প্রশ্ন ও উত্তর
(১) "একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন "
--- (ক) কে কাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন ?
(খ) বক্তা তাকে 'প্রকৃত সিংহী' বলেছেন কেন ?
উত্তরঃ
(ক) ' চিঠি ' রচনার উল্লিখিত অংশে স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে 'প্রকৃত সিংহী' বলেছেন।
(খ) স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা। নোবেলের শিক্ষা , ঐকান্তিকতা , পবিত্রতা , অসীম ভালোবাসা , দৃঢ়তা এবং তাঁর ধমনিতে প্রবাহিত রক্তের জন্য তাঁকেই সেই নারী হিসেবে স্বামীজি ভেবেছেন যাঁকে এদেশের প্রয়োজন। এইসব গুণের কারণেই তিনি সিংহীর সমকক্ষ হয়ে উঠেছেন।
(২) " তুমি ঠিক সেইরূপ নারী , যাকে আজ প্রয়োজন। "
(ক) নারীটি কে ?
(খ) তাঁকে কাদের প্রয়োজন ও কেন ?
(গ) কি কি গুণের জন্য তাঁকে সেইরূপ নারী বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ (ক) প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটি স্বামী বিবেকানন্দ রচিত 'চিঠি' নামক রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে 'সেই নারী ' বলতে স্বামীজি তার শিষ্যদের মধ্যে অগ্রগণ্যা মিস মার্গারেট নোব্ল্ অর্থাৎ ভগিনী নিবেদিতার কথা বলেছেন।
(খ) স্বামীজি অনুভব করেছিলেন যে পরাধীন ভারতের নারীরা ছিল চরম অবজ্ঞার। তাদের না ছিল শিক্ষা বা না ছিল কোনো স্বাধীনতা। তারা চির-লাঞ্ছিত ও অবহেলিত। জাতপাত , ছোঁয়াছুঁয়ি ও নানা কুসংস্কারে আবদ্ধ। স্বামীজি বুঝেছিলেন দেশ বা সমাজের উন্নতির জন্য নারীজাতিকে শক্তিময়ী, শিক্ষিতা করা তুলতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজন এক বা একাধিক মহীয়সী নারী। যিনি বা যাঁরা আপন শিক্ষা , শ্রম , মেধা ও নিষ্ঠা দিয়ে এদেশের নারীদের জাগ্রত করতে সক্ষম হবেন। স্বামীজি বুঝেছিলেন মিস নোবেলের মত ' প্রকৃত সিংহী 'র ন্যায় নারীর প্রয়োজন এদেশের মেয়েদের।
(গ) মিস নোবেলের শিক্ষা , ভারতপ্রেম , কর্মের প্রতি নিষ্ঠা , মানসিক দৃঢ়তার কথা স্বামীজি জেনেছেন। মিস নোবেলের ধমনিতে প্রবাহিত হচ্ছে 'কেল্টিক রক্ত ' যা পরাধীনতাকে মেনে নিতে চায় না। এই ব্যাপারগুলিই মিস নোব্ল্ সম্পর্কে স্বামীজিকে উৎসাহিত করে তুলেছিল। মিস নোব্ল্-এর এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই স্বামীজি বুঝেছিলেন ভারতের নারীজাতির উন্নয়নের স্বার্থে মিস নোব্ল্ই উপযুক্ত নারী।
(৩) " কিন্তু বিঘ্ন আছে বহু "
(ক) কি কি বিঘ্ন এবং কোথায় ?
(খ) এই উক্তির পিছনে কী কারণ ?
(গ) এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার কোন মনোভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে ?
