প্রশ্ন ও উত্তর
(১) " পদ্মানদীর মাঝি " গল্পটি কার লেখা ? মূল উপন্যাসের নাম কী ?
উত্তর : " পদ্মানদীর মাঝি " গল্পটি মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা।
মূল উপন্যাসের নাম " পদ্মানদীর মাঝি " .
(২) ইলিশ মাছ ধরার মরশুম কোন সময় ? " মরশুম " কথাটির অর্থ কী ?
উত্তর :
ইলিশ মাছ ধরার মরশুম হল বর্ষাকাল।
" মরশুম " কথাটির অর্থ হল বিশেষ সময়।
(৩) সন্ধ্যার সময় জাহাজ ঘাটে দাঁড়ালে কী দেখা যায় ?
উত্তরঃ সন্ধ্যার সময় জাহাজ ঘাটে দাঁড়ালে নদীর বুকে নৌকার শত শত আলো অনির্বাণ জোনাকির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে দেখা যায়।
(৪) নৌকার খোলের মধ্যে কী জমে উঠেছিল ? সেগুলি কেমন দেখতে লাগছিল ?
উত্তরঃ নৌকার খোলের মধ্যে মৃত সাদা ইলিশ জমে উঠেছিল।
লন্ঠনের আলোয় সাদা ইলিশ মাছগুলির আঁশ চকচক করছিল আর মাছের চোখগুলি স্বচ্ছ নীলাভ মণির মতো দেখাচ্ছিল।
(৫) কুবের কোথায় মাছ ধরছিল ?
উত্তরঃ কুবের দেবীগঞ্জের মাইল দেড়েক উজানে মাছ ধরছিল।
(৬) কুবের কাদের সঙ্গে মাছ ধরছিল ?
উত্তর : কুবের ধনঞ্জয় ও গনেশের সঙ্গে মাছ ধরছিল।
(৭) তিনজনের বাড়ি কোথায় ?
উত্তর : তিনজনের বাড়ি কেতুপুর গ্রামে।
(৮) " জেলে নৌকার এল ওগুলি "
(ক) কার লেখা , কোন গল্পের অংশ ?
(খ) জেলে নৌকার বর্ণনা দাও।
(গ) কোথায় দাঁড়ালে জেলে নৌকার আলো দেখা যায় ?
উত্তরঃ
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'পদ্মানদীর মাঝি" গল্পের অংশ।
(খ) পদ্মার বুকে মাঝিদের মাছ ধরার নৌকাগুলি খুব একটা বড় হয় না। নৌকার পিছনদিকে সামান্য একটু ছাউনি থাকে যেখানে বৃষ্টি -বাদলের দিনে দু-তিনজনে কোনরকমে মাথা গুঁজে থাকতে পারে। নৌকার পাটাতনে যে হাত-দুই ফাঁক থাকে তার মধ্যে দিয়ে নৌকার খোলের মধ্যে মাছ জমা করে রাখা হয়। নৌকার পাশে ত্রিকোণ বাঁশের ফ্রেমে মাছ ধরার জাল ও তার হাতল থাকে।
(গ) সন্ধ্যার সময় জাহাজ -ঘটে দাঁড়ালে পদ্মা নদীর বুকে জেলে নৌকার এল দেখা যায়।
(৯) " আগাগোড়া সে শুধু নৌকার হাল ধরিয়া বসিয়া থাকে।"
(ক) কে হাল ধরে বসে থাকে ?
(খ) কেন হাল ধরে বসে থাকে ?
(গ) তার সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর :
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা " পদ্মানদীর মাঝি" গল্পে কুবেরের সঙ্গী ধনঞ্জয় হাল ধরে বসে থাকে।
(খ) কুবের , গণেশ আর ধনঞ্জয় তিনজন একসঙ্গে বর্ষায় ইলিশের মরশুমে পদ্মা নদীতে সারারাত ইলিশ মাছ ধরে। যে নৌকা ও জাল নিয়ে তারা মাছ ধরতে যায় সেই দুটোই ধনঞ্জয়ের সম্পত্তি। নৌকা ও জালের মালিক বলে ধনঞ্জয় কম পরিশ্রম করে। তাই মাছ ধরার সময় সে হাল ধরে বসে থাকে।
(গ) ধনঞ্জয়ও কুবের আর গনেশের মত একজন পদ্মানদীর মাঝি। সেও ওদের সঙ্গে সমস্ত বর্ষাকাল ধরে ইলিশ মাছ ধরে পদ্মানদীতে। নৌকা ও মাছ ধরার জালটি ধনঞ্জয়ের সম্পত্তি হওয়ায় সে মাছধরার কাজে কম পরিশ্রম করে এবং ভাগে মাছও বেশি পায়। ধনঞ্জয়ের বাড়ি কেতুপুর গ্রামে। মাছ ধরার সময় যখন সে শোনে অন্য নৌকার মাঝিরাও অনেক মাছ পাচ্ছে তখন সে কিছুটা আশাহত হয় কারণ বাজারে তাহলে মাছের দাম কমে যাবে।
(১০) " এ সময় একটা রাত্রিও ঘরে বসিয়া থাকিলে কুবেরের চলিবে না "
(ক) কুবের কে ?
