিতে বাস করে। মাটিতে জাত শস্য , ফলমূল খেয়ে সে বেঁচে থাকে। মাটিতে বসবাস করে সূর্যকিরণ ও বাতাস সংগ্রহ করে তাকে বাঁচতে হয়। তাই গাছ ও মানুষ একই মাটিতে পুষ্ট।
(৪) "ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই - জানি আমি ভাবী বনস্পতি "
(ক) কোন কবিতার অংশ ?
(খ) কবিতাটি কার লেখা ?
(গ) উল্লিখিত অংশের বক্তা কে ?
(ঘ) 'বনস্পতি ' কাকে বলে ?
(ঙ ) উল্লিখিত অংশের মাধ্যমে বক্তা কী বলতে চেয়েছে লেখো।
উত্তরঃ
(ক) অংশটি 'আগামী' কবিতার অংশ।
(খ) কবিতাটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা।
(গ) উল্লিখিত অংশের বক্তা সদ্য অংকুরিত একটি চারাগাছ।
(ঘ) বড়ো গাছকে বনস্পতি বলে। বড়ো গাছ বনের প্রতি অর্থাৎ কর্তা। বটগাছ সাধারণত সবচেয়ে বড়ো গাছ। এইজন্য বিশেষ অর্থে বটগাছকেও বনস্পতি বলা হয়।
(ঙ) জন্মমাত্র একদিনে গাছ বা মানুষ কেউই পরিণত দেহ ও মানসিকতা এবং কর্মশক্তির অধিকারী হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে গাছ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহ ও মন তাদের শক্তি নিয়ে বেড়ে ওঠে। একটি অংকুরিত চারাগাছ দেহে ছোটো। কিন্তু তাকে তুচ্ছ করা উচিত নয়। চারাগাছেরও অন্তর্নিহিত শক্তি আছে। সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তার অন্তর্নিহিত শক্তি বিকশিত হয়। ক্রমে তা বলশালী ও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে। আজকের চারাগাছটি পাতা মেলতে মেলতে ,ডালপালা ছড়াতে ছড়াতে বনস্পতি হয়ে ওঠে একদিন।
গাছকে এখানে মানুষের প্রতীক অর্থে গ্রহণ করা যেতে পারে। আজ যে শিশু , কাল সেই হয়ে ওঠে পরিপূর্ন মানুষ। তাই ছোট বলে 'শিশু' বা ' চারাগাছ' কাউকেই অবজ্ঞা করা উচিত নয়।
Friday, 23 July 2021
কবিতা - স্বাধীনতা
স্বাধীনতা
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়
স্বাধীনতা - হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে ,
কে বাঁচিতে চায়।
দাসত্ব-শৃঙ্খল বলো কে পড়িবে পায় হে ,
কে পরিবে পায়।
কোটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে ,
নরকের প্রায়।
দিনেকের স্বাধীনতা স্বর্গসুখ তায় হে ,
স্বর্গসুখ তায়।
ওই শুনো ওই শুনো ! ভেরির আওয়াজ হে ,
ভেরির আওয়াজ।
সাজ সাজ সাজ বলে , সাজ সাজ সাজ হে ,
সাজ সাজ সাজ।
সার্থক জীবন আর বাহুবল তার হে ,
বাহুবল তার।
আত্মনাশে যেই করে দেশের উদ্ধার হে ,
দেশের উদ্ধার।
অতএব রণভূমে চলো ত্বরা যাই হে ,
চলো ত্বরা যাই।
দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই হে ,
তুল্য তার নাই।
বিষয়বস্তু :
কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর ইংরেজি কাব্যকবিতার ছাঁদে এবং স্কট , ম্যুর , বায়রন প্রভৃতির আদর্শে স্বদেশপ্রেম ও ইতিহাসকে অবলম্বন করে কয়েকটি বীররসের আখ্যানকাব্য লিখেছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে " পদ্মিনী উপাখ্যান। " জেমস টডের " Annals and Antiquities of Rajasthan " এ আলাউদ্দিনের চিতোর আক্রমণ এবং জহরব্রতে আগুন জ্বালিয়ে পদ্মিনীর আত্মাহুতি দানের যে বর্ণনা পাওয়া যায় কবির "পদ্মিনী উপাখ্যান " তারই উপর ভিত্তি করে লেখা।
কবির এই রচনায় ঐতিহাসিক পরিবেশে স্বাদেশিক রস দিয়ে বীর করুণরসের আখ্যানকাব্য রচনা করেছেন। ক্ষত্রিয়দের প্রতি রাণা ভীমসিংহের যে উৎসাহবাণী এই কবিতায় রয়েছে তা বাঙালীর স্বাধীনতার উজ্জীবন লগ্নে সমর সঙ্গীতের কাজ করেছিল।
স্বাধীনতার যুদ্ধে যোগদানের জন্য কবি সকলকে আহ্বান জানাচ্ছেন। পরাধীন হয়ে কেউ বাঁচতে চায় না। দাসত্বের শিকল কেউ পায়ে পরতে চায় না। অনন্তকাল অন্যের দাস হয়ে বেঁচে থাকা নরকযন্ত্রণার সামিল। একদিনের জন্য স্বাধীনতা পেলেও তা স্বর্গসুখের সমান। ভেরী বাজছে, তার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সাজ সাজ রব উঠেছে। যোদ্ধার বেশে সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে। নিজের জীবন বলি দিয়ে যে দেশকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করে তার জীবন সার্থক , তার বাহুবল সার্থক। কাজেই আর দেরি না করে সকলকে রণক্ষেত্রে যেতে হবে। দেশের মঙ্গলের জন্য যে প্রাণ দেয় তার আত্মত্যাগের কোন তুলনা নেই।
কবিতাটি কবির লেখা " পদ্মিনী উপাখ্যান " -এর একটি অংশ। পদ্মিনী মেবারের রাণা ভীমসিংহের মহিষী (স্ত্রী) । তাঁর রূপের কথা শুনে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি মেবার রাজ্যের রাজধানী চিতোর আক্রমণ করেন। দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়। হানাদারদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য বীর রাজপুতগণ েকে েকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিতে থাকেন। পদ্মিনী ও অন্যান্য রাজপুত রমণীগণ জহর ব্রত অবলম্বন করে আগুনে প্রাণ বিসর্জন দেন।
শব্দার্থ :
(১) স্বাধীনতা - হীনতা : স্বাধীনতা না থাকা অবস্থা অর্থাৎ পরাধীনতা
(২) দাসত্ব -শৃঙ্খল :
দাসত্বের শৃঙ্খল। একজন দাসকে পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়। সে তার নিজের ইচ্ছেমত চলাফেরা করতে পারে না। একজন পরাধীন মানুষও দাসের মতো। শুধু পরাধীন মানুষের ক্ষেত্রে বেড়িটা লোহার নয় , নানারকম বিধি নিষেধের। পরাধীন দেশে এই বেড়ি পরিয়ে চিন্তা ভাবনা , মত প্রকাশ ও কাজ করার অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করা হয়।
(৩) কোটিকল্প :
অনন্তকাল। কল্প : ব্রহ্মার এক দিন = মানুষের ৪৩২ বছর।
(৪) নরক :
মৃত্যুর পরে পাপীরা যেখানে শাস্তি ভোগ করে , যমালয় , জাহান্নম , দোজখ। এটা লোকবিশ্বাস। দুঃখ কষ্টে পূর্ণ জঘন্য স্থানই হল নরক।
(৫) স্বর্গ :