উত্তরঃ
(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটি স্বামী বিবেকানন্দ রচিত 'চিঠি ' রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে। ভারতবর্ষের কাজের ক্ষেত্রে মিস নোব্ল্কে নানা প্রকার বাধার সম্মুখীন হতে হবে বলে স্বামীজি মনে করেন। যেমন -
ভারতের মানুষের দুঃখ , কুসংস্কার ও দাসত্বের মনোভাব নোবেলের ধারণার অতীত। অস্পৃশ্যতা , জাতি-বর্ণভেদ আর কুসংস্কারজনিত অজ্ঞতা ভারতবাসীকে বিভাজিত করে রেখেছে।
ভয়েই হোক বা ঘৃণাতেই হোক ভারতীয়রা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে এবং শ্বেতাঙ্গরাও এদেশের লোককে ঘৃণা করে।
মিস নোব্ল্ একজন ইউরোপীয় হয়ে ভারতীয়দের জন্য কাজ করছে দেখলে শ্বেতাঙ্গরা তাঁকে খামখেয়ালি বলে মনে করবে এবং তাঁর প্রত্যেকটি গতিবিধিকে সন্দেহের চোখে দেখবে।
তাছাড়া ভারতের জলবায়ু গ্রীষ্মপ্রধান। এদেশের শীত মিস নোবেলের দেশের গ্রীষ্মের মত। শহরের বাইরে ইউরোপীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও পাওয়া অসম্ভব।
এই সব বিঘ্নের কথা মিস নোব্ল্কে সতর্ক করেছেন স্বামীজি।
(খ) কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে , সেই কাজের সুবিধা -অসুবিধা , প্রেক্ষাপট জেনে নেওয়া উচিত বলে স্বামীজির মনে হয়েছে। ভারতের সমস্ত কিছুই মিস নোব্ল্-এর অচেনা ও অজানা। সেক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে তাঁকে নানাপ্রকার সংকটে পড়তে হতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে মিস নোব্ল্ যেন মানিয়ে চলতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই স্বামীজি মিস নোব্ল্কে প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।
(গ) স্বামীজি তাঁর চিঠিতে মিস নোব্ল্কে জানিয়েছিলেন যে তার মতো প্রকৃত সিংহীর ন্যায় নারীর আজ প্রয়োজন ভারতীয় নারীদের। মিস নোবেলের উপর তিনি অত্যন্ত ভরসা করেন। ভারতবর্ষের কাজ করার বহু বিঘ্নের কথা শুনেও মিস নোব্ল্ পিছিয়ে যাবেন না এটা তিনি জানতেন। মিস নোবেলের প্রতি স্নেহ ও সম্মানের মনোভাবই প্রকাশ পেয়েছে।
(৪) " তাঁর সঙ্গে বানিয়ে চলা অসম্ভব। "
---- কার সম্পর্কে কেন এ মন্তব্য করা হয়েছে ?
উত্তরঃ
স্বামী বিবেকানন্দ মিস নোব্ল্কে উদ্দেশ্য করে মিস মুলার সম্পর্কে মন্তব্যটি করেছেন। স্বামী বিবেকানন্দের মতে মিস মুলার তাঁর নিজের ভাবে চমৎকার মহিলা। কিন্তু ছেলেবেলা থেকেই নিজেকে নেত্রী ভাবা এবং নিজের ক্ষমতায় অতিরিক্ত বিশ্বাস তাঁকে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। স্বামী বিবেকানন্দের মনে হয়েছে যে মিস নোব্ল্ও অল্পদিনেই বুঝে নিতে পারবেন যে মিস মুলারের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।
(৫) " মরদ কি বাত হাতি কা দাঁত "
(ক) বক্তা কে ?
(খ) কাকে কোন প্রসঙ্গে এই কথা বলেছেন ?
(গ) উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ
(ক) প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটির বক্তা হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর লেখা 'চিঠি'তে তিনি মিস নোব্ল্কে কথাটি বলেছেন।
(খ) স্বামী বিবেকানন্দ উক্তিটি করেছেন তাঁর প্রিয় শিষ্যা মিস মার্গারেট নোব্ল্কে উদ্দেশ্য করে। পরাধীনতার নাগপাশে জড়িত ভারতবাসীর দুর্দশার শেষ ছিল না, তার উপরে আমাদের নারীজাতি যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত , অবহেলিত। শিক্ষার আলো থেকে তারা বহুদূরে অবস্থিত ছিল। কুসংস্কার আর অশিক্ষার গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তাদের হৃদয়। তাদের সেই অন্ধকারে আলোর আগমন ঘটাতে পারেন মিস নোব্ল্ অর্থাৎ ভগিনী নিবেদিতা। এই দৃঢ় বিশ্বাস ছিল স্বামী বিবেকানন্দের মনে। তাই ভারতের নারীজাতির জন্য কাজ করতে হলে তাঁর কেমন অসুবিধা হতে পারে , তা যেমন স্বামীজি জানিয়েছেন তাঁর চিঠির মাধ্যমে তেমনি তাঁকে অনুপ্রেরণাও দিয়েছেন। স্বামীজি যে সর্বতোভাবেই নিবেদিতার কাজে সহায়তা করবেন সেই প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গেই আলোচ্য কথাটি বলেছেন নিবেদিতাকে।
(গ) প্রবাদটির বক্তব্য হল প্রকৃত পুরুষ মানুষের কথা বা প্রতিশ্রুতি আর দাঁত একবার যদি বাইরে বেরিয়ে আসে তবে তা আর ভিতরে ঢোকে না। অর্থাৎ হাতির দাঁত মুখের বাইরে একবার বের হলে কোনোভাবেই তাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় না। আর প্রকৃত পুরুষ যে প্রতিজ্ঞা একবার করেন , কোনো পরিস্থিতিতেই তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুত হন না। এ কথার মাধ্যমে স্বামীজি নিবেদিতাকে বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি নিবেদিতার সকল কাজেই পাশে থাকার যে প্রতিশ্রুতি একবার দিয়েছেন তা থেকে তিনি কখনোই সরে আসবেন না তা নিবেদিতা কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থ হোন বা বেদান্ত ধর্ম ত্যাগ করুন বা ভারতবর্ষের জন্য কাজ করুন বা না করুন।