(খ) একটা রাত্রিও তার ঘরে বসে থাকলে চলবে না কেন ?
উত্তর :
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত " পদ্মানদীর মাঝি " গল্পে কুবের একজন জেলেমাঝি যে পদ্মানদীতে মাছ ধরে।
(খ) কুবের পদ্মার তীরে বসবাসকারী একজন দরিদ্র জেলে মাঝি। বর্ষাকালে ইলিশের মরশুমের সময় সে সারারাত বৃষ্টিতে ভিজে গনেশ ও ধনঞ্জয়ের সঙ্গে পদ্মানদীতে মাছ ধরে। তার নৌকা পদ্মার বুকে মাছ ধরার মতো নৌকা বা বড় জাল নেই। তাই ধনঞ্জয় বা নড়াইলের যদুর মতো বড় জেলেমাঝির সঙ্গে তাকে দু-আনা , চার আনা ভাগে মজুরি খাটতে হয়। টাকার অভাবে সে অখিল সাহার পুকুরও জমা নিতে পারে নি। তাই পদ্মার ইলিশের মরশুমের উপার্জনই তার জন্য সবকিছু। ইলিশের মরশুম শেষ হয়ে গেলে পদ্মা নদীতে মাছ ধরা খুবই দুঃসাধ্য কাজ হয়ে ওঠে। তাই এই সময় শরীর খারাপ থাকলেও কুবের ঘরে বসে থাকতে পারে না।
(১১) " ভোরে দেবীগঞ্জের মাছের দর না-জানা অবধি এটা সৌভাগ্য কিনা বলা যায় না "
- এরূপ মন্তব্যের কারণ কী ?
উত্তর :
উল্লিখিত উক্তিটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত " পদ্মানদীর মাঝি " গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।
পদ্মানদীর তীরে বসবাসকারী বেশিরভাগ জেলেমাঝি খুবই দরিদ্র। বর্ষাকালে ইলিশের মরশুমে যে উপার্জন করে তার উপরি তারা খুবই নির্ভরশীল। তাই শরীর খারাপ থাকলেও একটা রাতও তারা ঘরে বসে থাকতে পারে না। কুবের , গণেশ ও ধনঞ্জয় এই রকমই পদ্মার জেলে মাঝি। তারা দেবীগঞ্জের উজানে মাছ ধরতে গিয়েছিল। সেই রাতে তাদের প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছিল। তাতে তারা একদিকে যেমন খুশি হচ্ছিল আবার তারা ভাবছিল বাকি জেলেমাঝিদের যদি বেশি বেশি মাছ ধরা পরে তাহলে দেবীগঞ্জের বাজারে মাছের দাম কমে যাবে। তাই তাদের বেশি মাছ ধরতে পারাটা সৌভাগ্য কিনা তারা বুঝতে পারছিল না।
(১২) " নিজের বিরাট বিস্তৃতির মাঝে কোনখানে সে যে তার মীনসন্তানগুলিকে লুকাইয়া ফেলে খুঁজিয়া বাহির করা কঠিন হইয়া দাঁড়ায়। "
(ক) নিজের বলতে কার কথা বলা হয়েছে ?
(খ) মীনসন্তান বলতে কী বোঝান হয়েছে ?
(গ) কেন খুঁজে বার করা কঠিন হয় ?
উত্তরঃ
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত " পদ্মা নদীর মাঝি " গল্প থেকে উল্লিখিত অংশে 'নিজের' বলতে এখানে পদ্মানদীর কথা বলা হয়েছে।
(খ) 'মীনসন্তান ' বলতে পদ্মানদীতে বসবাসকারী মাছেদের কথা বলা হয়েছে।
(গ) বর্ষাকাল ইলিশের মরশুম। ইলিশমাছ লোনাজলের মাছ। কিন্তু বর্ষাকালে সমুদ্র থেকে ডিম পাড়ার জন্য ের ঝাঁকে ঝাঁকে গঙ্গা , পদ্মা ইত্যাদি নদীতে প্রবেশ করে। তখন পদ্মার পাড়ে বসবাসকারী জেলে মাঝিরা খুব সহজেই এদের ধরতে পারে। কিন্তু বর্ষা চলে গেলেই বেশিরভাগ ইলিশ মাছ সমুদ্রে চলে যায়। যে অল্পসংখ্যক মাছ থেকে যায় তারা পদ্মার বিরাট জলরাশির মধ্যে কোথায় থাকে তা জেলেদের পক্ষে জানা দুঃসাধ্য হয়ে পরে। তাই লেখক বলেছেন যে পদ্মানদী যেন তার 'মীনসন্তান' দের জেলেদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য লুকিয়ে ফেলে।