দেবতাদের বাসস্থান , অমরাবতী , চিরসুখময় স্থান।
(৬) ভেরী :
চামড়ায় ঢাকা একরকম বড়ো , দুন্দুভি।
(৭) আত্মনাশ : আত্মবলি বা আত্মদান
(৮) দেশহিত : দেশের মঙ্গল
ব্যাখ্যা :
(১) কোটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায়
পরাধীন জীবন কেউ চায় না। তার উপর সেই জীবন যদি অনেকদিন ধরে চলতে থাকে , তার যে যন্ত্রণা তা নরকবাসের তুল্য। কারণ , স্বাধীনভাবে চলাফেরা , কাজ করা না গেলে জীবন অসহ্য হয়ে ওঠে।
(২) দিনেকের স্বাধীনতা স্বর্গ-সুখ তায়
স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার চাইতে বেশি সুখ আর কিছুতে নেই। নিজের জীবনকে নিজের ইচ্ছেমতো চালনা করার মধ্যে যে সুখ , যে তৃপ্তি আছে তাকেই স্বর্গের সুখের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
(৩) আত্মনাশে যেই করে দেশের উদ্ধার
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করা সকলের কর্তব্য। দেশকে মুক্ত করতে গিয়ে যদি নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হয় তাহলেও তার জীবন সার্থক। দেশবাসী তাঁর আত্মত্যাগ চিরকাল মনে রাখবে।
(৪) দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই
দেশের মঙ্গলের জন্য যিনি মৃত্যুবরণ করেন তাঁর ত্যাগের সঙ্গে আর কোনো কিছুর তুলনা করা চলে না। কারণ নিজের জীবনের চাইতে দেশের কল্যাণকে তিনি অনেক বেশি মূল্যবান মনে করেছেন। এভাবে যাঁরা জীবনদান করেন তাঁরা শহিদ। শহিদরা চিরকাল সকলের শ্রদ্ধাভাজন।
" স্বাধীনতা " কবিতাটির মূল কথাগুলি হল :
(১) পরের অধীন হয়ে বেঁচে থাকা আর অনন্তকাল নরকযন্ত্রণা ভোগ করা একই কথা।
(২) অল্পকালের জন্য স্বাধীনতা পেলেও তার সুখ স্বর্গসুখের সমান। সে সুখের কোনও তুলনা হয় না।
(৩) নিজের জীবন বলি দিয়ে যে দেশকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে তার জীবন সার্থক।
(৪) স্বদেশের স্বাধীনতা -সংগ্রামে যোগদান করার আহ্বান এলে সেই ডাকে সাড়া দেওয়া সকলের কর্তব্য।
(৫) দেশের মঙ্গলের জন্য যে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দেয় তার জীবন ধন্য।
Monday, 31 May 2021
তোতাকাহিনী
(১) তোতাপাখিটি কেমন ছিল ?
উত্তরঃ
তোতাপাখিটি ছিল মূর্খ। সে গান গাইত। শাস্ত্র পড়ত না। সে মনের আনন্দে লাফাত , উড়ত। কায়দা-কানুন একেবারেই জানত না।
(২) তোতাপাখিটিকে দেখে রাজা কী বলেছিলেন ?
উত্তরঃ
রাজা বলেছিলেন তোতাপাখিটি কোন কাজে লাগে না। শুধু বনের ফল খেয়ে রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়।
(৩) ' পাখিটাকে শিক্ষা দাও ' .......... কে বলেছিলেন ?
উত্তরঃ
মন্ত্রীমশাই বলেছিলেন।
(৪) কাদের উপর ভার পড়ল পাখিটাকে শিক্ষা দেবার ?
উত্তরঃ
রাজার ভাগিনাদের উপর ভার পড়ল পাখিটাকে শিক্ষা দেবার।
(৫) পাখিটাকে শিক্ষা দেবার প্রয়োজন হয়েছিল কেন ?
