প্রশ্নঃ (১) "আগামী" কবিতাটি কার লেখা ? কার আগামী দিনের কথা এই কবিতায় বলা হয়েছে ? আগামী দিনে সে কী হবে এবং কী করবে তা লেখো।
উত্তরঃ " আগামী " কবিতাটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা।
একটি অংকুরিত চারাগাছের আগামী দিনের কথা আপাত দৃষ্টিতে বলা হয়েছে। রূপক অর্থে , একটি মানব শিশুর আগামী দিনের কথা বলা হয়েছে।
আগামী দিনে সদ্য অংকুরিত চারাগাছটি মহীরুহে পরিণত হবে। একদিনে সে মহীরুহে পরিণত হবে না ;হবে ধীরে ধীরে। পাতা মেলবে , বাতাসে মাথা নাড়বে , ডালপালা ছড়াবে , ফোটাবে ফুল। বিস্ময় ফুটবে প্রতিবেশী গাছেদের মুখে। ঝড় আসবে ; তার গায়ে আছড়ে পর্বে ; কিন্তু আত্মশক্তি দিয়ে ঝড়কে প্রত্যাহত করবে সে। আগামী বসন্তেই সে বড়ো গাছের মর্যাদা পাবে। তখন যারা অংকুরিত হবে , তারা তার আহ্বানে মুখরিত হবে। তাকে সকলে সংবর্ধনা জানাবে। আজ সে ক্ষুদ্র , তাই বলে সম্ভাবনাহীন নগণ্য নয়। বড়ো সে হবে , এই আত্মপ্রত্যয় তার মধ্যে দৃঢ়। তখন যদি মানুষ তার উপর কুড়ুল হানে , তবু সে তাদেরকে ছায়া-দানে , ফল-দানে , ফুল -দানে, পাখির কূজন- দানে বঞ্চিত করবে না। সে মানুষের আপনজন হয়ে থাকবে।
প্রশ্নঃ (২) " সেদিন ছায়ায় এস ; হান যদি কঠিন কুঠারে ,
তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেব বারে বারে।"
(ক) কোন কবির কোন কবিতা থেকে অংশটি নেওয়া ?
(খ) 'সেদিন' বলতে কোন দিনকে বোঝানো হয়েছে ?
(গ) কুঠারের আঘাত সহ্য করেও কে বার বার হাতছানি দিতে চায় এবং কেন ?
(ঘ) অংশটিতে কবির কোন মনোভাব ফুটে উঠেছে ?
উত্তরঃ
(ক) কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের " আগামী " কবিতা থেকে অংশটি নেওয়া।
(খ) সদ্য অংকুরিত চারাগাছটি 'সেদিন ' বলতে আগামী দিনে যখন সে বনস্পতি হবে , সেই দিনটিকে বুঝিয়েছে।
(গ) কুঠারের আঘাত সহ্য করেও আগামী দিনের বনস্পতি ( আজ যে অংকুরিত মাত্র ) বার বার হাতছানি দিতে চায়।
ভাবী বনস্পতি এই কারণে হাতছানি দিতে চায় যে, সে এবং আঘাতকারী মানুষ একই মাটিতে পুষ্ট , এবং সে নিজেকে মানুষের আপনজন বলে মনে করে।
(ঘ) অংশটিতে কবির মহান মনোভাব ফুটে উঠেছে। একই মাটিতে যারা পুষ্ট , তারা আপনার জন ;তারা আঘাত করলেও প্রত্যাঘাত না করে তাদের উপকার করা এবং আনন্দ বিধান করাই ধর্ম --- এই মনোভাবটি প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটিতে ফুটে উঠেছে।
প্রশ্নঃ (৩) " একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন "
(ক) উল্লিখিত অংশটি কার লেখা কোন কবিতায় আছে ?
(খ) উল্লিখিত অংশের বক্তা কে ?
(গ) ' তোমাদের' বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ?
(গ) তারা কীভাবে একই মাটিতে পুষ্ট তা বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ
(ক) উল্লিখিত অংশটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা " আগামী " কবিতায় আছে।
(খ ) উল্লিখিত অংশের বক্তা সদ্য অংকুরিত একটি চারাগাছ।
(গ) " তোমাদের " বলতে এখানে সাধারণ মানুষকে বোঝানো হয়েছে।
(ঘ) গাছ মাটিতে জন্মে। মাটির ভেতর শিকড় চালিয়ে সে বাঁচবার শক্তি সংগ্ৰহ করে। মাটিতে দাঁড়িয়ে সে সূর্যকিরণ ও বাতাস থেকেও জীবনীশক্তি সংগ্ৰহ করে। এভাবে সে মাটিতে পুষ্ট। অন্যদিকে মানুষও মাটিতে বাস করে। মাটিতে জাত শস্য , ফলমূল খেয়ে সে বেঁচে থাকে। মাটিতে বসবাস করে সূর্যকিরণ ও বাতাস সংগ্রহ করে তাকে বাঁচতে হয়। তাই গাছ ও মানুষ একই মাটিতে পুষ্ট।
(৪) "ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই - জানি আমি ভাবী বনস্পতি "
(ক) কোন কবিতার অংশ ?
(খ) কবিতাটি কার লেখা ?
(গ) উল্লিখিত অংশের বক্তা কে ?
(ঘ) 'বনস্পতি ' কাকে বলে ?
(ঙ ) উল্লিখিত অংশের মাধ্যমে বক্তা কী বলতে চেয়েছে লেখো।
উত্তরঃ
(ক) অংশটি 'আগামী' কবিতার অংশ।
(খ) কবিতাটি কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা।
(গ) উল্লিখিত অংশের বক্তা সদ্য অংকুরিত একটি চারাগাছ।
(ঘ) বড়ো গাছকে বনস্পতি বলে। বড়ো গাছ বনের প্রতি অর্থাৎ কর্তা। বটগাছ সাধারণত সবচেয়ে বড়ো গাছ। এইজন্য বিশেষ অর্থে বটগাছকেও বনস্পতি বলা হয়।
(ঙ) জন্মমাত্র একদিনে গাছ বা মানুষ কেউই পরিণত দেহ ও মানসিকতা এবং কর্মশক্তির অধিকারী হয়ে যায় না। ধীরে ধীরে গাছ ও অন্যান্য প্রাণীর দেহ ও মন তাদের শক্তি নিয়ে বেড়ে ওঠে। একটি অংকুরিত চারাগাছ দেহে ছোটো। কিন্তু তাকে তুচ্ছ করা উচিত নয়। চারাগাছেরও অন্তর্নিহিত শক্তি আছে। সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তার অন্তর্নিহিত শক্তি বিকশিত হয়। ক্রমে তা বলশালী ও উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে। আজকের চারাগাছটি পাতা মেলতে মেলতে ,ডালপালা ছড়াতে ছড়াতে বনস্পতি হয়ে ওঠে একদিন।
গাছকে এখানে মানুষের প্রতীক অর্থে গ্রহণ করা যেতে পারে। আজ যে শিশু , কাল সেই হয়ে ওঠে পরিপূর্ন মানুষ। তাই ছোট বলে 'শিশু' বা ' চারাগাছ' কাউকেই অবজ্ঞা করা উচিত নয়।