উত্তরঃ
তোতা পাখিটি ছিল মূর্খ। সে কেবল মনের আনন্দে গান গাইত , লাফাত , উড়ত। কিছুই কায়দা - কানুন জানত না। রাজা মনে করেছিলেন পাখিটা কোন কাজে লাগে না। কেবল বনের ফল খেয়ে রাজহাটে ফলের বাজারে লোকসান ঘটায়। তাই পাখিটাকে শিক্ষা দেবার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
(৬) পাখিটার অবিদ্যার কারণ কারা বিচার করে বার করেছিলেন ?
উত্তরঃ
পন্ডিতেরা বিচার করে পাখিটার অবিদ্যার কারণ বার করেছিলেন।
(৭) পন্ডিতেরা বিচার করে পাখিটির অবিদ্যার কারণ কী বলেছিলেন ? তার প্রতিকার কী বলেছিলেন ?
উত্তরঃ
পন্ডিতেরা বিচার করে বলেছিলেন তোতাপাখিটি সামান্য খড়কুটো দিয়ে যে নিজের বাসা বানায় সেই বাসায় বেশি বিদ্যা ধরে না। তাই পাখিটি মূর্খ।
পাখিটার জন্য ভালো একটি খাঁচা বানানোর দরকার। পন্ডিতেরা এই প্রতিকারই দিয়েছিলেন।
(৮) পন্ডিতেরা কী পেয়ে খুশি হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন ?
উত্তরঃ
পন্ডিতেরা দক্ষিণা পেয়ে খুশি হয়ে বাসায় ফিরেছিলেন।
(৯) পাখিটির জন্য কীরকম খাঁচা কে বানিয়েছিল ?
উত্তরঃ
পাখিটির জন্য সোনার খাঁচা স্যাকরা বানিয়েছিল।
(১০) সোনার খাঁচা বানানোর জন্য স্যাকরা কী পেয়েছিল ?
উত্তরঃ
সোনার খাঁচা বানানোর জন্য স্যাকরা থলি বোঝাই করে বকশিশ পেয়েছিল।
(১১) ' খুশি হইয়া সে তখনি পাড়ি দিল বাড়ির দিকে '
(ক) কে খুশি হয়েছিল ?
(খ) কেন খুশি হয়েছিল ?
উত্তরঃ
(ক) স্যাকরা খুশি হয়েছিল।
(খ) তোতা পাখির জন্য স্যাকরা সোনার খাঁচা বানিয়ে দিয়েছিল। তাই সে থলি বোঝাই করে বকশিশ পেয়ে খুশি হয়েছিল।
(১২) কারা পাখিটিকে বিদ্যা শেখাতে বসেছিলেন ? তারা কী বলেছিলেন ?
উত্তরঃ
পন্ডিতেরা পাখিটিকে বিদ্যা শেখাতে বসেছিলেন।
তারা বলেছিলেন অল্প পুঁথির মাধ্যমে পাখিটিকে বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া যাবে না।
(১৩) পুঁথি লেখকদের কে তলব করেছিল ? ' তলব' কথার অর্থ কী ?
উত্তরঃ
পুঁথি লেখকদের রাজার ভাগিনা তলব করেছিল।
' তলব' কথাটির অর্থ 'ডেকে পাঠানো'।
(১৪) পুঁথি লেখকরা কী করেছিল ?
উত্তরঃ
পুঁথি লেখকরা পুঁথির নকল করে এবং নকলের নকল করে পর্বতপ্রমাণ পুঁথির স্তূপ তৈরি করেছিল।
(১৫) কাদের সংসারে আর টানাটানি রইল না ও কেন ?
উত্তরঃ
লিপিকরের দল পুঁথির নকল করার জন্য রাজার কাছ থেকে প্রচুর পারিতোষিক পেয়েছিল। তাই তাদের সংসারে আর টানাটানি রইল না।
(১৬) 'উন্নতি হইতেছে '
কিসের উন্নতি হচ্ছিল ও কীভাবে ?
উত্তরঃ
তোতাপাখিটির শিক্ষার উন্নতি হচ্ছিল।
তোতা পাখিটার জন্য বানানো অনেক দামের খাঁচাটির প্রতি ভাগিনাদের খবরদারির সীমা রইল না। খাঁচাটিকে ঝাড়া , মোছা , পালিশ করে মেরামত করে যত্ন করার জন্য অনেক লোক রাখা হল। আবার সেই লোকগুলির উপর নজর দেওয়ার জন্য আরো লোক রাখা হল। আবার সেই লোকগুলি উপর নজর দেওয়ার জন্য আরো লোক রাখা হল। পাখিটার খাঁচাটির এত যত্ন দেখে সকলে বলেছিল পাখিটার উন্নতি হচ্ছে।
( ১৭) " কথাটা রাজার কানে গেল "
-- কোন কথা রাজার কানে গেল ?
উত্তরঃ
নিন্দুকেরা বলেছিল যে তোতাপাখিটির জন্য যে খাঁচাটি বানানো হয়েছে তারই অনেক উন্নতি হয়েছে , দেখাশোনা হচ্ছে। কিন্তু তোতাপাখিটির খবর কেউ রাখে না। এই কথা রাজার কানে গিয়েছিল।
(১৮) ভাগিনাদের গলায় সোনার হার চড়ল কেন ?
উত্তরঃ
নিন্দুকদের সমালোচনা শুনে রাজার মনে তোতাপাখিটির শিক্ষা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। তখন তিনি ভাগিনাদের ডেকে আসল ঘটনা জানতে চান। ভাগিনা এসে রাজাকে বলে যে সত্য ঘটনা রাজামশাই স্যাকরা ,পন্ডিত ,লিপিকর,খাঁচাটির যারা তদারক করে তাদের থেকে জানতে পারবেন। রাজামশাই তখন খুশি হয়ে ভাগিনাকে সোনার হার উপহার দেন।
(১৯) রাজা কাদের নিয়ে পাখিটির শিক্ষাব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ
রাজা পাত্র , মিত্র ও অমাত্য নিয়ে পাখিটির শিক্ষাব্যবস্থা দেখতে গিয়েছিলেন।
(২০) রাজামশাই দেউড়ির কাছে আসতেই কী হয়েছিল ?
উত্তরঃ
রাজামশাই দেউড়ির কাছে আসতেই শাঁখ -ঘন্টা , ঢাক-ঢোল , কাড়া -নাকাড়া, তূরী-ভেরি -দামামা , কাঁসি -বাঁশি -কাঁসর , খোল-করতাল , মৃদঙ্গ - জগঝম্প বিভিন্ন প্রকারের বাজনা বেজে উঠল। পন্ডিতেরা জোরে জোরে টিকি নেড়ে মন্ত্রপাঠ করতে লাগলেন। মিস্ত্রি ,মজুর ,স্যাকরা ,লিপিকর , তদারক-নবিশ আর মামাতো ,পিসতুতো ,খুড়তুতো এবং মাসতুতো ভাইরা জয়ধ্বনি দিতে লেগেছিল।
(২১) ' পাখিকে তোমরা কেমন শেখাও তার কায়দাটা দেখা চাই। '
(ক) কে কাকে বলেছেন ?
(খ) শেখানোর কায়দাটা কেমন ছিল ?
উত্তরঃ
(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত কথাটি রাজা পন্ডিতমশাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন।
(খ) তোতাপাখিটির দানাপানি বন্ধকরে দেওয়া হয়েছিল। পন্ডিতের দল রাশি রাশি
পুঁথির পাতা ছিঁড়ে 'কলমের ডগা' দিয়ে সেগুলি খাঁচায় বন্দি পাখিটির মুখের মধ্যে জোর করে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন। পাখির গান বন্ধ, এমনকি চিৎকার করার ফাঁকটুকুও ছিল না। এটাই ছিল পাখিকে শেখানোর কায়দা।
(২২) নিন্দুকের কান মিলে দিতে রাজা কাকে আদেশ দিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ
নিন্দুকের কান মিলে দিতে রাজা কানমলা সর্দারকে আদেশ দিয়েছিলেন।
(২৩) 'এ কী বেয়াদবি '
(ক) কে বলেছে কথাগুলি ?
(খ) এখানে কার কোন বেয়াদবির কথা বলা হয়েছে ?
(গ) বেয়াদবির শাস্তি কী হয়েছিল ?
উত্তরঃ
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত "তোতাকাহিনী " গল্পে কোতোয়াল বলেছে কথাগুলি।
(খ) এখানে তোতাপাখিটার বেয়াদবির কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষাদানের বিপুল আড়ম্বরের চাপে অর্ধমৃত তোতাপাখিটা প্রতিবাদস্বরূপ মাঝে মাঝে সকালের আলোর দিকে তাকিয়ে ডানা ঝাপটাতে শুরু করেছিল। তারপর বন্ধনমুক্তির মরিয়া চেষ্টায় একদিন সে তার শীর্ণ ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শলা কাটতে উদ্যত হয়। এই কাজকেই কোতোয়াল বেয়াদবি বলে মনে করেছে।
(গ) তোতাপাখির এই বেয়াদবির শাস্তি স্বরূপ কামারকে ডেকে তার পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল আর পাখা দুটিও দেওয়া হয়েছিল ছেঁটে।
(২৪) কী দেখে সবাই বুঝতে পারল তোতাপাখিটার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে ?
উত্তরঃ
প্রচন্ড শিক্ষার পীড়নে যখন তোতাপাখিটার সমস্ত চঞ্চলতা , আনন্দের প্রকাশ একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেল তখনই রাজার ভাগিনারা সিদ্ধান্ত করেছে যে পাখির শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে। পাখিটা আর আগের মত লাফায় না , ওড়ে না , গান গায় না , খিদে পেলে চেঁচায় না। অর্থাৎ স্বাভাবিক প্রাণ চাঞ্চল্যের কোন প্রকার বহিঃপ্রকাশ আর তার মধ্যে দেখা যায় না। এই অচঞ্চল প্রাণহীন অবস্থাই রাজা , ভাগিনা ও পন্ডিতবর্গের কাছে প্রকৃত শিক্ষার লক্ষণ। তাই মৃত তোতাপাখীটিকে দেখে সবাই বলল পাখিটির শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে।
(২৫) পাখিটি মরে যাওয়ায় কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?
উত্তরঃ
তোতাপাখিটি মরে যাওয়ায় বাইরে দখিনা হাওয়ায় কচিপাতাগুলি পুষ্পিত অরণ্যের আকাশকে বেদনায় আকুল করে তুলেছিল।
####
'কাহিনী' বা 'কাহিনি ' এই দুটি বানান ই আমার মতে সঠিক। কারণ মূল গ্রন্থে আছে
"তোতাকাহিনী" (বিশ্বভারতী থেকে যেটি প্রকাশিত ) আবার বর্তমানে " কাহিনী" বানান লেখা হয় "কাহিনি ' .... সুতরাং দুটি বানান ই আমি আমার লেখায় ব্যবহার করেছি।
পোস্টমাস্টার
প্রশ্ন ও উত্তর (১) ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ? উত্তরঃ ' পোস্টমাস্টার' গল্পটি 'হিতবাদী' পত...
-
আবার আসিব ফিরে জীবনানন্দ দাশ আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে - এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয় - হয়তো -বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে , হয়তো ভোরের ক...
-
সকল দেশের সেরা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ধনধান্যপুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা , তাহার মাঝে আছে দেশ এক -সকল দেশের সেরা ; ও সে , স্বপ্ন দিয়ে তৈরি ...
-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমকালীন কবিদের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী কবি হলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। যুগচেতনার প্রতিটি অনুভবের স্পন্দন আমরা তাঁর কবিতার...